মাখন [পর্বঃ২। ইন্দ্রিয় আর ভূত](সায়েন্স ফিকশন)

আজ সারাদিন গল্পটা নিয়ে ভাবলাম। মোটামুটিভাবে মাথায় যা আসল তার একটা রাফ দাড় করানোর পর আমার নিজেরই খুবই ভাল লেগেছে। জানি না আপনাদের কেমন লাগবে। চলুন তাহলে শুরু করি...আজকে ইন্দ্রিয় আর ভূত নিয়ে কিছু বলার চেষ্টা করা হল।
সূচিঃ পর্বঃ১(ভূমিকা)

বিষন্ন ম্যাডাম


মিস. রেশমি বিষন্ন মনে ক্লাসে ঢুকলেন। তিনি যে কিছু একটা নিয়ে চরমভাবে দুশ্চিন্তা করছেন, ছাত্ররা তা কিছুক্ষনের মধ্যেই বুঝে গেল। সবসময় হাসিখুশি এই ম্যাডামকে তাদের হঠাৎ বড় বেশি অচেনা মনে হতে লাগল।

“আমি মনে হয়, তোমাদের প্রশ্নটা বেশি কঠিন করে ফেলেছি। কি বল তোমরা?” মুখে কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে বললেন তিনি।
সাথে সাথে সবাই শোর শুরু করে দিল, “জ্বি ম্যাডাম...মারাত্মক...আমরা তো কল্পনাও করতে পারি।” আরো কত কি।
এবার ম্যাডামের মুখে সত্যি সত্যিই হাসি ফুটল। হাত দিয়ে সবাইকে থামতে বলল।
“তোমাদেরকে একটা সুখবর দিই। তোমাদের আগামী সপ্তাহে একটা ক্লাস টেস্ট নিব। বিশ নম্বরের।“ বলার ফাকে তিনি লক্ষ করলেন সবার মুখ কালো হয়ে গেছে। মজার ব্যাপারটা হল সেখানে যে যা পাবে তাই গত পরীক্ষার নাম্বারের সাথে যুক্ত হবে।”
শুধ্মাত্র ফেলানী আর এলিজা ছাড়া গোটা ক্লাস যেন লাফিয়ে উঠল। সবচেয়ে খুশি হল জাকির। কারণ, সে ফেল করেছিল। প্রাণিবিদ্যা বিষয়টা সে কোনভাবেই যেন বুঝতে পারে না।
একটু থেমে মিস. রেশমী আবার বলতে লাগলেন, “শুধুমাত্র দুজনকে এই পরীক্ষা দিতে হবে না। ফেলানী আর এলিজা।”
ফেলানী প্রচন্ড রেগে গেল। ম্যাডাম যেন তার মুখের ভাষা বুঝেই বললেন, “ ওদের ঐদিন পরীক্ষা দিতে হবে না। এবং ক্লাসেও আসতে হবে না। সেদিন ওদের ছুটি।”

এবার ফেলানী শান্ত হল। ভাল ছাত্রী হবার এই এক সমস্যা ক্লাস ফাকি দেয়া যায় না। ক্লাস ফাকি দেয়ার এই মজাটা ও কখনো পাই নি। কিন্তু, এবার অন্তত দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে পারবে সে। ভাবতেই মনটা ভাল হয়ে গেল তার।
চল এবার পড়ায় যাওয়া যাক। বই খাতা খোলার দরকার নেই। কারণ আজ যা পড়াব তা তোমাদের সিলেবাসে নেই। কিন্তু একজন প্রানিবিদ্যার শিক্ষক হিসেবে যেটা তোমাদের বলা দরকার বলে আমি মনে করি। জাকির আর রাসেলের খুশি হবার পালা এবার। সিলেবাসের বাইরের যেকোন কিছু তাদের জন্যে বরাবরই আনন্দের।

ম্যাডাম তার ক্লাস শুরু করল, “ আজকের আমি যা পড়াতে যাচ্ছি তা হল ইন্দ্রিয় আর ভুত।” শব্দ দুটো শুনে পুরো ক্লাসের উপর দিয়ে ঠান্ডা শিহরণ বয়ে গেল। বিশেষ করে ভুত শব্দটা শুনে। রিমা আর সানিয়া অস্বস্তিতে পরে গেল ওরা ভুতকে মারাত্মক ভয় পায়।
“ তোমরা সবাই জানো মানুষের ইন্দ্রিয় ৫ টা। ঠিক কি না?(সবাই হা’বোধক মাথা নাড়ল)। শ্রবনেন্দ্রিয় মানে আমাদের কান, দর্শনান্দ্রিয় মানে চোখ, ঘ্রাণেন্দ্রিয় মানে নাক, স্পর্শীন্দ্রীয় মানে ত্বক আর  স্বাদেন্দ্রিয় মানে জ্বিহবা।(ম্যাডামের বলার সাথে সাথে সবাই তাদের ইন্দ্রিয়গুলো ঠিক আছে কিনা দেখে নিল।) কিন্তু তোমরা কি জানো ইন্দ্রিয় কী?(এবার কেউ উপরে নিচে আর কেউ কেউ ডানে-বামে মাথা ঘুড়াল)। কেউ কি বলতে পারবে?(এবার কেউ নড়ল না, রাসেল ছাড়া)” ম্যাডাম রাসেলকে বলতে বলল।

“ম্যাডাম, ইয়ে মানে আমাদের মানে মানুষের কিংবা যেকোন প্রানীর যে অংগটা দ্বারা সে তার চারপাশের পরিবেশ থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারে মানে তাকেই ইন্দ্রিয় বলে”। রাসেল কথাগুলো বলেই তার মোটা হাত দিয়ে কপালের ঘাম মুছল।
“অসাধারণ, আমার মনে হয় না আমি এত ভাল করে বলতে পারতাম। রাসেল তোমাকে অনেক ধন্যবাদ। তুমি বসতে পারো”। ম্যাডাম উচ্ছসিত হয়ে বললেন।
রাসেলের হার্টবিট যেনো তার বুক ফাটিয়ে দিবে। ধপ করে বসে পড়ল সে।

“রাসেল যা বলেছে, আমার মনে হয় না এর পরে আর কিছু বলার দরকার আছে। চোখ, কান, নাক, জ্বিহবা, ত্বক  এদের সবার কাজ হল আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে তার সম্পর্কে আমাদের ধারণা দেয়া। সবচেয়ে ভাল হয়, যদি তোমরা তোমাদের সামনের জিনিসটাকে চোখ বন্ধ করে বুঝার চেষ্টা করবে। যেমনটা একজন অন্ধ মানুষ করে। কিন্তু মজার কথা হল, আমাদের আরো দুটো ইন্দ্রিয় আছে। আসলে দুটো না একটা সেটা নিয়েও প্রচুর মতবিরোধ আছে। ইন্দ্রিয় দুটো হল সচেতন মন, অবচেতন মন। খেয়াল করে দেখেছ নিশ্চয়ই, দুটোর শেষেয় মন আছে। এজন্য অনেকে বলে এখানে দুটো ইন্দ্রিয়ের কি হল। দুটোই মনের অংশ বিশেষ। সুতরাং ইন্দ্রিয় হবে ছয়টা। এবার আমার প্রশ্ন যদি ইন্দ্রিয় ছয়টা বা সাতটা হয়। তাহলে আমরা পাচটা বলি কেন? কেউ কি বলতে পারবে?( জাকির হাত তুলল এবার)।

“ম্যাডাম এটা একেবারে সহজ একটা যুক্তি। আমরা পাচটা বলি কারন, এই ছয় নাম্বার ইন্দ্রিয়টাকে আমাদের বাকি পাচটা ইন্দ্রিয় অনুভব করতে পারে না”। বলার পর সে এদিক ঐদিক তাকাতে লাগল, সবার হা হয়ে যাওয়া মুখ দেখতে।

