সুপ্রিয় টেকটিউনস কমিউনিটি, সবাইকে আন্তরিক সালাম এবং শুভেচ্ছা জানিয়ে আধুনিক বিশ্বের চালিকাশক্তি হতে চলেছে এমন সব চমকপ্রদ প্রযুক্তি সম্পর্কে আমার আজকের টিউনটি শুরু করছি।
যদি প্রশ্ন করি বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর (সায়েন্স ফিকশন) প্রযুক্তিগুলো কোন সময়ে বাস্তব জগতে চলে আসবে বলতে পারবেন? উত্তরে অনেকে চোখ কপালে তুলে প্রশ্ন করবেন, “কোন জগতে বাস করেন ভাই? কল্পনার প্রযুক্তিগুলো আসবে বলছেন কেন? ইতিমধ্যে তো তার অনেকগুলো চলেই আসছে”। যাহোক, জুল ভার্নের সায়েন্স ফিকশনগুলো যদি আপনারা পড়ে থাকেন তাহলে বুঝবেন কতো বছর আগে লেখা কল্পিত প্রযুক্তিগুলো আজ কতো সুন্দর ভাবে আমাদের বাস্তব জীবনে চলে আসছে।
তবে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো এই প্রযুক্তিগুলো আমাদের চমকিত করছে না। মনে হচ্ছে এগুলো তো হওয়ারই ছিলো। আজ যেটা কল্পনা কয়েকদিন পরে সেটা বাস্তবে রূপ নেবে এটাই স্বাভাবিক। মাঝে মাঝে ভাবি আজ থেকে শতবর্ষ কিংবা সহস্র বছর পরে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি কোন পর্যায়ে চলে যাবে। না সেটা দেখার সৌভাগ্য হবে, না কল্পনা করার।
আমাদের মস্তিষ্কের কল্পনা শক্তি গুলোও কতোই না সীমিত! তবে শত বর্ষ পরে নয়, আজ আমরা এমন সব প্রযুক্তি নিয়ে জানবো যেগুলো বর্তমান বছর কিংবা তারপরের বছরগুলোতে বিশ্বের প্রযুক্তি প্রেমিদের চালিকাশক্তি হিসাবে আবির্ভুত হবে। মানে এগুলো ছাড়া আধুনিক বিশ্ব কল্পনাও করা যাবে না। তো চলুন তাহলে আধুনিকতম বিশ্বে একবার পদার্পন করে নেই।
গ্রাফিন হলো একটি বহুচাক্রিক কার্বনজাত পদার্থ। এটা তৈরী হয়েছে গ্রাফাইট, চার্কোল (অতি মিহি কাঠ কয়লা), কার্বন ন্যানোটিউবস, এবং ফুলারিন এর সমন্বয়ে। ২০০৪ সালের পূর্বে প্রথম গ্রাফিন তৈরী করা হলেও বর্তমানে খুব ব্যাপক হারে গ্রাফিন তৈরীর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এর কারন হলো গ্রাফিন সব কিছুকেই একটি তুলনামূলক ভালো কন্ডিশনে এনে দেয়।
এটা আমাদের দ্রুতগতির ইন্টারনেটও দিতে পারবে। তাছাড়া এটি এতোটাই শক্তিশালী যে গ্রাফিন দ্বারা তৈরী বিল্ডিং সাধারন স্টীলের চাইতে ১০০গুন বেশি শক্তিশালী। এছাড়া এটাকে ফিল্টার হিসাবে ব্যবহার করা যায় যা দূষিত সমুদ্রের পানি এমনকি যেকোন বিষাক্ত পানিতে পরিশুদ্ধ করতে পারে।
সহজে নষ্ট হবে না এমন স্মার্টফোন তৈরীতে গ্রাফিন ব্যবহৃত হতে পারে। আমরা আসলে একদিনে গ্রাফিনের সব ব্যবহার বলে শেষ করতে পারবো না। কারন এর এতোগুলো বহুমুখি ব্যবহার রয়েছে যে সেগুলো প্রায় বর্ণনা করা অসম্ভব। ধারনা করা হচ্ছে সব ধরনের ক্ষেত্রে আগামীতে গ্রাফিন নেতৃত্ব দিবে। আগামী দিনে আমাদের বর্তমান দুনিয়া গ্রাফিন নির্ভর হয়ে যাবে। মানে যদি কখনো দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লব ঘটে তাহলে সেটা হবে গ্রাফিন নির্ভর। আমি অবশ্যই এটা মজা করে বলছি না।
