হ্যালো টিউনার, টিউজিটর কেমন আছেন সবাই। আশা করি টেকনোলজির ছোঁয়ায় ভালোই আছেন। আমিও আপনাদের ভালোবাসা নিয়ে খুব ভালো আছি। আর ভালো থাকবোই না কেন আমার নতুন এবং ব্যতিক্রম টিউন “ঐতিহাসিক ফ্রিল্যান্সার যাদের আপনি ফ্রিল্যান্সার হিসেবে জানেন না কিন্তু তাঁরা এই পৃথিবীকে পাল্টে দিয়েছে” ইতিমধ্যে ২টি সিকুয়াল নিয়ে এসেছি। আপনাদের ব্যাপক উৎসাহ এবং ভালোলাগা আমাকে আরও অনুপ্রাণিত করেছে।
আগের দুই সিকুয়ালে আমরা আলফ্রেড নোবেল, ওয়াল্ট ডিজনি, রে ক্রোক, আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, চার্লস ডিকেন্স, অ্যান্ড্রু কার্নেগী, বিল গেটস, অ্যারন মন্টোগোমারি ওয়ার্ড এবং স্যাম ওয়ালটনকে নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। তারা কেউ স্বভাব কবি ছিলেন না, জীবনের বাস্তবতায় তারা পিষ্ট হয়েছিলেন নানাভাবে। কিন্তু তাদের ছিল অসম্ভব কল্পনা শক্তি, সেই সাথে আইডিয়া জেনারেট করার অসম্ভব ক্ষমতা। তারা কীভাবে আইডিয়াকে বাস্তবে রুপান্তর করতে হয় তার পিছনে লেগে থাকতেন সবসময়। যা তাদের উন্নতির এবং বিশ্বকে দেওয়ার ক্ষমতা হওয়ার প্রধান কারণ ছিল। যা তাদেরকে টেক সম্রাট করতে একটুও দ্বিধা করেনি।
ঠিক আপনাদের সাড়ার কারনেই আমি এসেছি এই ৩য় সিকুয়াল নিয়ে। যেখানে আপনারা আরও কিছু টেক মহারথীদের উঠে আসার গল্প শুনবেন।
তার আগে আপনারা কেউ পূর্বের সিকুয়াল মিস করলে এখনি পড়ে আসতে পারেন। সেইসব মানুষের উঠে আসার গল্প, যাদের সবাই ফ্রিল্যান্সার ছিলেন।
পড়তে ভুলবেন না আশা করি। কারণ ঘটনাগুলো আপনার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে
আজকে আমরা কিছু ঐতিহাসিক কিন্তু নতুন প্রজন্মের কিছু তরুণ ফ্রিল্যান্সার থেকে উদ্যোক্তা হয়ে উঠার গল্পও জানবো।
আপনি যদি এখন ব্যবসা শুরু করতে চান, তাহলে আপনাকে পরিকল্পনা, পর্যাপ্ত মূলধন এবং প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র নিয়ে শুরু করে দিলেই হবে। কিন্তু এমনও কিছু উদ্যোক্তা আছেন যাদের শুরুটা একটু ব্যতিক্রম ভাবে। তারা শুরু করেছেন ফ্রিল্যান্সার থেকে। এক সময় এই কম্পিউটারের সামনে বসতে বসতে তারা উদ্যোক্তা হয়ে উঠেন নিজেদের সেক্টরে। কারণ ফ্রিল্যান্সিং ও ছোট একটা বিজনেস।
তবে এটা সত্য ফ্রিল্যান্সার থেকে উদ্যোক্তা হয়ে উঠাটা বেশ ঝুকিপূর্ণ। অনেকে হয়তো ভাবতেও পারেন না তার হয়তো পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা নেই উদ্যোক্তা হয়ে উঠার মতো। তবে বিশ্বাস করুন, আপনি চাইলে এবং সেইভাবে পরিকল্পনা নিয়ে আগালে আপনি উদ্যোক্তা হতে পারবেন। ঠিক সেই রকমই কিছু কাহিনী এবং তাদের জীবনদর্শন আমি আপনাদের সামনে উঠাবো।
