কেমন আছেন আপনারা? কথামত, আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এলাম 'অনন্ত মহাবিশ্বের' ২য় পর্ব। এই পর্বের বিষয় মানবজাতির অপার বিস্ময়ের রহস্য 'ব্ল্যাকহোল'। আমাদের ১ম পর্ব পড়তে নিচের লিংক-এ ক্লিক করুন।
তাহলে, শুরু করছি আজকের পর্ব।
ব্ল্যাকহোল বা কৃষäবিবর মহাকাশের এক অনন্য রহস্য। হালকাভাবে বললে বলা যায়, ব্ল্যাকহোল হচ্ছে মহাশূন্যের সেই এলাকা, যেখানে অতিমাত্রায় এর পদার্থ এতটাই ঘনীভূত হয়ে আছে যে, এর আশপাশের বস্তুর কোনো উপায় নেই এর গ্র্যাভিটি বা মহাকর্ষ বলের টানকে উপেক্ষা করতে পারে। এই মুহূর্তে আমাদের কাছে সর্বোত্তম গ্র্যাভিটি থিওরি হচ্ছে আইনস্টাইনের জেনারেল থিওরি অব রিলেটিভিটি বা সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্ব। সে জন্য আমাদের গভীর গবেষণা করতে হবে এই তত্ত্বের ফলাফল নিয়ে ব্ল্যাকহোলের বিস্তারিত জানতে ও বুঝতে হলে। কিন্তু সে কাজটি করতে হবে একটু ধীরে-সুস্খে। গ্র্যাভিটি সম্পর্কে ভাবতে হবে একদম সরল-সহজ ঘটনা নিয়ে।
ধরুন, আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কোনো এক গ্রহের ওপরে। খুব একটা জোরে নয় স্বাভাবিক শক্তি খাটিয়ে সোজা ওপরে আকাশের দিকে একটি পাথর ছুড়ে মারুন। পাথরটি কিছু সময় ওপরের দিকে উঠবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গ্রহটির মধ্যাকর্ষণের টানে তা আবার নিচে নেমে আসবে। যদি পাথরটি পর্যাপ্ত জোরে ছুঁড়তে পারতেন, তবে আপনার দাঁড়িয়ে থাকা গ্রহটির মধ্যাকর্ষণ বলের টান উপেক্ষা করে পাথরটিকে মহাশূন্যে পাঠিয়ে দিতে পারতেন। এটি চিরদিনের জন্য উপরের দিকেই উঠতেই থাকত। এখন কত জোরে অর্থাৎ কত বেগে ছুঁড়লে পাথরটি গ্রহটির টানকে উপেক্ষা করে মহাশূন্যে চলে যেতে পারত, তা নির্ভর করে গ্রহটির ভরের ওপর। যে বেগে ওই পাথরটি ছুড়লে তা মহাকাশে চলে যেতে পারত, তাকে বলা হয় ওই গ্রহের এসকেপ ভেলোসিটি। গ্রহটি যত বেশি বড় বা গুরুভার, এ এসকেপ ভেলোসিটিও তত বেশি। একটি হালকা পাতলা গ্রহের এসকেপ ভেলোসিটি হবে কম। এ ছাড়া আপনি গ্রহটির কেন্দ্র থেকে কত ওপরে অবস্খান করছেন তার ওপর এসকেপ ভেলোসিটির মান নির্ভর করবে। আমাদের পৃথিবীর ক্ষেত্রে এসকেপ ভেলোসিটির মান হচ্ছে সেকেন্ডে ১১ দশমিক ২ কিলোমিটার বা ঘন্টায় ২৫ হাজার মাইল। চাঁদের বেলায় এর মান সেকেন্ডে মাত্র ২ দশমিক ৪ কিলোমিটার বা ঘন্টায় ৫৩০০ মাইল।
