আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয় চাঁদের মাটিতে প্রথম কে পা রাখেন? আপনি বলবেন নিল আর্মস্ট্রং। কিন্তু যদি বলি চাঁদের মাটিতে দ্বিতীয় কে পা রাখেন? অনেকেই সেটা বলতে পারবেন না। এমন কি চাঁদের মাটিতে প্রথম পা রাখা নিল আর্মস্ট্রং-কে নিয়ে সবাই যখন খুশিতে মাতোয়ারা, তখন নিশ্চয়ই বাজ অলড্রিন লোকজনের ঘাড়ে টোকা দিয়ে বলেন নি যে, এই যে শুনছেন? চাঁদের মাটিতে আমিও কিন্তু দ্বিতীয় পা রেখেছিলাম। তবে চাঁদের মাটিতে দ্বিতীয় কে পা রাখলো বা না রাখলো সেটা জনগণের মাথা ঘামানোর বিষয় না হলেও প্রযুক্তির জগতে স্মার্টফোন কোম্পানিগুলোকে সবসময়ই এরকম হিসেবের মধ্য দিয়ে যেতে হয়।
'প্রযুক্তি' শব্দটির সাথে 'প্রতিযোগিতা' শব্দটা কেনো জানি খুব ভাল যায়। কারণ, প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সবসময়ই প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করতে হয়। এখানে শীর্ষস্থানই শীর্ষ নয়। অনবরতই পালাবদল হবার সম্ভাবনা থাকে। আর সেটা নির্ভর করে জনগণের চাহিদা, রুচি, অভ্যাস সবকিছুরই উপর। এমনকি কোম্পানির বিজনেস পলিসির উপর। তাই, এই জগতে শীর্ষস্থান ধরে রাখলে যেমন সবাই তাকে মনে রাখে, তেমনি এর পরের স্থানগুলোকেও সবাই মনে রাখে। এক কথায়, মনে রাখতে হয়। কথা বলছি বিশ্বজুড়ে স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্রম কিছুদিন পরপরই অদল-বদল হচ্ছে। কথা বলবো আজ সেরকমই কিছু বিষয় নিয়ে। তো চলুন বন্ধুরা শুরু করা যাক।
ঠিক এই মুহূর্তে অ্যাপল-কে পিছে ফেলে যে কোম্পানিটি স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সেটি হলো চাইনিজ কোম্পানি হুয়াওয়ে (Huawei)। অবাক হচ্ছেন? অবাক হবার আসলে কিছু নেই। কারণ, হিসাবটা আমার না। হিসাবটা বিশ্বের অন্যতম মার্কেট রিসার্চ ফার্ম 'কাউন্টার পয়েন্ট'-এর। তারাই আসলে তাদের পরিসংখ্যান থেকে দেখিয়েছে যে অ্যাপল কে পেছনে ফেলে বিশ্বের দ্বিতীয় সবচেয়ে বড় স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের জায়গাটি ধরে রেখেছে হুয়াওয়ে। মাসিক শেয়ার বিক্রির তালিকাতে প্রথমেই ছিল স্যামসাং, এর পরপরই ছিল অ্যাপল-এর স্থান। কিন্তু হঠাৎ করেই অ্যাপলকে পিছে ফেলে সেই জায়গাটি দখল করে নিয়েছে হুয়াওয়ে। পরিসংখ্যাটি অবশ্য এ মাসের শুরুর দিকের। গত জুন ও জুলাই মাসে হুয়াওয়ে স্মার্টফোনগুলো বেশ উল্লেখযোগ্য হারে বিক্রি হয়। যে কারণে হুয়াওয়ে এই স্থানটি অর্জন করে। তবে নতুন আইফোন রিলিজের পর পরবর্তী পরিসংখ্যানে আরো ভালোভাবে দেখা যাবে হুয়াওয়ে'র অবস্থান কোথায় যায়। তবে যাইহোক, এটা হুয়াওয়ে'র জন্য সত্যিই অনেক বড় একটি ব্যাপার।
কাউন্টার পয়েন্ট-এর রিসার্চ ডিরেক্টর পিটার রিচার্ডসন বলেন,
"এটা অবশ্যই হুয়াওয়ে'র জন্য একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক। সবচেয়ে বড় চাইনিজ স্মার্টফোন ব্র্যান্ডটি এখন সারাবিশ্বে নিজের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে। আর গত তিন-চার বছরে এদের নেটওয়ার্ক ইনফ্রাস্ট্রাকচারের বিক্রিই বলে দেয় যে তারা স্মার্টফোন নির্মাণের জগতে কতটা উন্নতি করেছে"।
বিশ্বব্যাপী হুয়াওয়ে'র এই অর্জনটা মূলত কয়েকটি কারণে হয়েছে। আর সেটা হলো তারা তাদের স্মার্টফোন রিসার্চ ও উন্নতির লক্ষ্যে বেশ ভাল মাত্রায় বিনিয়োগ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। আর প্রায় দ্বিগুণ হারে তাদের মার্কেটিং ও চ্যানেল সম্প্রসারণ করেছে। তবে তাদের নিজস্ব বাজারে অতিরিক্ত নির্ভরতা ভবিষ্যতে হুয়াওয়ে'র উন্নতিকে নিচের দিকে ঠেলে দিতে পারে।
