-------------------------- بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ --------------------------
সুপ্রিয় টেকটিউনস কমিউনিটি সবাইকে আমার সালাম এবং শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমার আজকের টিউন।
প্রযুক্তির অগ্রগতির প্রসঙ্গে কথা বলতে গেলে আমি সব সময় যে কথাটি বলি সেটা হলো, কাউকে যদি দুই বছর ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয় এবং তারপর জাগানো হয় তাহলে সে গত দুই বছরের প্রযুক্তির অগ্রগতি দেখে বেহুস হয়ে যাবে। আজ আমি আপনাদের এরকম একটি প্রযুক্তির সাথে পরিচয় করিয়ে দিবো যেটা এতোদিন শুধু মানুষের কল্পনায় ছিলো। কিন্তু এখন সেই প্রযুক্তি কল্পনার পর্দা ছিড়ে সত্যিকার জগতে চলে আসছে। আমার মনে হয় আপনারা টিউনের শিরোনাম যেমন দেখেছেন ঠিক তেমনি আয়রন ম্যান (টেকনোলজি নির্ভর যেকোন মুভি) মুভিটাও দেখেছেন। খেয়াল করেছেন নিশ্চয় নিচের চিত্রের মতো এরকম অজস্র ভিজুয়াল ইফেক্ট রয়েছে সমস্ত মুভি জুড়ে। এই সমস্ত ব্যাপারগুলো ছিলো মানুষের কল্পনায়। কিন্তু প্রযুক্তির দুনিয়ায় কোন কিছুকে কল্পনা করতে যতোটা সময় লাগে তার বাস্তবায়ন হতে ততোটা সময় লাগেনা। কী থেকে যে কী তৈরী হয়ে যায় সেটা মানুষ নিজেই বুঝতে পারেনা। আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেলের কথা মনে পড়ে গেলো! তিনি তার বধির বউ এর জন্য কানে শুনার যন্ত্র আবিষ্কার করতে গিয়ে টেলিফোন আবিষ্কার করে ফেলেছিলো। আজ যে সেই টেলিফোনের কতো রকম ব্যবহার সেটা আমরা সবাই জানি। যাহোক, আজকের টিউনের মুল আলোচনা হলো হলোগ্রাফিক প্রযুক্তি নিয়ে। বলা যেতে পারে নতুন যুগের একটি প্রযুক্তির সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিতে চলেছি। আগামী যুগে যে কী হবে সেটা আপাততো কল্পনা করতে পারছিনা।
হলোগ্রাম কথাটির সাথে আপনারা নিশ্চয় পরিচিত আছেন। যারা নেই তারা নিশ্চয় প্রসাধনী পন্যের বিজ্ঞাপনে হলোগ্রাম দেখে কিনুন কথাটি শুনেছেন। আসলে হলোগ্রাম হলো একটি ত্রিমাত্রিক ছবি। যেটার দিকে তাকালে ছবির দের্ঘ্য প্রস্থ এবং উচ্চতা সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যায়। আর হলোগ্রাফিক প্রযুক্তি হলো এমন একটি টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম যার সাহায্যে ত্রিমাত্রিক পরিবেশ তৈরীর মাধ্যমে আপনার সামনে এমন কিছু উপস্থাপন করা হবে যেটাকে বাস্তব মনে হলেও মূলত বাস্তবে তার অস্তিত্ব নেই। বুঝতে পারছেন না হয়তো, চলুন আরও একটু বুঝিয়ে বলছি। তবে তার আগে নিচের চিত্রটি একনজর দেখে নিন।
মনে করুন আপনি বাসা থেকে কয়েক হাজার মাইল দুরে রয়েছেন। বাড়িতে যোগাযোগ করতে চাইলে নিশ্চয় টেলিফোন অথবা ভিডিও কলের সাহায্য নিবেন। কিন্তু হলোগ্রাফিক প্রযুক্তির সাহায্যে এমন অবস্থা সৃষ্টি করা যাবে, যা দেখলে মনে হবে আপনি সত্যি সত্যিই বাসায় রুমের মধ্যে বসে আছেন। এটা সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র উন্নত মানের ক্যামেরা এবং ইন্টারনেট টেলিফোনির যথাযোগ্য সংযোজন এবং সংমিশ্রনের ফলে। খুব সহজেই এখন ভার্চুয়ালভাবে সবাই একসাথে বসে কনফারেন্স করতে পারবেন। ভার্চুয়াল জগৎ সত্যিকারের জগত হতে জনপ্রিয় হতে আর মনে হয় দেরী নেই।