ফ্রিল্যান্সার এবং উদ্যোক্তার মধ্যে বেশ পার্থক্য বিদ্যমান। একজন ফ্রিল্যান্সার শুধুমাত্র কিছু প্রোজেক্ট নেন এবং তা শেষ করে পেইমেন্ট নেন। সেটা ঘণ্টা বেজড অথবা প্রোজেক্ট বেজড হতে পারে।
অন্যদিকে একজন উদ্যোক্তার দীর্ঘ মেয়াদী প্রোজেক্ট এবং কর্মী নিয়ে আগাতে হয়। যেখানে সে এক সময় ঘুমিয়ে থাকলেও ইনকাম আসতে থাকে। যদিও উদ্যোক্তা হতে আপনাকে রিস্কও নিতে হয় পর্যাপ্ত।
যাইহোক অন্য কথা বেশি বলে হয়ে গেলো। আমি এখন আলোচনা করবো সেইসব ক্রিয়েটিভ ঐতিহাসিক ফ্রিল্যান্সার যারা এক সময় উদ্যোক্তা হয়ে উঠেন।
কলিস তায়িদ খুব সৃজনশীল এবং মেধাবি ডিজাইনার এবং উদ্যোক্তা। তিনি এনভাটোর সহ-প্রতিষ্ঠাতা। Psdtuts+, Netuts+, Vectortuts+, Audiotuts+ সহ আরও অনেক ভালো মানের টিউটোরিয়াল সাইট এনভাটোতে নেটওয়ার্ক তৈরি করছে। যে বিষয়টা হয়তো আপনি জানেন না সেটা হলো এনভাটো প্রতিষ্ঠা করার আগে কলিস ছিলেন একজন তুখোড় ফ্রিল্যান্সার এবং ফ্রিল্যান্স ডেভেলপার।
কলিস প্রথমে একজন ওয়েব ডিজাইনার হিসাবে ফ্রিল্যান্সার হিসাবে কাজ শুরু করেন এবং যা তাঁকে এনভাটো প্রতিষ্ঠায় বেশ ভুমিকা রাখে।
সায়ান একজন সৃষ্টিশীল এবং সুনামধন্য ডিজাইনার। যদিও তার নাম না বলে এনভাটো আলোচনা করা ঠিক হবে না। কারণ তিনিই তার স্বামী কলিস এবং জুন রাংয়ের সাথে সম্মিলিতভাবে এনভাটো প্রতিষ্ঠা করেন।
সায়ান ডিজাইনিং ভালবাসতেন এবং তিনি একজন ফ্রিল্যান্স ডিজাইনার হিসাবে কাজ শুরু করেন। তিনি সৃজনশীল ডিজাইনিং খুব ভালোবাসতেন।
FreelanceSwitch ছিল সায়ানের প্রথম উদ্যোগ যেখানে অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্সারদের কমিউনিটি ছিল। যেটাতে বর্তমান সদস্য প্রায় ৪ লাখ।
আপনি যদি খুব বেশি গেম প্রেমী হন, তাহলে নিচ্চয় ব্রায়ান অংয়ের নাম শুনে থাকবেন। তিনি একজন তরুণ টেক উদ্যোক্তা, প্রতিষ্ঠাতা, সিইও কিপ ডট মি। আপনারা শুনে একটু অবাকই হবেন যে এই তরুণ উদ্যোক্তার শুরুটা ছিল ফ্রিল্যান্সিং দিয়ে। প্রযুক্তি জগতের শুরুতে তিনি ছিলেন একজন ফটোশপ ডিজাইনার। তিনি বিভিন্ন কোম্পানির অ্যাড, ব্যানার ইত্যাদি ফটোশপে ডিজাইন করতেন এবং তা বিভিন্ন ক্লায়েন্টের কাছে বিক্রি করতেন।
সময়ের ধারাবাহিকতায় তিনি মোবাইল গেম অ্যাডভারটাইজিং নিয়ে কাজ শুরু করেন এবং তিনি কিপ নামে তার অ্যাপের যাত্রা শুরু করেন, যেটা তার ক্লেয়েন্টের নির্দিষ্ট সেবা দিতে পারতো।
