সুপ্রিয় টেকটিউনস কমিউনিটি, সবাইকে আমার আন্তরিক সালাম এবং শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি মোবাইল ফোন চাজিং সম্পর্কিত মানুষের যাবতীয় ভ্রান্ত ধারনাকে সত্যের ছোঁয়া দিতে আমার আজকের টিউন।
বর্তমান সময়ে শিশু থেকে বৃদ্ধ প্রায় সবারই অন্তত একটা করে স্মার্টফোন রয়েছে। হাতের কাছে এরকম একটি অত্যাধুনিক ডিভাইস থাকায় ফোনের সাথে আমাদের সম্পর্কটাও যেন একটু বেশিই নীবিড় হয়েছে। এ কারনে সব সময় দেখা যায় আমরা স্টার্টফোন দিয়ে গেইমিং, সামাজিক সাইট, ইমেইল, নিউজ, সর্বোপরি ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত থাকছি।
ফোনের এই অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে খুব দ্রুতই শেষ হয়ে যাচ্ছে ব্যাটারীর চার্জ। অনেকের ধারনা স্মার্টফোনগুলোর চার্জ একদিনের বেশি থাকেনা। কিন্তু কেন থাকেনা সেটা কেউ বুঝতে চায় না। যাহোক, স্মার্টফোনের চার্জ খুব দ্রুত শেষ হওয়ার কারনে সেটাকে রিচার্জ করার প্রয়োজনটাও বেশি হয়। তাই অনেকেই সাথে করে অতিরিক্ত ব্যাটারী কিংবা চার্জার বহন করেন। কিন্তু আমাদের এই স্মার্টফোনকে চার্জ করা সম্পর্কে প্রচলিত রয়েছে কিছু ভ্রান্ত ধারনা, ভ্রান্ত তত্ত্ব এবং তথ্য।
দীর্ঘদিন ধরে চলা এই সব ভ্রান্ত বিশ্বাস অনেকের মনেই সত্যের মতো হয়ে দাড়িয়েছে। যাহোক, মোবাইল ফোনের এই লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারী সম্পর্কে আমাদের সব ভ্রান্ত বিশ্বাসকে ঝেড়ে ফেলে আজ আমরা সত্যটা জানার চেষ্টা করবো। কারন মিথ্যাকে হাজার বছর ধরে চর্চা করলেও সেটা সত্য হয়ে যেতে পারেনা। টিউনের প্রত্যেকটি বক্তব্য বিশ্বের ব্যাটারী বিশেষজ্ঞ দল থেকে পাওয়া, সুতরাং সন্দেহের কোন সুযোগ নেই।
আমরা প্রায় সবাই এই কথাটির সাথে পরিচিত আছি। খুব সম্ভবত প্রথম যখন রিচার্জেবল ব্যাটারী আবিষ্কৃত হয় তখন এই ধারনাটি তৈরী হয়েছিলো। কিন্তু প্রযুক্তির ক্রমবর্তমান বিকাশ এবং উন্নত ব্যাটারী তৈরী হলেও বহুদিনের সেই ভ্রান্ত বিশ্বাস এখনো মানুষের মনে গেঁথে রয়েছে। অনেকের মতে ব্যাটারী প্রথমে চার্জ হয় এবং তারপর সেটা আবার ডিসচার্জ হয়।
তাছাড়া দীর্ঘক্ষণ ব্যাটারী চার্জ করলে তার চার্জ ধারন ক্ষমতা কমে যায়। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতামত হলো, সারা রাত ধরে ফোন চার্জ করলেও কোন সমস্যা নেই। কারন ফোনের সাথে সংযুক্ত সিস্টেম খুব ভালো করেই জানে কখন চার্জ নেওয়া বন্ধ করতে হবে। তারমানে চার্জ ফুল হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্যাটারী আর চার্জ নিতে পারবে না।