আমরা বিভিন্ন মুভিতে বুদ্ধিমান বোবট দেখে থাকি। যারা মানুষের কমান্ড শুনে সব ধরনের কাজ করে দিতে পারে। যেমন আয়রন ম্যান মুভি যদি দেখে থাকেন তাহলে হয়তো খেয়াল করেছেন যে, কম্পিউটার হিরোর কমান্ড অনুযায়ী কাজ করতে পারে। তাছাড়া সায়েন্স ফিকশনগুলোতে আমরা মানুষের সাথে কথা বলতে পারে এমন কম্পিউটার (সিডিসি) এর কথা পড়েছি। এটা কেবলি এখন বিজ্ঞানিক কল্পকাহিনী না। খুব শীঘ্রই বাস্তবে রূপান্তরিত হতে যাচ্ছে এই প্রযুক্তি গুলো। বিশ্বাস হচ্ছে না? আরেকটু তথ্য দিলেই ব্শ্বিাস হয়ে যাবে।
উইন্ডোজ ১০ অপারেটিং সিস্টেমে যুক্ত হওয়া কর্টানার সাথে নিশ্চয় আপনাদের পরিচিত আছে। পরিচিত না থাকলেও এর কার্যপ্রণালী সম্পর্কে নিশ্চয় আপনারা অভিহিত আছেন। কর্টানাকে বলা হয় ভার্চুয়াল এসিস্ট্যান্ট। এটা মানুষের মতো বুদ্ধি দ্বীপ্ত অনেক কিছুই করতে পারে। হয়তো এখনো পর্যন্ত এটা দ্বারা আমাদের প্রত্যাশীত অনেক কিছুই আমরা পাচ্ছি না। তবে অদূর ভবিষ্যতে মানুষের সাথে ভাবের আদান প্রদান করতে পারে এমন রোবট এবং কম্পিউটার প্রোগ্রাম তৈরী করা হবে। কিছু কিছু প্রোগ্রামের (Siri, Google Now, Cortana ইত্যাদি) ডেভেলপমেন্ট তো এখনও চলছে।
যদিও এরকম প্রযুক্তি ইতিমধ্যেই তৈরী হয়েছে। আপনারা জানেন বর্তমান সময়ে জীবিত এবং কালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংস নিজে কোন কথা বলতে পারে না। কিন্তু সে যা চিন্তা করে কম্পিউটার সেগুলোকে ডিকোড করতে পারে। ঠিক এই বিষয়টার বিপরীত প্রযুক্তি নিয়ে এখন ব্যাপক হারে কাজ করা হচ্ছে। মানে হলো এখন আর কম্পিউটারকে মাউস কিবোর্ড এর সাহায্যে কমান্ড দিতে হবে না। আপনি শুধুমাত্র চিন্তা করবেন আর কম্পিউটার যে অনুযায়ী কাজ করে দিবে। কম্পিউটার আপনার চোখের ভাষা বুঝে তার নড়াচড়ার উপর ভিত্তি করে কাজ করতে পারবে। একটা গান আছে না, চোখ যে মনের কথা বলে। অনেকটা সেরকমই ব্যাপার আর কি!
প্রথমেই বলে রাখি রোবট বলেতে কেউ আবার শুধু মানুষের মতো হাত পা লাগানো যন্ত্রকেই বুঝবেন না। রোবট যেকোন আকৃতির হতে পারে। বর্তমানে অনেক বড় বড় শিল্প কারখানায় রোবট ব্যবহার হলেও এটা এখনো এতোটা ব্যাপক না। যা আছে সেগুলো কেবলি কর্মী রোবট। তাদের ভেতরে যে প্রোগ্রাম করা আছে তারা কেবল তাই করতে পারে। কিন্তু আগামী বছরগুলো বুদ্ধিমান রোবট তৈরী করা হবে। যারা নিজে নিজে অনেক কাজ করতে পারবে (যদিও সেগুলোর জন্যও প্রোগ্রাম লাগবে)। মানুষের অন্যতম সহযোগি হতে চলেছে আধুনিক বুদ্ধিমান রোবট। একজন সহকারী রোবট পেতে আপনি প্রস্তুত তো?
