আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন টেকটিউনস কমিউনিটি? আশা করছি সবাই ভাল আছেন। আজকে আবার হাজির হলাম নতুন টিউন নিয়ে।
কিওয়ার্ড রিসার্চের ক্ষেত্রে সর্বাধিক ব্যবহৃত ম্যাট্রিক্স গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে কিওয়ার্ড সার্চ ভলিউম। বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি ম্যাট্রিক্স হলেও এটা নিয়ে আমাদের মধ্যে রয়েছে কিছু ভুল ধারণা। আজকের এই টিউনে আমরা সার্চ ভলিউম নিয়ে ভুল ধারণা গুলো কী কী সেটা জানব এবং সঠিক ভাবে এর ব্যবহার সম্পর্কে অবগত হবে।
নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট সার্চ ইঞ্জিনে, একটি সুনির্দিষ্ট কীওয়ার্ড যে পরিমাণ সার্চ হয়েছে সেটা হচ্ছে কীওয়ার্ড সার্চ ভলিউম। ইউজাররা কতবার সার্চ দিচ্ছে, কোন কীওয়ার্ডের প্রতি ইউজারদের আগ্রহ বাড়ছে এই সব কিছু সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায় কীওয়ার্ড সার্চ ভলিউম জানার মাধ্যমে।
অর্গানিক সার্চ অপটিমাইজেশনের ক্ষেত্রে কীওয়ার্ড সার্চ ভলিউমের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ কিছু SEO ইনফরমেশন সম্পর্কে ধারণা নেয়া হয়, যেমন
সাধারণত দুইভাবে কীওয়ার্ড সার্চ ভলিউম নির্ধারণ করা হয়, নিচে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা হল।
গুগল সার্চ ইঞ্জিনে কীওয়ার্ড সার্চ ভলিউম নির্ধারণে কমন টুল হচ্ছে Keyword Planner। গুগল এখানে তাদের সার্চ ইনফরমেশন রিপোর্ট করে। তবে এই রিসোর্স সম্পর্কে বেশ কিছু বিষয় আগেই জেনে নেয়া ভাল,
ডিফল্ট ভাবে, Keyword Planner এভারেজ সার্চ ভলিউম রিপোর্ট দেয়। গত ১২ মাসের এভারেজ রিপোর্ট আপনি এখানে দেখতে পাবেন, সাম্প্রতিক কোন রিপোর্ট এখানে পাওয়া যাবে না।
Keyword Planner তথ্য গুলো ডিভাইস অনুযায়ী আলাদা করে দেখায় না, রিপোর্ট করা সংখ্যাগুলো বিভিন্ন ডিভাইস এবং সার্চ মাধ্যমের সমষ্টির উপর ভিত্তি করে অনুমান করে উপস্থাপন করা হয়।
কখনো কখনো কিছু কিছু কীওয়ার্ডের ভলিউম গুগল ইচ্ছাকৃত ভাবেই হাইড করে। গুগল এড জেনারেট হওয়ার পরেও সামাজিক ও আইনগত কারণে সেনসিটিভ এরিয়ার কীওয়ার্ড তারা হাইড করতে পারে।
এমনকি Clickstream ডাটা বেসড টুল সার্চ ভলিউম দেখালেও গুগল শূন্য ভলিউম দেখাতে পারে। আবার কখনো এটি ভুল Assumption ও দিতে পারে।
সার্চ ভলিউম জানার অন্য আরেকটা সোর্স হচ্ছে Clickstream Data। এর মাধ্যমে সরাসরি ইউজারদের কাছ থেকে ডাটা কালেক্ট করা হয়। কালেক্ট করার ওয়ে হতে পারে ব্রাউজার এক্সটেনশন যেগুলো ইউজাররা নিজ ইচ্ছায় ইন্সটল করে থাকে।
তবে Clickstream ডাটা গুলোও আনুমানিক এর একুরেসি নির্ভর করে কতজন ইউজারকে পুল করা হচ্ছে, কীভাবে করা হচ্ছে, পুলিং মেথডোলজি কী এবং কীভাবে সেটা পরিমাপ করা হচ্ছে।
Clickstream বেসড সার্চ টুল গুলোর অতিরিক্ত কিছু সুবিধা রয়েছে যেমন,
