আজকাল সব জায়গায় স্টার্টআপের আধিপত্য। নিউজ চ্যানেল এবং ম্যাগাজিনে স্টার্টআপ নিয়ে আলোচনা একটু বেশি। আগে হয়তো এতটা স্টার্টআপ নিয়ে আলোচনা হতো না, কিন্তু এখন হচ্ছে। কেনই এতো স্টার্টআপ নিয়ে আলোচনা? কারণ এটার দরকার এখনকার যুগে খুব বেশি। প্রত্যেক দেশে জনসংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু সেই হিসেবে চাকরি নেই। দেশে বেকারত্বের হার দিনকে দিন বেড়ে যাচ্ছে, কিন্তু সরকার চাকরি দিতে পারছে না। কোথায় যাবে এতো শিক্ষিত বেকার? কি কাজ করবে তারা? কাজ একমাত্র একটাই হতে পারে, সেটা হলো স্টার্টআপ শুরু করা। এখানে শিক্ষিত বেকাররা কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিবে এবং ভবিষৎ প্রজন্মকে আর্থিক দিক দিয়ে সুরক্ষা দেবে। চলুন আজকের আলোচনা শুরু করি স্টার্টআপ নিয়ে।
স্টার্টআপ হলো এক ধরনের তরুণ ছোটো কোম্পানি, যেটি সবেমাত্র উন্নতি করা শুরু করেছে। প্রথমত, এই ধরনের কোম্পানি কোনো স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠাতা বা উদ্যোগপতির দ্বারা পরিচালনা এবং ইনভেস্ট করা হয়। এই ধরনের কোম্পানি এমন কিছু প্রোডাক্ট/সার্ভিস প্রদান করে যেগুলো বর্তমানে মার্কেটে সহজলভ্য নয়। এটি বর্তমান মার্কেটের যদি কিছু সমস্যা থাকে, সেগুলোকে সমাধান করার চেষ্টা করে অথবা মার্কেটের চাহিদা বুঝে সেটাকে মেটানোর চেষ্টা করে।
স্টার্টআপ তৈরির উদ্দেশ্য হলো একটি টেকসই বিজনেস মডেল তৈরি করা যেটি মার্কেটকে বুঝে সেটির প্রয়োজনীতা মেটাতে সাহায্য করে।
স্টার্টআপ এবং এন্ট্রেপ্রেনারশিপের ধারণা কিছুটা একই। কিন্তু এন্ট্রেপ্রেনারশিপ বলতে ছোটো -বড়ো সব ধরনের বিজনেসকে বুঝায়, সাথে সেলফ এমপ্লয়মেন্টকেও বুঝায়, অন্যদিকে স্টার্টআপ হলো নতুনত্বে ভরা একটি বিজনেস, যেখানে কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা প্রচুর।
এরিক রিস একজন মার্কিন এন্ট্রেপ্রেনিউর যিনি ২০০৪ সালে আই ম ভিউ কোম্পানির চিফ টেকনিকাল অফিসার ছিলেন। তখন ৩ডি গেমিং এবং ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং সার্ভিস জনপ্রিয় ছিল।
উনি ভাবলেন ওনার কোম্পানির যেটা পুরানো ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং সার্ভিস আছে সেটার সাথে যদি বিভিন্ন ৩ডি অবতার দিয়ে থাকেন তাহলে ইউজার বাড়বে। উনি ৬ মাস ধরে কষ্ট করে, টাকা লাগিয়ে আসল প্রোডাক্টটি বানিয়ে মার্কেটে লঞ্চ করলেন। উনি ভেবেছিলেন কয়দিনের মধ্যেই সবাই ডাউনলোড করতে শুরু করে দেবে। কিন্তু উনাকে অবাক করে দিয়ে এর উল্টোটা হলো একটি কাস্টমারও ডাউনলোড করলো না।
