গল্পটা নিয়ে যতই ভাবছি ততই মজা লাগছে। কি করব বুঝছি না। খালি পৃষ্টার পর পৃষ্টা লিখে যেতে ইচ্ছা করছে। হা হা... আমি আমার গল্পের প্রেমে পড়ে গেছি। যাই হোক চলেন মূল গল্পে যাওয়া যাক।
সূচিঃ পর্বঃ১(ভূমিকা), পর্বঃ২[ইন্দ্রিয় আর ভূত], পর্বঃ৩[অদ্ভুদ ডায়েরী]
ডায়েরীটা পড়ে এলিজা অনেকক্ষন চোখ বন্ধ করে ছিল। তারপর যখন চোখ খুলল, তখন আশেপাশে থাকাল। সে যেন কাউকে খোজার চেষ্টা করছে। নিজেকে বড় বেশি অসহায় মনে হচ্ছে তার। কেন যেন তার মনে হচ্ছে সে পাগল হয়ে যাচ্ছে। তার মামার মত। তার মামা ভারী মেধাবী ছাত্র ছিল। কিন্তু শেষপর্যন্ত হয় পড়ালেখার চাপে, না হয় অন্য কোন কারনে তার স্বাভাবিক জীবন নষ্ট হয়ে যায়। তার যে মামা প্রোগ্রামিং এর মহাগুরু ছিল সেই মামাই এখন কোন যুক্তি বুঝতে পারে না। একেবারে শিশুর মত হয়ে গেছে সে। যখন যা খুশি তাই করে।
এলিজা ধীরে ধীরে উঠে আয়নার সামনে গিয়ে বসল। আয়নাতে নিজের কালো চুলগুলো একটু এলোমেলো করে দিয়ে হাসার চেষ্টা করল। সাথে সাথে তার চেহারার সবচেয়ে আকর্ষনীয় টোলটা দেখা গেল আয়নাতে। নিজের এই সম্পদটা খুব ভালো লাগে তার। এর যত্নও নেয় সে নিয়মিত। সহজে কাউকে দেখায় না সে তার মিষ্টি হাসি। তবে রাসেলের সামনে গেলেই যেন তার এই হাসি সে আর ধরে রাখতে পারে না। যতবারেই সে তার সামনে হাসে ততবারেই হা হয়ে যায় ছেলেটা, সাথে সাথে মাথা নিচু করে ফেলে আবার। অদ্ভুদ ছেলে!
তার কথা মনে হওয়াতে অবশ্য ভালই হল। নিজেকে আর একা লাগছে না এখন আর। এখন মনোযোগ দিয়ে ডায়েরীর কথা ভাবতে শুরু করল সে।
মাখন ভবিষ্যত দুনিয়ার এক মানুষ। যে তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে। যতবারেই তার সাথে কথা বলতে চায়, ততবারেই এলিজা নিজের উপর নিয়ন্ত্রন হারায়। এলিজা মনে মনে চাচ্ছে এসব যেন সত্য হয়। না হলে...মামার মত। না আর ভাবতে পারছে না সে।
ডায়েরীটা হাতে নিল সে। কি মনে করে কলমটাও নিল। আজকের তারিখটার পাতায় গিয়ে হাত রাখল সে। আর অমনি তাকে চমক দিয়ে তার হাত কিভাবে যেন নড়তে শুরু করল।
০৩।০৩-বৃহষ্পতিবার
"অবশেষে। অবশেষে কাজ হল তা হলে। তুমি নিশ্চয়ই এবার তোমার উপর নিয়ন্ত্রন হারাও নি? আমি কি ঠিক বলছি? তুমি চাইলে জবাব দিতে পার।" সাথে সাথে এলিজার হাত থেমে গেল।
সে লিখল," জ্বী"।
তার হাত আবার লিখতে শুরু করল," অবিশ্বাস্য! এটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য। শুধু আমার কেন, আজকের দুনিয়ায় সবচেয়ে বড় সাফল্য এটা। তোমাকে কি বলব বুঝছি না আমি। আমার কেন যেন খুব লজ্জা লাগছে। এত দিন আমার মনে হয়েছে আমি অবৈধভাবে কোন মানুষের মনে প্রবেশ করে তাকে নিয়ন্ত্রন করছি। একটা অপরাধবোধ কাজ করছিল। আর এখন মনে হচ্ছে আমি বিশ্বজয়ী, আমি কথা বলছি আমার চেয়ে বহু বছর আগে জন্ম নেওয়া এক মেয়ের সাথে। আশ্চর্য আমার তো গর্বিত হবার কথা। আমি লজ্জা পাচ্ছি কেন? হুমম এখন বুঝতে পারছি। আমি একটা মেয়ের মন পড়ছি। যেটা আমাদের দুনিয়েয় সবচেয়ে নিষিদ্ব আর সবচেয়ে আনন্দের। হা হা হা। কিছু বলতে চাও নাকি?”