তবে যাই হোক এটা অবশ্যই আপনার মাথায় রাখতে হবে যে সার্চ ভলিউম কতটা সঠিক তা নির্ভর করবে মেথডোলজি এবং সোর্স এর উপর।
আগেই বলা হয়েছে সার্চ ভলিউম গুলো আনুমানিক হিসাবের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা। প্রকৃত সার্চ ভলিউম কোথাও এভেইলেবল নেই এবং কখনো হবেও না।
প্রকৃত ভলিউম না জানা গেলেও খুব বেশি সমস্যা নেই কারণ আনুমানিক সার্চ ভলিউম দিয়েই বিভিন্ন কীওয়ার্ডের মধ্যে তুলনা করা যায় এবং ধারণা নেয়া যায়।
যদি একই সোর্স এবং মেথডোলজি থেকে ভলিউম পরিমাপ বা তুলনা করা হয় তাহলে ভাল ফলাফলই পাওয়া সম্ভব। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এই সার্চ ভলিউম একটা সিজনাল বিষয় এটা কখনো এক থাকবে না।
এর ছোট করে উত্তর হচ্ছে, না। SEO তে সব কিছু নির্ভর করে। যদিও এটা ভাবা হয় Low ভলিউম সার্চ কীওয়ার্ড গুলো Low ট্রাফিক জেনারেট করবে তবে রিয়েল ওয়ার্ল্ডে এটা পুরোপুরি যুক্তিযুক্ত নয়।
প্রথমত এটা মনে রাখবেন, "সার্চ ভলিউম এবং ট্রাফিক দুটি বিষয় কো-রিলেটেড" এটা একটা মিথ। দ্বিতীয়ত লোয়ার ভলিউম কীওয়ার্ড, কন্সটেন্ট স্ট্রেটেজির টিম প্লেয়ারও হতে পারে।
Topic cluster হচ্ছে কন্টেন্ট স্ট্রেটেজির একটা টার্ম। এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট একটা টপিককে বিভিন্ন সাবটপিকে ভাগ করে আলোচনা করা হয়। নির্দিষ্ট টপিকের উপর কন্টেটের গ্রুপকে Topic cluster। একটা মুল পেজ যার নাম pillar, সেখানে এর সাবটপিক গুলোকে বা সাবটপিক গুলো নিয়ে আলোচনা করা পেজ গুলো লিংক করা থাকে।
যখন কোন ওয়েবসাইট Topic Cluster ফলো করে তখন সার্চ ইঞ্জিন গুলো সিগনাল পায় উক্ত ওয়েবসাইট নির্দিষ্ট বিষয়টি ভাল করে উপস্থাপন করেছে এবং সেই টপিকে তাদের অথোরিটি রয়েছে।
আর গুগল এই সমস্ত সাইটে বেশি ইউজার সেন্ড করে যাতে তারা প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়ে সন্তুষ্ট হতে পারে। সার্চ র্যাংকিং এসব সাইট ভাল অবস্থানে থাকে ফলে ভাল ট্রাফিক পাওয়া যায়। ইউজার সাব টপিকে জানলেও মেইন টপিকেও সাইটের অথোরিটি থাকবে।
সুতরাং আপনার পিলার টপিকের সাথে যদি Lower ভলিউম কিওয়ার্ড রিলেভেন্ট হয় তাহলে Lower ভলিউম সার্চ করা ইউজাররা যেমন ওয়েবসাইটে আসবে তেমনি হাই ভলিউম সার্চ ইউজাররাও আসবে। আগ্রহী হয়েই ইউজাররা আরও তথ্য জানতে চাইবে।
আর Low ভলিউম কীওয়ার্ড গুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে long Tail কীওয়ার্ড হয় যেগুলো স্পেসিফিক ভাবে ইউজাররা খুঁজে। যেমন আপনি How to download youtube video তে যেমন সার্চ ভলিউম পাবেন How to download youtube video with pc এক সার্চ ভলিউম পাবেন না।
সুতরাং যেসকল পেজ গুলো Long Tail কীওয়ার্ডের জন্য অপটিমাইজ করা সেগুলো,
সব জায়গায় হাই ভলিউম সার্চের প্রয়োজন নেই যেমন Niche বা ইন্ডাস্ট্রি রিলেটেড টপিকের জন্য হাই ভলিউমের প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন টার্গেটেড কাস্টমারের।
