আমাদের দেশে গেম খেলেন এবং গ্রাফিক্সের কাজ করেন এমন ল্যাপটপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। গেম প্রেমীদের জন্য প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতাপ্রতিষ্ঠানগুলো বাজারে আনছে নতুন নতুন গেমিং ল্যাপটপ। গেমিং ল্যাপটপ সাধারণের ব্যবহারের জন্য নয়। এটি গেম প্রেমী এবং যারা গেমিং এ নতুন নতুন অভিজ্ঞতা নিতে চান তাদের জন্য তৈরি। ক্রমাগত নগরায়ন এবং শিল্পায়নের কারনে খেলার মাঠ নাই বললেই চলে, এই সংকটের কারনে বিনোদনের একটি বড় মাধ্যম হয়ে উঠেছে ল্যাপটপ। কষ্টের অর্থ খরচ করে ল্যাপটপ কেনার আগে কয়েকটি বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে।
গেম খেলার জন্য সবচেয়ে দরকারি জিনিসগুলোর মধ্যে একটি হল গ্রাফিক্স। গ্রাফিক্স কোয়ালিটিকে গেমিং ল্যাপটপের মূল প্রাণ বলা যেতে পারে। গেমিং তখনই আপনার কাছে প্রাণবন্ত হবে যখন আপনি ল্যাপটপের সামনে থেকেই গেমের মূল পরিবেশ উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন। এছাড়া প্রসেসর এর উচ্চমানের উপর গ্রাফিক্স কার্ড অনেকাংশেই নির্ভর করে। তবে প্রসেসর নিয়ে ভাবার আগে গ্রাফিক্স কার্ড কোয়ালিটি নিয়ে ভাবতে হবে। গেমিং গ্রাফিক্সের জন্য বর্তমানে এনভিডিয়ার বিকল্প নাই। জিফোর্স ১০৫০ সিরিজ থেকে শুরু করে এনভিডিয়া ট্রিক্স ২০৮০ সবক্ষেত্রেই গ্রাফিক্স এর জন্য সবচেয়ে ভাল এটি। ১০৫০ সিরিজ বাদে সকল এনভিডিয়া গ্রাফিক্স কার্ড আপনাকে দুর্দান্ত ভার্চুয়াল রিয়েলিটির আনন্দ দিতে পারে।
এখন প্রায় সকল ল্যাপটপেই সম্পূর্ণ এইচডি এবং অনেক নোটবুকে ফোর কে (4K) ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়। আপনার ডিসপ্লে রেজ্যুলেশন যত ভাল হবে, গেমিং এর সময় এটি আপনার গ্রাফিক্স কার্ডে তত চাপ প্রয়োগ করবে। এবং সেক্ষত্রে ডিসপ্লে এর বিষয়টা খেয়াল রাখতে হবে। গেমিং ল্যাপটপে রেজল্যুশন কোনোভাবেই যেন ১৯২০ বাই ১০৮০–এর কম না হয়। টপ এন্ডের ল্যাপটপগুলোয় কিউএইচডি (২৫৬০ বাই ১৪৪০) বা ফোরকে (৩৮৪০ বাই ২১৬০) রেজল্যুশন থাকে। তবে ডিসপ্লে যত উন্নত হয়, দাম তত বেশি হয়। যেমন এমএসআই টাইটান গেমিং ল্যাপটপে ফোরেক রেজল্যুশন আছে। এর দাম চার লাখ টাকার ওপরে। তবে হার্ডকোর গেমারদের ক্ষেত্রে ১৯২০ বাই ১০৮০ যথেষ্ট। স্ক্রিনের মাপ বড় হলে ভালো। ১৭ দশমিক ৩ ইঞ্চি মাপের ডিসপ্লেতে বিশেষ সুবিধা পাবেন গেমার। সেরা কিছু গেমিং ল্যাপটপে স্ক্রিন রিফ্রেশ রেট ১২০ হার্জ, কিছুক্ষেত্রে অবশ্য ১৪৪ হার্জের ল্যাপটপও বাজারে পাওয়া যায়। রিফ্রেশ রেট যত বেশি হবে আপনার ল্যাপটপে গেমিং ততটাই বেশি সাবলীল হবে। স্ক্রিন রেসপন্স টাইম পরিমাপ করা হয় মিলিসেকেন্ড স্কেলে। এর মাত্রা যত কম হবে ততই ভাল। কম রেসপন্স রেট নিশ্চিত করে আপনার পিক্সেল খুব দ্রুত সাদা থেকে কালো, কিংবা ধূসর বা অন্য যেকোন রঙে খুব দ্রুত পরিবর্তিত হতে পারে। যা আপনার গেমিংয়ের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি দিক।