এমন সময় এলিজা তার হাতের নিয়ন্ত্রন ফিরে পেল। সে লিখল,” দয়া করে আমাকে কি সব কিছু বুঝিয়ে বলবেন? কি হচ্ছে এসব?” এমন সময় তার বাবার ডাক শুনল সে। সাথে সাথে ডায়েরী বন্ধ করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। মা যাওয়ার পর থেকে সে বাবা ডাকার সাথে সাথেই সাড়া দেয়ার চেষ্টা করে।
“তোর মা ফোন করেছে”, বললেন হাসান সাহেব।
এলিজা ফোনটা ধরল, “হ্যালো, আম্মু?”
“হুমম, কেমন আছিস?” বললেন মিসেস শশী।
“ভালো, তুমি কেমন আছ? আদনান কই?” এলিজা তার রুমের দিকে হাটতে হাটতে জিজ্ঞাসা করল।
“আমি ভাল আছি। আদনান কম্পিউটারের ভেতর ঢুকে বসে আছে সেই দুপুর থেকে”। শোন, তোর কি “বেশি খারাপ লাগছে? চলে আসব?” আবেগী কন্ঠে বললেন তিনি।
“আরে নাহ। আরো কিছুদিন থাক। কত বছর পরে গেছ মনে আছে? জানো, আব্বু আজকে দুধওয়ালার সাথে ঝগড়া করেছে”। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য বলল সে।
“হা হা ... কেন?” মিসেস শশী না হেসে পারলেন না।
“কি নিয়ে আবার, নাম নিয়ে আর কি। আচ্ছা মা, মামা কেমন আছে?”
“ওর কথা আর বলিস না। ওষুধ খেয়ে ঘুমাচ্ছে এখনো। আচ্ছা, ভালো থাকিস। তোর বড় মামা ফোন করেছে। আমাকে ডাকছে। যেতে হবে। ভালো থাকিস। তোর আব্বুর দিকে নজর রাখিস। রাখি তাহলে”। ফোন রাখতেই মিসেস শশীর মনটা খারাপ হয়ে গেল। আসলে ঐভাবে বের হয়ে আসা উচিত হয়নি। কিন্তু বের না হয়ে আর কি করার ছিল তার। উঠতে বসতে খালি এক কথা। “তোমার ভাই তো...... তোমার ভাই নিজেও ডুবছে, পুরো বংশকেও ডুবিয়েছে”। তাই রাগ করে বের হয়ে গিয়েছিলেন তিনি ঘর থেকে। আর কত সহ্য করা যায়। ভাইয়ের মাথায় না হয় একটু সমস্যা হয়েছে, তাই বলে কি পাগল ডাকবে। পাগল হলে কি কারো কথা শুনত। এইত দুপুরেও তো তিনি ওষুধ খেতে বললেন। আর অমনি ঐ তেতো ওষুধটা একবারে খেত। পরে যখন ফিরতে চাইলেন এলিজা বলে, “পাগল হইছ। নানু বাড়ি কতদিন পরে গেছ হিসেব আছে? এই ফাকে কিছুদিন থেকে আস”। আদনানেরও বন্ধ চলছে এখন। বুদ্বিটা ভালই। ভাবতে ভাবতে তার চোখে পানি চলে এসেছে।
সকালে ক্লাসে ঢুকেই। এলিজার মনে হল, জাকির নতুন কিছু করেছে। নিশ্চয়ই নতুন কোন কোড লিখেছে। সবাই তাকে ঘিরে বসে আছে। কাছে গিয়ে দেখল। জাকির তার ল্যাপটপ এনেছে। সবাই সেটা দেখছে। নাহ, সেটা দেখছে না। কোন একটা গেম খেলছে। একজন একজন করে বসছে আর উঠছে। এমনিতেই তার মন বিষন্ন হয়ে গেছে। গতকাল মায়ের ফোন রাখার পর অনেক্ষন ডায়েরীটা নিয়ে বসে ছিল, তেমন কিছুই হয়নি। ব্যাগ রাখতে রাখতে দেখল। রাসেল এক কোণায় বসে খাতায় কি যেন আকছে। আকার হাতটা ধারুণ ভাল তার। এমন সময় ফেলানীর ডাক পড়ল, “এলিজা, এদিকে আয়। তাড়াতাড়ি”। তার উচ্ছাস দেখেই বুঝল জাকিরের নতুন প্রোগ্রামটা তার পছন্দ হয়েছে।
এলিজার উঠতে ইচ্ছা করছে না। কিন্তু কিছুই করার নাই। উঠতেই হবে। সে গিয়ে বসল, জাকিরের ল্যাপটপের সামনে। জাকির বলতে শুরু করল, “এটা আমার বানানো সবচেয়ে ভয়ানক সফটওয়্যার। বিশ্বাস করবি কিনা জানি না, তবে এটা কি করতে পারে জানিস?”
