আমরা মুখে মুখে যতই ডিজিটাল বাংলাদেশ বলে চেচাই না কেন, আসলে বাংলাদেশ প্রযুক্তির দিক দিয়ে অনেক অনেক পিছিয়ে আছে। আপনাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য ৩০টি সাইটের নাম বলেন, তাহলে কয়টি বলতে পারবেন? আমার মনে হয় না বেশি বলতে পারবেন। তবে এটা আপনার দোষ না। দোষ হলো আমাদের এই অভাগা জাতির। উল্লেখযোগ্য সাইটের সংখ্যা কম বলেই আপনি বলতে পারছেন না বা আপনি কখনই প্রযুক্তির খবর রাখতে চাননি।
প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে আমরা কেন পিছিয়ে আছি তার কিছু উল্লেখযোগ্য কারণ এখানে বর্ণনা করছি। অবশ্যই এটা আমার একান্তই ব্যক্তিগত মতামত। তাই আপনার মতামত সাদরে গ্রহন করা হবে।
বাংলাদেশের মিডিয়া কখনই তথ্য-প্রযুক্তিকে উৎসাহ দেয় না। আমাদের দেশের টিভি চ্যানেলগুলোর দিকে খেয়াল করলে দেখা যায়, তারা রাস্তার ফকির থেকে শুরু করে গার্মেন্টস কর্মী পর্যন্ত সবাইকে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে গায়ক, নায়ক বানিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে। কিন্তু আপনি কি বলতে পারবেন এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের কোন টিভি চ্যানেল তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কোন প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে? অথবা কোন তথ্য-প্রযুক্তি বা বিজ্ঞানে অবদানের জন্য পুরস্কার প্রবর্তন করেছে? তাহলে আপনিই বলুন তরুণরা গান বাজনা শিখবে, নাকি তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে পড়ে থেকে সেলেব্রেটি হওয়া থেকে নিজেকে বঞ্চিত করবে? তথ্য-প্রযুক্তির দিকে তরুণরা কিসের আকর্ষণে উৎসাহিত হবে?
একটা কথা না বললেই নয় - এই সব গান-বাজনা হলো সাময়িক আনন্দের জন্য। এগুলো দিয়ে দেশের কোন উন্নতি হবে না। দেশের যদি কখনও উন্নতি হয় তাহলে তা হবে তথ্য-প্রযুক্তি বা বিজ্ঞান দিয়ে। তাই আপাতঃ দৃষ্টিতে বলতে পারি দেশ পিছিয়েই থাকবে!
যে কোন দেশের সরকার চাইলেই সে দেশের আমূল পরিবর্তন করতে পারে। তাহলে আমাদের দেশের সরকার কেন দেশকে উন্নতির পথে নিচ্ছে না? কারন হলো একটাই - নষ্ট রাজনীতি। এখন দেশ যদি প্রযুক্তির দিক দিয়ে উন্নত হয়ে যায়, তাহলে সরকারের সকল অপকর্ম মুহুর্তেই সবাই জেনে যাবে। টিভি মিডিয়া, পত্র-পত্রিকা, রেডিও সহ যে কোন মিডিয়াকেই সরকার শক্তির মাধ্যমে মুখ বন্ধ করে রাখতে পারে, কিন্তু ইন্টারনেটের মাধ্যমেকে কী দিয়ে সরকার বন্ধ করবে? নেটে কোন কিছু ছড়িয়ে পড়লে তা কখনোই পুরোপুরি আটকানো সম্ভব নয়। তাই কোন সরকারই চাইবে না তার ভোট হারাতে আর এই জন্যই এখন পর্যন্ত আমাদের দেশে ইন্টারনেট সহজলভ্য হয়নি। এই জন্য বলতেই পারি বাংলাদেশ পিছিয়েই থাকবে!
