বর্তমান বিশ্ব টেকনোলজিময়। টেকনোলজির বহুবিদ সুফল পাচ্ছি আমরা জীবনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে। কিন্তু এই টেকনোলজির শুরুটা বহু আগে। মানব জীবনের এই উৎকর্ষ সাধনে সেই প্রবাহমান কাল থেকে টেকনোলজির উন্নতি হচ্ছে। তবে সেই পুরাতন যুগের টেকনোলজি আর আজকের টেকনোলজি ভেতর অনেক বেশি ব্যবধান। যদিও সেইসব টেকনোলজির বদৌলতে আজকে আমরা এতো বেশি সুফল ভোগ করছি। আজকের টেকনোলজির এই অগ্রযাত্রায় সেই সময়ের টেকনোলজির অনেক বেশি অবদান ছিল।
অতীত টেকনোলজি এখনকার মতো ছিল না। তখন ছিল নতুন যন্ত্র উদ্ভাবন যা দিয়ে তাদের বেসিক সব চাহিদা মেটাতো। তারা এভাবে নতুন নতুন যন্ত্র আবিস্কার করে এগিয়ে যেতো নতুন সম্ভাবনার দিকে।
বৈজ্ঞানিকদের গবেষণা থেকে পাওয়া যায়, প্রায় ২ লাখ বছর আগে পেলিওলেথিক যুগ থেকে এই সভ্যতার সন্ধান পাওয়া যায়। তারা নিজেদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য তারা কিছু যন্ত্র উদ্ভাবন করেছিলো। এই যন্ত্র তারা আরও দিন দিন উন্নতি সাধনে চেষ্টা করতো। প্রায় ৫০ হাজার বছর আগের কিছু টেক নিদর্শন পাওয়া যায় যার ভেতর ম্যাক্সিমাম নৃতাত্ত্বিক নিদর্শন।
আমরা আজ সেই রকমই কিছু টেকনোলজি নিদর্শন আলোচনা করবো, যা হাজার হাজার বছরে উদ্ভাবিত কিন্তু তার কিছু কিছু এখনও বিরাজমান এবং বর্তমান আধুনিক টেকনোলজির ভেতর তা ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে।
এইসব টেক নিদর্শন আমাদের অগ্রযাত্রাকে করেছে আরও একটু সহজ। সফল টেক সৃষ্টির ভেতর যাদের আছে সমান বিচরন।
বিশ্বের সব থেকে পুরাতন মেকানিক্যাল ডিভাইস যা পাওয়া যায় এন্টিকিথেরার উপকূলে। এটাকে ধারণা করা হয় বিশ্বের প্রথম অ্যানালগ কম্পিউটার। বিজ্ঞানীরা অনেক পরিক্ষা করে তার সত্যতা প্রমাণ পেয়েছেন। এটা প্রায় ১৯০০ খ্রিষ্ট-পূর্বের। তবে এটি ২০০০ বছর আগের বলে ধারণা করেন। গবেষকরা বলেন এটি এস্ট্রনাটদের সময় গণনা, চাঁদ, সূর্য এবং সৌর-জগতের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের ব্যবহার করতেন। অনেক রিসার্চের পর এটার মূল কাজ বৈজ্ঞানিকরা বের করতে সফল হন। তখনকার ভু-তাত্ত্বিকরা এবং বৈজ্ঞানিকরা এমন উন্নত টেকনোলজির সাথে ছিলেন ভাবতেই অবাক করে এখনকার টেক গবেষকদের। সময় নিয়ে একটু দ্বিধা থাকলেও এটি অবিশ্বাস্য এতো উন্নত ধরনের প্রযুক্তি তাদের নাগালের ভেতর ছিল। বর্তমানে এই যন্ত্র গ্রিসের একটি মিউজিয়ামে রাখা হয়েছে।