এমন অনেক বিজনেস আছে যেখানে খুব কম সংখ্যক ট্রাফিক দিয়েই সফলতা অর্জন করা যায়। উদাহরণ হিসেবে অনলাইন কেনাকাটার কথা ধরা যেতে পারে। স্পেসিফিক প্রোডাক্টের কাস্টমার কম হতেই পারে আর যদি সেই টার্গেট কাস্টমারকে ওয়েবসাইটে আনা যায় তাহলে মিলিয়ন মিলিয়ন ট্রাফিক দরকার নেই যারা প্রোডাক্ট সম্পর্কে আগ্রহী না।
আর যেহেতু গুগলের, Keyword Planner কখনো কখনো Low সার্চ ভলিউম গুলোকে জিরো দেখায় সেহেতু SEO প্রফেশনালদের উচিৎ নির্ভরযোগ্য ও ভাল মানের টুল ব্যবহার করা। যে সমস্ত টুল ইন্ডাস্ট্রি ভিত্তিক ফলাফল দিতে পারে সেগুলোর দিকে গুরুত্ব দেয়া উচিৎ।
Google Trends একটি বেশ উপকারী ফ্রি টুল যা সময়ের সাথে সাথে নির্দিষ্ট সার্চের জনপ্রিয়তা তুলে ধরে। এটা অনেকটা সার্চ ভলিউমের মত শুনালেও এখানে সূক্ষ তবে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে।
Google Trends এর প্রাইমারি ম্যাট্রিক্স আসলে নির্দিষ্ট টপিকের প্রকৃত সার্চ ভলিউম নয়। এটি মূলত ০-১০০ স্ক্যালে নির্দিষ্ট টপিকের উপর ওভারটাইমে সার্চ ফ্রিকোয়েন্সিকে তুলে ধরে। এর মানে হচ্ছে একটা নির্দিষ্ট সময়ে টপিকটি কত ঘন ঘন সার্চ হয়েছে সেটা বুঝায়।
তারপরেও এটা কিওয়ার্ড রিসার্চের ক্ষেত্রে বেশ জনপ্রিয় এর মাধ্যমে জানা যায় টপিকের জনপ্রিয়তা কেমন। বুঝা যায় জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে নাকি কমে যাচ্ছে, এর উপর কাজ করা উচিৎ কিনা।
আশা করছি এতক্ষণে বুঝে গিয়েছেন সার্চ ভলিউম আসলে কী এবং এটা কীভাবে নির্ধারণ করা হয়। এটাও জেনেছেন এখানে রয়েছে বেশ কিছু রেস্ট্রিকশন এবং লিমিটেশন। চলুন এবার জেনে নেয়া যাক কীভাবে কোথায় আপনি সার্চ ভলিউম বিষয়টির উপর ভিত্তি করব সিদ্ধান্ত নেবেন।
SEO এর ক্ষেত্রে সার্চ ভলিউমের ৫ টি মুল ব্যবহার নিচে আলোচনা করা হল,
যদিও এটা ভাবা হয় হাই সার্চ ভলিউম মানে হাই ট্রাফিক তবুও এটা পুরোপুরি ঠিক নয়। অধিক ট্রাফিক ড্রাইভ হবে কিনা এটা আরও অনেক ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করে যেমন,
নির্দিষ্ট কীওয়ার্ডে হাই ট্রাফিক ড্রাইভ করবে কিনা এটা অনেক সময় সার্চ ইঞ্জিনের বিভিন্ন ফিচারের উপরও নির্ভর করে যেমন কোন বিষয়ে সার্চ করে ইউজার ওয়েবসাইটে না ঢুকেও কখনো কখনো উত্তর পেয়ে যেতে পারে।
সুতরাং বলা যায় একটা কীওয়ার্ডকে কতটা গুরুত্ব দিতে হবে এটা নির্ধারণের একটা ফ্যাক্টর হতে পারে সার্চ ভলিউম।
সাধারণ ভাবে SERP তে হাইয়ার ভলিউম কীওয়ার্ড গুলোর ডিফিকাল্টিও হাই হয়। এর মানে সার্চ ইঞ্জিনে র্যাংক করতে বেশি পরিশ্রম করতে হবে। অনেক কীওয়ার্ড রিসার্চ টুল এই বিষয়টিকে Keyword Difficulty Score ও বলে থাকে। তবে এই স্কোর নির্ধারণে অনেক গুলো ফ্যাক্টর কাজ করে। এজন্য সার্চ ভলিউম থেকে কীওয়ার্ড ডিফিকাল্টি বেশি ভ্যালুয়েবল।
