এসইও বা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং গ্রহণযোগ্য একটি পেশা। তাই আজকের টিউনটির বিষয় হলো আপনাকে এসইও শিখতে হলে কি কি করতে হবে, মাসে কত টাকা আয় করতে পারবেন এবং এর ভবিষ্যৎ কি?
টিউনটি শুরু করার আগে আপনাকে বলে নেই আপনি যদি এসইও শিখতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে আপনি এসইও শেখার জন্য উপযুক্ত কিনা। আমি মোটেও চাই না আপনি ভুল কাজটি শিখে আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করুন। বরং আপনি যে কাজে দক্ষ সেই কাজটি বেছে নিন। তবে চলুন ফিরে যাওয়া যাক আজকের আলোচনার বিষয়ে।
তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রযাত্রায় কাজের ক্ষেত্র এখন বিশ্বব্যাপী। কম্পিউটার ইন্টারনেটের এই যুগে প্রথাগত চাকরির ধারণা একেবারেই পাল্টে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে আগামী দিনের সব অফিসগুলো হবে ভার্চুয়াল অফিস। পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত থেকেই যেকোনো কর্মী ঘরে বসেই তার অফিসের কাজ শেষ করবে।
ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা প্রতিদিনই নানা বিষয়ে ইন্টারনেট সার্চ ইঞ্জিনের সার্চ করে থাকে। সেটি হতে পারে কোন প্রতিষ্ঠানে তথ্য থেকে শুরু করে সফটওয়্যার, মুভি কিংবা গান। বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন হচ্ছে গুগল। এছাড়াও আরও অনেক সার্চ ইঞ্জিন রয়েছে এর মধ্যে যেমন Google, Yahoo, Bing, Yandex ইত্যাদি। তবে পৃথিবীতে সবচাইতে জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন হচ্ছে গুগল। তবে যাই হোক সার্চ ইঞ্জিন কি এটি আপনাকে বুঝাতে হবে না।
গুগল সার্চ ইঞ্জিনে যখন কোন বিষয়ে লিখে সার্চ করা হয় তখন অনেক ওয়েবসাইট প্রথমে চলে আসে। সার্চ রেজাল্টের প্রথম পৃষ্ঠায় থাকা রেজাল্ট গুলোতেই কিন্তু আমরা বেশি ক্লিক করে থাকি। কিন্তু প্রতিদিন হাজার হাজার নতুন ওয়েবসাইটের তৈরি হচ্ছে। এসবের মধ্যে থেকে আমরা কোন সাইট কে বেছে নেব?
স্বাভাবিকভাবেই সার্চ ইঞ্জিনের প্রথম পৃষ্ঠা গুলোই ইউজারকে বেশি আকৃষ্ট করে থাকে। আর সার্চ ইঞ্জিনগুলো তথ্য সমৃদ্ধ ওয়েবসাইটগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। এই সুবিধাগুলো পাওয়ার জন্য ওয়েবসাইটকে প্রথম পেজ আনার প্রয়োজন। তাই একটি ওয়েবসাইট কে সার্চ ইঞ্জিনের প্রথম পেজে আনার জন্য দরকার সেই ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন এর নিয়ম অনুযায়ী তৈরি করা। বর্তমানে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন একটি অতি প্রয়োজনীয় বিষয়। আর যারা এ বিষয়ে সাথে জড়িত তাদেরকে বলা হয় সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজার।
বর্তমানে ব্যবসায়ীক কাজে কিংবা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে একটি ওয়েবসাইট এর প্রয়োজনীয়তা উল্লেখযোগ্য। কিন্তু বর্তমান সময়ে একটি ওয়েবসাইটকে রেঙ্ক করানো অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার। কেননা বর্তমানে রয়েছে লাখ লাখ ওয়েবসাইট। এর মধ্যে সার্চ রেজাল্টে আপনার ওয়েবসাইটটি খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভবই বলতে গেলে। তবে সার্চ ইঞ্জিনের প্রথম পৃষ্ঠায় ওয়েবসাইটকে পেতে হলে দরকার সেই ওয়েবসাইটটিকে এসইও এর নিয়ম অনুযায়ী তৈরি করা।
