বর্তমান যুগ তথ্য প্রযুক্তির যুগ! এই তো সেদিন, ২০০০ সালেও কিছু কিছু তথ্য প্রযুক্তির চমক যা কল্পনাও করা যেতো না তা আজ ২০১৭ সালে এসে আমাদের জীবনযাত্রায় স্বাভাবিক অংশ হয়ে পড়েছে। ২০০৬ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশে যখন প্রথম ব্লু-টুথ সিস্টেম আসে, তখন অনেকের কাছেই ব্লু-টুথ ছিলো স্বপ্নের মতো! ”ভাই কিভাবে এক ডিভাইস থেকে অন্য ডিভাইসে ভার্চুয়ালি ফাইলস কপি করা যায়? এতো অসম্ভব!”
আর এখন? “আরে ভাই ব্লু-টুথ তো বাপ-দাদার আমলের জিনিস, এখন ১০ এমবিপিএস এর ওয়াইফাইও স্লো লাগে!”
২০০৯ সালের আগে যখন মোবাইল ডিভাইসগুলোতে অ্যান্ড্রয়েড আসে নি তখন কম্পিউটারের কাজগুলো আমরা মোবাইলেই করতে পারবো, কম্পিউটারের এইচডি গেমস, এইচডি মুভিসগুলো আমরা মোবাইলেই শুয়ে শুয়ে উপভোগ করতে পারবো তা কিন্তু তখনকার সময়ে একটা স্বপ্ন ছিলো! আর এখন? VR Box এর মাধ্যমে আমরা মোবাইলকে জীবন্ত রূপ দিতে পারছি। হয়তো বা আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের থেকেও আরো বেশি উন্নত টেকনোলজির যুগ দিয়ে বড় হবে।
তবে আমি আজ আপনাদের সামনে অতীতের তথ্য প্রযুক্তি নিয়ে কথা বলতে আসিনি, আজ আমি ভবিষৎতের কিছু তথ্য প্রযুক্তির চমক নিয়ে আলোচনা করতে এসেছি। বলা যায় না, আপনার জীবনের আয়ু থাকলে আপনিও এসব ফিউচারিস্টিক টেকনোলজিগুলো পরখ করে যেতে পারবেন!
তো চলুন ঘুরে আসি অদূর ভবিষৎতের টেকনোলজির দুনিয়া থেকে:
যে হারে টেকনোলজির উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে, তাতে অদূর ভবিষৎতে আমাদেরকে হয়তো শ্বাস-প্রাশ্বাস নেওয়া আর চোখের পাতা ফেলা ছাড়া আর কোনো কাজ করতে হবে না। ঘরের কাজের বুয়ার কাজ থেকে শুরু করে নিজের পারসোনাল সব কাজ আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্টগুলো করে দিবে। তবে তখন মানব জাতি হয়ে পড়বে সব থেকে অলস জাতি!
অদৃশ্য কম্পিউটার! মানে বাস্তবিক অদৃশ্য নয় আবার! তবে এইজাতীয় কম্পিউটারগুলো আমাদের পোশাকে, শরীলের চামড়ার ভিতর সেট করা থাকবে। এখন আপনি কল্পনা করুন, আপনার শরীলে কম্পিউটার ফিট করা থাকলে আপনি কি কি করতে পারবেন!
মানুষের যে জিনিসটা নিয়ে টেকনোলজির সবথেকে বেশি আগ্রহ, তা হচ্ছে ব্রেইন! কৃত্রিম ভাবে মানুষের ব্রেইন বানানো কাজে তথ্য প্রযুক্তির বিজ্ঞানীরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে এটা শীঘ্রই আমরা দেখতে পারবো না, কারণ মানুষের ব্রেইন হচ্ছে অনেক রহস্যময়ী এক জিনিস। তবে কুকুরের ব্রেইন নিয়ে বিজ্ঞানীরা অনেকদুর এগিয়ে গিয়েছেন। অদূর ভবিষ্যৎতে হয়তো আমরা ডিজিটাল ব্রেইন দিয়ে তৈরি ভাচূর্য়াল পশুপাখি বাসায় পালতে পারবো!