বর্তমানে বাজারে দুই ধরনের প্রসেসর রয়েছে ইন্টেল এবং এএমডি। অ্যাসাসিনস ক্রিড বা ওয়াচডগসের মতো গেমগুলো খেলতে প্রচুর প্রসেসিং ক্ষমতার প্রয়োজন। ল্যাপটপে বাধামুক্ত গেমিং অভিজ্ঞতা পেতে ইনটেল কোর আই ৭ কোয়াড কোর প্রসেসর থাকা চাই। তবে খরচ কমের কথা ভাবলে, তাঁরা ডুয়াল কোর আই ৫ নিতে পারেন। এইচপির ওমেন সিরিজ বা লেনোভোর লিজিয়ন সিরিজে ইনটেল কোর আই ৭ কোয়াড কোর প্রসেসর আছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এ ধরনের প্রসেসরযুক্ত গেমিং ল্যাপটপের দাম হয় এক লাখ টাকার ওপরে। প্রসেসরের ক্ষেত্রে আপনি কোর আই ৩/৫/৭ ২য় অথবা ৩য় জেনারেশন নিতে পারেন। পারফেক্ট হবে কোর আই ৫ বাজেট যদি বেশি থাকা তবে কোর আই ৭ যদি বাজেট কম থাকে তবে কোর আই ৩ নিতে পারেন।
পারফমেন্স ভাল পেতে হলে ভাল মাদারবোর্ড প্রয়োজন। ভাল মাদারবোর্ডের জন্য পিসিআইই স্লটের সংখ্যা কয়টা আছে তা দেখে নিতে হবে। এখন সব গ্রাফিক্সকার্ডই পিসিআইই এক্স১৬ স্লটের। আপনি যদি একের অধিক গ্রাফিক্সকার্ড লাগাতে চান তবে আপনাকে একাধিক পিসিআইই স্লটের মাদারবোর্ড কিনতে হবে। এবং নতুন সব মাদারবোর্ডে ইউএসবি ৩.০ রয়েছে। সাউন্ডের ক্ষেত্রে দেখতে হবে তা ৬ কিংবা ৮ চ্যানেল সাপোর্ট করে কিনা। এছাড়াও কিছু মাদারবোর্ডে বিল্ট ইন ওয়াইফাই এবং ব্লুতুথ রয়েছে।
গেমিং ল্যাপটপ স্টোরেজে স্টোরেজ থাকা খুব প্রয়োজন। এসএসডি ও এইচডিডি দুটোই থাকতে হবে। কমপক্ষে এক টেরাবাইট হার্ডডিস্ক থাকতে হবে। অধিকাংশ গেম খেলার সময় ফাঁকা জায়গার প্রয়োজন হয়।
ভাল শব্দ গেমের পরিবেশে ঢুকতে সাহায্য করে গেমিং। ল্যাপটপে যদি গেমের আউটপুট শব্দ ভালো না থাকে, তবে গেমের মজা নষ্ট হয়। গেমিং ল্যাপটপ কেনার সময় অডিও যন্ত্রাংশের মান অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে। স্পিকার কোন পাশে আছে, সামনে না পাশে, সেটি দেখে নিতে হবে। স্পিকার সামনে থাকার সুবিধা বেশি।
ল্যাপটপ কেনার ক্ষেত্রে অবশ্যই উপরের বিষয় গুলোর দিকে নজর রাখতে হবে। ভাল ল্যাপটপ কেনার ক্ষেত্রে যাচাই বাছাই করা খুবই জরুরি।
আমি আহমেদ তানভীর স্মরণ। , Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 24 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।