কেমন আছেন বন্ধুরা? আশাকরি ভাল। আজ লিখতে বসলাম প্রযুক্তি ব্যবহারের কিছু বিষয় নিয়ে যা আমরা প্রায়ই ভেবে থাকি বা করে থাকি। বন্ধুদের মুখে হয়তো প্রায়ই শুনেছেন যে ফোনের ব্যাটারির চার্জ শেষ করে তারপর চার্জে দিলে ব্যাটারি নাকি ভাল থাকে।
আরো শুনেছেন যে ফোন রুট করা বা ফোনের ফার্মওয়্যার পরিবর্তন বা জেইলব্রেকিং নাকি অবৈধ। আবার, বিজ্ঞাপণ দেখে নতুন ইন্টেল প্রসেসরের জন্য অনেকে অপেক্ষা করেন যা নাকি অনেক ফাস্ট।
প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে এসব ভুল ধারণাগুলো আমরা প্রায় সবসময়ই শুনে থাকি। শুধু শুনেই ক্ষান্ত হই না। বরং, সেটা বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে প্রচার করতেও পছন্দ করি। এতে করে সময় নষ্ট তো হয়ই, বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে আপনার সাধের যন্ত্রটির ক্ষতির কারণ হয়েও দাঁড়ায়। নিচে ১০ টা সেরকম কিছু বিষয়ই তুলে ধরছি।
এরকম ধারণা অনেকের মধ্যেই দেখা যায়। বাঙালীদের মধ্যে আরো বেশি। "আমার ফোনে দুইটা ফ্লাশ, আমার ফোনে তিনটা ফিঙ্গারপ্রিন্ট, চারটা সিম" ইত্যাদি ইত্যাদি। অনেকে আবার সাগ্রহে বসে আছেন, কবে বড় প্রসেসর আসবে, কবে বেশি RAM-যুক্ত অ্যান্ড্রয়েডটি বাজারে আসবে, কবে 1080p এর ফোনটা হাতে পাবেন ইত্যাদি ইত্যাদি। সত্যি কথা ভাই, আপনি আসলে সময়গুলো নষ্ট করছেন।
অন্তত আজকের দিনে হার্ডওয়্যার-এর বৈশিষ্টগুলো কোনো প্রভাবই ফেলে না। প্রসেসরগুলো এমনভাবে বানানো যা আপনার প্রয়োজনের চেয়েও বেশি কাজ করবে। আর ফোন? আজ আপনার মনোনীত ফোনটি পাচ্ছেন না বলে হায়-হুতাশ করছেন, অথচ কালকেই দেখবেন নতুন ও এর চেয়ে ভালো বৈশিষ্টের আরেকটা বাজারে চলে এসেছে।
একটা সপ্তাহও অপেক্ষা করতে হবে না। আপনার সাধের ফোনটি আজ হয়তো হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে, তো কালই নতুন আরেকটা বাজারে আসছে। ফোন, কম্পিউটার নিয়ে আশা আকাঙ্ক্ষা থাকবেই। তাই বলে অত চিন্তা করে মন খারাপ করে বসে থাকবেন না। নিশ্চিন্তে আপগ্রেড করুন। ভালকিছুই পাবেন।
প্রথমেই বলে নিই লসলেস মিউজিক হলো, সব ইফেক্ট সর্বোচ্চ কোয়ালিটিতে দিয়ে তৈরি অসঙ্কুচিত মিউজিক। এটির সাইজ সাধারণত MP3 এর চেয়ে অনেক বড় হয়। যদিও বিটরেটের কারণে মিউজিকগুলোর কোয়ালিটি আলাদা হতে পারে, কিন্তু এই পার্থক্যটা আপনি তখনই ধরতে পারবেন যদি আপনার কানটা ভালমানের হয়। আবার মিউজিশিয়ানরাও এ পার্থক্যটি ভালভাবে ধরতে পারেন। কারণ, এটা সাধারণভাবে শোনার চেয়েও বেশি কিছু। ভাল মানের কান থাকতে হবে।