কল্পনা করুন এমন একটি বস্তু, যার ছোট্ট ব্যাসার্ধে প্রচুর পরিমাণ শথঢ়ঢ় বা ভর এমনভাবে ঘনীভূত হয়ে আছে যে, এর এসকেপ ভেলোসিটি আলোর গতির চেয়েও বেশি। যেহেতু কোনো কিছুই আলোর গতির চেয়ে বেশি গতিতে চলতে পারে না, সেহেতু কোনো কিছুই এই বস্তুর গ্র্যাভিটি বা মহাকর্ষ বলের ক্ষেত্রের বাইরে যেতে পারবে না। এমনকি আলোকরশ্মিও এ বস্তুর গ্র্যাভিটির টানে ফিরে যাবে ওই বস্তুর দিকেই। অতএব কোনো কিছুই এই বস্তুর আকর্ষণ-বলয় থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না, যেমনটি পারবে না আলোও। আর আলো যদি সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে না পারে, তবে স্বাভাবিকভাবেই আমরা তা দেখতে পাব না।
এই শথঢ়ঢ় ধসষধপষয়ড়থয়মসষ বা ভর ঘনীভূত হওয়া কোনো বস্তু থেকে আলোও বাইরে বেরিয়ে আসতে না দেয়ার ধারণা মানুষ জেনে গেছে সেই আঠারোতম শতকের লাপলাসের সময়েই। আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্ব আবিষ্কারের প্রায় পরপরই কার্ল সোয়ার্টজচিল্ড এই তত্ত্বের গাণিতিক সমীকরণের সমাধান প্রমাণ করেন। এই সমীকরণে এ ধরনের বস্তু বর্ণিত হয়। এর আরো পরে অপেনহেইমার, ভোকফ ও সিন্ডারের মতো গবেষকদের কর্মসাধনার সূত্র ধরে ১৯৩০-এর দশকে মানুষ গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে শুরু করে যে, এ ধরনের ঘনীভূত ভরের বস্তু এই মহাবিশ্বে থাকতে পারে। হ্যাঁ, এই অপেনহেইমারই পরিচালনা করেছিলেন ম্যানহাটান প্রজেক্ট। এসব গবেষক দেখিয়েছেন, যখন একটি ম্যাসিভ বা অতি গুরুভার তারকার জ্বালানি ফুরিয়ে যায়, তখন এটি এর নিজের মহাকর্ষের টানের বিরুদ্ধে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারে না। তখন এটি রূপ নেয় একটি ব্ল্যাকহোলে।
সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্বে বিন্যাস করে দেখানো হয়েছে ধৎড়ংথয়ৎড়প সফ ঢ়হথধপয়মশপ বা স্পেসটাইমের বক্রতাকে। স্পেসটাইম হচ্ছে কালের ও সময়ের যুগ্ম প্রেক্ষাপটে ত্রিমাত্রিক অর্থাৎ দৈর্ঘ্য, প্রস্খ ও বেধ সংবলিত মাপ বা নিরীক্ষা। একটি ম্যাসিভ অবজেক্ট বা গুরুভার বস্তু এলোমেলো করে দেয় স্পেস ও টাইমকে। ফলে সেখানে কোথাও জ্যামিতির স্বাভাবিক নিয়ম চলে না। একটি ব্ল্যাকহোলের কাছে স্পেস ও টাইমের এই ওলট-পালট হয় সবচেয়ে ভয়াবহভাবে। এর ফলে ব্ল্যাকহোলগুলো বিশেষ অবাক করা বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয়। বিশেষ করে ব্ল্যাকহোলের রয়েছে ‘ইভেন্ট হরাইজন’ নামে একটা কিছু। এটি একটি স্পেরিক্যাল সারফেস বা গোলীয় উপরিতল, যা নির্ধারণ করে ব্ল্যাকহোলের সীমানা। আপনি সে হরাইজন অতিক্রম করতে পারেন কিন্তু সেখান থেকে আর ফিরে আসতে পারবেন না। এর সরল অর্থ আপনি কোনোক্রমে একবার সে ইভেন্ট হরাইজন পার হয়ে গেলে, সেখান থেকে ফিরে আসার পথ আপনার জন্য চিরদিনের জন্য বìধ হয়ে যাবে। আপনি সোজা চলে যাবেন ব্ল্যাকহোলের কেন্দ্রের সিঙ্গুলারিটির কাছে। আপনি এ হরাইজনকে ভাবতে পারেন এমন এক জায়গা যেখানে এসকেপ ভেলোসিটি আলোর গতিবেগের সমান। এ হরাইজনের বাইরে এসকেপ ভেলোসিটির মান আলোর গতিবেগের চেয়ে কম। অতএব আপনার রকেটের পর্যাপ্ত গতি থাকলে সেখান থেকে বেরিয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসতে পারবেন না। কিন্তু আপনাকে বহনকারী রকেট যদি ভুল করে কোনোক্রমে এই হরাইজনের ভেতরে চলে যায়। তবে রকেটের গতি যত বেশিই হোক না কেন ব্ল্যাকহোলের বাইরে আসার কোনো উপায় অবশেষ থাকবে না। কারণ আপনার পক্ষে আলোর গতিতে কিংবা তার চেয়েও বেশি গতিতে চলা সম্ভব নয়।
এই ইভেন্ট হরাইজনের রয়েছে বেশ কিছু মজার ও অবাক করা গুণাবলি। ধরুন, একজন পর্যবেক্ষক ব্ল্যাকহোল থেকে অনেক দূরে কোথাও আছেন। তার কাছে এ হরাইজনটি মনে হবে খুবই সুন্দর, স্খির, নিশ্চল এক গোলীয় উপরিতল। কিন্তু যদি সে হরাইজনের আরো কাছে চলে যায়, তখন সে দেখতে পাবে, এটি বেশ বড় গতি নিয়ে ছুটে চলেছে। আসলে এটি বাইরের দিকে ছুটে চলেছে আলোর গতিবেগে। এ থেকেও একটা ব্যাখ্যা পাওয়া যায়, কেন এ হরাইজন অতিক্রম করে ভেতরের দিকে যাওয়া সহজ কিন্তু এ থেকে বেরিয়ে আসা সহজ তো নয়ই, এমনকি একেবারে অসম্ভব। যেহেতু এ হরাইজন বাইরের দিকে আলোর গতিবেগ নিয়ে ছুটে আসছে, সেহেতু এর বাইরে আসতে হলে আপনাকে ছুটতে হবে আলোর গতিবেগের চেয়ে বেশি গতি নিয়ে। আর আলোর গতির চেয়ে বেশি গতিতে ছোটা আপনার পক্ষে সম্ভব নয়, সে জন্য ব্ল্যাকহোল থেকে বেরিয়েও আসতে পারবেন না।
এসব জেনে নিশ্চয়ই অবাক লাগছে। কিছুটা ভয়ও জাগছে মনে। ভয় নেই। এক বিবেচনায় এ হরাইজন এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। আরেক বিবেচনায় এটি উড়ে চলেছে আলোর গতিবেগ নিয়ে। একবার যদি এই হরাইজনের ভেতরে ঢুকেই যান, স্পেস ও টাইম এতটাই ওলট-পালট হয়ে যাবে যে, র্যাডিয়েল ডিসটেন্স ও টাইমের বর্ণনাকর কো-অর্ডিনেট