গতকাল রাতে সাদা – কালো ফটোগ্রাফি সম্বন্ধে কিছু টিপস দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। অনেকেরই ভালো লেগেছে। তবে আজ আরেক ধরনের ফটোগ্রাফি নিয়ে কথা বলব। সাদা – কালো এবং রঙ্গীন ফটোগ্রাফির বাইরেও যে ফটোগ্রাফি বিস্তৃত হয়েছে তা অনেকেরই অজানা। তেমনই একটি কনসেপ্ট হচ্ছে মাইক্রোস্কোপিক ফটোগ্রাফি। হুম, অনুবীক্ষন যন্ত্রের নিচে আমাদের চিরচেনা বস্তুকে ফেলে আজকাল এমন এমন জিনিস তুলে ধরা হয় যা দেখলে চোখ ছানাবড়া হওয়ার জোগার। কিছুদিন আগেই NIKON এর ব্যানারে হয়ে গেল এই রকমের ফটোগ্রাফির ৩৫তম কন্টেস্ট। তারই কিছু বিজয়ী ছবিকে আজ তুলে ধরার চেষ্টা করব টিউনার বন্ধুদের সামনে –
ইসরাইলের ভ্যাটেনেরি এ্যাসোসিয়েশানের কর্মকর্তা – হ্যাভি স্যারফ্যাটির তোলা এই ছবিটি প্রতিযোগীতায় ২০তম স্থান অধীকার করে। এই ছবিটি একটি বহু পুরোনো জং ধরা কয়েন কে অনুবীক্ষনিক যন্ত্রের নিচে নিয়ে ৪০ গুন জুম করে তোলা হয়েছে।
স্নো ফ্লেকস আমরা অনেকে খালি চোখে দেখেই মূগ্ধ হয়ে যাই। এটিও স্নো ফ্লেক্সের একটি মাইক্রোস্কোপিক ফটো। বেইজিং এর প্লানেটোরিয়ামের ইয়াম্পিং ওয়াং এই ছবিটি তুলেছেন ৪০ গুন জুম ব্যবহার করে। এই ছবিটি থেকে আরেকটি জিনিস প্রমানিত হয়েছে যে, স্নো ফ্লেকস আসলে symmetrical !!
এই মাইক্রোস্কোপিক ছবিটি হিউম্যান স্কিনের। স্কিনে “fibronectin” ব্যবহার করার পর যে প্রতিক্রিয়া ঘটে থাকে তা হওয়ার সময় এই ইমেজটি নেয়া হয়েছে। এই fibronectin মূলত স্কীনের ড্যামেজ ঠিক করতে ব্যবহার করা হয়। ৯০ গুন এনলার্জমেন্টের পরে এই কনফোকাল ইমেজটি নিয়েছেন বসটনের শিশু হাসপাতালের জুলিয়া সেরো।
এটা নাকি একটা স্টপ ওয়াচের ২.৫ গুন জুমিং এ নেয়া ফটো। তবে আমার কাছে কেন জানি ফটোটা খাপছাড়া মনে হয়েছে। এটা নিশ্চই বিচারকেরা ঠিকউ ধরতে পেরেছিলেন।
অনেকে হয়ত অমলেটের কথা ভাবছেন। অমলেট না হলেও এটি একটি ডিমের ২০০ গুন ম্যাগনিফিকেশান ইমেজ। ম্যাসিমো ব্রিজি, ইতালির একটি মাইক্রোস্কোপিক অর্গানাইজেশানের কর্মকর্তা তুলেছেন এই ছবিটি।
এটি একটি এ্যাকুয়েটিক লার্ভার ২৫ গুন বড় ইমেজ। এটি লার্ভার সৃষ্টি হওয়া কালীণ ইমেজ। ফ্রান্সের ডাইরেন বেস এই ছবিটি তুলতে একটি স্টেরিওস্কোপিক মাইক্রেস্কোপ ব্যবহার করা হয়েছে।
এটি একটি অতিক্ষুদ্র সামূদ্রিক গলদা চিংড়ির ৩.২ গুন এনলার্জমেন্টের ফটোগ্রাফি। এটিতে ডার্ক ফিল্ড ব্যবহার করে এই চিংড়ির পেটের ডিমকে হাইলাইট করা হয়েছে। নরওয়ের ফিশারিজ এবং এ্যাকুয়াকালচার বিভাগের টোরা বার্ডাল এই অসাধারণ ইমেজটি নিয়েছেন।
