সুপ্রিয় টেকটিউনস কমিউনিটি, সবাইকে আন্তরিক সালাম এবং শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আধুনিক প্রযুক্তি বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংযোজন, প্রসেসর দুনিয়ায় নতুন দিগন্তের সূচনাকারী প্রসেসর, ইনটেল কোর এম সম্পর্কে আমার A-Z মেগাটিউন।
প্রযুক্তির দুনিয়ায় স্মার্টনেস কথাটির সাথে ওৎপ্রোতভাবে যে বিশেষণগুলো জড়িয়ে থাকে সেগুলো হলো- স্লিমনেস, লাইটনেস এবং কম তাপ উৎপাদি বৈশিষ্ট্য। যে কারনে আমরা অ্যাপলের ম্যাকবুক, স্যামসাং এর পাতলা স্মার্টফোন ইত্যাদি ডিভাইসগুলোকে সত্যিকারের স্মার্ট ডিভাইস বলে চিহিৃত করে থাকি। কারন এগুলো হালকা পাতলা ধরনের এবং কম তাপ উৎপাদন করে বলে অনেক বেশি ব্যবহার বান্ধব। আজকের টিউনের আলোচ্য বিষয় প্রসেসর সম্পর্কিত। প্রসেসর সম্পর্কে আপনারা নিশ্চয় আমার আগের টিউনগুলো থেকে বাংলা ভাষায় পরিপূর্ণ তথ্য পেয়েছেন। তবে সেই টিউনগুলো মিস করে থাকলে নিচের লিঙ্কগুলো থেকে দেখে নিতে পারেন।
আমরা জানি কম্পিউটারে যে পরিমাণ তাপ উৎপন্ন হয় তার সিংহভাগ আসে কম্পিউটার প্রসেসর থেকে। স্মার্টফোনের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। অনেকেই স্মার্টফোনে রুট এক্সেস পাওয়ার পরে থার্ডপার্টি সফটওয়্যার ব্যবহার করে ওভার ক্লকিং করে ফোনের স্পিড বৃদ্ধি করার চেষ্টা করেন। কিন্তু ফোনের স্পিড আপাতদৃষ্টিতে বেশি মনে হলেও প্রসেসরের যে বারোটা বাজে সেটা হয় তো খেয়াল করেন না। যাহোক, এসব আলোচনা আজ না করলেও চলবে। বর্তমানে মোবাইলফোন টেকনোলজি এবং কম্পিউটার টেকনোলজি একই সূত্র ধরে অগ্রসর হচ্ছে। ফলে তাদের মাঝে একটা সমন্বয় সাধন করা এখনকার যুগের দাবি। ঠিক এরই ধারাবাহিকতায় ইনটেল তৈরী করেছে তাদের লেটেস্ট প্রসেসর ‘কোর এম’। আজকের টিউনটিতে আমরা ইনটেল ‘কোর এম’ প্রসেসর সম্পর্কে ব্স্তিারিত জানবো।
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে ইন্টেলের এই প্রসেসরটিকে আল্ট্রা মোবাইল ডিভাইসগুলোর জন্য (ল্যাপটপ, স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, নেটবুক ইত্যাদি) উন্মোক্ত করা হয়। আর এর পর থেকেই ইনটেল কোর এম প্রসেসরটি হালের সবচেয়ে আলোচিত প্রসেসর হিসাবে জায়গা করে নেয়। কারন বর্তমান সময়ে আধুনিক ডিভাইসগুলোর অন্তপ্রাণ এই ইনটেল এর তৈরী নতুন প্রসেসর। পারফোরমেন্স এবং শক্তি সাশ্রয়ের উপর দৃষ্টিরেখে এই প্রসেসর খুব অল্প দিনের মধ্যেই কম্পিউটার এবং মোবাইল ডিভাইসের দুনিয়ায় নিজের শক্ত অবস্থান তৈরী করে ফেলেছে। যদিও এই প্রসেসরটি খুব বেশি স্পিড নির্ভর না তবুও পারফোরমেন্স এর জন্য এটি অনন্য। আমরা জানি কাজের জন্য স্পিডের চাইতে পারফোরমেন্স অনেক জরুরী বিষয়।
