সেল ফোনের টেকনোলজি এতটাই দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে যে মাঝে মাঝে নিজেকে প্রশ্ন করি সেল ফোন কি আগামী কয়েকবছর পর আর সেল ফোন থাকবে? যেভাবে ডেভেলাপ হচ্ছে তাতে এই সেল ফোন প্রযুক্তি ছেড়ে যোগাযোগের ক্ষেত্রে আরো কোন নতুন প্রযুক্তি চলে আসলে এতে অবাক হওয়ার মত কিছু থাকবে না।
তবে এই সেল ফোন ও কিন্তু একদিনে আইফোন হয়ে যায়নি। এর পেছনে আছে বিশাল ইতিহাস। ইতিহাসের পাতা থেকে সেই সব সেল ফোনের কিছু অংশ আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করব –
এই সময়কালে এই ভারী আকৃতির সেট গুলো বিশষ ইউনিফাইং কাজে ব্যবহার করা হত। বিভিন্ন বড় বড় কোম্পারীগুলো ও নিজেদের মধ্যে সংযোগ রক্ষার্থে এই সেট গুলো ব্যবহার করত। প্রি ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট সেস্টেম আসার সময়কালে এটাই ছিল এরিকসনের দেয়া ৮৮ পাউন্ডের একটি সেট। এই সেটগুলোর ওজন এবং পাওয়ার কনসাম্পশন রেট এতই বেশি ছিল যে বাধ্য হয়ে এদেরকে অন্য কোন মেশিনে এ্যাডজাষ্ট করতে হয়েছিল। ১৯৫৬ – ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত এই মডেলের কনজিউমার ছিল মাত্র ১২৫ জন!!
আজকের বিষহীন মটোরোলা ই একসময় বিশ্বের প্রথম হ্যান্ড হেল্ড মোবাইল ফোনের ঘোষনা দিয়েছিল। ডায়নাট্যাক এর এই প্রোটোটাইপ তারা ১৯৭৩ সালে ঘোষনা করলেও বাজারে আসতে আসতে ১৯৮৩ সন পর্যন্ত সময় নেয়। এই দশ বছরে বছরে মটোরোলার ইজ্ঞিয়াররা আক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছেন এর সাইজ এবং ওয়েট কমিয়ে আনার জন্যে। তবে ১৯৮৩ সনে রিলিজ হওয়ার পরে এটি তুমুল জনপ্রিয় হয়ে যাওয়ায় হালের আইকনে পরিনত হয়। এই সেট থাকা মানে সেই সময়ে ধনী সম্প্রদায়দের কে বুঝানো হত। এর রিটেইল প্রাইস ছিল - $৮৬৫৭
সেই সময়কালে ডায়নাট্যাক মূলত তুমুল জনপ্রিয় হলেও বিজ্ঞানের কাছে বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। তারা তখনও স্পেস তেমন আহামরি কমাতে পারেনি। আর ব্যাটারী টেকনোলজি বাড়িয়ে দিয়েছিল সেটের ওজন।
এই সময়েই আবির্ভাব ঘটে হালের জায়ান্ট নকিয়ার। তারা লাগেজেবল হ্যান্ডসেট বাজারে নিয়ে আসে। এবং প্রথম তারাই সেল ফোনে ক্যাপাসিটিভ ব্যাটারির ব্যবহার নিয়ে আসে। মোবিরা টকম্যান দিয়েই তাদের ক্যাপাসিটিভ ব্যাটারির যাত্রা শুরু। আবার ডায়নাট্যাকের এক ঘন্টার টক টাইমকে ও ছাড়িয়ে তারা দেয় অনেক বেশি টক টাইম।
ডায়নাট্যাকের প্রযুক্তি নকিয়ার সামনে দাড়াতে না পারলেও ডায়নাকের সাফল্যের ইতিহাসকে অনুপ্রেরনা হিসেবে নিয়ে মোটোরোলা আরে ছোট এবং লাইট ওয়েট এর সেট বাজারে নিয়ে আসে ১৯৮৯ সনে। এতে সংযুক্ত করা হয় আজকের নোভেল স্পেস সেভিং আইডিয়া। মটোরলার ইজ্ঞিনিয়ার রা হার্যওয়ারের হাইন্ড সেকশান কে ইনওয়ার্ড এবং আউটওয়ার্ড দুইভাবে প্লেস করার আইডিয়া নিয়ে আসে। আর ছবি থেকে দেখা যাচ্ছে এদের ফ্লিপ করার অপশন। এটি মূলত এখান থেকেই শুরু হয়েছিল।
