আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই ভাল আছেন। আজকে আমি আলোচনা করব আমাদের প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে। আমরা কোন জায়গায় আছি ভবিষ্যতে কোথায় যেতে চলেছি। তো চলুন শুরু করা যাক।
গুনি জনেরা বলেন কখনো অতীত নিয়ে পড়ে থাকতে নেই সব সময় ভবিষ্যতের কথা ভাবতে হয়। আর টেক জগতে হয়তো এই নীতিটা দারুণ ভাবে অনুসরণ করা হয় আর অনুসরণ না করে উপায়ও নেই কারণ মানুষ সব সময় চায় নতুন কিছু। আজকে যা আপনার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে কালকে যদি সেটা পেয়ে যান পরশু সেটা আর আপনার মাঝে আবেদন তৈরি করবে না।
আমরা গত দশ বছর আগে যা ধারনা করতাম সব গুলোই কিন্তু এখন বাস্তব। আমরা ইতিমধ্যে সেই প্রযুক্তি গুলোকে লাইফের সাথে যুক্ত করে নিয়েছে যেগুলো ছাড়া আমরা একটি দিনেও কল্পনা করতে পারি না।
দশ বছর আগেও যে প্রযুক্তি গুলো আসবে বলে আশায় থাকতাম:
দশ বছর আগের থেকে এখনকার ইন্টারনেট অনেক এগিয়ে গেছে। আমরা নিজের চোখে দেখেছি 2g থেকে 4g আসা। যেখানে একটি ফাইল ডাউনলোড দিলে সর্বোচ্চ গতি ছিল 40/35 Kbps আজকে সেখানে ফাইন ডাউনলোড স্পিড 5 Mbps পর্যন্ত। আজকে 3g, 4g মাধ্যমে করতে পারছি ভিডিও চ্যাট কানেক্ট হতে পারছি বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে। ডাটা আদান প্রদানের ক্ষেত্রে এসেছে দারুণ অগ্রগতি। বড় ধরনের ডাটা খুব সহজে কম সময়ের মধ্যেই আদান প্রদান করতে পারছি বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত।
আমাদের নিত্য ব্যবহার্য জিনিস পত্র আস্তে আস্তে ছোট হয়ে আসছে। মনে করুন সেই টেপ রেকর্ডারের কথা, একটি ক্যাসেটে মাত্র ১০ টি গান তারপরেও কথা সমস্যা। এর পর আসে ফ্লপি ডিস্ক একটি ডিস্কে ১০০ গান। বর্তমানে সব কিছুকে পেছনে ফেলে আসছে মেমরি কার্ড যা কিনা 32 Gb পর্যন্ত ডাটা ধারণ করতে পারে এবং একটি টেপ রেকর্ডারের ক্যাসেট থেকে কয়েক গুন ক্ষুদ্র। আগের একটা ডেক্সটপ কম্পিউটারের সকল কার্যক্রম করা যায় হাতে বহন করতে পারা ল্যাপটপে।
বর্তমানে আমাদের জন্য আছে বিভিন্ন ধরনের ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট যেমন, Alexa, Siri, Google assistant। আমরা প্রতিনিয়ত তাদের ব্যবহার করে বিভিন্ন টাস্ক করিয়ে নিচ্ছি। তাদের সাথে করতে পারছি কথোপকথন। গুগল হোমের মাধ্যমে ঘরের লাইট, ফ্যান অফ/অন করার পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি পুরো রুমকে। ঘুম থেকে উঠেই আমাদের বলে দিচ্ছে প্রতিদিনের আবহাওয়া সাথে দিনের সেরা সংবাদ।