কিন্তু সত্যিকার অর্থেই মাঝে মাঝে চিন্তিত হতে হয় যখন ফোনকে চার্জ দেওয়ার সময় অতিরিক্ত গরম হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে ফোনকে দীর্ঘক্ষণ চার্জ দেওয়ার প্রয়োজন হলে অবশ্যই একটি ঠান্ডা জায়গা বেছে নিয়ে তারপর চার্জ দিতে হবে। তাছাড়া ফোনে কোন প্রকার অতিরিক্ত কভার ব্যবহার করা যাবে না। কারন ফোনের ওভার হিটিং এর অন্যতম কারন হলো ফোনের ভেতর এবং বায়রে বায়ুচলাচল সঠিক ভাবে না করা। আর ফোনের কভার যে বায়ু চলাচলের অন্তরায় সেটা আমরা সবাই জানি।
আমি জানিনা এই ভ্রান্ত ধারনাটা কোথা থেকে এসেছে তবে আমি এই রকম বিশ্বাস অনেকের মাঝেই দেখেছি। তবে ব্যাটারী চার্জ করার পূর্বে সব চর্জ শেষ করার ফলে যতোটুকু না ভালো হয় তারচেয়ে খারাপ হয় বেশি। কারন এভাবে চার্জ করার ফলে ব্যাটারী অনেক বেশি আনস্টেবল হয়ে যায়।
ব্যাটারী বিশেষজ্ঞদের মতে ফোনের চার্জ কখনোই শেষ করা উচিত নয়। এবং যখন ফোনের চার্জ ৫০% থেকে ৮০% এর মধ্যে থাকবে তখনি সেটাকে চার্জ দেওয়া উচিত। তাহলে সময় কম লাগবে এবং ব্যাটারী দীর্ঘস্থায়ী হবে। ফোনে ডিপ চার্জ করা অর্থাৎ ফোনকে একেবারে চার্জশূণ্য করে সেটাকে অনেকক্ষণ ধরে চার্জ করা খুবই ক্ষতিকর।
মোবাইল কিংবা তার ব্যাটারী মোবাইলের সাথে থাকা চার্জারের থেকে অনেক বেশি দীর্ঘস্থায়ী হয়। মোবাইল চার্জার যেকোন সময় নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আর এরকম হলে আমরা বাজার থেকে একটা ননব্র্যান্ড কিংবা অন্য ব্র্যান্ডের চার্জার কিনে আনি। টাকা বাঁচানোর জন্য উক্ত ফোন কোম্পানির অরিজিনাল চার্জার কখনোই কেনা হয় না। আসলে ব্যাপারটা হলো ফোনের সাথে একই কোম্পানির যে চার্জার থাকে সেটাই ব্যাটারীর জন্য সর্বোত্তম। অন্য কোম্পানির চার্জার ব্যাটারী ঠিক ভাবে চার্জ করলেও ফোনের জন্য মারাত্বক ক্ষতির সৃষ্টি করতে পারে।
অন্য কোম্পানির চার্জার ব্যবহার করতে নিষেধ করার পেছনে বিশেষজ্ঞদের মতামত হলো, অন্য কোম্পানির চার্জার আপনার ফোনের ব্যাটারীর সঠিক নিরাপত্তার কথা ভেবে তৈরী করা হয়নি যেটা একই কোম্পানির চার্জারে করা হয়েছে। তারমানে অন্য চার্জার দিয়ে চার্জ করার সময় ফোন অতিরিক্ত গরম হতে পারে, আগুন লাগতে পারে এবং সর্বপরি ব্যাটারীর কর্মদক্ষতা কমিয়ে দিতে পারে।
এমন অনেক মোবাইল ফোন আছে সেগুলো কেনার পর থেকে কোনদিন বন্ধ থাকেনি। তাছাড়া যেগুলো বন্ধ হয়েছে সেগুলো হয়তো সিম পরিবর্তন করার সময়, ব্যাটারী চার্জ শেষ হওয়ার ফলে কিংবা হ্যাং হওয়ার কারনে বন্ধ হয়েছে। পরিকল্পিত ভাবে কখনো ফোনকে বন্ধ রাখা হয় না। আমি নিজেও কখনো রাখিনা, কারন এটাকে সত্যিকার অর্থেই ইউজলেস মনে হতো।
কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতামত হলো ব্যাটারী লাইফ দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য ফোনকে মাঝে মাঝে অফ করে কিছুক্ষণ পরে অন করতে হবে।