এরিকের মনে প্রশ্ন জাগলো কেও ডাউনলোড করলো না ব্যাপারটা কি! এটা জানার জন্য তিনি কয়েকজন কাস্টোমারকে জিজ্ঞেস করলেন আপনারা প্রোডাক্টটি ডাউনলোড করছেন না কেনো! তারা জবাব দিলো আমরা একই ধরনের ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং সার্ভিস ব্যবহার করে বিরক্ত হয়ে গেছি, আমাদের নতুন ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং সার্ভিস চাই। উনি বুঝতে পারলেন ভুলটা কোথায় হয়েছে উনি নতুন কোনো ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং সার্ভিস তৈরি করেননি।
সুতরাং, কেও যদি ইনোভেটিভ প্রোডাক্ট বানাতে চায়, তাকে পুরো সময় দিতে হবে, কষ্ট করতে হবে, টাকা লাগাতে হবে এবং তারপরে কাস্টোমাররা বলবে আমাদের এই প্রোডাক্টের দরকার নেই, এই সমস্যা থেকে বেরোনোর কি উপায় আছে সেটা খুঁজতে গিয়ে, তিনি একটি পদ্ধতি পেলেন যার নাম হলো লিন স্টার্টআপ। এই পদ্ধতিতে কম সময় এবং অল্প পরিশ্রমের দ্বারা একটি মিনিমাম ভায়াবল প্রোডাক্ট(মভিপি) তৈরি করে মার্কেটে ট্রায়াল দেওয়ার জন্য লঞ্চ করা সম্ভব এবং লোকে এটাকে ব্যবহার করছে কিনা দেখা যায়। লিন স্টার্টআপের ৩টি ধাপ নিচে দেওয়া হলো।
আপনার প্রোডাক্ট কেন কাস্টমার ব্যবহার করবে এবং কিভাবে কাস্টমারের কাছে পৌঁছাবেন সেটির একটি স্পষ্ট ভিশন থাকা দরকার।
আপনি ১ বছর পরিশ্রম করে প্রোডাক্ট মার্কেটে লঞ্চ করলেন কিন্তু কেও কিনলো না। কেও আবার মতামত জানালো আপনার প্রোডাক্ট দারুন, ভালো চলবে, কিন্তু চললো না। দেখুন প্রোডাক্ট কারো মতামতে চলে না, প্রোডাক্ট চলে কাস্টমারের আচরণের উপর। এই ধারণাগুলো সনাক্ত করার চেষ্টা করুন।
এটার মানে হলো যে কারণে আপনার প্রোডাক্ট অন্যদের থেকে আলাদা সেই বৈশিষ্ট রাখুন প্রোডাক্টে এবং ব্যবহারযোগ্য যাতে হয়। এটা ২ধরণের হয়।
প্রোডাক্ট লঞ্চ করার পরে, দেখুন প্রোডাক্ট বিক্রি হচ্ছে কিনা, যদি না হয় কোথায় সমস্যা হচ্ছে দেখুন, কাস্টমারের মতামত জেনে নিন। তারপরে আবার নতুনভাবে প্রোডাক্ট তৈরি করুন।
স্টার্টআপ জীবনচক্রে সময়ের সাথে সাথে কতটা অগ্রগতি হচ্ছে সেটা দেখা যায়। এখানে জীবনচক্রকে ৫টি ধাপে বিভক্ত করা হয়েছে।
এই ধাপে সেলস খুব কম থাকে, খরচ বেশি হয়। ধ্যান দেওয়া হয় মার্কেটিংয়ে এবং কাস্টমার সম্প্রসারণে।
একটা সময়ের পরে সেলস দ্রুত বেড়ে যায়, মুনাফা হতে শুরু করে। কিন্তু মুনাফা দ্রুতগতিতে হয় না।
সেলস বাড়তে থাকে কিন্তু খুব ধীরগতিতে কারণ মার্কেটে প্রোডাক্টের চাহিদা কমতে থাকে অথবা নতুন কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী মার্কেটে প্রবেশ করে।
যখন মার্কেট ম্যাচুরিটি পর্যায়ে চলে আসে, তখন সেলস ধীরগতিতে হ্রাস পেতে থাকে। কিন্তু এই ধাপে স্টার্টআপের জীবনচক্র প্রসারিত হতে থাকে।
এই শেষ ধাপে সেলস এবং মুনাফা হ্রাস পেতে থাকে. এখানেই স্টার্টআপ ব্যর্থ হয়ে যায় নগদের ঘাটতি এবং নতুন প্রতিযোগিতামূলক মার্কেটের সাথে খাপ খাওয়াতে না পেরে।