গোবাল ওয়ার্মিং সমস্যার সমাধানের জন্য বিজ্ঞানীরা Geo-Engineering সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যাদের মধ্যে সবথেকে চমকপ্রদক প্রজেক্ট হচ্ছে মেঘ নিয়ন্ত্রণ! বৃস্টি কখন হবে, রংধনু কখন উঠবে, মেঘের রং সাদা করা ইত্যাদি জিনিস মানুষেরাই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে অদূর ভবিষ্যৎ এর এই চমকপ্রদক টেকনোলজির মাধ্যমে!
সম্ভবত দুই যুগের মধ্যে মানুষ মঙ্গলগ্রহে বসবাস শুরু করবে। আর তখন মঙ্গলগ্রহে উচ্চ প্রযুক্তির ইন্টারনেট ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে যার মাধ্যমে পৃথিবী ও মঙ্গলগ্রহ ইন্টারনেটের মাধ্যমে ভাচুর্য়ালি কানেক্টেড থাকবে সবসময়! অবাস্তব হলেও অদূর ভবিষ্যৎতে আমরা এই সৌরজগতির ইন্টারনেট ব্যবস্থা দেখতে পারবো!
এটি বিজ্ঞানের আরেকটি চমক! ২০৩০ সালের মধ্যে বিজ্ঞানীরা বয়স বৃদ্ধির সমাধান নিয়ে একটি চমক নিয়ে আসবেন। বলা হচ্ছে, এই প্রযুক্তির মাধ্যমে বৃদ্ধ মানুষদের তাদের চামড়ার টিস্যুার রিডিজাইনের মাধ্যমে যৌবন রুপে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। আর তরুণ তরুণীদের বয়স বৃদ্ধি হলেও তাদের শরীলের চামড়া বৃদ্ধ হবে না! শুনতে অবাস্তব হলেও অদূর ভবিষ্যৎতে আমরা এই চমক দেখতে পাচ্ছি।
সেদিন বেশি দূরে নেই যখন রোবটদের হাতে দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তুলে দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে আমেরিকায় Aegis Combat System চালু হয়ে গিয়েছে। যেখানে রোবটগুলোকে প্রতিরক্ষার জন্য মানুষ হত্যার বৈধ্যতা দেওয়া হবে। দেখা যাক সামনের দিনগুলো কি কি হবে!
বায়োলজিস্টরা বর্তমানে স্টিম সেলস থেকে কিভাবে বিভিন্ন প্রকার টিস্যুা জেনারেট করা যায় তা নিয়ে গবেষণা করছেন। তাদের এই গবেষণা সফল হলে আমাদেরকে আর মাংসের জন্য পশুপাখি হত্যা করতে হবে না। কারণ তখন আমরা আমাদের নিজেদের শরীলের টিস্যুা নিয়ে ল্যাবে মাংস উৎপাদন করতে পারবো!
ব্যক্তিগত ফ্যাব্রিকেটর দিয়ে মানুষ নিজে নিজেই তার দরকারী পণ্য ঘরে বসেই উৎপাদন করতে পারবে। যেমন চিরুনী, টুটপেস্ট, টুটব্রাশ, মেডিসিন ইত্যাদি। তখন আর প্রতিদিন বাজারে যেতে হবে না! ঘরে বসেই নিজে নিজেই দরকারি সব জিনিস বানিয়ে ফেলতে পারবেন আপনি নিমিষেই!
বিজ্ঞানীরা আমাদের সাধ্যের মধ্যে ফটোভল্টেইক সেলস নির্মাণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন যার মাধম্যে অদূর ভবিষ্যৎতে আমরা সমুদ্রের পানি পান করতে পারবো। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে সমুদ্রের পানি থেকে লবণ এবং অন্যান্য ক্ষতিকর কেমিক্যালসগুলো সরিয়ে আমাদের জন্য বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হবে!