এই প্রসেসরটির মূলত খুব কম শক্তি ব্যয় করে চলতে পারে। এবং প্রসেসরটি তার কার্য সম্পাদনের জন্য খুব কম তাপ উৎপন্ন করে। এতোটাই কম তাপ যে, প্রসেসরকে ঠান্ডা রাখার জন্য বাড়তি কোন কুলিং ফ্যান সংযুক্ত করতে হয় না। এই কারনেই খুবই পাতলা ডিভাইস যেমন অ্যাপল ম্যাক, আসুসের আল্ট্রাথিন নোটবুক, ট্যাবলেট কিংবা স্মার্টফোনের জন্য প্রসেসরটিকে বাছায় করা হয়েছে। এছাড়াও পিসির জন্য তৈরী প্রসেসরটি মাত্র ১৩.১ মিলিমিটার পুরু। যার কারনে যে ডিভাইসে এটি ব্যবহার করা হয় তার পুরুত্ব খুব বেশি হয় না। মানে ইনটেল কোর এম প্রসেসর ব্যবহার করে আল্ট্রাথিন ডিভাইস তৈরী করা যায়।
ইনটেল কোর এম প্রসেসরটি হলো ইনটেল এর প্রথম প্রসেসর যেটাতে ইনটেল বেইজড ১৪ ন্যানোমিটার ব্রডওয়েল আর্কিটেকচার ব্যবহার করা হয়েছে। ইনটেল ১৪ ন্যানোমিটার প্রসেসর (আগের ২২ ন্যানোমিটার প্রসেসরের তুলনায়) খুব ছোট ট্রানজিস্টর চিপ তৈরী করতে পারে। যারা জানেন না তাদের বলছি, একটি ইনটেল এম ডুয়েল কোর প্রসেসরে এরকম ১.৩ বিলিয়ন (১৩ কোটি) ট্রানজিস্টর থাকে। যাহোক, যেহেতু ইনটেল এম এর ট্রানজিস্টরগুলো আকারে ছোট তাই এগুলো একটিভেট করতে খুব বেশি বিদ্যুতের প্রয়োজন হয় না (৫০% বিদ্যুত সাশ্রয় হয়)। আর এই কারনে এগুলো অন্য প্রসেসরের তুলনায় প্রায় ৬০% কম তাপ উৎপন্ন করে ফলে ব্যাটারী লাইফ প্রায় দ্বিগুন বেড়ে যায়।
ইনটেল প্রসেসর এম প্রযুক্তির দুনিয়ায় নতুন দিগন্তের সুচনা করলেও এটা অন্য যেকোন হাই কোয়ালিটি প্রসেসরের তুলনায় ১৫% ধীর গতিতে কাজ করে। তবে কাজের পারফোরমেন্স হার বেশি। মানে কখনো ল্যাগিং করে না, হ্যাঙ হয় না কিংবা কাজের গতিতে আপ-ডাউন করে না। এটার স্পিড মাঝারী মানের। যার অর্থ আমি এভাবে দাড় করাতে পারি, এটি i3 প্রসেসরের চাইতে দ্রুতগতির কিন্তু i7 প্রসেসরের চাইতে একটু ধীর গতির। যাহোক, সব বিবেচনা করে আমি সারসংক্ষেপ হিসাবে যে পয়েন্টগুলো পেয়েছি সেগুলো নিচে উল্লেখ করছি...
আমি আগেই বলেছি ইনটেল এর তৈরী অন্যান্য প্রসেসরগুলোর মধ্যে কোর এম প্রসেসর মাঝামাঝি অবস্থানে রয়েছে। তবে এটার মূল বিশেষ্যত্ব হলো এর ব্যাটারী লাইফ এবং স্পিড এর মাঝে সুসামঞ্জস্যতা। একটি ৪ বছরের পুরাতন ইনটেল কোর i5 ল্যাপটপের সাথে ইনটেল কোর এম প্রসেসরের তুলনা করে দেখা গেছে এটি দ্বিগুণ গতিতে অফিস অ্যাপ্লিকেশন, ৭গুন দ্রত প্রাফিক্স পারফোরমেন্স এবং এক্সট্রা ৪ ঘন্টা বেশি ব্যাটারী ব্যাকাপ দিতে সক্ষম হয়েছে।
তবে কোর এম তাদের জন্য না যাদের অনেক হাই পাওয়ার দিয়ে ডিভাইস চালনা করতে হয়। মূলত বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ ইউজারের জন্য কোর এম উপযোগী হলেও যারা অনেক বেশি ভারী কাজ করেন তাদের জন্য আমার মনে হয়না কোর এম প্রসেসর খুব বেশি উপকারে আসবে। তবে প্রসেসর এম এর যাত্রা তো কেবল শুরু। আগামী দিনগুলোতে এটা আরও কী ধরনের পরিবর্তন আনে সেটাও তো দেখার বিষয়।
বর্তমান সময়ের হালকা পাতলা ল্যাপটপ এবং মোবাইল ডিভাইসগুলোতে মূলত কোর এম প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে। বর্তমান সময়ে বহুল পরিচিত এবং আলোচিত ব্র্যান্ডগুলোর অধিকাংশই কোর এম প্রসেসর দিয়ে তৈরী ডিভাইসগুলোকে বাজারে ছেড়েছে। নিচে পরিচিত কয়েকটি ডিভাইস এর নাম এবং তাদের কিছু বৈশিষ্ট্য তুলে ধরছি।