এটি একটি থ্রিডি স্থির চিত্র তে ট্রান্সমিটেড লাইট টেকনিক ব্যবহার করে ৩৩ গুন ম্যাগনিফিকেশানে একটি নির্দিষ্ট ইমেজকে তুলে ধরেছেন।
পানিতে সাবান গুলানোর পরে এর ড্রেইনিং প্যাটার্নকে ১০গুন ইমেজকে তুলে ধরেছেন, টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের Tsutomu Seimiya। তিনি এতে একটি সিম্পল মাইক্রোস্কোপ ব্যবহার করেছেন।
১০ গুন ম্যাগনিফাই করা একটি জেবরা ফিশের কনফোকাল ইমেজ। এতে অনেক বিষয় তুলে এসেছে। চিন্তাও করা যায়না মাইক্রোস্কোপিক সায়েন্স এতো উন্নতি করে ফেলেছে। এতে সবুজ হয়ে ধরা দিয়েছে এর নিউরন, টিএইউ প্রোটিনগুলো লাল এবং প্যাথেলজিক্যাল টিএইউ হচ্ছে ব্লু। মিউনিখের ম্যাক্সিমিলিয়ান্স ইউনিভার্সিটির Adolf Butenandt তুলে ধরেছেন এই ইমেজটি।
আমরা জারা বিজ্ঞানের ছাত্র, ৯ম ১০ম শ্রেনীর জীববিজ্ঞান বইয়ের কথা মনে থাকলে হয়ত বুঝতে পারবেন। এটি প্রানীকোষের এ্যালিজির ডায়াটমের ১০ গুন ম্যাগনিফিকেশান ইমেজ। ডার্ক ফিল্ড ব্যবহার করে এই ছবিটি তুলেছেন Arlene Wechezak।
এটি ৫গুন ম্যাগনিফিকেশানে তোলা ম্যাগমাটিক নামক অলিভাইন রকের ইনকালসান। ইতালীর পাডোভা বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্নার্ডো সিজার একটি পোলারাইজড্ লাইট ট্রান্সমিটেড মাইক্রেস্কোপ ব্যবহার করে এই ইমেজটা ক্যাপচার করেছেন।
আমরা তুলা থেকে সুতা হয় তা জানি। কিন্তু এই পাইবারকে কখনও এই ফাইবারকে বোঝার চেষ্টা করিনি। নিউজিল্যান্ডের বায়ো ম্যাটেরিয়ালস ডিপার্টমেন্টের লয়েড ডোনাল্ডসন এই ইমেজটি নিয়েছেন। একটি সিম্পল স্টেইন ফাইবারের ২০০ গুন ম্যাগনিফিকেশানের এই ইমেজটি ফ্লোরোসেন্স স্কোপ ব্যবহার করে নেয়া হয়েছে।
দক্ষিন আমেরিকার একটি জনপ্রিয় ফুল এটি। “ব্ল্যাক আই সুজান ভাইন”। ফুল দেখে মানুষ এমনিতেই মুগ্ধ! এবার মূগ্ধ হয়েঠে পুলের মাইক্রোস্কোপিক ইমেজে। ফ্লোরোসেন্স মাইক্রোস্কোপের নিচে ৪৫০ গুন ম্যাগনিফিকেশানে এর চুলের মত টেন্টিকলে তুলে ধরা হয়েছে।
অনেকগুলো মাছের কঙ্কালকে একই সাথে মাইক্রোস্কোপের নিচে ২০ গোন ম্যাগনিপিকেশান করা হয়েছ। এতে ব্যবহার করা হয়েছে ট্রান্সমিটেড লাইট মাইক্রোস্কোপ। এটিও তুলেছেন সেই ইসরাইলের ভেটেরান এ্যাসোসিয়েশানের কর্মকর্তা।
একটি সামূদ্রিক বাচ্চা স্টারফিশের মুখের দিকের অংশকে ডার্ক ফিল্ড মাইক্রোস্কোপের নিচের ৪০ গুন ম্যাগনিফাই করা হয়েছে। বিচারকদের মতে ছবিটি তোলার সময় হয়ত স্টারটি হাসছিল!!!