“নাহ তো”। দুদিকে মাথা নাড়িয়ে বলল এলিজা। এমন সময় রাসেলের দিকে চোখ গেল তার। সে এদিকেই তাকিয়ে আছে এখন।
জাকির বলে যেতে থাকল, এটা এমন একটা সফটওয়্যার যেটা ভবিষ্যত বলতে পারে।
এলিজা হাসল।
বিশ্বাস করলি না তো। দেখ, তোর নাম দে প্রথমে। এলিজা ওর নাম দিল। এবার তুই যে মাসে জন্মেছিস তার নাম্বারটা বল। মানে জানুয়ারী হলে ১ আরে ডিসেম্বর হলে ১২ আর কি। এলিজার জন্ম জুলাইয়ে মানে সাত। সে ৭ লিখল প্রোগ্রামটিতে। তারপরেই পুরো স্ক্রিনটা কালো হয়ে গেল। সেখানে ধীরে ধীরে ফুটে উঠল “ You are going to give birth the Future”
ক্লাসের সবাই অবাক হয়ে গেল।
জাকির কিছুটা ততমত খেয়ে গেলেও পরে সামলে নিয়ে বলল, “দেখছিস”।
এলিজা বলল, কি দেখব। ভবিষ্যৎ কে কিভাবে জন্ম দেয় মানুষ?
ফেলানী বলল, “ অবশ্যই দিতে পারে। যেমন ধর মানুষ এখন পৃথিবীর বাইরে কিভাবে বাস করবে সেটা জানে না। এখন যদি রাসেল বলে যে চাদে তার বলে দেয়া উপায়গুলো মেনে চললে। মানুষ বাচতে পারবে। তাহলে কি সে ভবিষ্যতকে জন্ম দিল না”? কঠিন যুক্তি এরপরে আর কোন কথা থাকতে পারে না।
এলিজা আবার বিষন্ন হয়ে গেল। কি হচ্ছে এসব তার সাথে। আবার ভবিষ্যৎ...
এই পর্ব এখানেই শেষ। গল্পে জাকিরের মত প্রোগ্রাম বানাতে না পারলেও। আমি একটা বানিয়েছি। যেটা শুধু মজা করার জন্যি। 😉
আমি মাখন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 14 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 37 টি টিউন ও 961 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আমি একটা ফাজিল। সবসময় ফাজলামো করতে ভালোবাসি। আর আমি প্রায় সবসময় হাসিখুশি থাকি। আমাদের সমাজে সবার এত বেশি দুঃখ যে কাওকে একটু হাসতে দেখলেই মনে করে তার মাথার স্ক্রু কয়েকটা পড়ে গেছে। আমি তাদের সাথে একমত, আমার শরীরের যে অংশ আমাকে হাসতে দেবে না, আমার তার দরকারও নাই।
খুব সুন্দর হচ্ছে মাখন ভাই , চালিয়ে যান… আর আনেক দিন পরে মনে হয় গল্পটা পোস্ট করলেন?
আর জাকির ভাই আপনাকে সত্যি সত্যি নিয়ে এসেছে মাখন ভাই জানিনা কথায় গিয়ে থামবে।।