এটি মিশরের ৪৫০ কিমি দক্ষিনের আবিদাসের একটি প্রাচীন সিটি কমপ্লেক্সে অবস্থিত। এখানে নৃতাত্ত্বিক অনেক আধুনিক নিদর্শন আছে। অতীত কিছু মহাকাশ যান এবং হেলিকপ্টারের মতো কিছু প্রযুক্তি নিদর্শন আছে এই ভাস্কর্যে। গবেষকরা ধারণা করেন এটি ঐ সময়ের কিছু গবেষণার প্রতিফলন বহন করে। ঠিক কতো হাজার বছর আগের এই ভাস্কর্য তা সঠিকভাবে নির্ণয় করা যায় নি।
প্রায় এক হাজার বছরের আগের একটি পাথরের রিলিফস ভাস্কর্য পাওয়া যায় প্রাচীন গ্রিসে। যা একটা রিলিফ লাইটের সাদৃশ্য। গবেষকরা ধারণা করেন এটি এখনকার ইলেক্ট্রিকাল ধারণার জন্ম দিতে পারে বলে ধারণা করা হয়। ছবিতে একটি অংশ দেখানো হয়েছে। বাকি অংশ কপিরাইটের জন্য দেখানো সম্ভব হয় নি। বাকি অংশটা আরও চমৎকার।
এই অসাধারণ এবং দুষ্প্রাপ্য পেইন্টিং স্যান পেইট্রোতে (San Pietro) অবস্থিত। এটি ইতালির একটি গির্জার নিদর্শন। ঐ সময়ের বিখ্যাত আর্টিস্ট ভেনচুরা সেলেমবেনার (Ventura Salimbeni) আঁকানো এই অসাধারণ চিত্র কর্মটি। এটা প্রায় ১৬০০ খ্রিষ্ট পূর্বের আগের নিদর্শন। যেটাতে প্রযুক্তির অসাধরন শিল্পকর্ম ফুটে উঠেছে। যেখানে দেখা যায় স্যাটেলাইট এবং ড্রোন জাতীয় কিছুর শিল্পকর্ম। যদিও চিত্রকর্মে একটা গ্লোব জাতীয় জিনিসের আবির্ভাব দেখা যায়, কিন্তু এন্টেনা এটাকে ভিন্ন প্রযুক্তির কথা মনে করিয়ে দেয়।
লেবাননের ব্যালবেকে এই নিদর্শন অবস্থিত। এটি খুব বড় একটি সুন্দর আকৃতির পাথর খন্ড, যা প্রায় ১৩০০ টন ওজনের। এটি কয়েক হাজার বছরেরও বেশি আগের একটি নিদর্শন। গবেষকরা ধারণা করে পারেন না, কীভাবে এতো বেশি ওজনের পাথর এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নেওয়া হতো। বিশেষ করে ব্যাল জুপিটার টেম্পলের এখানে কীভাবে ফেলানো হল। এরকম আরও অনেক প্রশ্ন যা ব্যাখ্যাহীন থেকেই গেছে।
এটি ১৯০৮ সালে একটি টেম্পলের আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে আবিস্কার করা হয়। এটার নিদর্শনে ধারণা করা হয় এটি ১৮৫০ থেকে ১৬০০ খ্রিষ্ট পূর্বের। এখানে যে কারুকার্য করা হয়েছে তার ব্যাখ্যা বের করা অসাধ্য। তাছাড়া এখানে বেশ কিছু লেখা খোদায় করা আছে। যার অর্থ এখন পর্যন্ত আবিস্কার করা যায় নি।