এটি সামূদ্রিক এ্যাজ্ঞেলার ফিশের জড়ায়ুর মাইক্রোস্কোপিক ইমেজ। ফিলাডেলফিয়ার নন প্রফিটেবল ক্যান্সার অর্গানাইজেশানের জেমস হেইডেন এই ইমেজটি নিতে একটি টু চ্যানেল অটোফ্লুরোসেন্স মাইক্রোস্কোপকে ব্যবহার করেছেন। ব্যবগার করা হয়েছে ৪ গুন ম্যাগনিপিকেশান।
কি মনে হচ্ছে? আবারো কোন ফুলের ছবি?? না!!
বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিয়াল চিপ তৈরী করার সময় কিছু কিছু লাইট সেন্সিটিভ ম্যাটেরিয়াল এই ফটোলাইটোগ্রাফি চরিত্র প্রকাশ করে থাকে। এটি একটি ব্রাইট ফিল্ড মাইক্রোস্কোপে তোলা ছবি। ক্যানাডার ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর মাইক্রেস্ট্রাকচারাল সায়েন্সের পেডরো বরিসের এই ছবিটি তয় স্থান অধীকার করে।
এটি কোন কোন প্রজাপতি বা পোকার এ্যান্টেনা নয়। একটি ফুলের স্পাইনি স্টেম। ১৫০ গুন ম্যাগনিফিকেশানের এই ইমেজটি তুলতে ডার্কফিল্ডস্কোপের ব্যবহার করা হয়েছর।
এটি একটি খুবই ক্ষুদ্র ফুলেল প্ল্যান্টের অতিক্ষুদ্র ফ্লাওয়ারিং genome।
এস্টোনিয়ার ট্যালিন ইউনিভার্সিটির জেনেটিক ইজ্ঞিনিয়ারিং এর স্টুডেন্ট হাইটি পাভেস কনফোকাল মাইক্রোস্কোপের নিচে ২০ গুন মাইক্রোস্কোপের নিচে এই অসাধারণ ইমেজটি নিয়েছেন।
টিউনটা করার সময় একটা কথা মনে মনে ভাবলাম, আমাদের চারপাশে আরো না জানি কত না দেখা জিনিস আছে। একদিন হয়ত এমন মাইক্রোস্কোপ পাওয়া যাবে, যেগুলো দিয়ে তাকালে হয়ত ভয়ে গাঁ কাটা দিয়ে উঠবে!!
আমি দুঃসাহসী টিনটিন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 16 বছর 7 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 200 টি টিউন ও 1531 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 34 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
মানুষ হিসেবে তেমন আহামরি কেউ নই আমি। সাটামাটা জীবনটাই বেশী ভালো লাগে। আবার মাঝে মাঝে একটু আউলা হতে মন চায়। ভালো লাগে নিজেকে টিনটিন ভাবতে .... তার মত দুঃসাহসী হতে মন চায় ..... কিন্তু ব্যক্তি জীবনে অনেকটা ভীতুই বটে ..... অনেক কিছুই হাতছাড়া হয়ে গেছে জীবনে এই কারনে ..... আবার...
পাংখা টিউন। মাঝখানে এমন ঝিমিয়ে পড়েছিলেন কেন?
ছবিগুলো সেই ভীতিকর মাইক্রোবায়োলজি ক্লাসের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।
সোহান ভাই, কিছু অনুযোগ ছিল (অপ্রাসঙ্গিক)।