অবাক ব্যাপার, গল্পটা আপনাদের পছন্দ হবে ভাবি নি। আসলে কোন গল্পই ধারাবাহিকভাবে পড়তে মজা লাগে না। কিন্তু কিছু করার নাই। এক টিউনে এটা শেষ করা যাবে না। আর যেহেতু টিউন একাধিক করতেই হচ্ছে তখন পর্ব সংখ্যা আশা করি কোন ব্যাপার হবে না। তাহলে...চলুন গল্পে যাওয়া যাক।
সূচিঃ পর্বঃ১), পর্বঃ২[ইন্দ্রিয় আর ভূত]
ক্লাস শেষে ম্যাডাম বের হয়ে যাবার পরেও সবাই কিছুক্ষন নিরব হয়ে থাকল। তারপর শুরু হল আলোচনা, বিশেষ করে ভুতের। রিমা আর সানিয়াও সেখানে যোগ দিল। সবাই তাদের নিজের ভুত অভিজ্ঞতা শেয়ার করছে। কেউ কেউ দাদা, নানার কাছে শোনা গল্পও নিজের নামে চালিয়ে দিল। আর যাদের সেই অভিজ্ঞতাও নেই তারা নিজেরাই গল্প বানিয়ে বলতে শুরু করেছে। কেউ কেউ মিথ্যা কাহিনী বলে বাহ বাহ কুড়াল আর অনেকে কসম কেটেও সত্য ঘটনাও বিশ্বাস করাতে পারল না।
এলিজা, ফেলানী, জাকির আর রাসেল লাইব্রেরীর দিকে হাঠা শুরু করল। রাসেল অবশ্য কিছুটা দূরুত্ব বজায় রেখে হাটছে। এই গ্রুপের সদস্য হলেও সে কখনও ওদের সাথে ভালভাবে মিশতে পারে নি। কারও সাথেই পারে না। যতই ভীড়, কোলাহল হোক না কেন সে সবসময় নিজের জগতেই থাকে। শান্ত, আর নিরব সে জগত। সেখানে তার একার রাজত্য। তবে মাঝে মাঝে একটা ছায়া দেখে সে সেখানে। সে জানে ছায়াটা কার। তবে আজ সে তার জগতে নেই। এই প্রথম ক্লাসে কোন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে সে। তার বুকের কম্পন থামে নি এখন। সামনে এলিজার মাথায় বারবার মাখনের কথাগুলো বাজছে, মাঝেমাঝে ম্যাডামের কথাগুলোও এসে পড়ছে সেখানে। ফেলানীর অবস্থা মিশ্র। আজকের দিনে খুব ভালো কিছু ঘটনা যেমন ঘটেছে খুব খারাপ ঘটনাও ঘটেছে। এলিজার খাতা হাতে চোখের পানি, নিজের ক্লাসে একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারার মত ঘটনা যেমন ঘটেছে। তেমনি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নাম্বার পাওয়া আবার জাকিরের পারপরমেন্সও তার মন ভালো করে দিয়েছে। ঐদিকে জাকির হাটছে বুক ফুলিয়ে এই প্রথম ম্যাডামের ক্লাসে কোন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে সে। তবে সবাই হাটছে নিরবে। লাইব্রেরীতে গিয়েও কারো মন বসল না। কিছুক্ষন কিছু বই নাড়াছাড়া করে। সবাই উঠে পড়ল। বাসায় চলে যাবে বলে।
এলিজা বাসার সিড়ি দিয়ে উঠতেই বাবার কন্ঠস্বর শুনতে ফেল। দুধওয়ালার সাথে কথা বলছে।
"ঐ মিয়া নাম কি তোমার?"