একটি দক্ষ টিমের সবচেয়ে প্রথমে দরকার একজন চিফ এক্সেকিউটিভ অফিসারের যিনি হবেন সবার বস এবং সব কিছুর দ্বায়িত্ব তার কাঁধে থাকবে। বিজনেস স্ট্রাটেজি কি হবে সেটা তিনি ঠিক করবেন। তিনি একটি দক্ষ টীম বানাবেন।
ইনি রোযদিনের বিজনেসের যত জটিল অপারেশন আছে সেটি দেখবেন।
এনার দ্বায়িত্ব হচ্ছে সিইও এবং সিওও কাজের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটানো।
আপনার কোম্পানির বাজেট এবং ফাইনান্সিয়াল স্ট্রাটেজি বানাবেনএকজন সিফও।
এখন বেশিরভাগ কোম্পানি মার্কেটিংর উপর ধ্যান দিচ্ছে এবং এর জন্য দক্ষ লোক হলো একজন চিফ মার্কেটিং অফিসার।
আজকাল টেকনোলজির যুগ, টেকনোলজি ছাড়া বিজনেস প্রসারিত করা অসম্ভব। একজন সিটিও কোম্পানির স্ট্র্যাটেজির সাথে টেকনোলজির মেলবন্ধন ঘটাতে পারেন।
কোনো অন্য কোম্পানিকে দিয়ে মার্কেট রিসার্চ করাবেন না, আপনি নিজে করুন। মার্কেট রিসার্চ করতে গেলে আপনাকে মার্কেটে গিয়ে লোকজনের সাথে কথাবার্তা বলে বুঝতে হবে মার্কেটের চাহিদাটা কি এবং সেই চাহিদাটা আপনি মেটাতে পারবেন কি? তারপরে মার্কেটের সাইজ কত? মার্কেট সাইজ বলতে বুঝাচ্ছে এখানে কতজন কাস্টমার আছে যারা আপনার প্রোডাক্ট কিনবে। কাস্টমারের সংখ্যা নির্ণয়ের সাথে সাথে মার্কেটে কতজন প্রতিদ্বন্দ্বী আছে এবং তারা কেমন সার্ভিস দিচ্ছে সেটার খেয়ালও রাখতে হবে।
যদি আপনার প্রোডাক্ট/সার্ভিস কারো প্রয়োজনীতা অথবা চাহিদা মেটাতে না পারে, তাহলে সেই প্রোডাক্ট / সার্ভিস অবশ্যই ব্যর্থ হবে। প্রথমে কোনো প্রোডাক্ট / সার্ভিস উন্নত করতে গেলে, বর্তমান এবং সম্ভাব্য কাস্টমারের প্রয়োজনীতা বিশ্লেষণ করা দরকার। এছাড়াও তাহাদের সন্তুষ্টি, কেনাকাটি করার অভ্যাস কেমন এবং কি কি প্রযুক্তিগত সম্ভাবনা আছে একটি প্রোডাক্ট অথবা সার্ভিসকে উন্নত করার জন্য সেগুলো বিশ্লেষণ করা দরকার।
একবার মার্কেট ট্রেন্ডের তথ্য সংগ্রহ করার পর এবং কৌশলগত উদ্দেশ্য ঠিক করে নেওয়ার পর, ভবিষ্যতে মানুষ কি কি প্রোডাক্ট/সার্ভিস কিনবে সেটা বুঝতে চেষ্টা করুন।
প্রথমে প্রোটোটাইপ বানানোর আগে, আপনার আইডিয়াকে মাথায় রেখে একটি স্কেচ করুন। তারপরে একটি 3d মডেল তৈরি করুন। এটি পুরোপুরি সন্তোষজনক হলে একটি ওয়ার্কিং মডেল তৈরি করুন।
টেস্টিং পর্যায়ে দেখা দরকার আপনার প্রোটোটাইপ কাস্টমারের প্রয়োজনীতা মেটাতে পারছে কিনা এবং পারফরম্যান্স কেমন দিচ্ছে। আপনার প্রোটোটাইপ সম্বন্ধে কাস্টমারের প্রতিক্রিয়াগুলো কি সেগুলোকে জানুন।
বিজনেস মডেল হলো কোম্পানির পরিকল্পনা, যেটি কোম্পানিকে মুনাফা দিতে সাহায্য করে। ৫ ধরনের বিজনেস মডেল হয়।
কাস্টমারকে ডাইরেক্ট প্রোডাক্ট / সার্ভিস প্রদান করা হয়, মাঝখানে কোনো মধ্যমব্যক্তি না থাকার জন্য কাস্টমারের কাছ থেকে ডাইরেক্ট রাজস্ব এবং মুনাফা লাভ করা যায়। উদাহরণ - Avon, Herbalife.
একটি বিজনেসের মালিক অন্য বিজনেসের সফল মডেল কিনে নেয়। নুতুন করে প্রোডাক্ট তৈরি না করে, শৃংখলাবদ্ধভাবে কতগুলো বিতরণ কেন্দ্র খুলে দিয়ে প্রোডাক্টগুলো কাস্টমারের কাছে পৌঁছে দেয়। কম ইনভেস্টমেন্ট এই মডেল খুব সফল। উদাহরণ-McDonald's, Subway, Starbucks.
ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানি ব্যক্তিগত অথবা বিজনেস সার্ভিস প্রদান করে থাকে। কিছু সাধারণ ওয়েব সার্ভিস এবং বিনামূল্যে ডিজিটাল প্রোডাক্ট কাস্টোমারকে দিয়ে থাকে যাতে তারা ভবিষ্যতে প্রীমিয়াম সার্ভিসগুলো কিনে নেয়। উদাহরণ -Spotify, Skype.
অনলাইনে নিয়মিত কিছু সময় অন্তর অন্তর কাস্টোমারকে কিছু মূল্য দিতে হবে কোনো প্রোডাক্ট অথবা সার্ভিস ব্যবহার করার জন্য। উদাহরণ -Experian, Equifax.
একটি অসংগঠিত বিজনেসকে সংগঠিত করতে এগ্রিগেটর মডেলের দরকার পরে। এগ্রিগেটর কোম্পানি একটি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে কাস্টমার এবং সার্ভিস প্রদানকারীদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপিত করে। উদাহরণ :-Uber, OYO rooms.
বিজনেসের মালিক এবং পরিচালনা করার মানুষ একই থাকার জন্য সবচেয়ে সহজতম ঊপায়ে বিজনেস করা যায়। বিজনেসের আলাদা করে কোনো নাম দেওয়ার দরকার নেই।
একটি বিজনেসকে দুইজন বা তার বেশি চালাতে পারেএবং মালিকানা ভাগ করতে পারে। প্রত্যেকটি মালিক বিজনেসের এক একটি দিকে উন্নতি করার জন্য অবদান রাখতে পারে, সাথে বিজনেসের লাভ এবং লোকসানের ভাগও নিতে হবে।
সোল প্রোপ্রিয়েটরশীপ এবং পার্টনারশীপ থেকে খুব জটিল বিজনেস। লিমিটেড লিয়াবিলিটি থাকার কারণে কোনো সদস্য কোম্পানির ঋণের জন্য ব্যক্তিগতভাবে দায়ী নয়।
একটি আইনি স্বত্বা আলাদা এবং স্বতন্ত্র মালিক ছাড়া। কর্পোরেশনের আলাদা অধিকার এবং দ্বায়িত্ব আছে, যেটি হলো ঋণ নেওয়া -দেওয়া এবং ট্যাক্স ভরা।
বিজনেস স্ট্রাকচার বেছে নেওয়ার পর তারপরে কোম্পানির নাম, ট্রেড্মার্ক বানিয়ে নিন। এগুলো অরিজিনাল এবং ইউনিক হতে হবে। ট্রেড্মার্ক এবং নাম রেজিস্টার করিয়ে নিন রেজিস্ট্রার অফিস থেকে। আপনার বিজনেসের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করুন। এছাড়াও আপনাকে কি কি ধরনের ট্যাক্স দিতে হবে, সেগুলো ঠিক করে নিন। যদি আপনি কিছু উৎপাদন করতে চান তাহলে উৎপাদন প্রোডাক্টের উপর আবগারি ট্যাক্স লাগবে আর যদি আপনি কিছু বিক্রি করতে চান কাস্টোমারকে তাহলে সেলস ট্যাক্স লাগবে।
