আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন টেকটিউনস কমিউনিটি? আশা করছি সবাই ভাল আছেন। বরাবরের মত আজকেও চলে এসেছি নতুন টিউন নিয়ে। টিউনটি বিশ্লেষণ মূলক হবে। আজকে আপনাদের দেখাব কিভাবে Realme কিভাবে বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধিত মোবাইল ব্র্যান্ড হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে। চলুন প্রথম থেকে শুরু করা যাক।
আমরা অনেকে জানি Oppo একটি জনপ্রিয় মোবাইল ব্র্যান্ড। তারা একটা সময় ভারতে তাদের মার্কেট শেয়ার হারাতে থেকে। কারণ? হয়তো তাদের থেকে ভাল কেউ চলে এসেছিল মার্কেটে। হ্যাঁ আমি শাউমির কথা বলছি!
২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে শাউমি, Samsung কে পেছনে ফেলে ভারতের ১ নাম্বার মোবাইল কোম্পানিতে পরিণত হয় এবং যা পরিমানের দিক থেকে বিশ্বের ২য় সর্বোচ্চ স্মার্ট ফোন ব্র্যান্ড। ২ বছর পর কোম্পানির গতি এতটায় বেড়ে যায় যে এটি দেশের প্রায় চতুর্থাংশ ফোন সাপ্লাই দেয় এবং তাদের এই উত্থানটি ছিল প্রায় অবিশ্বাস্য।
তারা বেশিরভাগ ফোকাস করেছিল এগ্রেসিভ প্রাইজিং (আক্রমণাত্মক মূল্যনির্ধারণ) এর উপর এবং কোম্পানিটির অনলাইন বা সোশ্যাল মিডিয়ার ফ্যান-বেজ অতিদ্রুত বেড়ে যায় এবং তা তাদের ব্র্যান্ডকে চারদিকে ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করে।
শাউমি যে শুধু তাদের লোকাল ব্র্যান্ড MicroMax কেই চাপে ফেলেছিল তা নয় এটি ইন্টারণ্যাশনাল ব্র্যান্ড Samsung, Oppo, Vivo কেও চাপে ফেলে দিয়েছে। তখন Oppo একটু বেশিই চাপে পড়ে যায়। প্রচুর পরিমাণে প্রোমোশন এবং স্পন্সরশীপ নিয়েও তারা তাদের ১০% মার্কেট শেয়ারে ফিরে যেতে হিমসিম খাচ্ছিল। শুধুমাত্র হাজার হাজার টাকা ছিটিয়েও যখন তারা বাঁচতে পারছিল না, তখন নতুন কিছু করা ছাড়া আর কোন পথ ছিল না। তখন তারা নতুন একটি সিদ্ধান্ত নেয়।
শাউমি তাদেরকে ভারতে প্রতিষ্ঠা করার চার মাস পর ২০১৮ সালের মে মাসে Realme আত্মপ্রকাশ করে। এখানে বলে রাখা ভাল, Realme ছিল Oppo এর সাব-ব্র্যান্ড। এসেই বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধিত মোবাইল ব্র্যান্ড হিসাবে জায়গা করে নেয়। তারা শুধু মাত্র ভারতে শাউমির বৃদ্ধিই ব্যাহত করে নি সাথে সাথে একবছর বা তার কম সময়ে শূন্য থেকে বিশ্বের ৭ম বৃহৎ মোবাইল কোম্পানি হিসেবেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে।
ভারতে Oppo যখন শাওমির কাছ থেকে তাদের মার্কেট শেয়ার তুলে নেয়ার জন্য যুদ্ধ করছিল তখন তারা তাদের সাব ব্র্যান্ড হিসাবে Realme কে পরীক্ষামূলক ভাবে বাজারে ছাড়ে। Realme One ফোনটিতে নতুন ডিজাইন না করে Oppo তাদের লোগো রেখেই ফোনটি ডিজাইন করে এবং ফোনের কালারেরও তেমন কোন পরিবর্তন আনে নি। তারা ফোনটিকে একটু ব্যতিক্রম করে ডিজাইন করে। পুরাতন Oppo এর ডিজাইনে কিছুটা পরিবর্তন করে এবং দাম এমন ভাবে নির্ধারণ করে যাতে করে তারা শাউমিকে ধরতে পারে। এখানে বলে রাখা ভাল তারা Realme ঘne এর দাম শাওমির দামের কাছাকাছিই রাখে।