আমরা ইতিমধ্যেই তারবিহীন প্রযুক্তির সাথে পরিচিত। বিশেষ করে ওয়াই-ফাই এবং ব্লুটুথ নেটওয়ার্ক আমরা সবাই ব্যবহার করি। তাছাড়া ওয়্যারলেস মাউস, কিবোর্ড, হার্ড-ড্রাইভ এগুলো তো ব্যবহার করছিই। কিন্তু শুধুমাত্র তরঙ্গ স্থানান্তরের বিষয়গুলোতে তারবিহীন প্রযুক্তি সীমাবদ্ধ থাকলেও শক্তি স্থানান্তরে এখনো তারবিহীন প্রযুক্তি এতোটা জায়গা করে নিতে পারেনি।
কিন্তু আগামী কয়েক বছরে শক্তি স্থানান্তরে তারবিহীন প্রযুক্তি জায়গা করে নিবে। তাহলে আপনার বাসায় মোবাইল চার্জার থাকলেও আপনি বাসার বায়রে বসে শক্তি তরঙ্গ ব্যবহার করে মোবাইল ফোন চার্জ করতে পারবেন। তবে শক্তি স্থানান্তর মোটামুটি তড়িৎ চৌম্বকিয় আবেশ এর মাধ্যমে হবে। তাই খুব বেশি দুরত্ব থেকে ব্যবহার করা না গেলেও একেবারে মন্দ হবে না।
আমরা বাংলাদেশে সর্বোচ্চ ৩.৫ জেনারেশনের ইন্টারনেট ব্যবহার করছি। কিন্তু উন্নত বিশ্বে মোটামুটি ভাবে চতুর্থ প্রজন্মের ইন্টারনেট সেবা সবাই পাচ্ছে। কিন্তু খুব শীঘ্রই বিশ্বময় পঞ্চম প্রজন্মের নেটওয়ার্ক জায়গা করে নিবে। আমাদের বাংলাদেশেও হয়তো আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ৫জি নেটওয়ার্ক চলে আসবে। প্রযুক্তি কিন্তু খুব দ্রুতই অগ্রসর হচ্ছে।
আমি বরাবরই একটা কথা বলে থাকি যে আপনাকে যদি ২ বছর ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয় এবং তারপর জাগানো হয় তাহলে দুই বছর পরের প্রযুক্তি দেখে আপনার হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেতে পারে। তবে ৫ জি প্রযুক্তি আসলে ইন্টারনেট এর গতি দেখলে বাংলালিংক এর বিজ্ঞাপণের মতো আপনার মুখমণ্ডল বাঁকা হয়ে যেতে পারে।
টিউনটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে অথবা বুঝতে যদি কোন রকম সমস্যা হয় তাহলে আমাকে টিউমেন্টের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন না। কারন আপনাদের যেকোন মতামত আমাকে সংশোধিত হতে এবং আরো ভালো মানের টিউন করতে উৎসাহিত করবে।
আর টিউনটিকে মৌলিক মনে হলে এবং নির্বাচিত টিউন হওয়ার উপযুক্ত মনে হলে নির্বাচিত টিউন মনোনয়ন দিতে ভুলে যাবে না যেন। সর্বশেষ যে কথাটি বলবো, আশাকরি এবং অপরকেও কপি পেস্ট টিউন করতে নিরুৎসাহিত করি। সবার সর্বাঙ্গিন মঙ্গল কামনা করে আজ এখানেই শেষ করছি। দেখা হবে আগামী টিউনে।
আপনাদের জন্য » সানিম মাহবীর ফাহাদ
আমি সানিম মাহবীর ফাহাদ। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 176 টি টিউন ও 3500 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 159 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আগে যা শিখেছিলাম এখন তা শেখানোর কাজ করছি। পেশায় একজন শিক্ষক, তবে মনে প্রাণে টেকনোলজির ছাত্র। সবার দোয়া প্রত্যাশি।
বরাবরের মত খুব ভাল টিউন ।