"শাহ মিয়া চৌধুরী" দুধওয়ালার উত্তর।
"ঐ মিয়া ফাজলামো কর। শাহ ও তুমি , মিয়া ও তুমি, চৌধুরীও তুমি আমরা কি ঘাস লাগাব নাকি নামের সাথে।" বাজখাই গলায় বললেন মি. হাসান। সত্যি কথা বলতে কি তার নামে কোন বিখ্যাত সাবটাইটেল নাই, এজন্য কারো নামের সাথে খান, চৌধুরী শুনলেই তার মন খারাপ হয়ে যায়।
দুধওয়ালা ব্যাপারটা ধরতে পারে নাই। সে হেসে দিল।
"দূর মিয়া, তোমার দূধে সব ভেজাল। দুধে পানি দেয়া তো অনেক আগেই বন্ধ করেছ। এখন পানিতে দুধ ঢালতেও যদি এরকম কিপ্টেমি কর, তাইলে তো আর হইল না। সাবধান হয়ে যাও। বিয়ে করছ?( শাহ মিয়া চৌধুরী লজ্জা পেয়ে দুপাশে মাথা নেড়ে না জানাল।) দেখ ব্যবসা করতে চাইলে ভুলেও বিয়া করবা না। এরকম মানুষ ঠকানো ব্যাবসা করলে বাসর রাতে বউ মরে যাবে বলে দিলাম।"
এলিজা তার রুমে ঢুকে, দরজা লাগিয়ে দিল। বিছানায় শুয়ে আজকের দিনের কথা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ টেবিলে পড়ে থাকা তার ডায়েরীর দিকে নজর চলে গেল। সে কয়েক সপ্তাহ আগে ডায়েরীটা গিপ্ট পেয়েছে। রাসেলের কাছ থেকে। রাসেল তাকে মাঝে মাঝে এরকম গিপ্ট দেয়। বাসা থেকে আনে না। সামনে কোন কিছু ভাল লাগলেই কিনে সেটা এলিজাকে দেয়। কিন্তু কিছু বলে না। সেদিনও আরেক বন্ধুর জন্য গিপ্ট কিনতে একটা গিপ্ট শপে গিয়েছিল ওরা সবাই। হঠাৎ করে মাথা চুলকাতে চুলকাতে তাকে ডায়েরীটা দেয় সে। তবে ঐটাতে এখনো লেখে নি সে। হঠাৎ ম্যাডামের কথা মনে পড়ে যাওয়াতে উঠে গিয়ে ডায়েরীটা হাতে নিল সে। ডায়েরীটা না খুলে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে লাগল সে। আসলেই রাসেলের পছন্দ আছে বলতে হবে। এক কথায় অসাধারন লাগছে ডায়েরীটা। হঠাৎ করে মনে হল ডায়েরীটা সে প্রানিবিদ্যা পরীক্ষার আগে পেয়েছে। হয়ত সে কিছু একটা এখানেও লিখতে পারে। ডায়েরী খুলতেই সে বিষনভাবে চমকে গেল। সত্যি সত্যি ডায়েরীতে নয়। একেবারে গতকাল পর্যন্ত। অথচ তার স্পষ্ট মনে আছে সে এতে লেখে নি। তাড়াতাড়ি প্রথম থেকে পড়া শুরু করতে গিয়ে বাবার ডাক শুনতে পেল। তাই ডায়েরীটা বিছানায় রেখে সে বাবার কাছে গেল। তারপর গোসল করে খেয়ে দেয়ে আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। রুমের দরজা বন্ধ করে সে ডায়েরীটা হাতে নিল। আর সাথে সাথে তার সারা শরীরে শিহরণ বয়ে গেল।
২৪/০২-বৃহস্পতিবার
শুরুতেই বলি আমি ভীষন ভীষন দুঃখিত। আমি ভেবেছিলাম তুমি আমার কথা বুঝতে পারবে। কিন্তু সকালে আমি যখন যোগাযোগ করি, তখন তুমি তোমার উপর নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলেছিলেন। পরীক্ষার খাতায় এরকম আজেবাজে কথা দেখলে আপনার ম্যাডাম নিশ্চয়ই তোমাকে খুব বেশি বকা দিবে। আসলে আমি খুবই দুঃখিত।
২৫/০২-শুক্রবার
