শুরুতেই আপনাদের একটা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি বলি। তাহলে পরবর্তী লেখাগুলো সহজে বুঝতে পারবেন। সংগ্রহঃ “ভিনগ্রহের মানুষ”, লেখকঃ রকিব হাসান।
২৯৮১ সাল।
আর বেশি দূরে নেই গ্রহটা। নামার জন্যে তৈরি হতে শুরু করল পৃথিবীর নভোশ্চরেরা। গতি অনেক কমিয়ে দেয়া হয়েছে স্পেস শিপের। সবার চোখ রাডারের পর্দায়। এসে গেছে গন্তব্যস্থল। আর কয়েক মিনিটের মধ্যেই ল্যান্ড করবে মহাকাশযান।
গ্রহটার নাম আন্তিনা। ওটার একেবারে কাছাকাছি এসে শূন্যেই থেমে দাঁড়াল স্পেস শিপ। অবাক হয়ে টেলিভিশনের পর্দার দিকে তাকিয়ে আছে নভোশ্চরেরা। এক বিচিত্র দৃশ্য ফুটে উঠেছে চোখের সামনে। গভীর জঙ্গলের পাশে বিস্তীর্ণ প্রান্তর। এদিক ওদিক চড়ে বেড়াচ্ছে অসংখ্য প্রাণী-দানবীয় বাইসন, লোমশ হাতি ইত্যাদি। বাইসনের দলের পেছনের পাহাড় থেকে হামাগুড়ি দিয়ে চুপিসারে নেমে আসছে ওটা কি? দাঁতাল বাঘ। বিশাল খড়গের মত দুটো দাঁতওয়ালা ভয়ংকর এক হিংস্র মাংসাশী পশু। প্রান্তরে জঙ্গলে ঘোরাঘুরি করছে মানুষ, পরনে তাদের পশুর চামড়ার পোশাক। হাতে আদিম বল্লম, তীর-ধনুক, কুড়ুল। শিকারী জাত। সভ্যতা কি জিনিস, জানেই না ওরা।
প্রান্তরের এক পাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বিশাল পাথুরে পাহাড়। পাহাড়ের পাদদেশে ছোট বড় ডবা। কুচকুচে কালো পানি, তেলতেলে। কি যেন নড়তে চড়তে দেখা গেল একটা ডোবার পানিতে। ওই ডোবার ওপর টিভির পিকচার রিসিভারের ভিউ ফাইন্ডার-ফোকাস কেন্দ্রিভূত করার আদেশ দিলেন অপারেটরকে ক্যাপ্টেন। টিভির পর্দায় ডোবাটার ছবি ভালমতো ফুটে উঠতেই দেখল নভোশ্চরেরা, হাঁটু পানিতে দাঁড়িয়ে ছটফট করছে একটা দানবীয় মেগাথেরিয়াম-আধুনিক স্লথ ভালুক আর দক্ষিণ আমেরিকার গেছো স্লথের মাঝামাঝি প্রায় আধুনিক হাতির সমান একটা জানোয়ার।
বুঝতে পারলেন ক্যাপ্টেন, তলিয়ে যাচ্ছে প্রাণীটা। ওই ডোবাগুলোতে পানি নেই, আছে অতি ঘন আলকাতরা। ওপরে ভাসছে খনিজ তেল। বোধহয় পানি ভেবেই ডোবায় পানি খেতে নেমেছিল জানোয়ারটা। রাক্ষুসে আলকাতরার ভয়ংকর ডোবায় ফাঁদে পড়েছে।
পরিষ্কার দিন। গরম। ঝকঝকে নীল আকাশে মেঘের চিহ্নমাত্র নেই। ঘুরে ঘুরে পেট পুরে ঘাস-পাতা সব্জী খেয়ে দারুণ পিপাসা পেয়েছিল ভোজী মেগাথেরিয়ামের। জলাশয়ের খোঁজ করতে করতে পাহাড়ের ওপাশ থেকে বেরিয়ে এসেই ডোবাটা চোখে পড়েছে তার। খুশি হয়ে উঠেছে। পাওয়া গেছে পানি। তড়িঘড়ি গিয়ে ডোবায় নেমেছিল সে।
কিন্তু নেমে পানিতে চুমুক দিয়েই মুখ বাঁকাল। খনিজ তেল খাওয়া যায় নাকি? তার ভাষায় ডোবাটাকে গালাগাল করতে করতে উঠে আসতে গেল সে। কিন্তু চমকে থেমে গেল। উঠতে পারছে না। মারাত্মক আঠালো আলকাতরায় আটকে গেছে তার পা। উঠতে তো পারলই না, বরং জোরাজুরিতে দ্রুত আরও তলিয়ে যেতে থাকল আলকাতরার ভেতর। কিন্তু তারপরেও থামল না। প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়েই যেতে লাগল।
ওদিকে পাহাড়ের একটা পাথরের আড়ালে বসে আছে এক মস্ত দাঁতাল বাঘ। সাংঘাতিক খিদে পেয়েছে তার। বারবার লোভাতুর দৃষ্টিতে চাইছে শ’তিনেক গজ দূরে চরে বেড়ানো কুজশূন্য উটগুলোর দিকে। এখনও কুজ দেখা দেয়নি আন্তিনার উটের পিঠে। আরও লক্ষ লক্ষ বছর দেরি আছে। আদিম পৃথিবীর উটের পিঠেও কুজ ছিল না। আন্তিনার বয়স এখন আদিম পৃথিবীর মতোই।
উটগুলো আরও কাছে আসার অপেক্ষা করছে বাঘটা। তারপর সুযোগ বুঝে আক্রমন করবে। হঠাৎ মেগাথেরিয়ামের আকুল আর্তনাদ কানে পৌঁছল। ব্যাপার কি দেখার জন্যে মুখ ঘুরিয়ে তাকাল। দেখতে পেল আলকাতরার ফাঁদে আটকানো অসহায় জানোয়ারটাকে।
আমি রাশেদুল ইসলাম। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 7 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 7 টি টিউন ও 31 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
জন্মঃ ২৯ অক্টবর ১৯৯১ গোপালগঞ্জ।
দারুন;;;;;;;;;;;;!!!!!!!!!!!!!