3D এর মাধ্যমে আমাদের বিনোদনে যোগ হয়েছে অন্য মাত্রা। খালি রুমে বসে থেকে চলে যেতে পারছি অন্য এক জগতে। রাস্তা বা আকাশে না গিয়ে শিখতে পারছি গাড়ি, বিমান চালানো। 3D প্রিন্টের মাধ্যমে প্রিন্ট জগতে এসেছে নতুন কিছু। মোবাইল প্রযুক্তি হয়েছে আরও উন্নত। যেখানে এক সময় ফোনের জন্য ভিডিও কনভার্ট করে নিতে হতো আজকে ফোনের মধ্যমে আমরা দেখতে পারছি Full HD ভিডিও, এমনকি 2k পর্যন্ত ভিডিও প্লেব্যাক। আগে যেসমস্ত কাজ শুরু মাত্র কম্পিউটার দিয়ে করা যেত সেই সমস্ত কাজ এখন ফোনের মাধ্যমে আরও সহজে করা যাচ্ছে।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি অগমেন্টেড রিয়ালিটি বদলে দিয়েছে আমাদের চিন্তা ভাবনাকে। পৃথিবীকে দেখাচ্ছে অন্য দৃষ্টিতে। ক্লাউড স্টোরেজের মাধ্যমে আমাদের গুরুত্ব পূর্ণ ডাটা রেখে দিতে পারছি ইন্টারনেটে এবং যেকোনো সময় যেকোনো জায়গা থেকে সেগুলোর এক্সেস পাচ্ছি খুবই সহজে। ব্যবসায়িক জাগতেও ক্লাউড স্টোরেজের রয়েছে ব্যাপক ব্যবহার। এই ক্লাউড কম্পিউটিং আমাদের ঘরকে অফিস বানিয়ে ফেলেছে শুধু ঘরই নয় যেকোনো জায়গায় ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে আমরা আমাদের ব্যক্তিগত ফাইল, ডাটার এক্সেস পেয়ে যাচ্ছি।
আমরা দেখেছি প্রযুক্তির বিভিন্ন উত্থান পতন, আমরা স্টিভ জবসকে হারিয়েছি এবং মার্ক জাকারবার্গ কে বিশ্বের সেরা ধনিদেরও মধ্যে একজন হতে দেখেছি। আমরা ব্ল্যাক-বেরির মত টেক দানব কিভাবে বাজার থেকে চলে গেছে দেখেছি একই ভাবে দেখেছি এক সময়ের বৃহৎ ফোন ম্যানুফেকচার নোকিয়া কিভাবে তার মার্কেট শেয়ার হারিয়েছে। আমরা Elon musk কে দেখেছি যে কিনা Self Driving প্রযুক্তিতে সবার আগে নাম লিখেছেন।
এরই ধারাবাহিকতায় আমরা ভাবতেই পারি সামনে আমাদের জন্য কি অপেক্ষা করছে,
আগেই বলেছি প্রযুক্তি উদ্ভাবনের কোন শেষ নেই। আজকে যা আপনার কল্পনায় ডানা মেলছে তা ভবিষ্যতে খুবই নগণ্য বিষয় হয়ে যেতে পারি। আমরা যদি আজ থেকে বিশ বছর আগের অবস্থা কল্পনা করি তাহলে হয়তো বুঝতে পারব আজকে আমরা কতটা এগিয়ে গেছি। কিন্তু আপনার কি মনে হয় এটাই শেষ? কখনো না! বিজ্ঞানের এই যুগে গবেষকরা প্রতিনিয়ত নানা জিনিস নিয়ে গবেষণা করছেন আর নিয়ে আসছেন নতুন নতুন উদ্ভাবন। এক সময়ের সাইন্স ফিকশনই রূপান্তরিত হয় সাইন্সে।
তথ্য প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগে এবং তরুণ প্রজন্মের সহযোগিতায় বাংলাদেশে এসেছে দারুণ প্রযুক্তি বিপ্লব। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে অবদান রাখতে আমাদের দেশ অবকাঠামো গত উন্নয়নে জোর দিয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট এর মাধ্যমে আমরা তথ্য প্রযুক্তিতে নিজেদের স্থান করে নিয়েছি। নানা জল্পনা-কল্পনা শেষে আমাদের দেশে চালু হয়েছে চতুর্থ প্রজন্মের নেটওয়ার্ক সিস্টেম 4g। দেশের প্রযুক্তি এগিয়ে যাবার সাথে সাথে বেড়েছে ফেসবুক ব্যবহারকারী এবং ফ্রিল্যান্সারদের সংখ্যা।
আমাদের বর্তমান সমাজে তার চারপাশে বিরাজমান থাকলেও ধরনা করা যায় সামনের দশকে হয়তো থাকবে না। বর্তমানের 2g, 3g, 4g অতি দ্রুত পুরাতন হয়ে যাবে এবং এখানে৷ জায়গা করে নেবে 5g অথবা 6g।