আপনি যদি অনেক বেশি সৌখিন হয়ে থাকেন। আপনি যদি স্মার্ট এবং হালকা পাতলা ডিভাইসে বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। তাছাড়া আপনার কাজগুলো যদি ওয়েব ব্রাউজিং, ডকুমেন্ট এডিটিং কিংবা হালকা পাতলা গ্রাফিক্সের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকে তাহরে আপনার জন্য কোর এম প্রসেসরের ডিভাইস বিশেষ উপযোগী। তাছাড়া ওয়েব ডেভেলপারদের জন্যও এটা অনেক বেশি উপযোগী। কারন এই প্রসেসরের ল্যাপটপ যেকোন জায়গায় ব্যবহার করা যাবে। এবং সেই সাথে এটা হালকা পাতলা এবং অনেক বেশি ব্যাটারী ব্যাকাপ দিতে সক্ষম।
কিন্তু আপনি যদি একজন হার্ডকোর গেইমার হয়ে থাকেন, কিংবা 3D ভিডিও এবং গ্রাফিক্স নিয়ে কাজ করেন তাহলে আপনার জন্য প্রসেসর এম দ্বিতীয় পছন্দের তালিকায় রয়েছে। অন্যান্য হাই পাওয়ার কনজ্যুমার প্রোডাক্টগুলোকে আপনি পছন্দ করতে পারেন। তবে সবার উপরে রয়েছে আপনার ব্যক্তিগত পছন্দ। সেটা যেটাতে সায় দেয় সেটাই করা উচিত। কারন মোটামুটি মানের সব কম্পিউটারে সব ধরনের কাজ করিয়ে নেওয়া যায়।
টিউনটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে অথবা বুঝতে যদি কোন রকম সমস্যা হয় তাহলে আমাকে টিউমেন্টের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন না। কারন আপনাদের যেকোন মতামত আমাকে সংশোধিত হতে এবং আরো ভালো মানের টিউন করতে উৎসাহিত করবে। আর টিউনটিকে মৌলিক মনে হলে এবং নির্বাচিত টিউন হওয়ার উপযুক্ত মনে হলে নির্বাচিত টিউন মনোনয়ন দিতে ভুলে যাবে না যেন। সর্বশেষ যে কথাটি বলবো, আসুন আমরা কপি পেস্ট করা বর্জন করি এবং অপরকেও কপি পেস্ট টিউন করতে নিরুৎসাহিত করি। সবার সর্বাঙ্গিন মঙ্গল কামনা করে আজ এখানেই শেষ করছি। দেখা হবে আগামী টিউনে।
আপনাদের জন্য » সানিম মাহবীর ফাহাদ
➡ ইমেইলে আমার সকল টিউনের আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুনঃ টেকটিউনস » সানিম মাহবীর ফাহাদ 🙄
আমি সানিম মাহবীর ফাহাদ। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 176 টি টিউন ও 3500 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 159 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আগে যা শিখেছিলাম এখন তা শেখানোর কাজ করছি। পেশায় একজন শিক্ষক, তবে মনে প্রাণে টেকনোলজির ছাত্র। সবার দোয়া প্রত্যাশি।
একি করেছেন ফাহাদ ভাই? এতো তাড়াতাড়ি আপনার আরও একটি মেগাটিউন পাবো সেটাতো কল্পনাও করতে পারিনি। ভাবছিলাম আগামী শুক্রবারে আপনার টিউনের দেখা পাবো। এ যে মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি! যাহোক, অসাধারন এই টিউনটির জন্য অন্তরের অন্তস্থল থেকে আপনাকে শুভেচ্ছা। আপনার টিউন ছাড়া কোন ভাবেই মন ভরে না। টেকটিউনসে আজকে লগইন করাটা অবশেষে স্বার্থক হলো। আপনার জন্য সব সময় শুভ কামনা।
টিউনটিকে প্রিয়তে রাখলাম এবং যথারীতি নির্বাচিত মনোনিত করলাম। এই ধরনের টিউনগুলোকে নির্বাচিত করা না হলে আশা মেটে না।