প্রোডাক্ট/সার্ভিসকে উন্নত করার পর এবার মার্কেটিংর পালা। মার্কেটিং করতে গেলে আপনাকে ব্র্যান্ডিং সম্পর্কে একটু ধারণা থাকা দরকার। কখন এবং কোথায়, কোন ধরনের কাস্টোমারকে আপনার ব্র্যান্ড মেসেজ পৌঁছাবেন সেগুলো ঠিক রাখা দরকার। আপনার কোম্পানির মিশন এবং প্রোডাক্ট /সার্ভিসের সুবিধা আর বৈশিষ্ট সম্বন্ধে কাস্টোমারকে জানানো দরকার। আপনার প্রোডাক্ট /সার্ভিসকে কাস্টমারের কাছে যত বেশি সম্ভব পৌঁছানোর জন্য একটি ওয়েবসাইট বানাতে পারেন, ইমেইল মার্কেটিং এবং ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যাম্পেইন চালাতে পারেন, ফেসবুক এবং টুইটারে আপনার প্রোডাক্ট/সার্ভিস সম্বন্ধে লিখুন, ইন্টারনেট এবং টিভিতে এড দিন। কোথায়, কি ধরনের বিজ্ঞাপণ দেবেন এর ভিত্তিতে মার্কেটকে ভাগ করুন -জায়গা, জনসংখ্যা, শহর, জলবায়ু, বয়স, আয়, পেশা এবং শিক্ষা।
আপনার বিজনেস মডেলের ভিত্তিতে অপারেটিং মডেল তৈরি হবে। ৪ প্রকারের অপারেটিং মডেল হয়।
কাস্টমার, প্রোডাক্ট/সাপ্লায়ারের মধ্যে সমন্বয় স্থাপন করে একটি স্বশাসিত বিজনেস ইউনিট তৈরি করা এর মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু বিজনেস ইউনিটগুলো একটি অপরটির লেনদেনকে প্রভাবিত করে। এই স্বশাসিত বিজনেস ইউনিট খুব ভালোভাবে একটি বিজনেস প্রোসেস নিয়ন্ত্রন করতে পারে।
এটি বিশ্বব্যাপী একটি একক বিজনেস প্রোসেস যেখানে কাস্টমার এবং সাপ্লায়ার প্রোডাক্ট বিতরণ করে ভৌগোলিক ভাবে। বিজনেস প্রোসেসের কেন্দ্রীয় ম্যানেজমেন্ট পর্য্যবেক্ষন করে প্রত্যেকটি বিজনেস ইউনিটকে।
খুব কম সংখ্যক বিজনেস ইউনিট হওয়ার জন্য বিজনেস ইউনিটগুলো একে অপরের থেকে পুরোপুরি আলাদা এবং প্রত্যেকটি লেনদেন পুরোপুরি স্বাধীন।
অল্পসংখ্যক কাস্টমার এবং সাপ্লায়ার থাকার ফলে একটি স্বশাসিত বিজনেস ইউনিট কেন্দ্রীয় ম্যানেজমেন্টের দ্বারা বিজনেস প্রোসেসকে একত্রিত এবং উন্নতমানের করে।
অপারেশন্স ম্যানেজমেন্টের দ্বারা কোনো একটি সংগঠনকে সর্বোচ্চ দক্ষতাতে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। এই ম্যানেজমেন্ট খুব বেশি ধ্যান দেয় কিভাবে কাঁচামাল এবং শ্রমের দ্বারা যত বেশি সম্ভব প্রোডাক্ট /সার্ভিসে রূপান্তরিত করা যায় এবং সাথে সংস্থাকে মুনাফা দেওয়া যায়।
ফাইনান্সিয়াল মডেলের দ্বারা আমরা কোনো কোম্পানির আর্থিক অবস্থা ভবিষ্যতে কেমন হবে তার পূর্বাভাস দিতে পারি। সাধারণত ফাইনান্সিয়াল মডেলকে এক্সসেলে বানাতে গেলে ৩টি স্টেটমেন্টের দরকার পরে, ইনকাম স্টেটমেন্ট, ব্যালান্স শিট এবং ক্যাশ ফ্লো। এই ৩টি স্টেটমেন্টকে এক সাথে ৩ স্টেটমেন্ট মডেল বলা হয়। এই মডেলটি বেশিরভাগ কোম্পানিতে ব্যবহার করা হয়।
এখানে এক বছরের রেভিনিউ, এক্সপেন্স, প্রফিট এবং লসের ভিত্তিতে ইনকাম স্টেটমেন্ট বানানো হয়।
ব্যালেন্স শীটে থাকে কোম্পানির কতগুলো অ্যাসেট আছে, লায়াবিলিটিজ এবং শেয়ারহোল্ডারদেড় একুইটি একটি নির্দিষ্ট সময়ে কতগুলো আছে।
মোট কত নগদ বিজনেসের জন্য ইনভেস্ট হচ্ছে এবং কত নগদ বিজনেসের জন্য খরচা করা হচ্ছে সেটাকে ক্যাশ ফ্লো বলা হয়।