আমরা এখনি যেহেতু 5g এর কথা চারপাশে শুনছি তো ধারনা করা যায় খুব তাড়াতাড়ি এটি এসে আমাদের প্রযুক্তি বিশ্বে আধিপত্য বিস্তার করবে। আমরা দেখতে পারব বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানিদের দারুণ দারুণ উদ্ভাবন।
আসছে দশকে ধারনা করা যায় গবেষকরা Lithium-ion ব্যাটারি প্রযুক্তির ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসবে। আমরা ইতিমধ্যে Fast charging, Nanowire ব্যাটারি যা সহজেই নষ্ট হবে না এবং দেখতে পাচ্ছি ব্যাটারির জন্য আধুনিক ক্যামিক্যাল কম্পোনেন্ট।
সাথে সাথে বড় বড় মোবাইল কোম্পানি যেমন, Samsung, Google, Apple প্রতিনিয়তই তাদের ফোনের ব্যাটারি ক্যাপাসিটি এবং স্থায়িত্ব বাড়াচ্ছে।
আমরা ধারনা করতেই পারি যে বর্তমান Lithium-ion আর বেশিদিন থাকবে না এর চেয়ে ভাল কিছু আসবে।
আমাদের ফোনের স্ক্রিন পছন্দে আসছে পরিবর্তন আগে চাইতাম সব দিক থেকে ফোনের স্ক্রিন বড় হোক এখন আমাদের কাছে wide স্ক্রিনই বেশি পছন্দের। আমরা ইতিমধ্যে দেখেছি পাতলা কাগজ এর মধ্যমে কিভাবে ডিসপ্লে তৈরি হয় যা Samsung Flip এবং Motorola razr এ ব্যবহৃত হচ্ছে। আমরা খুব তাড়াতাড়ি দেখতে চলেছি ডুয়েল থ্রি-পল ডিসপ্লে। ২০২৫ সালের দিকে বাজারে চলে আসতে পারে Transparent ডিসপ্লে ফোন।
নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সামনের দশকে আসছে স্মার্ট হাউজ। ধারনা করা যায় নিরাপত্তার পাশাপাশি সব দৈনন্দিন কাজ হবে ইলেকট্রনিক মাধ্যমে যেমন, Smart clothing Device, coffe maker, nano paint ইত্যাদি।
ড্রাইভার-লেস কার ইতিমধ্যে আমাদের সামনে চলে আসলেও সামনের দশকে এগুলো হয়ে উঠবে আরও কার্যকারী ও নির্ভুল। দেয়া যাবে যেকোনো কমান্ড যা ট্রাফিক সহ রাস্তার লেন চিনতে পারবে। আসতে পারে ড্রাইভার-লেস স্মার্ট বাস এবং স্মার্ট ট্রাক ও। আসতে পারে ড্রাইভার লেস স্মার্ট বাস এবং স্মার্ট ট্রাক ও। ট্রাফিক সমস্যা সমাধানেও আসতে পারে দারুণ প্রযুক্তি।
সোশ্যাল মিডিয়া ছিল আছে এবং থাকবে তবে পরিবর্তন আসতে পারে এর মাঝে। আমাদের বর্তমানের সোশাল মিডিয়া যেমন, Facebook, twitter বেশিরভাগ তৈরি করছে অপরিপক্ব, ধোঁকার সম্পর্ক। তারমানে এই গুলো হারিয়ে যাবে বলা যায় না তবে গবেষণা করা হচ্ছে কিভাবে সামাজিক বন্ধন বাড়াতে এগুলোকে আরও কার্যকর করা যায়। হতে পারে আমরা পরিচিত হতে পারে আরও বিশুদ্ধ কোন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাথে।
আমরা এখনি দেখতে পাচ্ছি ক্যাবল টিভি আরও উন্নত হচ্ছে হয়তো একসময় আমরা ক্যাবল ছেরে স্ট্রিমিং কে বেশি গুরুত্ব দিবে। তার জন্য অবশ্য ইন্টারনেট আরও সহজ লভ্য হতে হবে। আশা করা যায় যত দিন যাবে ইন্টারনেট আরও সহজলভ্য হতে থাকবে।