ম্যাডাম নিজেও এই উত্তরটা আশা করে নি। তাই তিনিও অবাক হয়ে গেলেন। তারপর বললেন, “ সাবাশ! অসাধারণ। সত্যিই অসাধারণ। হুম, জাকির সাহেব আপনি বস্তে পারেন। এরপর আসি সেই রহস্যময় মনের কথায়। আমাদের মন সেই তত্ত্ব গুলো যোগার করতে পারে যেগুলো আমাদের বাকি ইন্দ্রিয়গুলো পারে না। যেমন ধর, একটা অন্ধকার নির্জন বাড়িতে ঢুকলে আমাদের গা শিরশির করে। উঠে খেয়াল করে দেখ এখানে আমাদের দুটো ইন্দ্রিয় কিন্তু একেবারেই নিশ্চল। তখন আমরা শুধু একটা কথাই বুঝতে পারি। সেটা হল পালাও পালাও এটাই আমাদের মনের কাজ। যারা সাতটা ইন্দ্রিয় মানে তাদের মতে এটা সচেতন মন। তাহলে অবচেতন মন কোনটা। অবচেতন মনের কাজ আমরা সবাই জানি। “স্বপ্ন” হ্যা স্বপ্ন হল অবচেতন মনের কাজের ফসল। সারাদিন আমরা অনেক কিছুই দেখি কিন্তু মনে রাখি না। এত কিছু মনে রাখার সময় কই, দরকারও বা কি। কিন্তু এই অবচেতন মন কিন্তু সব কিছু নোট করে রাখে। প্রয়োজনে ডাক দিলেই বের করে দেয়। তবে মনকে বশ মানানো এত সহজ না কিন্তু। আমাদের পাচটা ইন্দ্রিয়ের প্রতিদিন ব্যবহার এর প্রয়োজন পড়ে কিন্তু এই মনের তেমন একটা ব্যবহার কিন্তু আমরা করি না। তাই এর আলাদা যত্নের প্রয়োজন রয়েছে। সে ব্যাপারে আরেকদিন বলব।

এবার আসি ভুতের ব্যাপারে। ভুতকে আমরা সহজে বলতে পারি ধোকাবাজ। এর কাজ হচ্ছে আমাদের এক বা একাধিক ইন্দ্রিয়কে ধোকা দেওয়া। কখনো এই কাজটা করে কোন জাদুকর, কখনো আমাদের চারপাশের পরিবেশ, আবার কখনো আমরা নিজে। কিভাবে সেটা নিয়ে তোমরা ভেবে দেখো।

তাহলে ভুত থেকে বাচার উপায় কি। একটায় উপায় সেই ষষ্ট বা ষষ্ট এবং সপ্তম ইন্দ্রিয় এর ব্যবহার করা। মনকে আমরা যতটা ব্যবহার করব মন ততটা শক্তিশালী হবে। আর একটা শক্তিশালী মনের মানুষ। যা চাই, তাই করতে পারে। এখন যদি বল মনের ব্যবহার কিভাবে শিখব। তাহলে আমি কয়েকটা পদ্বতি বলে দিতে পারি। যেমন, গল্প লিখতে পার, সৃষ্টিকর্তার ব্যাপারে চিন্তা করতে পার। সবচেয়ে ভাল হয় যদি ডায়েরী লেখার অভ্যাস করতে পার। দিনশেষে সারাদিনের ঘটনাগুলো ডায়েরীতে লিখে ফেলবে। প্রতিটা ঘটনার নিচে নিজের ব্যাক্তিগত মতামত লিখবে। আজ এই পর্যন্তই। আগামী সপ্তাহের পরীক্ষায় আমি চাই সবাই বিশে বিশ পাও।"