তবে আমার উপরোক্ত বক্তব্যের মানে এই না যে আপনি প্রত্যেকদিন ঘুমানোর আগে ফোন একবার বন্ধ করে চালু করবেন কিংবা দিনে ৩বার খাওয়ার আগে একবার করে নিয়ম মাফিক ফোন বন্ধ করে রাখবেন। আসল কথা হলো, এটাকে শুধুমাত্র একটা ভালো প্রাকটিস হিসাবে নিতে হবে।
যেমন সপ্তাহে একদিন ফোনটা বন্ধ করে চালু করলেই আপনার জন্য যথেষ্ট। বর্তমানে আমাদের মতো পুলাপাইনের মোবাইল তো দিনে ২ বার করে চার্জ না থাকার কারনে বন্ধ হয়। কিন্তু এটা ০২ নাম্বার টপিক্সের পরিপন্থী বিধায় কোন ভালো প্রাকটিস নয়।
সত্যি কথা বলুন তো, আমার এই টিউন দেখার আগে পর্যন্ত আপনার মনেও কি এই ধারনা ছিল না? আপনি হ্যাঁ কিংবা না যা খুশি বলেন না কেন আমি জানি আমাদের দেশে অধিকাংশ মানুষেরই একই ধারনা। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতামত হলো ফোন এবং চার্জার যদি একই ব্র্যান্ডের হয় তাহলে ফোনকে চার্জ দেওয়ার সময় ব্যবহার করলে কোন সমস্যা হবে না।
কিন্তু ফোনকে চার্জে দিয়ে কথা বলা ঝুকিপূর্ণ। কারন মাথার মস্তিষ্ক এবং কানের পাশে ক্রমাগত চার্জের প্রবাহ আপনার মস্তিষ্কের জন্য মারাত্বক ক্ষতির কারন হতে পারে।
তবে যেকোন থার্ডপার্টি চার্জার ব্যবহারের সময় কখনোই ফোন ব্যবহার করা উচিত নয়। কারন এ সময় বিস্ফোরন, ম্যালফাংশন যেকোন কিছু ঘটতে পারে। এছাড়াও ব্যাটারী এবং কম্পোনেন্টের ওভারহিটিং ও হতে পারে। যা আপনার শারীরিক সমস্যার কারন হতে পারে। যাহোক, ফোন চার্জ সম্পর্কিত প্রচলিত ভ্রান্ত ধারনা গুলোতে একটা সত্যের ছোঁয়া দিতে চেষ্টা করলাম।
আমি জানিনা আপনার মনে এর কোন দিকগুলো আগে থেকেই বদ্ধমূল ছিলো কিংবা আপনি এর চেয়েও বেশি ভ্রান্ত ধারনায় বিশ্বাসী কিনা। তবে আপনার বিশ্বাস যাই হোক না কেন সেগুলো আমাকে জানাতে পারেন নিচের টিউমেন্ট বক্সে।
টিউনটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে অথবা বুঝতে যদি কোন রকম সমস্যা হয় তাহলে আমাকে টিউমেন্টের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন না। কারন আপনাদের যেকোন মতামত আমাকে সংশোধিত হতে এবং আরো ভালো মানের টিউন করতে উৎসাহিত করবে।
সর্বশেষ যে কথাটি বলবো সেটা হলো, আশাকরি এবং অপরকেও কপি পেস্ট টিউন করতে নিরুৎসাহিত করি। সবার সর্বাঙ্গিন মঙ্গল কামনা করে আজ এখানেই শেষ করছি। দেখা হবে আগামী টিউনে।
আপনাদের জন্য » সানিম মাহবীর ফাহাদ
আমি সানিম মাহবীর ফাহাদ। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 176 টি টিউন ও 3500 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 159 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আগে যা শিখেছিলাম এখন তা শেখানোর কাজ করছি। পেশায় একজন শিক্ষক, তবে মনে প্রাণে টেকনোলজির ছাত্র। সবার দোয়া প্রত্যাশি।
উপকারী টিউনস।আমি সহ আরো অনেকেরই কাজে লাগবে।।।