আমরা অনেক আগে থেকেই রোবটের সাথে পরিচিত ইতিমধ্যে স্বপ্ন পরিসরে বিভিন্ন জায়গায় রোবটের ব্যবহারও হচ্ছে যেমন, রেস্টুরেন্ট, শপিং মল গুলোতে। ধারণ করা হচ্ছে রোবট গুলো আরও আধুনিক হবে এবং আরও হিউম্যান ফ্রেন্ডলি হবে। হতে পারে রোবট হবে আপনার ঘরের বিভিন্ন কাজের সহায়ক এবং বৃদ্ধ বয়সের লাঠি।
কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ইতিমধ্যে সমাধান করছে বিভিন্ন সমস্যা। ধারনা করা যাচ্ছে ভবিষ্যতে প্রকৃতি পরিবেশ বাচাতেও এটা দারুণ ভূমিকা রাখবে।
নাসা আমাদের ইতিমধ্যে আশা দেখিয়েছে মঙ্গলে নিয়ে যাবে এবং যার সকল প্ল্যানিং করা হচ্ছে ধারনা করা হচ্ছে ২০৩০ সালের দিকে তারা তা বাস্তবায়ন করে দেখাবে।
বর্তামানে cryptocurrency বাজারে এসেছে ভবিষ্যতে এটা হয়তো আমাদের অর্থনৈতিক সাথে যুক্ত হয়ে যাবে। এটা লেনদেনকে আরও সহজ করতে পারে কিন্তু সেটা বর্তমান ব্যবস্থাকে উঠিয়ে দেবে বলা যায় না।
আজকে এই প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তির মতামত নিবে, যার নাম William shatner যিনি ৯ টি দশক এই প্রযুক্তির উত্থান পতন দেখেছেন, বর্তমান বয়স ৮৮। তার মতে প্রযুক্তি যেমন আমাদের জন্য প্রয়োজনীয় তেমনি এটা হতে পারে আমাদের ক্ষতির কারণ।
তার মতে, ভবিষ্যতে প্রযুক্তি হবে আরও ছোট কিন্তু অধিক গতি সম্পন্ন। নিরাপত্তা ও ব্যক্তি প্রাইভেসি হয়ে উঠবে আরও শক্তিশালী। চিকিৎসার যন্ত্রপাতি হয়ে যাবে অনেকটা পোর্টেবল এবং সবার বহনযোগ্য যা খুব কম সময়ে দেহের বিভিন্ন জটিল নির্ভুল ভাবে উপস্থাপন করতে পারবে। এর কিছুটা আভাস পাই আমরা অ্যাপেল স্মার্ট ওয়াচের মাধ্যমে।
তিনি আরও বলছিলেন প্রযুক্তির যেমন ভাল দিক আছে তেমনি খারাপ দিকও আছে। আগত দিনের প্রযুক্তি গুলো যেমন আকর্ষণীয় হবে তেমনে ভয়াবহ ও হবে।
সব কিছুর ভাল খারাপ দুই দিকই আছে সেটা প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নতুন নয়। প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে করে তুলবে আরও আকর্ষণীয় ও সহজ। যেহেতু প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে নানা প্রযুক্তি সুতরাং উপরে বর্ণীত প্রযুক্তি গুলো আসতে খুব বেশি দেরি হয়ে হবে। হয়তো ২০৩০ সালেই আমার সব গুলো ধারনা সত্যি হয়ে যাবে। আর তত দিন আমাদের নতুন নতুন প্রযুক্তিকে গ্রহণ করতে হবে আর পুরাতনকে বাদ দিতে হবে।
কেমন লাগল আজকেই এই টিউনটি তা অবশ্যই জানাবেন। এই টিউন পড়ে আপনার কি মনে হয় তা অবশ্যই টিউমেন্ট করুন।
পরবর্তী টিউন পর্যন্ত ভাল থাকুন। আমাদের সমসাময়িক যে সংকট চলছে এর থেকে রক্ষা পেতে সবাই সচেতন থাকবেন কারণ আপনার সচেতনতাই পারে আমাদের সবাইকে খারাপ অবস্থা থেকে বাচাতে। সবাই বাসায় থাকুন আর আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন, আল্লাহ হা-ফেজ।
আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 627 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 118 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।