সেই সাথে বড় ও ভাল মানের স্পিকার থাকতে হবে। আর সেরকম ক্লাসিক্যাল, জ্যাজ-টাইপ মিউজিকও থাকতে হবে। বিশ্বাস না করলে একটা টেস্ট করতে পারেন। টেস্টটির নাম ABX টেস্ট। আপনার মিউজিক ফাইলগুলো দিয়ে টেস্টটি করুন। ফলাফল দেখলে নিজেই অবাক হয়ে যাবেন। তবে তার মানে এই না যে আপনি ঐ বড় FLAC ফাইলগুলো ফেলে দেবেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন ফরম্যাটে প্রকাশের জন্য এটা দরকার।
শুধু অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরাই এই বাণীটা দ্বারা প্রভাবিত হন না। অনেক ফোন কোম্পানিগুলোও ব্যাটারির চার্জ দীর্ঘক্ষণ ধরে রাখার জন্য ও ফোনকে ফাস্ট করার জন্য টাস্ক কিলার ব্যবহার করতে পরামর্শ দেন। কিন্তু সত্য কথাটা হলো এটি ব্যাটারিতে কোনো ভূমিকাই রাখে না। বরং এটি RAM এর বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাবনা তৈরি করে। কারণ, টাস্ক কিলার নিজেও একটা অ্যাপ।
আপনি যদি কোনো টাস্ক কিলার-এ সুফল পান, তাহলে বুঝবেন আপনি আপনার প্রয়োজনীয় অন্য একটি প্রোগ্রাম বন্ধ করেছেন। এর বদলে আপনার ফোনটি রিবুট করুন। ক্ষতির হাত থেকে বাঁচবেন। আর যদি নিম্নমানের কোনো টাস্ক কিলার ইন্সটল করে থাকেন সাথে সাথে তা Uninstall করুন।
টাস্ক কিলার আপনার ফোনে আরো বহু সমস্যা তৈরি করে। তবে যদি আপনি অনেক পুরোনো ও বহুদিন আগের সফটওয়্যার ব্যবহার করেন সেক্ষেত্রে আপনি টাস্ক কিলার ব্যবহার করতে পারেন। কারণ, সেক্ষেত্রে অনেক অপ্রয়োজনীয় প্রোগ্রাম জমা হয়।
ফোন রুট করলে আপনি আপনার ফোনের ওয়ারেন্টি হারাবেন। আর লোকজন তো বলেই থাকে যে এটা নাকি অবৈধ যা পুরোপুরিভাবে ভুল। কপিরাইট অফিস আনুষ্ঠানিকভাবে বলেছে যে আপনি আপনার ফোনটি রুট করতে পারবেন। তবে অবশ্যই সেটা কোনো পাইরেট অ্যাপ দিয়ে না।
মজার ব্যাপার হলো ফোন রুট করার অফিসিয়াল অ্যাপ খুব কমই আছে। এজন্যই বলা হয়ে থাকে ওয়ারেন্টি হারানোর কথা। আর, না জেনে আইন অমান্য করার অনেক রাস্তা আছে। তাই আগে সেটা জানুন। তারপর জেনে ও বুঝে কাজ করুন।
এটা বলা হয়ে থাকে যে উইন্ডোজ পিসি'র চেয়ে ম্যাক বেশি নিরাপদ। এটা ম্যাক ইউজাররাই বেশি বলেন থাকেন। অনেকে তো আরো নির্দিষ্ট করে বলে থাকেন যে, ম্যাক ওএস এর 'ইউনিক্স' বা অমুক গ্রুপটা বেশি ভাইরাস থেকে নিরাপদ। অনেকে এটা নির্দ্বিধায় স্বীকার করে নেন। এর কারণ হলো ভাইরাসগুলোর জন্য ম্যাক'কে খুব একটা বড় টার্গেট হিসেবে দেখা হয় না।
অন্যভাবে বলতে গেলে, যতক্ষণ পর্যন্ত না ভাইরাসটি উইন্ডোজ'য়ে ব্যাপকভাবে ছড়াচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্তই ম্যাক নিরাপদ।