উড়ন্ত গাড়ি! অবশ্য এটি আর এখন স্বপ্ন হয়। অলরেডি Terrafugia Inc কোম্পানি তাদের প্রথম উড়ন্ত গাড়ি বানিয়ে ফেলেছেন এবং খুব শীঘ্রই আমরা উড়ন্ত গাড়ী পারসোনাল ব্যবহারের জন্য বাজারে ক্রয় করতে পারবো।
ফিজিশিয়ান মিচিও কাকুর মতে, ২০৫০ সালে মানুষ দুনিয়াকে শেইপ শিফ্টিং এর মাধ্যমে পরিবর্তন করে দিবে। যখন যেমন প্রয়োজন হয় তখন তেমন শেইপের জিনিস মানুষ নিজে নিজেই করে নিতে পারবে। শেইপ শিফ্টিং এমন এক টেকনোলজি যা যেকোনো অবজেক্টকে রিএরেঞ্জ করতে পারবে কয়েকটি ক্লিকের মাধ্যমেই। ধরুন আপনি ১২ তলার থাকেন। নিচে আপনার গাড়ি রাখার কোনো পাকিং এরিয়া নেই। তখন শেইপ শিফ্টিং এর মাধ্যমে আপনি আপনার বিশাল গাড়িকে ছোট করে নিয়ে এসে আপনার পকেটে পুরে রাখতে পারবেন! আবার পরেরদিন অফিসে যাবার সময় গাড়িকে পকেট থেকে বের করে শেইপ শিফ্টিংয়ের মাধ্যমে আবার তার আগের শেইপে ফিরেয়ে আনতে পারবেন!
পেট্রল এবং ডিজেলের বিকল্প হিসেবে উন্নত বিশ্বে ফসিল ফুয়েল, বৈদুত্যিক চার্জ ইত্যাদির ব্যবহার শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে প্রযুক্তির চমকে অদূর ভবিষ্যৎতে আমাদের কে হয়ত বা আর পেট্রোল আর ডিজেল ব্যবহার করতে হবে না।
তথ্য প্রযুক্তির চমকের মাধ্যমে আমরা অলরেডি বিভিন্ন ছোট ছোট ডিভাইস দেখছি যারা বড় বড় কাজ করতে পারছে। যেমন নোটপ্যাড কম্পিউটার, ঘড়িতে টিভি, কলমে ভিডিও ক্যামেরা, চশমায় কম্পিউার সিস্টেম ইত্যাদি। অদূর ভবিষ্যৎতে হয়তো আরো বেশি চমক থাকছে আমাদের জন্য।
উড়ন্ত গাড়ির কথা আমি টিউনে আগেই বলেছি। এবার মেঘের উপর গাড়ি চলাচলের রাস্তা আমরা অদূর ভবিষ্যৎতে দেখতে পারবো। ইতিমধ্যে আমেরিকান কয়েকটি কোম্পানি আকাশপথে রাস্তা নির্মাণের ম্যাপিংয়ের কাজ শুরু করে দিয়েছেন!
হুম! নিমিষেই এক স্থান হতে অন্য স্থানে টেকনোলজির মাধ্যমে যাতায়াত করাকে টেলিপোর্টেশন সিস্টেম বলা হয়। এগুলো আমরা এখন হলিউডের মুভিগুলোতে দেখে থাকি। তবে বলা তো যায় না, ভবিষ্যৎতে আমরা আসলেই টেলিপোর্টেশন ডিভাইস পেয়ে যাবো!
আমাদের আয়ুকে বৃদ্ধি করার জন্য বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে। আমাদের আয়ু কেন দিন দিন কমে যাচ্ছে তার কারণ বের করার জন্য তারা গবেষণা করছেন। তাদের গবেষণা সফল হলে ভবিষৎতে আমাদের আয়ুকাল আরো বেশি হবে আশা করা যাচ্ছে।
সাসটেইনিক জেনেটিক রিজেনারেশন প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া প্রাণীদেরকেও ফিরিয়ে আনতে পারবো অদূর ভবিষ্যৎতে। বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া প্রাণীদের দেহাবশেষ থেকে হরমোন জিন সংগ্রহ করে অন্য প্রানীদের শরীলে তা প্রবেশ করিয়ে প্রজননের মাধ্যমে প্রযুক্তি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া প্রাণীদের ফিরিয়ে আনতে পারবে। শুনতে কেমন জানি লাগলেও এটা হয়তো প্রযুক্তির কল্যাণে সম্ভব হতে পারো।
ইউনিভার্সাল ট্রান্সলেটর ডিভাইসের মাধ্যমে আমরা পৃথিবীর যেকোনো ভাষায় কথা বলতে পারবো উক্ত ভাষা না শিখেই! হুম! প্রযুক্তির চমকে এটাও থাকছে!