এবারো উৎসব নিয়ে আসে মটোরোলা। ১৯৮৯ – ১৯৯০ সনে জখন অন্যরা কার ফোন নিয়ে মাতামাতি করছে তখন তারা এই ব্যাগফোন নিয়ে কাজ করা শুরু করে দেয়। এবং ১৯৯৪ সালে বাজারে নিয়ে আসে এই ব্যাগফোন। আসলে এটা একটা ব্যাগ সহকারেই বাজারে আসে। ব্যাগের ভেতরে থাকত একটি ট্রান্সিভার এবং ব্যাটারি। এটি ছিল ইউজার অপারেটেড এবং হালের সবচেয়ে লাইটওয়েটেড কর্ডেড হ্যান্ডসেট। ব্যবহারকারীরা সাধারনত এই ব্যাগ কাধে নিয়ে ঘুরত। এতে আরো ছিল দীর্ঘায়িত টকটাইম, গ্রেটার ব্যাটারী লাইফ এবং হাই সিগনাল রেজ্ঞ।
এবার মটোরোলা আসল খেলাটা দেখাতে সক্ষম হয়। বাজারে নিয়ে আসে তাদের প্রথম পকেট সেট। ৩.১ আউন্স ওজনের এই সেটটি ই প্রথম আসল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। যেখানে মাইক্রোট্যাক এ সেটটি কে অর্ধেক ফোল্প করার সুবিধা দিয়েছিল সেখানে স্টারট্যাক পুরোটাই ফোল্ড হয়ে পকেটে চলে আসত। এই ধরনের ডিজাইনকে এখন বলা হয় “ক্ল্যামশেল”।
অনেকদিন পরে আবারো নকিয়া। যদিও এটি প্রথম স্মার্টফোনের কাতারে পড়ে না, তারপরেও এটিউ মূলত স্মার্ট ফোন যুগের সূত্রপাত ঘটায়। মার্কেটেও তুমুল জনপ্রিয় ছিল এটি। বলতে পারেন মটোরোলার উপর এটি ছিল নকিয়ার একটি মরন কামড়। সত্যিকার অর্থেই এটি চিল একটি পকেট পিসি। এতে ব্যবহার করা হয়েছিল ইন্টের ৩৮৬ ড্রাইভ সিপিইউ এবং ৮ মেগা বাইটের একটি RAM। এতেই প্রথমবারের মত সংযুক্ত করা হয় এলসিডি মনিটর।
এই সেলের মাধ্যমেই প্রথম এসএমএস এবং ফ্যাক্স রিসিভ, ই মেইল প্রযুক্তি ব্যবহার করা সম্ভব হয়। ১৬০ এসএমএস ক্যারেক্টার টেকনোলজির ব্যহার করে খুব স্বল্পপরিসরে এতে ওয়েব পেজ ব্রাউজিং এর সুবিধা ও পাওয়া যায়। আরে ছিল ফুল পিডিএ অর্গানাইজিং ক্যাপাবিলিটি।
এই সময়কালে প্রায় সব সেলফোনেই সংযুক্ত হতে থাকে এক্সটার্নাল এ্যান্টেনা। তাই এ্যাপিলের দিক দিয়ে সেল গুলো অনেক বোরিং হয়ে আসছিলো। এই সময়ে নকিয়া ইজ্ঞিনিয়াররা আরেকটি কেরামতি নিয়ে আসে মার্কেটে। তারা সেল ফোনের ফোনের ভেতরে ফ্ল্যাট প্লেটের মত একটি ইন্টারনাল এ্যান্টেনা প্লেস করতে সফল হয়। এই সেটটি ই ছিল প্রথম “ক্যান্ডিবার” হ্যান্ডসেট। এই সেটটি থেকেই মোবাইল ফোন থেকে বিদায় নেয় এ্যান্টেনা প্রযুক্তি। এবং এই নন ক্ল্যামশেল ডিজাইনই মোবাইলের স্ট্যান্ডার্ড ফ্যাশন।
মোবাইলে WAP টেকনলজি প্রতমবারের মত নকিয়াই নিয়ে এসেছিল তাদের এই সেটটির মাধ্যমে। লিমিটেড প্রসেসিং পাওয়ার এবং ডিসপ্লে টেকনোলজির প্রথম বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এক ইউজাররা শুধু ওয়েবের টিপিক্যাল সাবসেটগুলোই দেখতে সক্ষম ছিল।
প্রচলিত নকিয়া আর মটোরোলার গন্ডি পেরিয়ে ব্ল্যাকবেরির যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৯ সনে। তখন তাদের টেকনোলজি ছিল সিম্পল একটি টু ওয়ে পেজার। তবে ২০০২ সনে এভাবে এক লাফে আকর্ষনীয় স্মার্টফোন ব্ল্যাকবেরি রিলিজ করে সবাইকে চমকে দিয়েছিল। এতে সংযুক্ত করা হয় ইন্টিগ্রেটেড সেলফোন সাপোর্ট। এর টপ অফ দ্যা লাইন, মোবাইল মেইল এবং স্মার্ট লুক খুব শিঘ্রই বিজনেজ ক্ল্যাসের পছন্দের তালিকায় চলে আসে।
নোকিয়া এবং মটোরোলা ছাড়া আরো একটি কোম্পানীর বহিঃপ্রকাশ ঘটল এবং এমন একটি প্রযুক্তির সমন্বয় গটানো হল যে রাতারাতি মাতামাতি শুরু হয়ে গেল। সেল ফোনে সংযুক্ত করা হল ক্যামেরা প্রযুক্তি। জাপানের এই প্রযু্ক্তিউ তাক লাগিয়েছিল ইলেকট্রনিক্স মার্কেটে। রিলিজ করা হয় আমেরিকায়। পাবলিক যেন হরিলুটের মত স্টকের পুরোটাই কিনে নেয়। জনপ্রিয়তার জন্যে সবাই তখন ক্যামেরা ফোন বললেও এখন আমাদের কাছে এতটাই কমন যে আমরা আর ক্যামেরা ফোন বলি না।
আরো একটি কোম্পানী এবং আরো কিছু বিস্বয়! যখন টি মোবাইল সাইডকিক (ডেজ্ঞার হিপটপ নামেও পরিচিত) আমেরিকার মার্কেটে রিলিজ করা হয় তখন এটি এসএমএস এসএমএস এ্যাডিক্টদের জন্যে একটি ড্রিম মেশিনে পরিণত হয়। সংযুক্ত করা হয় সাধারনের চাইতে বড় মাপের এলসিডি মনিটর কুয়েরর্টি কিবোর্ড। এর এই স্মার্ট কি বোর্ডের আইডিয়া থেকেই বর্তমানের অনেক হাইড এন্ড রিভিল কি বোর্ড ডিজাইন করা হয়।
অনেকদিন পরে আবার মটোরোলা। এই সময়টার আশেপাশে সবগুলো সেলফোনই একই রকমের হয়ে যাচ্ছিল। এই সময়ে ব্রেক থ্রু নিয়ে আসে মটোরোলা। তারা নিয়ে আধুনিক রেজার V3 স্লিম, লার্জ স্ক্রিন সহ স্ল্যাব সাদ্শ্য ক্ল্যামশেল ফোন। সংযুক্ত করা হয় ফ্ল্যাট কি বোর্ড, বিল্ট ইন ক্যামেরা এবং মাল্টিমিডিয়া অপশন। এর কুল এবং স্ম্যার্ট লুক ফোন পাগলাদের আরো পাগল করে দেয়।
এর সাদে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কোন দরকার নাই। অন্ধ ও জানে যে এখন আউফোন কি জিনিস। ম্যাকিনটোশ কম্পিউটার এবং আউপড থেকে বেরিয়ে তারা যে পৃথিবীকে এমন চোখ ধাঁধাঁনো প্রযুক্তি উপহার কেবল এ্যাপেল ই দিতে পারে। একটি সত্যিকার অর্থের স্মার্টফোন তারাই নিয়ে আসে। আর এর বর্তমান থ্রিজি এর কথা কি আর বলব? কি নেই এতে? হয়ত এখন এই প্রশ্নের উত্তর খুজতে আরেটা টিউন করতে হবে ....................
আমি দুঃসাহসী টিনটিন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 16 বছর 7 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 200 টি টিউন ও 1531 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 34 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
মানুষ হিসেবে তেমন আহামরি কেউ নই আমি। সাটামাটা জীবনটাই বেশী ভালো লাগে। আবার মাঝে মাঝে একটু আউলা হতে মন চায়। ভালো লাগে নিজেকে টিনটিন ভাবতে .... তার মত দুঃসাহসী হতে মন চায় ..... কিন্তু ব্যক্তি জীবনে অনেকটা ভীতুই বটে ..... অনেক কিছুই হাতছাড়া হয়ে গেছে জীবনে এই কারনে ..... আবার...
টিনটিন ভাই আপনে কি এখনও এইগুলো ব্যবহার করেন নাকি ? তয় পুরাতন কে নতুন করে দেখছি ভাল লাগছে । আগেরগুলো ব্যবহার করতে মেয়েদের একটি ব্যনিটি ব্যাগ লাগত হি হি হি । কিন্তু এখন খুব স্মল । ধন্যবাদ……………