আর, এমন তো না যে বিশ্ববাসী ম্যাক'য়ের ম্যালওয়্যার দেখেনি। বরং এমনও অনেক সময় গেছে ম্যাক'কে বাজেভাবে মোকাবেলা করতে হয়েছে ম্যালওয়্যারকে।
যদি নিরাপদ ব্রাউজিং পদ্ধতি আর কমন সেন্সের অভাব থাকে তাহলে যে অপারেটিং সিস্টেমই নিন না কেন ম্যালওয়্যার রিমুভ করতে পারবেন না। অনেকে ভাবেন যে ১০০০-১২০০ টাকা দিয়ে অ্যান্টিভাইরাস'এর সিডি কিনলাম, তাই আমার পিসি নিরাপদ। কিন্তু এটা আসলে আপনার ব্যবহারের দক্ষতা ও যত্নের উপর নির্ভর করে।
দুই সপ্তাহ আগেই একটা পপআপ ম্যালওয়্যার দূর করেছি কমনসেন্স ব্যবহার করে। কোনোরকম ভাইরাস ধ্বংসকারী সফটওয়্যার ছাড়াই। তাই বলে এই না যে কোনো ইমেইল ভাইরাস আপনার উইন্ডোজ ব্যবহারকারী বন্ধুকে ফরোয়ার্ড করে দেওয়ায় কোনো বাঁধা নেই। অনেক কিছুই আছে যা উইন্ডোজ ও ম্যাকভেদে ভিন্ন।
আপনি যত সতর্কই হোন না কেন, কখনও কোনো যন্ত্র ভাঙেন নি এমন রেকর্ড নেই। ছোটবেলায় খেলনা গাড়ি দুইদিন খেলার পরই ভেঙে ফেলেছেন। আর বড়বেলায় গার্লফ্রেন্ডের সাথে ঝগড়া করে কতবার যে ফোনটা আছাড় মেরেছেন তার সহীহ হিসাব আপনারই জানা নেই।
তাই আপনার মনে হতেই পারে, ফোন তো আছাড় দিতেই হয়, তাহলে বেশিদিনের ওয়ারেন্টি দেখে কিনি। অনেকদিন পর্যন্ত আছাড় দেয়া যাবে। সত্যি কথা বলতে ওয়ারেন্টি'তে মূলত দায় সাড়া কাজ করা হয়। তারা কোনোমতে কাজ চললেই কাজ শেষ করে আপনাকে তা হ্যান্ডওভার করে।
আর এরকম এলোমেলো কাজের কারণে আপনার যন্ত্রটির আরো ক্ষতি হবার সম্ভাবনা থাকে। বর্ধিত ওয়ারেন্টির বদলে আপনার ওয়ারেন্টি ফান্ডটিকে বাড়ান। কারণ, বেশিরভাগই সময়ই ওয়ারেন্টির পর আমরা আমাদের যন্ত্রটি আগের মতো সুবিধাজনকভাবে ব্যবহার করতে পারি না বা আগের মতো মনে হয় না।
ল্যাপটপের জন্য ব্যাটারি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর আপনি যেভাবেই হোক চান যে যেকোন উপায়ে হলেও যেন ব্যাটারি ভাল থাকে। এটা একটা চরম ভুল ধারণা যে আপনাকে প্রতিবার চার্জ শেষ করে তারপর আবার চার্জে লাগাতে হবে। হুম, অনেক আগের কিছু নিকেল-ক্যাডমিয়াম ব্যাটারিতে মেমরি ইফেক্টের কারণে তা করতে হতো। তবে, বর্তমানকালের লিথিয়াম ব্যাটারিতে সে ধরনের কোনো ইফেক্ট নেই। বর্তমান ব্যাটারিগুলোর অনেক কম পরিচর্যা করতে হয়। অতটা চিন্তাও করতে হয় না।
আপনারা সবাই জানেন যে পাবলিক নেটওয়ার্কের নিরাপত্তা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অনেকেই এ বিষয়ে কিছু ভুল ধারণা মনে লালন করে থাকেন। পাসওয়ার্ড দেয়া মানেই যে নিরাপদ তা ঠিক নয়। বাড়ির ক্ষেত্রে আপনি বলতে পারেন যে এটা বাহিরের হ্যাকারদের থেকে নিরাপদ। কিন্তু কোনো কফিশপ বা হোটেলে এটা খুবই অনিরাপদ। এর দ্বারা যে কেউই অনেক জটিলতা তৈরি করতে পারে।