এবার আসি সাধারণ জনগনের বিষয়ে। আমরা অনেকটা হুজুগে জাতি। সবাই যে দিকে যায় আমরা চিন্তা না করেই ঐ পথেই যাই। অনলাইন বলতে আমরা বুঝি ফেসবুক আর বিভিন্ন খারাপ ওয়েব সাইট। না এই কথা সবার জন্য প্রযোজ্য নয়, তবে অধিকাংশ ব্যবহারকারীর ধারনা এমনই। ফলে অভিভাবক ধরেই নেন কম্পিউটার কিনে দেয়া যায় ঠিক আছে; কিন্তু নেট দিলেই সন্তান খারাপ হয়ে যাবে। অন্য দিকে সন্তানরাও সুযোগ পেলে ঐ খারাপ দিকেই যাওয়ার চেষ্টা করে। কারন তারা আসলেই কিছু খুজে পায় না ইন্টারনেটে কাজ করার মতো! আর এ সব কিছুই হচ্ছে অজ্ঞতার জন্য। কারন এখন বাংলাতেই ইন্টারনেটে শিক্ষামূলক অনেক সাইট রয়েছে। না জানার কারনে অভিভাবক বা সন্তান ভুল পথে আছে।
আমাদের দেশে বেকার সমস্যা অনেক প্রকট। অথচ এই ইন্টারনেটের যুগে কাজ খুঁজে পাওয়া তেমন কঠিন কিছু নয়। কাজ শিখে নিয়ে আউটসোর্সিং-এর কাজ করে খুব সহজেই বেকারত্ব ঘুচানো সম্ভব। তবে এই সুযোগে বিভিন্ন অনলাইনভিত্তিক MLM কোম্পানী গাটের পয়সা যোগাচ্ছে। কারন ঐ একটাই- আমাদের অজ্ঞতা এবং কাজ না জেনেই শর্টকাটে টাকা ইনকামের ধান্দা। তার মানে হলো আমাদের দেশে তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমেও ধোকা দেয়া শুরু হয়ে গেছে। আর যারা এই ধোকার শিকার হবে তাদের কি তথ্য-প্রযুক্তির প্রতি অনাস্থা সৃষ্টি হবে না? অবশ্যই হবে। আর এভাবেই পিছিয়ে থাকবে আমাদের এই বাংলাদেশ।
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে না বললেই নয়। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা কি প্রযুক্তিবান্ধব? মোটেও না। বিজ্ঞান বিভাগে যেসব পড়ানো হয় তা অনেকটাই পুথিগত বিদ্যাই বলা যায়। বাস্তবে প্রয়োগ করা হয় কতটুকু? স্কুল কলেজে কম্পিউটার নামে যে বিষয় আছে সেটা যেন উপহাস করার জন্য! বাইনারী থেকে হেক্সাডেসিমেল বা অক্ট্যাল থেকে বাইনারী এসব দিয়েই ভরা থাকে বইগুলো। কম্পিউটারে কত মজার মজার কাজ করা যায় সেসব বিষয়ে কিছু আছে বইতে? আর এই জন্যই তো কম্পিউটার বিষয়কে নেয়া হয় শুধু মাত্র অপশনাল হিসেবে যেন A+ মিস না হয়ে যায়! ল্যাবগুলো যেন শুধু মাত্র মাইক্রোসফট অফিস শেখার জন্য। তাহলে আপনারাই বলুন প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকবে না তো জাপান পিছিয়ে থাকবে নাকি?
এমন হাজারো সমস্যার কথা বলা যায় কিন্তু কাজের কাজ তেমন কিছু হবে না। আর সমাধান? এসবের সমাধান বাচ্চারাও দিতে পারবে; তাই বলে আর সময় নষ্ট করছি না। তারপরেও লিখলাম যদি কোন মিডিয়া কর্মীর চোখে পড়ে! সরকারের কোন আমলা যদি একটু আমলে নেয়! তাহলেই আমার এই লেখা স্বার্থক। আপনাদের কাছে যদি মনে হয় সবার পড়া উচিৎ তাহলে অবশ্যই ফেসবুক শেয়ারে বাটনে ক্লিক করুন।
ধন্যবাদ সবাইকে।
আমি হাসান যোবায়ের। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 15 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 157 টি টিউন ও 4939 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 166 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
নতুন কিছু করার দারুন আকাঙ্ক্ষা!
100% shohomot.