একটি রোমাঞ্চকর অভিযান

না আজ আমি কোন বনে জংগলে ভ্রমণ করার রোমাঞ্চকর কাহিনী শুনাবোনা। যা শুনাবো তা হলো কম্পিউটারের সলিউশন বিষয়ক সেই সাথে উপহার দেব একটি অসাধারণ সফটওয়্যার। কাহিনীটা শুনুন।

ঘড়ির কাটায় রাত ২.৩৭। কিছুক্ষণ আগে বাসার কম্পিউটারে কাজ করে গিয়ে মাত্র লেপমুড়ি দিয়ে শুয়েছিলাম। অফিস থেকে ফোন। এত রাতে স্পেশাল রিংটোন শুনে মনের ভেতর কামড় দিয়ে ওঠল। ওপাশ থেকে জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার ফোনে বলল " বস, ফাইল সার্ভার ডাউন"। মুহুর্তের মধ্যে লোম খাড়া হয়ে উঠল। "আসছি আমি" বলেই প্রচন্ড শীতের মধ্যে তড়াক করে লাফ দিয়ে উঠে থ্রি কোয়ার্টারের উপর প্যান্ট চড়িয়ে শোয়েটার গায়ে দিয়ে বাড়িওয়ালার ফ্লোরে গেলাম। বাড়িওয়ালাকে উঠিয়ে গেটের তালা খুলে রাস্তায় বেরিয়ে পড়লাম। কোন রিক্সাও নেই যে তাড়াতাড়ি যাব। হেটেই রওয়ানা করলাম। ফোন করলাম জুনিয়রকে। "কি করে হলো"। "আচমকা বীপ দিয়ে বন্ধ হয়ে গেল, এরপর যতবারই অন করছি বীপ দিচ্ছে এফ ফোর চেপে সামনে এগিয়ে গেলে আবার একটু পরে বন্ধ হয়ে যায়" বুঝতে পারলাম এটা ওভার হিটিং প্রবলেম। কিন্তু এরকম সুরক্ষিত মেশিনে এধরনের গন্ডগোল হবারতো কথা না। যাই হোক দ্রুত পা চালিয়ে ১৫-২০ মিনিটে অফিসে পৌছালাম।

পৌছেই দ্রুত ষ্ট্যান্ডবাই মেশিন চালু করে দিলাম। ফাইল সার্ভার টেম্পোরারী চালু হল। মুল সার্ভার মেশিনকে নিয়ে বসলাম। হিট সিংক পাল্টে দিলাম কিন্তু একই সমস্যা। টোটাল মেশিনের মধ্যে ৪টা ইউএসবি ফ্যান চালু করলাম একই সমস্যা। চিপসগুলো ধরে ধরে দেখছি কোন কোনটা হিট হচ্ছিল কিন্তু ফ্যান লাগানোর পর একটু কমেছে। কিন্তু সমস্যা যায়নি। অথচ যে করেই হোক কিছুক্ষণের মধ্যেই ফাইল সার্ভার চালু করতে হবে। কারণ অল্টারনেটিভ সার্ভার ২২ জিবি লোড নেবেনা। আগামীকালের প্রোগ্রাম ওয়ার্কষ্টেশন থেকে আপলোড হচ্ছে সার্ভারে। সকাল ৭ টার মধ্যে সল্ভ করতেই হবে। হাত দিয়ে ধরে ধরে বোর্ডের বিভিন্ন জায়গায় টেম্পারেচার বোঝার চেষ্টা করলাম কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছেনা বড়জোড় ১০-১৫ মিনিট রান থেকে আবার বন্ধ হয়ে যায়।

এবার এমন সফটওয়্যার খুজলাম যেটা কিনা মাদারবোর্ডর বিভিন্ন টেম্পারেচার সেন্সরের মাত্রা দেখাবে। অনেক সফটওয়্যার বের করলাম কিন্তু কোনটাই আমাকে ঠিকমত রিডিং দিতে পারছেনা। মনে হচ্ছে যেন প্রোগ্রামারদের সেট করা রিডিং পাচ্ছি। প্রায় ঘন্টাখানেক খোজার পর পেয়ে গেলাম system information for windows সংক্ষেপে siw নামের প্রোগ্রামটি। হার্ডওয়্যার নোডের Sensors সেকশনে গিয়ে পেয়ে গেলাম তথ্য। যা দেখলাম তাতেতো চক্ষু চড়কগাছ। প্রসেসরের টেম্পারেচার উঠে যাচ্ছে 106 ডিগ্রি সেলসিয়াসে। পানি ফুটে বাস্প হয় ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এক্সট্রা ফ্যানগুলোকে প্রসেসরের কাছাকাছি নিয়ে গেলাম। কিছুটা কমছে কিন্তু ১০০ ডিগ্রির নীচে আসছে না। সাহস করে রানিং অবস্থায় হিট সিংককে জোরসে চেপে ধরলাম। আশ্চর্যের ব্যাপার সাথে সাথে এক লাফে তাপমাত্রা ৯৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে চলে এলো। মুলত এর আগে যখন হাত দিয়ে ধরে ধরে তাপমাত্রা বোঝার চেষ্টা করেছি তখন এই তাপমাত্রার ভেরিয়েশনটা বোঝা যায়নি যার কারণে বের করতে পারছিলামনা যে কোন চিপসটা গরম হচ্ছে। কিন্তু সিংকতো চেঞ্জ করলাম তাহলে হলোনা কেন। আসলে আগের সিংকটা ওভার হিটের কারণে সিংক বসানোর জায়গাটাকে ডিসপ্লেস করে ফেলেছে। এজন্য নতুন সিংকটাও বসছেনা। এবার নতুন সিংকটা খুলে চার ঠ্যাং কে উপরের দিকে একটু করে তুলে দিলাম। লাগাতে গিয়ে বেশ বেগ পোহাতে হলো তারপরও চেপে ধরে লাগালাম।