ক্লাস শেষ হবার পর শুধু দুজন বিষন্ন হয়ে গেল, এলিজা আর ফেলানী। এলিজার কেন যেন মনে হতে লাগল। ম্যাডাম ক্লাসটা শুধু তার জন্যেই নিয়েছেন। আর ফেলানীর মন খারাপ কারন সে একটা প্রশ্নের উওর ও দিতে পারে নাই।

আগামী পর্ব থেকে আশা করছি গল্পটা জমে উঠবে। আসলে আজকের লেকচারটা আমার নিজের। ভেবেছিলাম এটা নিয়ে একটা টিউন করব। এখন গল্পের মধ্যে দিয়ে দিলাম। 😛

Level 0

আমি মাখন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 14 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 37 টি টিউন ও 961 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

আমি একটা ফাজিল। সবসময় ফাজলামো করতে ভালোবাসি। আর আমি প্রায় সবসময় হাসিখুশি থাকি। আমাদের সমাজে সবার এত বেশি দুঃখ যে কাওকে একটু হাসতে দেখলেই মনে করে তার মাথার স্ক্রু কয়েকটা পড়ে গেছে। আমি তাদের সাথে একমত, আমার শরীরের যে অংশ আমাকে হাসতে দেবে না, আমার তার দরকারও নাই।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

:-p আমি ভেবেছিলাম আরও কয়েকজন টিউনারের নাম আসবে আর ক্লাশেই আরেকটা আনওফিসিয়াল মিট-আপ হয়ে যাবে। আগেতো এলিজাকে কষ্ট দিলেন এবার আপনি আমার আশায় গুড়ে বালি দিলেন। বাই দ্যা ওয়ে, আপনাকে চিনতে ক্লিক করলাম 😛

    আরে ভাই, অস্থির হচ্ছেন কেন। এখনো তো বহু পথ বাকি। ঠিক আছে আগামী পর্বে আপনি আসবেন। কথা দিলাম।
    আর চিনতে পেরেছেন তো ঠিক মত। 😛

    যাক, আগের মিট-আপে থাকতে না পারলেও এইটাতে থাকছি 😀 । জাকির ভাই আমি আসছি, আপনার সহপাঠী হয়ে :-P। মাখন ভাইকে চিনলাম :-@

আমার কোন কমেন্ট নেই 😛

    ভাইয়া গল্প বেশি খারাপ হয়ছে। আপনার কমেন্ট নাই কেন? 🙁

    অনেক সুন্দর হচ্ছে 😛 , শেষ করা ছাড়া কোন কমেন্ট দিব না আর 😛 । যে কোন সাইন্স ফিকশন এক টানে পড়তে না পারলে অনেক কষ্ট লাগে 🙁 যত তাড়াতাড়ি শেষ করবেন তত তাড়াতাড়ি আমি পড়তে পারব।

    জাকির আর রাসেলের সাথে আমারও সিলেবাসের বাইরের যেকোন কিছু বরাবরই আনন্দের। 😉

    😛 😛 😛 😛

ভাই আমার নাম কেন। তাড়াতাড়ি শেষ করেন। আমার দেরি সহয্য হয় না ।থ্যাংকি

    আপনারটা অলৌকিকভাবে চলে আসছে। 😀

দারুণ লিখলেন ভাই!!! আহা আমাকে যদি …………….. না থাক। হই হই অনেক মজা পাইলাম্‌্‌্‌্‌্‌্‌্‌্‌্‌্‌

    ধুর! ভাবলাম আমাকে চিনুন এ গিয়ে আপনার ছবি দেখব। দেখলাম আমার টিউনের একটা কমেন্ট!

    আপনার নাম তো জানি না।
    আর ঐটাই তো কথা। আমার সম্পর্কে আমি নিজেই এই তত্যটা জানতাম না।

Level 0

he…he…he…:)

Level 0

apnake jene valo laglo!!! He…he…he…:)

    আমার ঐ চরিত্রটা আপনার ভালো লেগেছে? তাহলে তো…। 😉 ধন্যবাদ, কষ্ট করে কমেন্ট করার জন্য।

চমৎকার, খুব ভাল লাগছে।