আমি কিভাবে তোমার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করব বুঝছি না। যখনি তোমাকে কিছু বলতে চাচ্ছি তখনি তুমি তোমার উপর নিয়ন্ত্রন হারাচ্ছ। আমার মনে এটা ঠিক হবার জন্য সময়ের প্রয়োজন। কিন্তু আমার কাছে সময় খুবই অল্প। যেহেতু আমি তোমার আমার বার্তা পাঠাতে পারছি আমার মনে হয় এখন থেকে কিছু কিছু কথা বলে ফেলা উচিত। যাতে পরে তোমার মানসিক অবস্তা ঠিক হলে। এইসব বোঝাতে বোঝাতে সময় নষ্ট না হয়ে যায়।
আমি মাখন। আমি তোমার সময় থেকে কয়েকশ বছর পরের ভবিষ্যৎ থেকে বলছি। আসলে আমি অনেক গুলো আইন ভেঙ্গে তোমার সাথে যোগাযোগ করছি। আমার মনে হয়, তুমি আমার সম্পর্কে আরো কিছু জানতে কৌতুহলী। কিন্তু সেসব এখন বলে কোন লাভ হবে বলে মনে করছি না। যাই হোক, পৃথিবী এখন তোমাদের সময় থেকে অনেক অনেক বেশি উন্নত। নিশ্চয়ই অপমান লাগছে। আসলে মানুষ কখনো নিজের চেয়ে অন্যকে শ্রেষ্ঠ ভাবতে চায় না। আর সবচেয়ে বড় কথা তোমার সময়টা যেমন এর আগের দু'শ বছর আগে থেকে উন্নত। আমারটাও তেমন। এখানে, যেমন আমার অহংকারের কিছু নেই তেমন তোমার অপমানেরও কিছু নাই। যাই হোক, আমি তোমার সাথে এজন্য যোগাযোগ করেছি যে______
২৬/০২-শনিবার
সত্যি কথা বলতে কি গতকাল আমি প্রথম বারের মত অপমান বোধ করেছি। আমার কথার মাঝখানে তুমি উঠে গিয়েছিলে। এখন বুঝতে পারছি। তোমার বাবা ডেকেছিল তাই না। আচ্ছা, আদনান ছেলেটা কে? অদ্ভুদ, ব্যাপারটা এত সহজ হবে আমি বুঝতে পারিনি। তুমি এখন আমার প্রশ্নের উওত্তর দিচ্ছ। আদনান তোমার ছোট ভাই। ঠিক কিনা? তোমার মা আর তোমার ভাই তোমাদের থেকে আলাদা হয়ে গেছে কয়েকমাস আগে তাই না? আরে আসলেই মজা তো_____
২৭/০২-রবিবার, থেকে ০১/০৩- মঙ্গলবার পর্যন্ত কিছু নেই।
এলিজার মনে পড়ল এই তিনদিন সে মায়ের কাছে গিয়েছিল তাই ডায়েরীতে কিছু নাই।
০২/০৩-বুধবার
প্রথমে ভেবেছিলাম তবুও তোমাকে বলে যাব। কিন্তু তারপর মনে হল তুমি মানসিকভাবে এখনো প্রস্তুত নও। তাই আমার কথাগুলো অন্য কোথাও লিখলে তা খুজে পাবে না। তাই আমাকে অপেক্ষা করতে হল। নাহ এইভাবে আর পারা যাবে না। তোমার এখন মন সম্পর্কে কিছু জানা দরকার। আমি দেখি কি করা যায়। হুমম পেয়েছি। তোমার ম্যাডামকে কাজে লাগালে কেমন হয়?
ডায়েরীতে আর কিছু নেই। ডায়েরীটা বন্ধ করে সে কিছুক্ষন ঝিম মেরে বসে রইল সে এখনো কিছুই বুঝতে পারছে না।
এই পর্বটাও শেষ। কেমন হল। আমার ভালোই লেগেছে। একটু রহস্য তৈরি করার চেষ্টা করলাম জট লেগে গেলে মাগ করে দিয়েন। 🙁
আমি মাখন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 14 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 37 টি টিউন ও 961 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আমি একটা ফাজিল। সবসময় ফাজলামো করতে ভালোবাসি। আর আমি প্রায় সবসময় হাসিখুশি থাকি। আমাদের সমাজে সবার এত বেশি দুঃখ যে কাওকে একটু হাসতে দেখলেই মনে করে তার মাথার স্ক্রু কয়েকটা পড়ে গেছে। আমি তাদের সাথে একমত, আমার শরীরের যে অংশ আমাকে হাসতে দেবে না, আমার তার দরকারও নাই।
হুম মাখন ভাই চালিয়ে যান আমরা আছি আপনার সাথে।