এই ব্যাটারি ১৯৩৬ সালে আধুনিক বাগদাদ থেকে ২০ কিমি দূরে আবিষ্কৃত হয়, যা ১৩.৫ সেমি দীর্ঘ। যেটা ১৩ থেকে ১৪ সেমি কপারের সিলেন্ডার দ্বারা মোড়ানো। যেটা ইরাকের ন্যাশনাল মিউজিয়ামে রাখা আছে। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় ১৯৩৯ সালে এক জার্মান ভূতাত্ত্বিক এটাকে অতীত কোন ইলেক্ট্রিক্যাল কাজের নমুনা বলে স্বীকার করেন এবং এডলফ হিটলার এটাকে সিরিয়াস্লি নেন এবং প্রাচীন ইলেক্ট্রিক্যাল বিষয় নিয়ে গবেষণা করতে বলেন। এটা নাকি ০.৪ থেকে ১.৯ ভোল্ট কারেন্ট জেনারেট করতে সক্ষম। তবে এটির অতীত কারণ অনেক ঢাকা পড়ে থাকে, ব্যাখ্যা বের করা গবেষকদের কঠিন হয়ে যায়।
১৯৬১ সালে তিন রক সংগ্রহকারী এটি আবিস্কার করেন ক্যালিফোর্নিয়ার অলেঞ্চা রাজ্য থেকে। এটি একটি সাদা সিলেন্ডারের সাথে লোহা মোড়ানো। কিন্তু এটি কি হিসাবে ব্যবহার হতো তা গবেষকরা বের করতে পারেন নি। তবে ধারণা করা হয় এটি মিনিমাম ৫ লাখ বছরের পুরানো।
এটা খুব সম্ভবত খুব দৃষ্টি কাড়ার মতো যন্ত্র। যেটি প্রাচীন ইন্ডিয়া সভ্যতা থেকে সংগৃহীত। এটা একটি ফ্লায়িং মেশিন এবং আগ্নেয় অস্ত্র নির্দেশ করে। গবেষকরা ধারণা করছেন এটি ১৫০০ খ্রিষ্ট পূর্বেরও আগের একটি টেকনোলজি নিদর্শন। এটি অনেকটা ফায়ার প্লেনের মিসেলের মতো। তবে এটির আসল ব্যাখ্যা দেওয়া কঠিন।
আধুনিক সভ্যতার মতো সম্ভবত অতীতেও "ফায়ার" যুদ্ধে ব্যাপক ব্যবহার হতো, কারণ বড় বড় আগ্নেয় অস্ত্র এটির অনুরূপ। প্রাচীন গ্রীকের অনেক অনেক শিল্প কর্মে এটির দেখা মেলে। তবে তারা কীভাবে এই আগুন তৈরি করতেন তা এখনও বোধগম্য না।
প্রাচীন কাল টেকনোলজি নির্ভর ছিল, কিন্তু হয়তো আমাদের মতো তার সুফল জন সাধারণ পেত না। তবে আজকের টেকনোলজির উৎকর্ষতা প্রাচীন সেই কালের উপর নির্ভর করেই এগিয়ে গেছে এটি অনুমান করা যায়।
আশা করি টিউনটি আপনাদের মনে প্রশ্ন তৈরি করবে, হয়তো ভালোও লাগবে অনেক বেশি।
তবে যেকোনো ধরনের প্রশ্ন আমাকে করতে পারেন কোন সংকোচ ছাড়ায়।
ধন্যবাদ সবাইকে। 🙂
আমি আইটি সরদার। Web Programmer, iCode বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 261 টি টিউন ও 1750 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 22 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আমি ইমরান তপু সরদার (আইটি সরদার),পড়াশুনা করেছি কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি নিয়ে; পেশা কন্টেন্ট রাইটার এবং মার্কেটার। লেখালেখি করি নেশা থেকে ফেব্রুয়ারি ২০১৩ থেকে। লেখালেখির প্রতি শৈশব থেকেই কেন জানি অন্যরকম একটা মমতা কাজ করে। আর প্রযুক্তি সেটা তো একাডেমিকভাবেই রক্তে মিশিয়ে দিয়েছে। ফলস্বরুপ এখন আমার ধ্যান, জ্ঞান, নেশা সবকিছু...
চমৎকার টিউন! ডাইরেক্ট নির্বাচিত…..