কিপ এভাবে বড় হতেই থাকলো। যেখানে ২ বছরে তিনি বিশ্বের নামকরা সব প্রতিষ্ঠানের (ডিজনে, পেপসিকো, সনি, কোডাক, গেনিস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড সহ আরও অনেক) সাথে পার্টনারশিপে কাজ করার সুযোগ পান। দ্যা স্টার্টআপ তাঁকে সব থেকে কম বয়সি উদ্যোক্তা এবং ম্যাশএবল ২০১০ এ তাঁকে বিশ্বের সব থেকে কমবয়সী উদ্যোক্তার স্বীকৃতি দেয়।
সাহিল লাভিনজিয়া একজন তরুণ সৃষ্টিশীল ডিজাইনার এবং উদ্যোক্তা। যিনি বিশ্বের নামকরা সব প্রতিষ্ঠানের অ্যাপ ডিজাইন করেছেন। পিন্টারেস্টের অ্যাপও এই তরুণ ডিজাইনারের হাতে করা। পিন্টারেস্ট বিশ্বের নামকরা সোশ্যাল মিডিয়ার একটি।
পিন্টারেস্টে কাজ করার সময় অনেক ভালো ডিজাইনার এবং ডেভেলপারদের সাথে কাজ করে অনেক অভিজ্ঞতা পেয়ে যান। যেখান থেকে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন গুমরোড নামক এক ওয়েবসাইট, যেখানে সৃষ্টিশীলরা তাদের পেটেন্ট বিক্রি করতে পারে।
গুমরোড ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে খুব দ্রুতই বেড়ে উঠে। ৮.১ মিলিয়ন ফান্ড তিনি তৈরি করে ফেলেন এই গুমরোডের মাধ্যমে, যেখানে অনেক নামকরা প্রতিষ্ঠানও ছিল। বিশ্বের বিখ্যাত গায়ক গির্ল টক, ওয়াজ খালিফা, ডেভিড ব্যানার সহ অনেকে তাদের আইটেম বিক্রি করেন। যেখানেই সাহিল লাভিনজিয়ার সফলতা নিরুপিত হয়।
অ্যালেক্স ম্যানজিনি প্রতিষ্ঠাতা Kolakube। অ্যালেক্স খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেন তার কাজের জন্য, তিনি ফটোশপ এবং ওয়ার্ডপ্রেসের সমন্বয় ঘটিয়ে ওয়েব থিম তৈরি করার জন্য বিখ্যাত। তিনি খুবই মেধাবি এবং সৃজনশীল ডেভেলপার এবং উদ্যোক্তা।
শুরুতে অ্যালেক্স থিসেস প্রিমিয়াম স্কিন নামে একটি ওয়ার্ডপ্রেস থিম তৈরি করেন, যা প্রায় ২০ হজার ডলারের বেশি সেল করেন। তখন তিনি খুব সিরিয়াস নিয়ে থিম তৈরির পিছনে লাগেন এবং কোলাকিউব প্রতিষ্ঠা করেন। কোলাকিউব থিসেস প্রিমিয়াম স্কিন থিম বিক্রির জন্য বিখ্যাত। এবং নীল পাটেল সহ আরও অনেক ভালো ব্লগার এই থিম রিকমেন্ড করেন। থিসেস থিম আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠে যখন থিসেস কমিউনিটি আরও জোরালো ভাবে কাজে লাগে। তখন থেকে তিনি বাৎসরিক ১ লাখ ডলারের বেশি সংগ্রহ করতে থাকেন।
ক্রিস পিয়ারসন একজন মেধাবি এবং সৃজনশীল ওয়েব ডেভেলপার। ডেভেলপিং জগতে তিনি অনেক কিছু উপহার দিয়েছেন। পিয়ারসন ওয়ার্ডপ্রেসের জন্য থিসেস ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করেন। তিনি একজন অনলাইন সেলিব্রিটি হয়ে যান। এভাবেই তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ডাইথিমস ডট কম।