কখনো কখনো হাই ভলিউম কীওয়ার্ডের Difficulty Score কমও হতে পারে। তবে এমনটি হলে আপনাকে এর গভীরে মনোযোগ দিতে হবে। হতে পারে আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী এখনো এটা ডিসকোভার করতে পারে নি অথবা এই কীওয়ার্ড আপনার জন্য ইউজফুল ট্রাফিক তৈরি করবে না।
আগেই বলেছি বেশি ভলিউম আপনাকে বেশি ট্রাফিক দেবে এটা ভুল ধারনা। তবে এমনটি ভাবা যায় যেহেতু এতবার সার্চ হচ্ছে সেহেতু ক্লিকও বেশি হবে। কিন্তু এই সব কিছুই নির্ভর করবে।
যেমন সার্চ রেজাল্টের শুরুর দিকে ওয়েবসাইট গুলোতে ইউজাররা বেশি প্রবেশ করবে যদি তারা সন্তুষ্ট হয়ে যায় তাহলে নিচের দিকে যাবে না। এমনকি আপনার পেজ টপ ১০ এর মধ্যে হলেও আপনি সেক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ট্রাফিক নাও পেতে পারেন।
আবার সার্চ ইঞ্জিনের বিভিন্ন ফিচারের জন্যও আপনি ট্রাফিক না পেতে পারেন যেমন, Featured Snippets। যদি ইউজার Featured Snippets থেকেই প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়ে যায় তাহলে অর্গানিক সার্চ রেজাল্টে Zero Click এর মত ঘটনাও ঘটতে পারে।
আর এই কারণ গুলোর জন্য কীওয়ার্ড রিসার্চ টুল গুলো একই সাথে বিভিন্ন ম্যাটিক্স শো করে যেমন, Search Volume, Keyword Difficulty, Click-through Rate, ইত্যাদি। যার মাধ্যমে সম্ভাব্য ট্রাফিক অনুমান করা যায়।
যে টুল গুলো Month by Month ট্রেন্ড দেখায় সেগুলো আপনাকে বুঝতে সাহায্য করবে বছরের কোন সময় গুলোতে আপনার কীওয়ার্ডের ইন্টারেস্ট বৃদ্ধি পায়।
মনে রাখবেন Google Ads Keyword Planner কিন্তু ১২ মাসের এভারেজ ইন্ডিকেশন দেয় যার ফলে সিজনাল কোন ইন্ডিকেশন পাওয়া যায় না।
ই-কমার্স ওয়েবসাইট গুলোর জন্য সিজন বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ যার মাধ্যমে তারা বুঝতে পারে বছরের কোন সময়টাতে নির্দিষ্ট প্রোডাক্টের উপর বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
আপনি নিজে শীতের কাপড় সার্চ দিয়ে দেখেন, দেখবেন আমাদের দেশে নভেম্বর ডিসেম্বরের দিকে এটা পিক লেভেলে থাকবে এর পর পর আস্তে আস্তে নিচের দিকে যেতে থাকবে।
সুতরাং যেসব টুল সিজনালাটি দেখাতে পারে সেগুলো আপনাকে SEO এর ক্ষেত্রে আরও দূরদর্শী হতে সাহায্য করতে পারে।
কীওয়ার্ড রিসার্চের ক্ষেত্রে সার্চ ভলিউম নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ একটি ম্যাট্রিক্স। তাই রিসার্চারদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে টুল দিয়ে ভলিউম যাচাই করা হচ্ছে সেটা কোন তথ্য সেন্সর করছে কিনা। তবে সার্চ ভলিউমের উপর ভিত্তি করেই সব সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না পাশাপাশি অন্যান্য ফ্যাক্টর গুলোও বিবেচনায় রাখতে হবে।
তো আজকে এই পর্যন্তই পরবর্তী টিউন পর্যন্ত ভাল থাকুন আল্লাহ হাফেজ।
আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 627 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 118 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।