রহস্যে ঘেরা ব্ল্যাক হোল!

টিউন বিভাগ মহাকাশ প্রযুক্তি
প্রকাশিত
জোসস করেছেন

আমাদের মহাবিশ্বের সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর, রহস্যময় এবং জটিল বিষয়টি হচ্ছে 'ব্ল্যাক হোল' বা 'কৃষ্ণ গহ্বর' বা 'কৃষ্ণ বিবর' এর অস্তিত্ব। ব্ল্যাক হোল নিয়ে আমাদের কৌতুহলের শেষ নেই। তাই আজকে ব্ল্যাক হোল নিয়েই লিখবো জানা-অজানা অনেক কথা। সুতরাং দেরি না করে দেখে নিন এক পলকে ব্ল্যাক হোল সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য।

১. ব্ল্যাক হোল কী?

ব্ল্যাক হোল হলো এমন একটি স্থান যেখানে প্রবেশ করলে আর সেখান থেকে ফিরে আসা যায় না। এটিকে 'Point of no Return' বা 'ফিরে না আসার স্থান'ও বলা হয়ে থাকে। ব্ল্যাক হোলের গ্র্যাভিটি বা মাধ্যাকর্ষন বল অত্যন্ত বেশি। এতটাই বেশি যে, আলোও যদি এই গহ্বরে পতিত হয় তাহলে আলোও সেখান থেকে বের হয়ে আসতে পারে না।

২. ব্ল্যাক হোলের গঠন

ব্ল্যাক হোলের সীমানাটিকে Event Horizon নামে ডাকা হয়। বাংলায় যাকে বলে 'ঘটনা দিগন্ত'। আর কেন্দ্রকে ডাকা হয় 'সিঙ্গুলারিটি' নামে। যখন কোনো কিছু ব্ল্যাক হোলের সীমানায় চলে আসে তখন সেটি ব্ল্যাক হোলের Singularity বা এককতার মধ্যে পতিত হয়। Singularity এমন একটি স্থান যার ক্ষুদ্রতা অসীম এবং ঘনত্বও অসীম। এটি ব্ল্যাক হোলের কেন্দ্রে অবস্থান করে। এককতার স্থানটিতে অর্থাৎ ব্ল্যাক হোলের Singularity নামক অংশটিতে সময়, স্থান এবং পদার্থবিজ্ঞানের কোনো সূত্রই কাজ করে না। একবার কোনো বস্তু যদি ব্ল্যাক হোলের Event Horizon বা 'ঘটনা দিগন্ত' অঞ্চলের মধ্যে এসে পড়ে তাহলে ব্ল্যাক হোল সেটিকে তার প্রচণ্ড মাধ্যাকর্ষণ বল দ্বারা আকর্ষণ করে নিজের ভেতরে শুষে নেয়। ব্ল্যাক হোলের চারপাশে নক্ষত্রের ধ্বংসাবশেষের একটি বলয় রয়েছে যাকে বলা হয় 'Accretion Disk'। ব্ল্যাক হোলের কেন্দ্রবিন্দুতে এর সমস্ত ভর নিহিত থাকে। দুটি ব্ল্যাক হোল একসাথে থাকলে একটি ব্ল্যাক হোল অন্য একটি ব্ল্যাক হোলকে গ্রাস করতে পারে। ব্ল্যাক হোলের ভিতরটা কখনো দেখা যায় না। কারণ আলো ব্ল্যাক হোল বা 'কৃষ্ণ বিবর' এর আশপাশে থাকলেও ব্ল্যাক হোল সেটা তার ভেতরে শুষে নেয় এবং আলো আর সেখান থেকে বের হয়ে আসতে পারে না। আর আলো না থাকায় কিছু দেখাও যায় না।

৩. ব্ল্যাক হোলের প্রকারভেদ

বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত ৪ ধরনের ব্ল্যাক হোলের ধারণা দিয়েছেনঃ

  1. স্টেলার ব্ল্যাক হোল (Stellar Black Hole)
  2. সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল (Supermassive Black Hole)
  3. ইন্টারমিডিয়েট ব্ল্যাক হোল (Intermediate Black Hole)
  4. মিনিয়েচার ব্ল্যাক হোল (Miniature Black Hole)

বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন ধরনের ব্ল্যাক হোলকে নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন তত্ত্ব প্রকাশ করেছেন। তার মধ্যে স্টেলার এবং সুপ্রিমেসিভ ব্ল্যাক হোলের ধারণা সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়।

যখন মহাবিশ্বে কোনো তারা মৃত্যুবরণ করে তখন সেটি একটি স্টেলার ব্ল্যাক হোলে পরিণত হয়। আমাদের গ্যালাক্সি অর্থাৎ Milky Way Galaxy বা আকাশগঙ্গা ছায়াপথে ১ মিলিয়ন (১০ লাখ) এর চেয়ে বেশি এমন স্টেলার ব্ল্যাক হোল রয়েছে।