বা স্খানিক মান পরিবর্তন হয়ে যায়। অর্থাৎ কেন্দ্র থেকে দূরত্ব নির্দেশক কো-অর্ডিনেট ড় হয়ে যায় টাইম য় এর মতো । আর য় হয় ড়-এর মতো। সোজা কথায় টাইমলাইক কো-অর্ডিনেট হয় স্পেসলাইক কো-অর্ডিনেট, আর স্পেসলাইক কো-অর্ডিনেট হয় টাইমলাইক কো-অডিনেট। এর একটি পরিণতি হচ্ছে, আপনি আপনাকে ছোট থেকে ছোটতর ড়-এর মানের দিকে যাওয়া থামাতে পারবেন না। ঠিক সাধারণ অবস্খায় আপনি যেমন আপনাকে ভবিষ্যতের দিকে যাওয়া থেকে ফেরাতে পারছেন না। আপনি শুধু ছুটে চলেছেন বড় থেকে বড়তর সময়ের দিকে। এভাবে ব্ল্যাকহোলের ভেতরে থাকলে এক সময় আপনি গিয়ে পৌঁছবেন সিঙ্গুলারিটিতে, যেখানে ড়-এর মান শূন্য। এ পরিস্খিতি এড়াতে আপনি হয়তো চাইবেন রকেটের গতি বাড়িয়ে দিতে কিন্তু কোনো কাজ হবে না, তা আপনি যে দিকেই যেতে চান না কেন। আপনার এ পরিণতি কোনোভাবেই এড়ানো যাবে না। হরাইজনের ভেতরে ঢুকে পড়েছেন, আর চাইছেন ব্ল্যাকহোলের কেন্দ্র থেকে দূরে থাকতে এ যেন গত রোববারকে এড়িয়ে চলে যাওয়ার প্রয়াসেরই মতো। সবশেষে আরেকটি বিষয় জানিয়ে আজকের লেখার ইতি টানতে চাই। জর্জ আর্চিব্যালাড হুইলার ব্ল্যাকহোল নামটি আবিষ্কার করেন। এর আগে এর অনেক নাম দেয়া হলেও এ নামটি সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় বলে বিবেচিত হয়। এর আগে ব্ল্যাকহোলের একটা নাম ছিল ‘ফেন্সাজেন স্টার’।
আমরা সবাই জানি, জন্মিলে মরিতে হবে, কোথা কে অমর রবে? মানুষ, পশু, গাছপালার ক্ষেত্রে কথাটা খুবই সত্যি, কিন্ত নক্ষত্রের ও যে মৃত্যু হয় বা হতে পারে সেটা নিয়ে কি আমরা কখনও ভেবেছি। কিন্তু সত্যিকার অর্থে নক্ষত্রদের ও মৃত্যু হয় এবং তারপর তারা পরিণত হয় সুপারনোভা এবং ব্ল্যাকহোল-এ।
সুপারনোভাঃ
“সুপারনোভা” যার বাংলা অর্থ হোল অতিনবতারা। অতিনবতারা হলো এক ধরনের নাক্ষত্রিক বিস্ফোরণ যার ফলশ্রুতিতে নক্ষত্র ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং অবশেষরূপে থাকে নিউট্রন তারা কিংবা ব্ল্যাকহোল (কৃষ্ণবিবর)। নক্ষত্রের অভ্যন্তরস্থ বহির্মুখী চাপ যথেষ্ট পরিমাণ কমে যাওয়ায় এটি আর মহাকর্ষীয় আকর্ষণ বলকে ঠেকিয়ে রাখতে পারে না, ফলে নক্ষত্রে ঘটে এক প্রচণ্ড অন্তস্ফোটন (Implosion)। নক্ষত্রটির বেশীরভাগ ভরই এর কেন্দ্রে সংকুচিত হয়ে পড়ে, আর গ্যাসীয় বাতাবরণটি ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রবলবেগে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনাই অতিনবতারা বিস্ফোরণ হিসেবে পরিচিত। এই ধরনের বিস্ফোরণে বিপুল পরিমাণ শক্তি নির্গত হয় এবং সংশ্লিষ্ট নক্ষত্রটি সাময়িকভাবে পুরো ছায়াপথের চেয়েও বেশী উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
