এই সেই নারীরা যারা পাল্টে দিয়েছে আমাদের ইন্টারনেট ব্যবহারের ধরন! স্মরণীয়- বরণীয় সেই সব প্রযুক্তিপ্রেমী নারীরা পুরুষদের থেকে কোন অংশে কমে আছে এই নারীরা?

টিউন বিভাগ প্রযুক্তি কথন
প্রকাশিত
জোসস করেছেন

হ্যালো টেকটিউনস কমিউনিটি, কেমন আছেন সবাই? আমার আজকের টিউনে সবাইকে স্বাগতম। প্রযুক্তি এমন একটি বিষয় যেটার দক্ষতা আপনার জানার উপর নির্ভর করে। আপনি যদি ভাবেন গত ৪ বছর আমি প্রযুক্তির এইটা এইটা শিখে গেছি তাহলে হয়তো ভুল হবে। কারণ সেই বেশি প্রযুক্তির বিভিন্ন বিষয়ে এক্সপার্ট যিনি প্রতিদিন শিখে চলেছেন। যেকারনে অনেক গবেষণায় দেখা যায় মেয়েরা এই প্রযুক্তিতে অনেক বেশি পিছিয়ে।  😉

অনেক গুলো কারণ আছে এই প্রযুক্তিতে পিছিয়ে যাওয়ার পেছনে, তবে আমার কাছে এই আপডেট থাকা একটি অন্যতম কারণ মনে হয়। এখানে আমি মেয়েদের ছোট করছি না কোন ভাবেই, তবে মেয়েদের পরিবার, সংসার, সাথে আপন জনদের সামলাতে সামলাতে আসলে এতো বেশি আপডেট থাকতে একটু কষ্ট হয় আরকি।

মানে আমি বুঝাতে চাচ্ছি মেয়েরা আমাদের মতো সময় করতে পারলে তারাও প্রযুক্তিতে সমান বিচরণ করতে না পারলেও পিছিয়ে থাকতো না এতবেশি। একটু খেয়াল করবেন যে সব ছেলেরা প্রতিদিন প্রযুক্তির বিভিন্ন আপডেট রাখে না তারা কি প্রযুক্তিতে এগিয়ে? কখনও না! সেহেতু আপনাকে প্রযুক্তি, প্রোগ্রামিং বা প্রযুক্তির যেকোনো বিষয়ে দক্ষ হতে হলে আপনাকে প্রতিদিন শিখে যেতে হবে, যতো দিন আপনি নিজেকে দক্ষ হিসেবে তুলে ধরতে চান। কিন্তু এতো কিছু সামলে আমাদের মেয়ে জাতি এতো বেশি দক্ষ প্রযুক্তিতে হতে পারে না।  🙄

কিন্তু তারমানে কি প্রযুক্তিতে মেয়েদের অবদান শুন্য? অবশ্যই না। এমন কিছু নারী আছেন যারা এই বাঁধা বিপত্তি সামলে নিয়ে আধুনিক প্রযুক্তিতে অনেক বেশি অবদান রেখেছেন, যারা ইন্টারনেট ব্যবহারের ধরণই বদলে দিয়েছেন আজ আমরা তাদের সম্পর্কে জানবো। যেসব নারী না জন্মালে হয়তো আমরা কয়েক শো বছর এই প্রযুক্তিতে পিছিয়ে থাকতাম। আশাকরি, কারা সেই মহীয়সী নারী।  😈

যেসব মহীয়সী নারীরা আজকের ইন্টারনেট জীবনকে বদলিয়ে দিছেনঃ

১) রাডিয়া পার্লম্যান (Radia Perlman)

স্প্যানিং ট্রি প্রোটোকল (spanning-tree protocol (Ethernet)) তৈরির জন্য রাডিয়া পার্লম্যান বিখ্যাত হয়ে আছেন। তাঁকে নিয়ে না বললে আসলে আমার লেখাটাই বৃথা হয়ে যাবে, কারণ তাঁকে মাদার অফ ইন্টারনেট (the Mother of the Internet) বলা হয়। STP দুইটা কম্পিউটারের মধ্যে সম্পর্ক তৈরিতে ব্যবহারিত হয়। যেটার ব্যবহার আপনি বেশি দেখতে পাবেন Local Area Networks (LAN) এ যেখানে একটি নেটওয়ার্ক বা Ethernet মাধ্যমে আপনি একাধিক কম্পিউটারকে নেটওয়ার্ক করা হয়।

বড় বড় ফাইল এবং তথ্য আদান প্রদানের জন্য Ethernet এর খুব সহজ ব্যবহার ধরা হয়। একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এবং নেটওয়ার্ক ডিজাইনার হিসাবে রাডিয়া পার্লম্যান Transparent Interconnection of Lots of Links (TRILL) তৈরি করেন STP কে আরও সহজ বোধ্য করে তোলার জন্য।

২) এলিযাবেথ ফেইনলার (Elizabeth Feinler)