পিয়ারসন ফ্রিল্যান্সার হিসাবে ওয়েব ডেভেলপিং শুরু করেন। যেখানে তিনি প্রথমে শুধু ক্লায়েন্টের কাজ করেই সন্তুষ্ট থাকতেন। আর এই সেক্টরে দারুণ সুযোগ থাকার কারনেই তিনি ওয়ার্ডপ্রেসের জন্য ইউনিক থিম এবং ফ্রেমওয়ার্ক তৈরির কাজ শুরু করেন।
থিসেস ফ্রেমওয়ার্ক নিয়ে কপিব্লগার এবং প্রোব্লগারের মতো নামীদামী ব্লগারের সাথে পার্টনারশিপে কাজ করেন পিয়ারসন। অনেক সুনামধন্য এবং পরিচিত ব্লগার এই থিমের উপর অনেকটাই নির্ভরশীল।
আপনি কি ধরনের ফ্রিল্যান্সিং করছেন এইটা ব্যাপার না, যতটা ব্যাপার আপনি কতোটা সেই বিষয়ে অন্যদের থেকে এগিয়ে। ঠিক এরকই একজন খ্যাত ফ্রিল্যান্সার কার্ল ইয়র্কার।
এই মহিলা উদ্যোক্তা MakeALivingWriting এর প্রতিষ্ঠাতা। তিনি কীভাবে অনলাইনে লেখালিখির মাধ্যমে ইনকাম করা যায় তারই ধারণা দেন। এ বিষয়ে অনেক আগ্রহ সৃষ্টির ব্যাপারেও তিনি কাজ করেন। এরই অংশ হিসাবে তিনি Freelancer Writers Den নামে একটি কমিউনিটি ব্লগ খোলেন যার মাধ্যমে নতুন এবং অনভিজ্ঞ রাইটাররা বেশি ফ্রিল্যান্স ইনকাম করতে পারেন তার ধারণা এবং সাহায্য পান।
সত্যকথা বলতে আপনি ফ্রিল্যান্সার হিসাবে অনেক বেশি ইনকাম করতে পারেন, যদি নিজের প্রতি নিজে কমিটেড থাকেন এবং সেই অনুসারে নিজের স্কিল ডেভেলপ করে যান। আপনি উদ্যোক্তা হিসাবে জানান দিতে পারেন আপনার দক্ষতাকে।
আপনি কি এরকম ব্যতিক্রমীধর্মী ফ্রিল্যান্সারের সাথে পরিচিত যিনি এই বিশ্বে টিকে আছেন নিজের যোগ্যতা দিয়ে এবং সৃষ্টিশীল এই পৃথিবীকে দিচ্ছেন নতুন অনেক কিছু। জানলে আমাকে টিউমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। আমি তুলে আনবো তাদের ভেতরের উঠে আসার খবর নিয়ে।
আমি আইটি সরদার। Web Programmer, iCode বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 261 টি টিউন ও 1750 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 22 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আমি ইমরান তপু সরদার (আইটি সরদার),পড়াশুনা করেছি কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি নিয়ে; পেশা কন্টেন্ট রাইটার এবং মার্কেটার। লেখালেখি করি নেশা থেকে ফেব্রুয়ারি ২০১৩ থেকে। লেখালেখির প্রতি শৈশব থেকেই কেন জানি অন্যরকম একটা মমতা কাজ করে। আর প্রযুক্তি সেটা তো একাডেমিকভাবেই রক্তে মিশিয়ে দিয়েছে। ফলস্বরুপ এখন আমার ধ্যান, জ্ঞান, নেশা সবকিছু...
@#