Oppo তাদের নতুন সাব-ব্র্যান্ড Realme লঞ্চ করার পরেও যখন কিছুটা অনিশ্চয়তায় ছিল। তাই তারা একই ফিচার দিয়ে Oppo F7 Youth নামে আরেকটি ফোন বাজারে ছাড়ে। সুতরাং এই ফোন বিক্রি হলেও এখানে Realme এর কোন কিছু আসবে যাবে না। আসলে Realme বৈপ্লবিক কোন কিছুই ছিল না। অন্যদিকে মনে হচ্ছিল তারা নিজস্ব কোন নাম না দিয়ে Redmi এর নাম নকল করে ফোন বানিয়েছে। তারপরেও তাদের ফোন সাড়া ফেলে দিয়েছিল। ফোনের দাম দশহাজার রুপি রাখার কারনে ভারতে বাজেট ক্রেতারা এটাকে খুব ভালভাবে গ্রহণ করে। Amazon এ ২ মিনিটে সব ফোন বিক্রি হয়ে যায় এবং ৪০ দিনে প্রায় ৪০০, ০০০ ফোন বিক্রি হয়।
Oppo তাদের প্রথম Realme ফোনে ব্যাপক সাড়া পেয়ে অবাকই হয়। কিন্তু তার মানে এই না যে তারা শুরুতেই শাওমিকে পেছনে ফেলে দিতে পেরেছিল। তবে এটা ঠিক তারা এটা বাস্তবায়ন করার একটা নীল নকশা পেয়ে গিয়েছিল।
Realme তে দুইটি ফিচার ছিল যার মাধ্যমে তারা শাউমির সাথে কম্পিট করে পারে। যেমন প্রথমটি হচ্ছে তাদের স্ট্রং প্রসেসর এবং তুলনামূলক কম মূল্য। আর এজন্য ভারতের স্বল্প বাজেটের ক্রেতাদের জন্য Realme ছিল প্রথম পছন্দ।
এই সময় Oppo এর গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট স্কাই লি, Oppo থেকে ইস্তফা নেয় এবং Realme কে আলাদা ব্র্যান্ড হিসাবে ঘোষণা দিয়ে সেখানে নেতৃত্ব করা শুরু করে। Realme একটি আলাদা স্বতন্ত্র ব্র্যান্ড হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে এবং নিজেদের ভিন্ন লোগো ও ডিজাইনের স্মার্ট ফোন নিয়ে আসে। তারা প্রাথমিক ভাবে ১৫ টি ফোন তাদের নিজস্ব ওয়েব-স্টোর এবং ২০ মার্কেটে শক্তিশালী রিলে-ইলার দিয়ে বাজারে ছাড়ে। মাত্র ১৮ মাসের মধ্যে তারা শাউমির সকল শক্তিশালী দিক গুলো, তাদের চোখ ধাঁধানো ডিজাইন, পারফর্মেন্স দিয়ে টেক্কা দিতে থাকে।
যেমন Realme এর X2 ফোনটিতে থাকছে Snapdragon প্রসেসর চারটি ক্যামেরা এবং সাথে সুপার ফাস্ট চার্জিং ফিচার যার মূল্যে ধরা হয়েছে মাত্র ৩৯৯ ইউরো এটার মাধ্যমেই আসলে প্রমাণ হয় তারা বর্তমানে দামের দিক দিয়ে এবং পারফর্মেন্সের দিক দিয়ে শাউমির সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য প্রস্তুত।
Realme সফলতার জন্য অবশ্যই টিমের দক্ষতা এ পরিশ্রম কাজ করেছে তারপরেও এটা একা করা সম্ভব হতো না যদি তাদের সাথে Oppo এর সম্পর্ক ভাল না হতো। কারণ এখনো OnePlus এবং Realme Oppo এর সাথে ভাল সম্পর্ক থাকায় অনেক সুবিধা পায়। যদিও এখন Realme তাদের নিজেদের ডিজাইনে ফোন তৈরি করে তবুও এখনো Oppo তাদের জন্য কালার ওএস (color OS) ডেভেলপ করে। এবং তারা ভারতে, চীনে, এবং বাকি দেশ গুলোতেও Realme এর ম্যানুফেকচারিং এখন সাপ্লাই চেইন সরাসরি দেখাশুনা করে।