গুগল এবং গো ড্যাডির পূর্বে এলিযাবেথ ফেইনলার (Elizabeth Feinler) ইন্টারনেটের অগ্রদূত হিসাবে ধরা হয়। তিনি ১৯৭২ থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত Network Information Center (NIC) এর অধীন the Standford Research Institute (SRI)  তে ডিরেক্টর হিসাবে কাজ করেন। তিনি ARPANET ও পরিচালনা করতেন যেটা দেশের মধ্যে বিভিন্ন রিসার্চ সেন্টারকে যুক্ত করতেন, যেটাকে ইন্টারনেট আবিস্কারের মূল অগ্রগতি ধরা হয়।

Internet addresses or URLs ম্যানেজের দায়িত্ব তিনি সামলাতেন। সময়ের বিবর্তনে এটি Domain Name System (DNS) হয়ে আসছে।

৩) ক্যাটরিনা ফেক (Caterina Fake)

ক্যাটরিনা ফেকের তাঁর স্বামী Stewart Butterfield এর সাথে বিশ্বের নামকরা ফটো শেয়ারিং সাইট ফ্লিকার তৈরি করেন ২০০৪ সালে। ২০০৫ সালে ইয়াহু ফ্লিকার অধিকরণ করেন। ই-মেইল করে ছবি পাঠনো কতো কষ্টকর তা আপনি যারা পাঠিয়েছেন তারাই জানেন। তখন ফ্লিকার আমাদের কাছে খুব জনপ্রিয়তা পাই।

পরবর্তীতে অনেক Web 2.0 ফিচার আনা হয় যাতে ট্যাগ বা সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং করা যায়।

৪) মিটচেল বাকের (Mitchell Baker)

মিটচেল বাকের যিনি মজিলা ফাউন্ডেশনের এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। মজিলা প্রজেক্টে তিনি Netscapes টিম লিড দিয়েছেন। ওপেন সোর্স ওয়েব ব্রাউজার হিসাবে মোজিলাকে তিনি অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছেন।

আইনজীবী হিসেবে ট্রেনিং নিয়ে তিনি Netscape’s open source license সংগ্রহ করেন। পরবর্তীতে তাঁর পথ ধরে আরও অনেক ওপেন সোর্স সেবা তৈরি হয়। যেমন, GitHub, HTML5 and Android

৫) রাশমি সিনহা (Rashmi Sinha)

রাশমি সিনহা যিনি SlideShare এ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন এবং এলগোরিদম নিয়ে তিনি গবেষণা করেছেন যখন তিনি ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। তখন তিনি Uzanto নামের একটি কনসালটেন্সি দেন যেখানে eBay, AAA এবং Blue Shield এর মতো নামকরা প্রতিষ্ঠানও যুক্ত ছিল।

রাশমি সিনহা এবং তাঁর স্বামী Jon Boutelle একসাথে SlideShare প্রতিষ্ঠা করেন। যেটা প্রেজেন্টেশনের ধরণই বদলে দেয়। SlideShare এর সিইও ছিলেন তিনি আর সিটিও ছিলেন তাঁর স্বামী। পরবর্তীতে ২০১২ সালে LinkedIn  SlideShare ১০০ মিলিয়ন ডলারে কিনে নেয়।

৬) লেহ কালভার (Leah Culver)

Pownce এর নাম অনেকে জানিনা। কিন্তু এটি এক সময় টুইটারের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল। Pownce  প্রতিষ্ঠা করেন লেহ কালভার এবং এটির ধারণা থেকেই পরবর্তীতে ফেসবুক এবং টুইটার লিঙ্ক, ফটো, ভিডিও শেয়ার শুরু করে।

University of Minnesota তে কম্পিউটার সাইন্সের ছাত্র থাকা কালিন তিনি এই সোশ্যাল নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করেন আরও কয়েক জন সহ পাঠির সাথে। সাইটটি পাইথন প্রোগ্রামিং এ তৈরি ছিল।

৭) ম্যারিসা মেয়ার (Marissa Mayer)

বর্তমানে ম্যারিসা মায়ের ইয়াহুর প্রেসিডেন্ট এবং সিইও। পূর্বে তিনি ১৯৯৯ সালে গুগলের ২০ তম এমপ্লয়ি ছিলেন এবং তিনিই প্রথম সার্চ ইঞ্জিন মহিলা ইঞ্জিনিয়ার। মায়ের গুগলের গুরুত্বপূর্ণ সব কাজে যুক্ত ছিলেন। তাঁরমধ্যে  Google Search, Google News, Google Images, and Google Chrome।

তিনি এতো বেশি অভিজ্ঞ ছিলেন যে তিনি Vice President of Search Products and User Experience মনোনীত ছিলেন। Google Maps, Google Earth, Street View  এর প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন।

৮) মেনা ট্রট (Mena Trott)