ভবিষ্যতে অফিসে মিটিং এর জন্য হয়তো কাউকে আর ফোন করে ডাকা হবেনা। আপনি যেখানেই থাকুন না কেন আপনার আশেপাশে যদি একটি হলোগ্রাফিক এনভাইরনমেন্ট থাকে তাহলে খুব সহজেই সেখান থেকে সবার সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন। ভিডিও কনফারেন্সের সুযোগ নিশ্চয় টেকটিউনস কমিউনিটির সবারই মোটামুটি হয়েছে। না হয়ে থাকলেও নিশ্চয় জানেন কীভাবে ভিডিও কনফারেন্স করা হয়। ভিডিও কনফারেন্সের সব চেয়ে বড় অসুবিধা হলো, এটাতে বাস্তবতার কোন ছোঁয়া থাকেনা। চারপাশের পরিবেশ, কম্পিউটার স্ক্রিন আপনার অভিজ্ঞতা বদলে দিতে পারে। যেমন আপনার সামনে দিয়ে কেউ হেটে গেলে ভিডিও কনফারেন্সের ক্ষেত্রে কতোটা বিঘ্ন হবে বুঝতেই পারছেন। হলোগ্রাফিক কম্পিউটার প্রযুক্তিতে এই ধরনের কোন সমস্যা নেই। এটা ভিডিও চ্যাটের চেয়ে দ্রুতগতির, বাস্তবধর্মী এবং কোনকিছু দ্বারা প্রভাবিত হবেনা। আপনি যেকোন অ্যাঙ্গেল থেকে যেকোন ভাবে কারো সাথে বাস্তবে মুখোমুখি বসে থাকার মতো কথা বলতে পারবেন।
হলোগ্রাফিক এনভাইরনমেন্ট তৈরী করার জন্য প্রয়োজন একটি হলোগ্রাফিক সুবিধা যুক্ত কম্পিউটার। বর্তমানে হলোগ্রাফিক সুবিধার মোবাইল ফোনও অবশ্য বাজারে আছে। কম্পিউটার হলোগ্রাফিক এনভাইরনমেন্ট তৈরীতে যে ধাপগুলো অতিক্রম করে-
হলোগ্রাফিক প্রযুক্তি মুলত ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এবং Tele-Immersion প্রযুক্তির একটা সংমিশ্রন যা আপনাকে সত্যিকারের বায়োলজিক্যাল এনভাইরনমেন্টের স্বাদ এনে দিবে। হলোগ্রাফিক প্রযুক্তির ফলে আপনি নিমিষেই আপনার প্রিয় জনের সান্নিধ্য পেতে পারেন। দুরবর্তি কাজ নিয়ন্ত্রন করতে পারবেন। কো-ওয়ার্কারদের সাথে সহজ যোগাযোগ বজায় রাখতে পারবেন। শিক্ষাক্ষেত্রেও আশা করা যাচ্ছে ব্যাপক বিপ্লব চলে আসবে। কারন আপনি চাইলেই অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ক্লাসরুমে বসে ক্লাস করতে পারবেন।
এই বিষ্ময়কর প্রযুক্তি হঠাৎ করেই তৈরী হয়নি। এর জন্য প্রয়োজন হয়েছে এক যুগের বেশি সময়ের কঠোর পরিশ্রম। আমি নিজে যখন মোবাইল ফোন চোখে দেখিনি তার আগেই বিজ্ঞানীরা একটা ভার্চুয়াল প্রযুক্তি তৈরীর চিন্তাভাবনা করে আসছিলো। এই প্রযুক্তিকে ব্যবহার উপযোগি করে একটা ভার্চুয়াল জগৎ তৈরী করার জন্য বিভিন্ন গ্রুপ একসাথে National Tele-Immersion Initiative (NTII) তে কাজ করে আসছিলো। তারপর ২০০০ সালের মে মাসে সর্বপ্রথম University of North Carolina (UNC), University of Pennsylvania & Advanced Networks and Services এর গবেষকগণ এই প্রযুক্তি সফলভাবে ব্যবহারের মাইল ফলক অতিক্রম করেন। তাদের এই প্রযুক্তি প্রায় শত মাইল দুরবর্তি অন্য আরেকটি ভার্চুয়াল নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হতে সমর্থ্য হয়।
সেই সাথে তারা গেইমিং, কমিউনিকেশন এবং এবং বিনোদনের মাধ্যম হিসাবে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে আসছে। যদিও তখনকার অবস্থার সাথে বর্তমান অবস্থার শুধু রাত-দিন নয় কয়েকদিনের পার্থক্য আছে। তবুও সেদিনের সেই আবিষ্কার আজকে আমাদের নতুন যুগের অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে।