এ অবস্থা কয়েক সপ্তাহ বা মাসব্যাপী চলে। এত অল্প সময়ে একটি সুপারনোভা এত বেশি শক্তি নির্গত করতে পারে যে তা আমাদের সূর্য হয়ত তার সারাজীবনেও নির্গত করতে পারবেনা।
সুপারনোভা বিস্ফোরনের সময় এর অ্ভ্যন্তরস্ত তারার সমস্ত পদার্থকে সেকেন্ড প্রায় ৩০,০০০ কি.মি বেগে বাহিরের দিকে ছুড়ে মারে। আসে পাশে অবস্থিত সকল আন্ত-নাক্ষত্রিক মাধ্যমগুলোতে প্রচন্ড শক ওয়েব বয়ে নিয়ে যায়। কয়েক আলোক বর্ষ দূর পর্যন্ত সুপারনোভা বিস্ফোরনের ধূলাবালি ও ধোয়া বয়ে নেয়।
সুপারনোভার ইতিহাসঃ
১৮৫ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম একজন চাইনিজ জোতর্বিজ্ঞানী সুপারনোভা পর্যবেক্ষন করেন। আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল সুপারনোভা ছিল SN1006 । সবচেয়ে বেশি পর্যবক্ষনকৃত সুপারনোভার নাম SN1054 । আমাদের গ্যালাক্সিতে সবশেষ সংঘটিত দুটি সুপারনোভা SN 1572 ও SN 1604 খালি চোখেই দেখা গিয়েছিল। যা ইউরোপের জোতির্বিজ্ঞানে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছিল কারন তারা একে এরিস্টটলের মত চাঁদ মনে করত।
কতটা শক্তিশালী সুপারনোভাঃ
৪৪৩.৭ মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীর সবচেয়ে নিকটে প্রায় ১০০ আলোক বর্ষের কিছু কম দূরত্বে একটি সুপারনোভার বিস্ফোরন হয়েছিল।যার ফলে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের উপরিভাগে প্রচন্ড গামা রশ্মির কারনে নাইট্রোজেন রাসায়নিক বিক্রিয়ায় নাইট্রোজেন অক্সাইডে রুপান্তরিত হয়ে যায় এবং ওজন স্তর ক্ষয়ে গিয়ে পৃথিবী সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি এবং অন্যান্য মহাজাগতিক রশ্মির জন্য উন্মূক্ত হয়ে পড়ে। যা পৃথিবীতে বয়ে এনেছিল অর্ডোভিসিয়ান অভিশাপ। যার কারনে পৃথিবীর সমুদ্র থেকে প্রায় ১০০ সামুদ্রিক প্রজাতির প্রাণীর বিলুপ্তিসহ প্রায় ৬০% সাম্রদ্রিক প্রানীর মৃত্যুর কারন হয়ে দাঁড়ায়। যা পৃথিবীর ইতিহাসে কর্ডোভিসিয়ান বিলুপ্তি নামে খ্যাত।
চলুন দেখা যাক ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণবিবর কি?
ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণবিবরঃ
ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণবিবর এমন একটি স্থান বা বস্তু যেখানে অতি ক্ষুদ্র আয়তনে ভর এতো বেশি থাকে যে যেখান থেকে কোন কিছুই বের হতে পারেনা, এমনকি আলো ও নয়। এই স্থানে সাধারণ মহাকর্ষীয় বলের মান এত বেশী হয়ে যায় যে এটি মহাবিশ্বের অন্য সকল বলকে অতিক্রম করে। ফলে এ থেকে কোন কিছুই পালাতে পারে না। অষ্টাদশ শতাব্দীতে প্রথম তৎকালীন মহাকর্ষের ধারণার ভিত্তিতে কৃষ্ণ বিবরের ও অস্তিত্বের বিষয়টি উত্থাপিত হয়।
আমরা মহাবিশ্বকে একটি সমতল পৃষ্ঠে কল্পনা করি। মহাবিশ্বকে চিন্তা করুন একটি বিশাল কাপড়ের টুকরো হিসেবে এবং তারপর যদি আপনি কাপড়ের উপর কোন কোন স্থানে কিছু ভারী বস্তু রাখেন তাহলে কি দেখবেন? যেইসব স্থানে ভারি বস্তু রয়েছে সেইসব স্থানের কাপড় একটু নিচু হয়ে গিয়েছে। এই একই বাপারটি ঘটে মহাবিশ্বের ক্ষেত্রে। যেসব স্থানে ভর অচিন্তনিয় পরিমাণ বেশি সেইসব স্থানে গর্ত হয়ে আছে। এই অসামাণ্য ভর এক স্থানে কুন্ডলিত হয়ে স্থান-কাল বক্রতার সৃষ্টি করে। প্রতিটি গালাক্সির স্থানে স্থানে কম-বেশি ব্লাকহোলের অস্তিতের কথা জানা যায়। সাধারণত বেশীরভাগ গালাক্সিই তার মধ্যস্থ ব্ল্যাকহোলকে কেন্দ্র করে ঘূর্ণয়মান।
ব্ল্যাকহোল এর নামকরনঃ
ব্ল্যাকহোল শব্দের অর্থ কৃষ্ণবিবর বা কালো-গহবর। একে এই নামকরণ করার পেছনে কারণ হল এটি এর নিজের দিকে আসা সকল আলোক রশ্মিকে শুষে নেয়। ব্ল্যাকহোল থেকে কোন আলোক বিন্দুই ফিরে আসতে পারে না ঠিক থার্মোডায়নামিক্সের কৃষ্ণবস্তুর মতো।
এখন পর্যন্ত ব্লাকহোলের কোন প্রত্যক্ষ প্রমাণ পাওয়া যায়নি কারণ এ থেকে আলো বিচ্ছুরিত হতে পারে না কিন্ত এর উপস্থিতির প্রমাণ আমরা পরোক্ষভাবে পাই। ব্লাকহোলের অস্তিতের প্রমাণ কোন স্থানের তারা নক্ষত্রের গতি এবং দিক দেখে পাওয়া যায়। মহাকাশবিদগণ ১৬ বছর ধরে আশে-পাশের তারামন্ডলীর গতি-বিধি পর্যবেক্ষণ করে গত ২০০৮ সালে প্রমাণ পেয়েছেন অতিমাত্রার ভর বিশিষ্ট একটি ব্লাকহোলের যার ভর আমাদের সূর্য থেকে ৪ মিলিয়ন গুন বেশি এবং এটি আমাদের আকাশগঙ্গার মাঝখানে অবস্থিত।
ব্ল্যাকহোল এর উপস্থিতিঃ
ব্ল্যাকহোল দেখতে পাওয়া যায় না। তবে প্রমাণের মাধ্যমে এর অস্তিত্ত্ব বোঝা যায়। এর প্রচণ্ডরকম ভরের কারণে চারপাশের পদার্থগুলোকে শুষে নেয়ার ফলে এর চারপাশে ঘূর্ণাবর্তা সৃষ্টি হয়। তিন দশক ধরে বিভিন্ন তত্ত্ব দেয়ার পরে আর বিভিন্নভাবে খোঁজাখুজির পরে সবচাইতে সন্দেহপ্রবণ জ্যোতির্পদার্থবিদ সহ সবাই ব্ল্যাকহোলের অস্তিত্ত্ব নিশ্চিত করেছে। বিজ্ঞানীরা স্যাটেলাইট এবং মহাকাশ টেলিস্কোপ এর মাধ্যমে ব্ল্যাকহোল এর উপস্থিতি নিশ্চিত করেছেন।
ব্ল্যাকহোল এর ইতিহাসঃ