আমার ধারনা মতে দুইটি ব্র্যান্ড যেমন Oneplus এবং Realme এর সফলতার জন্য যেমন Oppo দায়ী তেমনি এটি বিশ্বসেরা ম্যানুফেকচারিং এবং কোয়ালিটি কন্ট্রোল প্রেসেস হিসাবেও পরিচিত। যা সহজেই শাউমির সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে। শাউমি সব সময় হার্ডওয়্যার তৈরিতে এগিয়ে ছিল কারণ তারা কম খরচে ম্যানুফেকচারিং করতে পারতো। যদিও শাউমি অনেকবার বলেছে তারা হার্ডওয়্যার থেকে ইন্টারনেট সার্ভিসের মাধ্যমে বেশি মুনাফা পেতে চায় তারপরেও তারা হার্ডওয়্যারেই আক্রমণাত্মক মূল্য নির্ধারণ করে।
শাওমি তাদের বিজনেস অনেক টা সার্ভিসের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার কথা বললেও Realme এই জায়গায় একই অবস্থানে থাকে। এবং তাদের আসল উদ্দেশ্য ছিল ভারত ও অন্যান্য দেশ থেকে শাওমির আধিপত্য দুর করা এবং Oppo এবং Oneplus কে অর্থনৈতিক ভাবে সহায়তা করা। এবং তাদের এই পদক্ষেপ কাজ ও কর। তারা কোয়াটারে প্রায় 45 মিলিয়ন ফোন বিক্রি করে যা শাউমি থেকে অনেক বেশি।
এর মাধ্যমে বুঝায় তারা ফোন তৈরির উপাদান গুলোর দাম কমিয়ে এবং দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে শাউমিকে এ ধরনের চাপে ফেলতে পেরেছিল। আর এভাবেই Realme সফলতা Oppo এর চাহিদাকেও ছাড়িয়ে যায়। দিনের পর দিন এটা আরও সফলতা পাচ্ছে এবং আরও স্বাধীন হচ্ছে যেমনটি আগে করেছিল OnePlus।
আসল কথা প্রযুক্তি মার্কেট এমন একটা জায়গা যেখানে প্রতিনিয়ত ব্যবহারকারীদের চাহিদা এবং প্রয়োজন বিবেচনা করতে হয়। চাহিদাকে গুরুত্ব না দিয়ে এমন অনেক জনপ্রিয় কোম্পানি আজকে মার্কেট শেয়ার হারিয়েছে সেটা আমরা জানি। ব্যবহারকারীদের চাহিদার পাশাপাশি অরেকটি বিষয় দেখতে হয় সেটা হচ্ছে জনগণের ক্রয় ক্ষমতা। আবার কোন ডিভাইস কেনার ক্ষমতা জনগণের থাকলেই সেটা জনপ্রিয় হবে সেটাও বলা যাবে না জনপ্রিয় হতে হলে মূল্যের এবং পারফর্মেন্স এর সমন্বয় ঘটাতে হবে যা আমরা শাউমির ঘটনা থেকে বুঝাতে পারি।
আজকের মত এই পর্যন্তই আবার দেখা হচ্ছে অন্য কোন কোম্পানি নিয়ে অন্য অজানা তথ্য নিয়ে ততদিন ভাল থাকুন। আর অবশ্যই বর্তমান সমসাময়িক যে সংকট চলছে এর থেকে সাবধানে থাকুন। সবাই করোনা ভাইরাস থেকে নিজেকে এবং পরিবার পরিজনদের নিরাপদে রাখুন। আল্লাহ হাফেজ।
আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 627 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 118 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।