হলোগ্রাফিক ইমেজ দেখতে হলে 3D ক্যামেরার মতোই আপনার প্রয়োজন হবে একটি হলোগ্রাফিক চশমার। এই চশমা মুলত আপনার ভিউ পয়েন্টকে সনাক্ত করতে ব্যবহৃত হবে। আপনারা অনেকেই হয়তো আমাদের চোখের দেখার মেকানিজমটা জানেন না। আমরা যখন কোন বস্তু দেখি তখন সেটার আলাদা আলাদা প্রতিবিম্ব আমাদের মস্তিষ্কে জমা হয়। তারপর মস্তিষ্ক সেই আলাদা প্রতিবিম্ব দুটোকে একটা প্রতিবিম্ব হিসাবে তৈরী করে আমাদের সামনে উপস্থাপন করে। মুলত একটা ত্রিমাত্রিক ছবি তৈরী করার জন্য একের অধিক ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়। যার ফলে আপনি যখন আপনার মাথাটাকে কোন দিকে ঘুরিয়ে নিবেন তখন আপনার হলোগ্রাফিক চশমাটা আপনার ভিউ পয়েন্টকেও ঘুরিয়ে দিবে। যার ফলে আপনি পাশ থেকেও ছবিটিকে দেখতে পাবেন।
হলোগ্রাফিক প্রযুক্তির এই সুবিধাগুলো সবার জন্য পৌছে দিতে যে পরিবর্তনগুলো অদূর ভবিষ্যতে আমাদের সামনে আসবে সে বিষয়ে সামান্য আলোকপাত করা যাক। কারন আমাদের বাংলাদেশে ইন্টারনেট গতির যে অবস্থা তাতে এই প্রযুক্তির ছোঁয়া পেতে কতোদিন লাগবে সেটা অনুমেয় নয়।
রিকোয়ারমেন্ট দেখে যারা হতাশ হয়েছেন তাদের জন্য টিউনের পরবর্তি অংশে থাকছে আসলে চমক। যাদের হার্টের সমস্যা আছে তারা সাবধানে বাকী অংশ দেখবেন। কারন শিরোনাম দেখে আবেগ সামলাতে পারবেন না হয়তো।
শিরোনাম দেখে চমকে উঠছেন নিশ্চয়? ঘটনা কিন্তু শতভাগ সত্য। মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ১০ এর সাথে আসছে হলোগ্রাফিক প্রযুক্তি। আপনার দুনিয়াকে হলোগ্রাফিক দুনিয়ায় রূপান্তর করার সময় নিশ্চয় হয়ে গেছে এখন। এবার অজানাকে জানুন, অদেখাকে দেখুন। সব কিছুই এখন আপনার নিয়ন্ত্রনে। শুধুমাত্র সব কিছু উপভোগ করার জন্য আপনার প্রয়োজন হবে একটি হলোগ্রাফিক চশমার। যাহোক, চলুন এক নজরে একটু দেখে আসি কী কী থাকছে আমাদের জন্য।
জানিনা হলোগ্রাফিক প্রযুক্তি নিয়ে আমার এই সামান্য টিউন আপনাদের কেমন লেগেছে। কিন্তু আপনাদের সামান্য ভালোলাগা আমার মনে এক অসামান্য ভালোলাগার অনুভুতি সৃষ্টি করে। টিউনটি বুঝতে যদি সমস্যা হয় তাহলে টিউমেন্টের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন না। টিউনটি নির্বাচিত হওয়ার উপযোক্ত মনে হলে নির্বাচিত টিউন মনোনয়ন দিতে ভুলে যাবেন না যেন। আমার পরীক্ষার মাঝে খুব ব্যস্ততা নিয়ে টিউনটি করলাম। টিউনে অনিচ্ছাকৃত ভুলগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। সর্বশেষ যে কথাটি বলবো সেটা হলো, আসুন আমরা কপি পেস্ট করা বর্জন করি এবং অপরকেও কপি পেস্ট টিউন করতে নিরুৎসাহিত করি। সবার সর্বাঙ্গিন মঙ্গল কামনা করে আজ এখানেই শেষ করছি। দেখা হবে আগামী টিউনে।
আপনাদের সাহায্যার্থে আমি আছি........
ফেসবুক | টুইটার | গুগল-প্লাস
আমি সানিম মাহবীর ফাহাদ। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 176 টি টিউন ও 3500 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 159 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আগে যা শিখেছিলাম এখন তা শেখানোর কাজ করছি। পেশায় একজন শিক্ষক, তবে মনে প্রাণে টেকনোলজির ছাত্র। সবার দোয়া প্রত্যাশি।
অনেক কিছু জানলাম।ধন্যবাদ টিউনারকে কষ্ট করে দারুন একটি টিউন উপস্থাপন করার জন্য।