ব্লগিং কে সহজ করার জন্য মেনার নাম স্বর্ণা ক্ষরে লিখিত থাকবে। ব্লগিং প্ল্যাটফর্মকে সহজ করার জন্য মেনা তাঁর পূর্বের স্বামী বেঞ্জামিনের সাথে Six Apart প্রতিষ্ঠা করেন। ব্লগিং সফটওয়্যারকে সহজ করার জন্য তিনি এখানে অনেক কাজ করেছেন। যেটা অনেকটা এখনকার ওয়ার্ডপ্রেসের মতো।

২০০৩ সালের আগে ব্লগিং মানে কোডিং তারপর ব্লগিং। আর এটাকে সহজ করার জন্য তিনি বিভিন্ন ব্লগিং টুল ব্যবহার করতে চেয়েছেন। তাছাড়া তিনি ব্লগিং কে অনলাইন হিসাবে গড়ে তুলতে চেয়েছেন। ২০১০ সালে Six Apart  VideoEgg এর  সাথে যুক্ত হন।

৯) সুসান ওয়য়াজকি (Susan Wojcicki)

গুগলের এই এমপ্লয়ি সার্চ ইঞ্জিন অ্যাডের অগ্রদূত। বর্তমানে (২০১৪ থেকে) ইউটিউবের সিইও হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। সুসান গুগল অ্যাড ডিপার্টমেন্টে কাজ করেছেন। সুসান গুগলের ১৬ নম্বর এমপ্লয়ি।

গুগলের অ্যাড ডিপার্টমেন্টে কাজ করায় তিনি AdWords এবং AdSense এ দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন। গুগলের এই অ্যাড যা তাঁর ৯৫% রেভিনিউ নিয়ে আসে। তাছাড়া ইউটিউব কেনার জন্য তাঁর ভূমিকা ছিল সব থেকে বেশি। ডাবল ক্লিক অ্যাডও তাঁর চিন্তার ফসল। তাছাড়া যে গুগল ডুডল দেখেন তাও তাঁর ভাবনা থেকে তৈরি।

কিছু অবাক করা থেকেই যায় আমাদের মনে, আগে কি জানতেন এতো সব নারীরা এই অনলাইন জগতে বিচরণ করে বেড়াচ্ছে? আপনার জন্য টিউমেন্ট অপশনে অপেক্ষা থাকবেই।  🙄

আর আমাদের দেশের আপুদের বলবো চলুন প্রযুক্তিতে এগিয়ে যায় সবাই হাতে হাত রেখে!

আমার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ সবাইকে।  😆

Level 2

আমি আইটি সরদার। Web Programmer, iCode বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 261 টি টিউন ও 1750 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 22 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

আমি ইমরান তপু সরদার (আইটি সরদার),পড়াশুনা করেছি কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি নিয়ে; পেশা কন্টেন্ট রাইটার এবং মার্কেটার। লেখালেখি করি নেশা থেকে ফেব্রুয়ারি ২০১৩ থেকে। লেখালেখির প্রতি শৈশব থেকেই কেন জানি অন্যরকম একটা মমতা কাজ করে। আর প্রযুক্তি সেটা তো একাডেমিকভাবেই রক্তে মিশিয়ে দিয়েছে। ফলস্বরুপ এখন আমার ধ্যান, জ্ঞান, নেশা সবকিছু...


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

Level 0

nice tune. even better than featured tune.

Level 0

Sundor tune

এক কথায় অসাধারণ নারীদের ভূমিকা টিউনার অসাধারণভাবেই তুলে ধরেছেন। ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।

ভাইয়া খুব ভালো টিউন

I thought, they (Women) might be related to technology in some average level.But I didn’t think that they would be in some of these high positions.Really amazed!

    @Arifur Rahman: They make a clear path for technology among us. So there have no way to keep confusion. Thay are all leading their own way to discover our technology world.
    Thanks a lot 😉

Nice

অসাধারন !
নুতুন কিছু জানলাম
ধন্যবাদ ভাই।

প্রযুক্তি জগতের নারীদের খোঁজখবর আমিও একটু বেশিই রাখি 😉 এই জগতে তাদের পদচারণা কম- তাই যাদের বিচরণ, তারা যে একেকটা বুলেট সেটা বহুদিন আগেই আমি টের পেয়েছি…..”সুসানের” কথা জানা ছিল না আগে। “ক্যাটরিনা” আর “রেডিনা”ক ভাল পাইলাম……তবে ফেবুর “শেরিল স্যান্ডবার্গ” কেন নাই ভাই? ❓

প্রিয়তে নিলাম আর টিউনের জন্য একরাশ ধইন্যা 🙂

Level 0

vai tune ta obossoi valo. kintu nijer tune bole narider eto andha vao dawar manei hoina. jader nam bollen era chara kivabe technology 100 yrs pichiye thakto bujhlam na! 100yrs koto din a hoi amr mone hoi apmar jana nai. r aj theke 100yrs agey ajker bortoman jinis gular koita jinis e ba cilo tokhon? technology etota developed hoice last 50yrs a. r apni 100 yrs piche chole gecen!! haha

Level 0

oh sry apni to not just 100yrs na!! koyeksho bochor bolecilen!! vai internet jinis ta born holo koto bochor hoice apnar jana ace? kindly google it.