এই প্রযুক্তির মাধ্যমে কোনো ছাত্রের মাথায় পিছন দিক থেকে ছোট্ট মেটাল ডিভাইসের মাধ্যমে বিশাল বিশাল তথ্য আমরা মিনিটেই ট্রান্সফার করতে সক্ষম হবো। তখন আর গ্রাজুয়েট ডিগ্রির জন্য কোনো ছাত্রকে বছরের পর বছর পড়াশোনা করতে হবে না, মিনিটের মধ্যেই সকল তথ্যা তার ব্রেইনে সেট করা যাবে!
হাহাহাহা! হলিউডের মুভিগুলোকে ভবিষ্যৎতের প্রযুক্তি নিয়ে অনেক সময় অনেক গ্যাজেড উপস্থাপন করা হয়। তবে অনেক সময় তা বাস্তবেও রুপান্তর নেয়। নিউরালাইজার প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষের ব্রেইনের অতীতের মেমোরীকে মুছে দেওয়া যাবে, যাতে তারা আবার নতুন করে সুন্দর জীবন শুরু করতে পারে। যেমন কোনো দাগী খুনের আসামীকে ভালো মানুষে পরিণত করতে হলে হয়তো অদূর ভবিষ্যৎতে এই প্রযুক্তির ব্যবহার হবে!
আমার আজকেল লিস্টে সবথেকে উপরে রয়েছে জেনেটিক মডিফিকেশন! অদূর ভবিষ্যৎতে বাচ্চা হবার আগে বাবা-মা তার বাচ্চার ডিজাইন নিজেরাই পছন্দ করে নিতে পারবে! বাচ্চার চুলের রং, চোখের আকৃতি, চামড়ার রং ইত্যাদি পরিবর্তন করা যাবে এই প্রযুক্তির মাধ্যমে!
তথ্য প্রযুক্তি নিত্য নতুন ডিভাইস আর গেজেটের মাধ্যমে আমাদেরকে প্রতিনিয়ম চমক দিয়ে যাচ্ছে। আজ যেসব ফিউচারিস্টিক টেকনোলজি নিয়ে আলোচনা করলাম সেগুলো হয়তো বা আজকে আমাদের কাছে অবাস্তব এবং কাল্পনিক মনে হতে পারে। কিন্তু অদূর ভবিষ্যৎতে আমরা এই সব টেকনোলজির মধ্য দিয়েই জীবন পার করবো।
একটি উদাহরণ দিয়ে আজ আমি টিউনটি শেষ করতে চাই।
বছর দুয়েক আগেও মোবাইল ফোন ওয়্যারলেস চাজিং সিস্টেম টি কাল্পনিক ছিলো। কিন্তু এখন? ইতিমধ্যে মোবাইল ফোন কোম্পানি স্যামসং তাদের নতুন মোবাইল ডিভাইসে Wireless Charging সিস্টেমটি এনে ফেলেছে!
তথ্য প্রযুক্তি আমাদের জন্য নিকট ভবিষ্যৎতে কি কি চরম রেখেছে তার হালকা আভাস দেওয়া চেষ্টা আমি এখানে করেছি। আপনি যদি আরো কিছু নতুন চমক সম্পর্কে জেনে থাকেন যা আজকের এই লিস্টে নেই তাহলে অবশ্যই টিউমেন্টে জানাবেন!
টিউনটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
আমি ফাহাদ হোসেন। Supreme Top Tuner, Techtunes, Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 661 টি টিউন ও 428 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 149 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
যার কেউ নাই তার কম্পিউটার আছে!
ভালো লেগেছে ভাইয়া। প্রিয়তে রাখলাম।