সুপার ম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলগুলো সূর্যের চেয়ে কয়েক কোটি গুণ বড় হয়। বিজ্ঞানীরা বলেন, প্রতিটি গ্যালাক্সি বা ছায়াপথের কেন্দ্রেই একটি সুপার ম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল রয়েছে। এদের বৃহৎ আকার ও অন্যান্য যেকোনো বিষয় সম্পর্কে ধারণা করাটাও আমাদের মস্তিষ্কের সক্ষমতার বাইরে। আমাদের গ্যালাক্সির কেন্দ্রেও একটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল রয়েছে।

৪. ব্ল্যাক হোল যেভাবে সৃষ্টি হয়

ব্ল্যাক হোল সাধারণত দুটি পর্যায়ে তৈরি হয়। প্রথম পর্যায়ে একটি হোয়াইট ডোয়ার্ফ থেকে নেবুলার জন্ম হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে সেই নেবুলা থেকে শেষ পর্যন্ত একটি ব্ল্যাক হোলের সৃষ্টি হয়। প্রথম পর্যায়ের স্তরগুলো হলোঃ

হোয়াইট ডোয়ার্ফ → রেড জায়েন্ট → নক্ষত্র → নেবুলা

দ্বিতীয় পর্যায়ের স্তরগুলো হলোঃ

নেবুলা → দৈত্যাকার নক্ষত্র → দৈত্যাকার রেড জায়েন্ট → সুপারনোভা বিষ্ফোরণ → ব্ল্যাক হোল

নেবুলা

৫. ব্ল্যাক হোলের আবিষ্কার

একটি প্রকৃত ব্ল্যাক হোল

জার্মান পদার্থবিদ কার্ল শোয়ার্জফিল্ড, ১৯১৬ সালে, আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার তথ্য ব্যবহার করে হিসাবনিকাশ করে বলেন, যথেষ্ট সংকুচিত করা গেলে যেকোনো ভরকে ব্ল্যাক হোলে পরিণত করা যেতে পারে। মূলত সেই থেকেই ব্ল্যাক হোলের ধারণাটি মানুষের সামনে আসে। মহাকাশে একটি ব্ল্যাক হোল খুঁজে বের করতে বিজ্ঞানীরা প্রথমত এমন একটি স্থানের খোঁজ করেন যে স্থানটি তার আশেপাশের বস্তু বা বস্তুকণাগুলো নিজের দিকে টেনে নেয় অর্থাৎ Accretion Disk নামক ব্ল্যাক হোলের বলয়টিকে। কারণ ব্ল্যাক হোল অদৃশ্য। Constellation Cygnus বা বকমন্ডল আবিষ্কার করতে গিয়ে জ্যোতির্বিদরা ১৯৭১ সালে সর্বপ্রথম ব্ল্যাকহোল আবিষ্কার করেন। ব্ল্যাক হোলের যে ছবি বা ভিডিওচিত্রগুলো পাওয়া যায় সেগুলো বিজ্ঞানীদের কল্পনা। তবে ২০১৯ সালের ১০ এপ্রিল প্রথমবারের মতো একটি কৃষ্ণ গহ্বরের ছবি তোলা সম্ভব হয় যা মহাকাশ গবেষণাক্ষেত্রে একটি স্মরণীয় ঘটনা হয়ে আছে।

৬. ব্ল্যাক হোল নিয়ে সাম্প্রতিক কিছু তথ্য

কিছুদিন আগে নাসা কর্তৃক ব্ল্যাক হোলের শব্দ বা সাউন্ড প্রকাশ করা হয়েছে। যদিও মহাকাশে বায়ু না থাকায় সেখানে কোনো শব্দ শোনা যায় না বা রেকর্ড করা যায় না। তবে মহাকাশে শব্দ উৎপন্ন হয়। আর উৎপন্ন সেসব শব্দের তরঙ্গকে শব্দে রুপান্তরিত করেই মহাকাশের বিভিন্ন বস্তুর শব্দ শোনা যায়।

ব্ল্যাক হোল নিয়ে প্রতিনিয়তই বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশিত হচ্ছে। অনেকেই মনে করেন মহাবিশ্বের বড় একটি রহস্য খোলাসা করা যাবে ব্ল্যাক হোলের ভেতরে কি আছে সেটা জানতে পারলে। মহাকাশ সম্পর্কিত আরও অনেক লেখা আসবে পরবর্তীতে। তাই এ ধরনের লেখা আরও পড়তে চাইলে এ একাউন্টটিকে ফলো দিয়ে রাখতে পারেন।

আর পরিবর্তনশীল সময়ের সাথে নিজেকে আপডেটেড করে রাখতে নিয়মিত চোখ রাখুন টেকটিউনস এর পাতায়।

Level 2

আমি জান্নাতুল ফেরদৌস ইভা। এসএসসি ২০২২, ময়মনসিংহ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 2 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 14 টি টিউন ও 14 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 8 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 8 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস