-------------------------- بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ --------------------------
সুপ্রিয় টেকটিউনস কমিউনিটি সবাইকে আমার সালাম এবং শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমার আজকের টিউন।
দ্রুত গতির এবং একটি নিরাপদ ইন্টারনেট সংযোগ আমাদের মৌলিক চাহিদার মতো একটি ব্যাপার। শুধু আমাদের দেশ নয় বিশ্বের প্রত্যেকটি দেশে ইন্টারনেট মানুষের মৌলিক চাহিদার মতো হয়ে দাড়িয়েছে। বিশ্বে এমন অনেক মানুষ আছে যারা একবেলা না খেয়ে অনায়াসে থাকতে পারবে কিন্তু একবেলা ইন্টারনেট ব্যবহার না করলে তাদের জীবন পানশে হয়ে যায়। যাহোক বিশ্বের প্রত্যেকটা মানুষের ইন্টারনেটের এই চাহিদার কথা চিন্তা করে এবং তাদের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন হিসাবে বিশ্ব ইন্টারনেট ইঞ্জিনিয়ারিং টাস্কফোর্স (Internet Engineering Task Force - IETF) ইন্টারনেট ব্যবহারকে দ্রুতগতির এবং নিরাপদ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ইন্টারনেট ইঞ্জিনিয়ারিং টাস্কফোর্স এর সম্মানিত প্রেসিডেন্ট ঘোষনা করেছে খুব দ্রুত Hypertext Transfer Protocol – HTTP এর নতুন ভার্সন উন্মুক্ত করা হবে। আগ্রহীদের অনেকের মনেই নিশ্চয় প্রশ্ন জেগেছে কী থাকছে এই নতুন প্রোটোকলে? অনেকে হয়তো জানেনই না যে প্রোটোকল আসলে কী জিনিস। যাহোক, মনের ভেতর প্রশ্ন ঘুরতে থাক। দেখি টিউনের বাকি অংশে সব প্রশ্নের উত্তর মেলে কিনা।
আমরা জানি সমগ্র ইন্টারনেট ব্যবস্থা পরিচালনা করার জন্য রয়েছে কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়মনীতি। এই এই সুনির্দিষ্ট নিয়মগুলোকেই বলা হয় প্রোটোকল। ১৯৯৯ সাল থেকে শুরু করে ২০১৫ সাল পর্যন্ত মোট ১৬ বছর ধরে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য HTTP (Hypertext Transfer Protocol) ব্যবহৃত হয়ে আসছিলো। আপনারা অবশ্যই কোন একটা ওয়েব এড্রেস লেখার জন্য তার শুরুতে http:// লিখেছেন। মুলত এই HTTP প্রটোকল ব্যবহারকারী এবং ব্রাউজারের সাথে এবং সার্ভারের সাথে হোস্ট ওয়েব সাইটের যোগাযোগ রক্ষা করে থাকে। ১৯৯৯ সালে ওয়েবের জনক নামে পরিচিত Tim Berners-Lee এই প্রোটোকল তৈরী করেন। প্রাথমিক ভাবে তখন এটাকে পরিচিতি দেওয়া হয় HTTP 1.1 নামে। যা সেই সময়ে দ্রুতগতির ওয়েব ব্রাউজিং, একাধিক পেইজ পড়ার সুবিধা সহ সার্চ এবং ইন্টারনেট ব্যবহারে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দেয়। যা গত ১৬ বছর ধরে কোন প্রকার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ছাড়ায় এখনো ইন্টারনেট ব্যবহার কারীদের চাহিদা পূরন করে আসছে।
HTTP 1.1 প্রোটোকল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হলেও যুগের সাথে তাল মিলাতে ২০০৯ সালে গুগল তাদের নিজস্ব প্রটোকল চালু করেন। যা ইন্টারনেট দুনিয়ার কাছে SPDY প্রটোকল নামে পরিচিত এবং এটাকে HTTP এর আলাদা করার জন্য উচ্চারণ করা হতো Speedy বলে। এই প্রটোকলটি সেই সময়ে গুগলের সদ্য উন্মুক্ত হওয়া গুগল ক্রোম ব্রাউজারে সংযুক্ত করা হয় এবং তারপর অন্যান্য প্লাটফর্ম যেমন মজিলা ফায়ারফক্স, মাইক্রোসফট ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার, জনপ্রিয় বিভিন্ন ওয়েব সাইট যেমন ফেসবুক এবং কিছু সফটওয়্যার যেগুলো ব্রাউজার এবং ওয়েব পেইজের সাথে সংযোগ রক্ষা করে সেগুলোতে ব্যবহার করা হয়। SPDY প্রটোকলটি তৈরী করার প্রধান উদ্দেশ্য ছিলো ব্যবহারকারীরা যেন খুব দ্রুত গতিতে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে। বর্তমানে আমাদের জন্য অপেক্ষমান HTTP 1.1 প্রটোকলের পরবর্তি সংস্করন HTTP 2.0 তৈরী করা হয়েছে SPDY প্রটোকলের উপর ভিত্তি করেই। এই প্রটোকলের বিশেষত্ব হচ্ছে একটি একক কানেকশন দিয়েই আপনার ব্রাউজার ওয়েব সার্ভার একের অধিক পেইজ রিকোয়েস্ট করতে পারবে। যার মানে হলো এটি একই সময়ে একের অধিক পেইজে সমান গতিতে কাজ করতে পারবে। সেই সাথে এটি পেইজ লোডিং টাইমের উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস ঘটাবে।
আগেই বলেছি যে বর্তমান সময়ে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের চাহিদা হলো দ্রুতগতির এবং নিরাপদ ইন্টারনেট। সুতরাং প্রটোকলের এই নতুন ভার্সনটি যে এই তত্ত্বের উপর ভিত্তি করেই তৈরী করা হয়েছে এ ব্যাপারে নিশ্চয় কারো সন্দেহ নেই। তবে IETF এর তথ্য মতে প্রটোকলের এই নতুন ভার্সন আগের প্রটোকলের কোড এবং বৈশিষ্টের মতো করেই তৈরী করা হয়েছে। যাতে সমগ্র পরিবেশের সাথে খাপ খেতে সমস্যা না হয়।
আগে যেহেতু বলেছি যে প্রটোকলের নতুন ভার্সনটি পুরাতন ভার্সনের আদলে তৈরী করা হয়েছে এবং পুরাতন ভার্সনটি এখনো পর্যন্ত ব্যবহৃত হয়ে আসছে সেহেতু আপনারা বুঝতেই পারছেন যে পুরাতন ভার্সনটি কতোটা স্ট্যাবল। তাই নতুন প্রটোকলের উল্লেখযোগ্য ফিচারের সংযোজন বলতে গেলে মাত্র দুটোই পাওয়া যায়।
আমরা আগে যে প্রটোকল ব্যবহার করেছি নতুন প্রটোকলে সেটারই দ্বিগুন সুবিধা পাবো। উপরের চিত্রটি দেখলে হয়তো কারো বুঝতে কোন অসুবিধা হবে না।
HTTP 2.0 এবং HTTP এর মাঝে তুলনা করতে গেলে দুটোর পারফরমেন্স ব্যতিত অন্য কোন কিছু চোখে পড়বে না। HTTP এ মাল্টিপল পেইজ রিকোয়েস্ট সুবিধা, দ্রুতগতি এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা যতোটুকু ছিলো তার নতুন ভার্সনে প্রায় তার দ্বিগুন করা হয়েছে।
ব্যবস্থাপকদের উপসংহারে এটা জানা যায় যে HTTP 2.0 পূর্বে ব্যবহৃত সিকিউর প্রটোকল HTTPS এবং স্পিডি প্রটোকল SPDY এর সম্মলিত সুবিধা দিবে। যা ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য ইন্টারনেটের নতুন এক রাজ্য উন্মুক্ত করে দিবে। সবাই প্রস্তুত হোন এই নুতন রাজ্যে রাজত্ব করার জন্য।
অনেকেই মনে মনে নিশ্চয় ধারনা করে ফেলেছেন যে আমরা হয়তো বর্তমানে এই নতুন প্রটোকলটি ব্যবহার করছি। কিন্তু আপনাদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে নতুন এই প্রটোকলটি এখনো ব্যবহার উপযোগি করা হয়নি। কারন এই প্রটোকলটি ব্যবহার উপযোগি করার জন্য সার্ভার এবং ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনগুলোকে নতুন প্রটোকলের জন্য উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে। তবে গুগল ঘোষনা করেছে যে, তারা তাদের নিজস্ব ব্রাউজার গুগল ক্রোমে আগামী ২০১৬ সালে এই নতুন প্রটোকল সংযুক্ত করে দিবে। আমরা এটা আশা করতেই পারি যে অন্যন্য প্লাটফর্মগুলোও অতি শীঘ্রই গুগলের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে।
টিউনটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে অথবা বুঝতে যদি কোন রকম সমস্যা হয় তাহলে আমাকে টিউমেন্টের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন না। কারন আপনাদের যেকোন মতামত আমাকে সংশোধিত হতে এবং আরো ভালো মানের টিউন করতে উৎসাহিত করবে। সর্বশেষ যে কথাটি বলবো সেটা হলো, আসুন আমরা কপি পেস্ট করা বর্জন করি এবং অপরকেও কপি পেস্ট টিউন করতে নিরুৎসাহিত করি। সবার সর্বাঙ্গিন মঙ্গল কামনা করে আজ এখানেই শেষ করছি। দেখা হবে আগামী টিউনে।
আপনাদের সাহায্যার্থে আমি আছি........
ফেসবুক | টুইটার | গুগল-প্লাস
আমি সানিম মাহবীর ফাহাদ। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 176 টি টিউন ও 3500 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 159 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আগে যা শিখেছিলাম এখন তা শেখানোর কাজ করছি। পেশায় একজন শিক্ষক, তবে মনে প্রাণে টেকনোলজির ছাত্র। সবার দোয়া প্রত্যাশি।
এটা কতদিন পর চালু হবে??