তাই বাড়িতে না থাকলে অবশ্যই নিজেকে রক্ষা করে চলুন এ বিষয়ে। কারণ, আপনি যে হোটেল বা কফিশপে বসে আছেন, আপনি সেটা সম্পর্কে জানেন কম। যে পাবলিক নেটওয়ার্কটি ব্যবহার করছেন, তা সম্পর্কে জানেন আরো কম। আর আপনার সাথে আরো যারা সেটি ব্যবহার করছে, তাদের সম্পর্কে কিছুই জানেন না।
আজকাল প্রচুর বিটটরেন্ট ব্যবহারকারীরা বিভিন্ন কারণে তাদের নজরদারী চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে এনক্রিপশান চালু করে এবং পিয়ারব্লক ব্যবহার করে অনেকেই চান যাতে তাদের ডাউনলোডগুলো কেউ না দেখতে পায়। কিন্তু সত্য কথা বলতে, এটা আপনাকে অজ্ঞাত (Anonymous) রাখতে পারে না, এটি শুধুমাত্র আপনার আইএসপি-কে ঐ আওতার বাইরে রাখে। আর পিয়ারব্লক এক্ষেত্রে ততটাও উপযোগী নয়।
আপনি যদি সত্যিই অজ্ঞাত (Anonymous) থাকতে চান, তাহলে আপনাকে ভিপিএন (Virtual Private Network) বা বিটিগার্ড (BTGuard)-এর মতো প্রক্সি সার্ভিস ব্যবহার করতে হবে। আপনি চাইলে প্রাইভেট ট্র্যাকারও ব্যবহার করতে পারেন। সেগুলোর আরো বিশেষ সুবিধা আছে। তবে অন্যান্য পদ্ধতিগুলোর মতো এটা অতটা নিরাপদ নয়।
এটা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা মনে হয় সবচেয়ে বেশি। অনেকে আছেন যারা সারাদিন কম্পিউটারের স্পিড বাড়াতে বুস্টআপ সফটওয়্যার ব্যবহার করেন। টুইকিং সফটওয়্যার ব্যবহারের উদ্দেশ্য হলো কিছু ক্ষুদ্র পরিবর্তন ঘটিয়ে কম্পিউটারের পারফর্মেন্স ঠিক রাখা।
সেই ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি অনেকেই আছে যারা কম্পিউটার চালু করার পর ৫০ বার করে রিফ্রেশ করে। তাদের ধারণা, যতবেশি রিফ্রেশ করা যাবে কম্পিউটার ততবেশি সুপার ফাস্ট হবে। স্পিড বাড়াতে চাইলে হার্ডওয়্যার আপগ্রেড করুন, নিয়মিত কম্পিউটারের যত্ন নিন। নিয়মিত পরিচর্যা
করলে আপনার অতবার নতুন করে উইন্ডোজ দেবারও প্রয়োজন হবে না। আর টুইকিং সফটওয়্যার আপনার যন্ত্রের আহামরি কোনো পরিবর্তন আনতে পারে না। টিউনটি কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না। আর টিউনটি সম্পর্কে কোনো মতামত থাকলে টিউমেন্ট বক্সে টিউমেন্ট করুন। ভাল থাকবেন সবাই। ধন্যবাদ সবাইকে।
আমি মামুন মেহেদী। Civil Engineer, The Builders, Bogra। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 92 টি টিউন ও 360 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 12 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
আমি আপনার অবহেলিত ও অপ্রকাশিত চিন্তার বহিঃপ্রকাশ।
দারুন বলেছেন