বিপুল পরিমাণ ভর বিশিষ্ট কোন বস্তু, যার মহাকর্ষের প্রভাবে আলোক তরঙ্গ পর্যন্ত পালাতে পারে না- এ ধারণা সর্বপ্রথম প্রদান করেন ভূতত্ত্ববিদ জন মিচেল (John Michell)। ১৭৯৬ সালে গণিতবিদ পিয়েরে সিমন ল্যাপলেস একই মতবাদ প্রদান করেন তাঁর Exposition du système du Monde বইয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় সংস্করণে। ১৯১৫ সালে বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন এর বিখ্যাত “Theory of relativity” সুত্রের মাধমেই কৃষ্ণবিবর এর অস্তিত্ব স্পষ্টভাবে ফুটে উঠে।
কত বড় এই কৃষ্ণবিবরঃ
ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণবিবর ছোট আবার বড় ও হতে পারে। বিজ্ঞানিরা মনে করেন সবচেয়ে ছোট ব্ল্যাকহোলটি একটি অ্যাটমের সমান। কিন্তু এই ছোট ব্ল্যাকহোলগুলোর ও রয়েছে বড় পাহাড়ের সমান ভর। দুধরনের ব্ল্যাকহোল দেখা যায়। একটি হোল স্টেলার এবং আরেকটি হোল সুপারমাসিভ। স্টেলারগুলো বেশ ছোটখাট হয়ে থাকে। যখন সূর্যের চাইতে কয়েক গুণ ভরসম্পন্ন তারাগুলোর পারমাণবিক জ্বালানি ফুরিয়ে যায় তখন এগুলো ঘনীভূত হয়ে মাত্র কয়েক মাইল ব্যাসে এসে পৌঁছায়। কখনও এগুলোর ভর ও সূর্যের চেয়ে প্রায় ২০ গুন বেশি হয়ে থাকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এগুলো নিউট্রন নক্ষত্রে পরিণত হয়। কিন্তু সবচাইতে বেশি ভরসম্পন্ন তারাগুলো ঘনীভূত হয়ে কৃষ্ণবিবরে পরিণত হয়।
সুপারমাসিভ ব্ল্যাকহোলের ভর এক মিলিয়ন সূর্যের মিলিত ভরের চেয়ে ও বেশি হয়ে থাকে। বিজ্ঞানিরা প্রমাণ পেয়েছেন যে সব বড় ছায়াপথের কেন্দ্রে একটি ব্ল্যাকহোল থাকে। মিল্কিওয়ে ছায়াপথের কেন্দ্রে যে ব্ল্যাকহোলটি আছে তার নাম “স্যাগিটারিয়াস”। এর ভর প্রায় চার মিলিয়ন সূর্যের সমান, যার ভেতর প্রায় কয়েক মিলিয়ন পৃথিবী আটতে পারবে।
ব্ল্যাকহোল কি পৃথিবী ধ্বংস করবে?
ব্ল্যাকহোল কখনই সৌরজগত এ অবস্থিত চাঁদ, গ্রহ অথবা নক্ষত্রের কাছাকাছি আসেনা। পৃথিবী কখনো ব্ল্যাকহোল এ পরিনত হবেনা কারন, কোন ব্ল্যাকহোল ই পৃথিবীর কাছে আসেনা বা আসার সম্ভাবনা ও নেই। সূর্যও কখনই ব্ল্যাকহোল হবেনা কারন সূর্য এত বড় নক্ষত্র নয় যে তা ব্ল্যাকহোল এ পরিনত হতে পারে।
(তথ্য সুত্রঃ NASA, WIKIPEDIA, TECHTUNES, BDNEWS, SPACE)
এই টিউটোরিয়ালের লেটেস্ট আপডেট নিউজ পেতে ফেসবুক পেজে যোগ দিন
সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ২য় পর্বটি পড়ার জন্য। দ্রুতই আপনাদের সামনে হাজির হচ্ছি ৩য় পর্ব নিয়ে।
আমি প্রীতম চক্রবর্তী। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 39 টি টিউন ও 161 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
মাঝে মাঝে নিজেকে দেখলে মনে হয়, 'হায়! আরও কত কিছু করার বাকি আছে!'
Donnobad share korar jonno.