বুটস্ট্র্যাপিপিং হলো নিজস্ব ফান্ডিং। প্রথমে কোনো ইনভেস্টর আপনাকে টাকা দিতে চাইবে না। সেক্ষেত্রে আপনি যদি নিজস্ব সেভিংস অথবা বন্ধু -বান্ধব, আত্মীয় -স্বজন থেকে ফান্ডিং পেয়ে যান তাহলে আপনি তাড়াতাড়ি বিজনেস শুরু করতে পারবেন।
ক্রাউড প্ল্যাটফর্মের দ্বারা বেশি সংখ্যক মানুষের কাছ থেকে অল্প পরিমানে টাকা নিতে পারেন। আপনার বিজনেসের লক্ষ্য কি, কেন করছেন, কি কি পরিকল্পনা নিয়েছেন মুনাফার জন্য এইগুলো সম্পর্কে একটি ধারণা দিন ক্রাউড প্ল্যাটফর্মে।
এঞ্জেল ইনভেস্টর হলো একজন ধনী ব্যাবসায়ী যার আগ্রহ আছে স্টার্টআপের শুরুর দিকে ইনভেস্ট করা এবং তার বদলে বিজনেসে একুইটির ভাগ নেওয়া। এই ধনী ব্যাবসায়ীরা এক সাথে নেটওয়ার্ক বানিয়ে ইনভেস্ট করে। এরা Google, Yahoo র মতো বড় বড় কোম্পানিতে ইনভেস্ট করে।
ভেঞ্চার ক্যাপিটাল হলো এক ধরনের কোম্পানি যেটি অন্য ইনভেস্টরদের থেকে টাকা সংগ্রহ করে এবং ইনভেস্ট করে যেই স্টার্টআপগুলো মুনাফা দিতে শুরু করেছে। এখানে পেশাগতভাবে ফান্ড ম্যানেজ করা হয়, তারজন্য ফান্ড ম্যানেজার রাখা হয়েছে।
ব্যাঙ্ক লোন হলো সবচেয়ে জনপ্রিয় ফান্ডিংয়ের রাস্তা। লোন নিতে গেলে কত সুদের হার এবং কতদিনের মধ্যে দিতে হবে এগুলো দেখে নেবেন।
যারা ব্যাঙ্ক লোনের জন্য যোগ্যতা অর্জন করতে পারে না, তারা কম সুদের হারে লোন পেয়ে থাকেন।
বিজনেস ইনকিউবেটরস হলো এক ধরনের প্রোগ্রাম যেটি কোনো স্টার্টআপকে বিভিন্ন ধরনের সাহায্য দিয়ে থাকে যেমন ধরুন কর্মচারী, অফিস, মার্কেটিং, নেটওয়ার্কিং এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে। এগুলো পাওয়া যায় শহরে যেখানে প্রত্যেক বছর বিভিন্ন স্টার্টআপ শুরু হয়।
এক্সেলারেটর একটি প্রতিযোগিতামূলক প্রোগ্রাম যেখানে একটি স্টার্টআপ আরেকটি স্টার্টআপের সাথে প্রকাশ্যে প্রতিযোগিতা প্রদশর্ন করে ফান্ডিং পাওয়ার জন্য।
আশা করি স্টার্টআপ সম্বন্ধে সব ধরনের তথ্য ভালোমতোন তুলে ধরতে পেরেছি।
স্টার্টআপ শুরু করা চাট্টিখানি কথা নয়!
আপনি যদি সঠিক বিজনেস মডেল নির্ধারণ করতে না পারেন তাহলে স্টার্টআপ প্রথমেই ব্যার্থ হয়ে যাবে।
৯০% স্টার্টআপ প্রথম ১ বছরের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়, শুধুমাত্র সঠিক পরিকল্পনার অভাবে এবং নগদ ঘাটতির অভাবে।
আপনি যদি স্টার্টআপ শুরু করতে চান তাহলে কোন ধরনের ফান্ডিং নিতে পছন্দ করবেন?
আমি অভিজিত চৌধুরী। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 6 বছর 4 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 14 টি টিউন ও 30 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 9 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 6 টিউনারকে ফলো করি।
লিখতে চাই ,নিজেকে প্রকাশ করতে চাই।লেখার মাধ্যমে অন্যকে জানাতে চাই।