আর তাদের এই অর্জন ক্ষণস্থায়ী। কারণ, আইফোন ইতোমধ্যেই রিলিজ হয়েছে। তাই নতুন পরিসংখ্যানে কী হবে তা আগেই বলা যাচ্ছে না। তবে যে হারে তারা এগিয়ে যাচ্ছে তা মোটেই ফেলে দেবার মতো নয়। এমনকি অনেক কোম্পানির জন্য সেটা বেশ চিন্তারই বিষয়। তবে, দক্ষিণ এশিয়া, ইন্ডিয়া আর উত্তর আমেরিকায় তাদের দুর্বল উপস্থিতির কারণে অ্যাপল-কে টেক্কা দিয়ে দ্বিতীয় স্থান ধরে রাখা তাদের জন্য বেশ কঠিন হবে।
আর হুয়াওয়ে মূলত তাদের নিজস্ব বাজার চিনের জন্যই তাদের ডিভাইসগুলো তৈরি করে থাকে। যদিও ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে তারা তাদের অবস্থান বেশ ভালোভাবেই উপভোগ করছেএখন। তবে হুয়াওয়ে যতই এই জরিপে শীর্ষে থাকুক না কেন, এর প্রডাক্ট ফিচারগুলো বিশ্বের সেরা দশ স্মার্টফোন তালিকার বাইরে।
যাইহোক, এটা স্বীকার করতেই হচ্ছে যে হুয়াওয়ে বিক্রির দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আপাতত আছে। তবে আরো মজার ব্যাপার হলো, এর কোনো মডেলই সেরা দশের তালিকায় ভাগ বসাতে পারে নি। আর এটার কারণ হলো তারা চমক দেবার মতো কোনো ডিভাইসই তৈরি করতে পারেনি।
তবে হুয়াওয়ে'র কিছু ফিচার আছে যেগুলো বেশ উন্নত। কিন্তু সার্বিক দিক দিয়ে অন্যান্য ব্র্যান্ডের কাছে স্বীকৃতির দিক দিয়ে মার খেয়ে গেছে। তাই টিকে থাকতে গেলে হুয়াওয়ে'কে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।
আর এই বিষয়টি হুয়াওয়ে'ও উপলব্ধি করতে পেরেছে। তাই তারা তাদের দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। এ লক্ষ্যে তারা আগামী ১৬ই অক্টোবর তাদের নতুন ফোন মেট ১০ (Mate 10) বাজারে বের করতে যাচ্ছে। আর এই মেট ১০ (Mate 10) তৈরি হবে ১০ ন্যানোমিটার চিপসেট দিয়ে। যার নাম কিরিন ৯৭০ (Kirin 970)।
কয়েক বছর আগে হুয়াওয়ে হঠাৎ করেই অ্যাপল ও স্যামসাং এর সাথে প্রতিযোগিতা শুরু করে। আর বেশ ভাল সাড়াও ফেলে বিশ্বের বিভিন্ন অংশে। এবার তা একদম অ্যাপল-কে অতিক্রম করে যাওয়ায় বেশ ভালো একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাসই পাওয়া যাচ্ছে। তবে অন্যান্য সময়ের হিসাব থেকে এটা বেশ ভালোভাবেই বলা যায় যে অ্যাপল খুব সহজেই তাদের হারানো স্থান পুনরুদ্ধার করতে পারবে। আর যদি হুয়াওয়ে কোমর বেঁধেই অ্যাপল-এর সাথে লাগতে চায় তাহলে হুয়াওয়ে'রও বেশ পরিশ্রম করে যেতে হবে। কারণ, অ্যাপল দিন দিন চমকপ্রদ সব ফিচার গ্রাহকদের উপহার দিতে যাচ্ছে। দেখা যাক প্রযুক্তির এই প্রতিযোগিতা কতদূর গড়ায়।
পরিশেষে, টেকটিউনস হলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কে জানার এক সুবিশাল প্ল্যাটফর্ম।প্রতিনিয়তই থাকবেন নতুন নতুন জ্ঞানের মধ্যে। জানবেন অজানাকে। তবে হ্যাঁ। শুধু জেনেই বসে থাকবেন না। এই জ্ঞানগুলো ছড়িয়ে দিন তাদের নিকট যাদের কাছে এই টিউনগুলো পৌঁছানো সম্ভব হয় না। জ্ঞান নিজের কাছে রাখার জিনিস না। ছড়িয়ে দিন আশেপাশে যারা আছে সবার মাঝে। প্রযুক্তিকে ভালবাসুন, প্রযুক্তির সাথে থাকুন। টেকটিউনসের সাথে থাকুন।
আজকের মতো এ পর্যন্তই। সামনে আবারও হাজির হবো নতুন কোনো তথ্য নিয়ে। আর টিউনটি কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেন না। টিউন বিষয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে নিচে টিউমেন্ট বক্সে প্রশ্নটি করুন। এছাড়াও ফেইসবুকে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
ফেইসবুকে আমি: Mamun Mehedee
আমি মামুন মেহেদী। Civil Engineer, The Builders, Bogra। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 4 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 92 টি টিউন ও 360 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 12 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
আমি আপনার অবহেলিত ও অপ্রকাশিত চিন্তার বহিঃপ্রকাশ।