দারুন চলছে। আচমকা যেন ঘুমও আমাকে পেয়ে বসলো। বাইরে বোধহয় ফর্সা হয়ে এল। বের হয়ে একটা সিগেরেট ধরিয়ে ঢুলুঢুলু চোখে রিক্সা নিয়ে বাসায়। শেষ হলো আমার রোমাঞ্চকর এক অভিজ্ঞতার রাত্রি। ধন্যবাদ Gabriel Topala কে এমন একটা নাইস সফটওয়্যার ফ্রিওয়্যার দেওয়ার জন্য। এই সফটওয়্যারটিতে আপনার পিসির বিভিন্ন ডিভাইস এবং উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম সংক্রান্ত এহেন কোন তথ্য বাদ নেই। এবং সেই সাথে আছে সেন্সর রিডার। যারা সফটওয়্যারটি ব্যবহার করতে ইচ্ছুক তাদেরকে বলছি। এটি কিছুটা স্লো কাজ করে কারণ পিসির তথ্যগুলোকে রিড করতে কিছুটা সময় নেয় তবে তা কয়েক সেকেন্ডের ব্যাপার মাত্র। আর যেহেতু এটা ইনফরমেশন বেজড তাই বিরক্ত না হয়ে ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করলে আপনি আপনার পিসির যে কোন কিছুর ইনফরমেশন পেতে পারেন। সফটওয়্যারটি ডাউনলোড করার জন্য http://www.esnips.com/web/DownloadForMyWebSite/ লিংকে গিয়ে siw.zip ফাইলটি ডাউনলোড করে এক্সট্রাক্ট করে নিন। আরেকটি বিষয় এটি একটি পোর্টেবল লাইভ সফটওয়্যার যার সেটাপ প্রয়োজন হয় না। এ সফটওয়্যারটি ছাড়াও আমি আরও কিছু নাইস ফ্রিসফটওয়্যার পেয়েছি যা পেনড্রাইভ থেকে সরাসরি ব্যবহার করা যায়। চেষ্টা করবো প্রতিদিন অন্তত একটি সফটওয়্যারের সাথে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দিতে।

সব্বাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
কামরুল ইসলাম রুবেল

Level 3

আমি কামরুল ইসলাম রুবেল। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 15 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 18 টি টিউন ও 352 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 2 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

কখনো থামিনি, কখনো পিছন ফিরেও চাইনি। আর থামবোও না কোনদিন। চলছি। চলবই।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

পুরো এক নিশ্বাসে পড়লাম। দারুন লাগল। নতুন এই রকম টেকি অভিজ্ঞা সম্বন্ধে আমাদের আরও জানান।

Level New

আমি এটা ব্যাবহার করি সত্যি এটা একটা দারুন ফ্রীওয়্যার।

খুবই কাজের জিনিস অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে ,বাকী গুলো আরও কাজের হবে তাড়াতাড়ী দেন

SIW এর Tools>Eureka টুলটি জটিল। পাসওয়ার্ড ফিল্ড (ডট ডট গুলো) থেকে পাসওয়ার্ড উদ্ধার করতে পারে। আমি এর পুরনো ভক্ত। আপনার এই রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতাটা শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

Level 0

অন্য রকম এক উপস্থাপনা, অন্য রকম এক টিউনস।

Level 0

ভাই আপনাকে কি বলে ধন্যবাদ দিবো ভাষা খুজে পাচ্ছি না…….
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে…….

মন্তব্য দেয়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ

আমি পাঁচদিন পরে টেকটিউনসে আসলাম। মনটা ছটফট করছিল কখন ঢু মারব এই ছাইটে। পাঁচ দিনে পরে আসারও ছোটখাট একটা কারন আছে কারন পাঁচদিন যাবৎ কম্পিউটার নষ্ট। টিভি কার্ড লাগানোর জন্য মাদারবোর্ড খুলি। তারপরে মনে হল খুলেছিই যখন তখন প্রসেসরটা একটু পরিস্কার করি। তারপরে আবার ফিটিং করলাম। পরে দেখি মনিটরে কিছু দেখায় না। যাহ ঠিক করব করব বলে আর করাই হলনা এর পরের দুই দিন পুরো অসুস্থ। আজকে যখন ঠিক করতে বসেছি তখন দেখি নাহ কোন ভাবেই মনিটরে কিছুই দেখায় না। বেজায় রাগ উঠল। মনে করলাম পাওয়ার সাপ্লাই মনে হয় সমস্যা কারণ কিছুক্ষন পর হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। দোকান থেকে গিয়ে পাওয়ার সাপ্লাই নিয়ে আসলাম। লাগানোর পরে দেখই একিই কান্ড। মেজাজ টা এমন খারাপ হল যা বলার মত না। আবার মাদারবোর্ড খুলে দেখলাম যে মাদারবোর্ডের হেট সিংক ই ঠিকমত লাগানো হয়নাই। অনেকটাই আপনার মতো সমস্যা। হা হা হা যাক শেষ পর্যন্ত ঠিক করতে পারলাম।