প্রথমেই বলে নেই সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন শিখতে হলে আপনাকে অবশ্যই ইংরেজি, কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটে অনেক দক্ষ হতে হবে। সবচাইতে বড় কথা আপনাকে এসইও শিখতে হলে প্রচুর অনুশীলন এবং ধৈর্য থাকতে হবে। অনুশীলনের জন্য আপনি প্রথমে একটি ফ্রি ব্লগ সাইট খুলে সেখানে এসইও এর বিভিন্ন টেকনিক প্রয়োগ করে দেখতে পারেন।
পেশা হিসেবে আপনি যদি সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন কে বেছে নেন তবে এ ক্ষেত্রে আপনাকে অনেক দক্ষ হতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি নিজ চেষ্টায়ও শিখতে পারেন অথবা ভালো কোন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। আপনি ভালোভাবে কাজ না শিখে কাজে নেমে পড়া একেবারেই উচিত নয়।
এসইও জগতে আপনাকে অধিকাংশ জিনিসই নিজে থেকে শিখতে হবে। এক্ষেত্রে গুগল আপনাকে অনেক সাহায্য করবে। আর ইন্টারনেটের বিশাল তথ্য ভান্ডার এ আপনি খুঁজে পাবেন এসইও এর অনেক আর্টিকেল এবং টিউটোরিয়াল। আপনি যা শিখবেন তা প্র্যাকটিস করতে থাকুন। মনে রাখবেন আপনার প্রাকটিস ছাড়া এসইওতে কাজ করা একেবারেই সম্ভব না।
সার্চ ইঞ্জিনের পলিসি গুলো সর্বদা পরিবর্তিত হতে থাকে। তাই এসইও তে পুরনো কৌশলগুলো তেমন কাজে লাগে না। আর তাই সার্চ ইঞ্জিনের পরিবর্তিত অ্যালগরিদম গুলো আপনাকে জানতে হবে এবং গুগলের অ্যালগরিদম গুলোর পরিবর্তন জেনে আপনাকে আপডেট থাকতে হবে। আপনি বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া যেমন Facebook, Twitter, Instagram, LinkedIn ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তুলুন। কারণ মার্কেট প্লেসে এসব সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের অভিজ্ঞতা অনেক প্রয়োজন হয়।
ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে রয়েছে এসইও এর অনেক কাজ। তাই অনেকেই এখন এ পেশায় ঝুঁকে পড়ছে। অনলাইন মার্কেটপ্লেসে কাজ করার পাশাপাশি লোকাল মার্কেটে ও দাপটের সঙ্গে কাজ করতে পারবেন। কিন্তু আপনি যদি এসইও শিখতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই ইংরেজি, কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট সম্বন্ধে ভালোভাবে জানতে হবে। ইংরেজি, কম্পিউটার, ইন্টারনেট জেনে আপনি যদি এসইও ক্যারিয়ার শুরু করেন তাহলে আশা করা যায় আপনি এতে সফল হবেন।
সার্চ ইঞ্জিনে একটি ওয়েবসাইটকে অন্তর্ভুক্ত করে সারা বিশ্বের ব্যবহারকারীকারীর কাছে নিজের সাইটকে পরিচিত করার পদ্ধতি হচ্ছে, এসইও বা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন। একজন দক্ষ সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজার এর কাজের ক্ষেত্র এর কোন অভাবই নাই।
প্রথমদিকে কোন অনলাইন মার্কেটপ্লেসে কাজ শুরু করে দিতে পারেন। এসব সাইটে প্রতিদিনই হাজার হাজার কাজ যোগ হচ্ছে। এছাড়া লোকাল মার্কেটে নিজের কিছু পণ্যের ব্রান্ডিং ভ্যালু বাড়ানো যেতে পারে। এতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজের কাজ প্রাপ্তির অনেক নিশ্চয়তা থাকে। প্রথমদিকে আপনি যদি কাজগুলো ভালোভাবে করতে পারেন তাহলে কিন্তু বায়ার অনেক খুশি হয়ে যাবে। এরপর তারা প্রয়োজনেই আপনাকে খুঁজে নেবে।
এছাড়া মার্কেটপ্লেসের বাইরে কাজ করলে আপনারা আয়ের পরিমাণ বাড়তে পারে। আপনি নিজস্ব ওয়েবসাইট খুলে তাতে বিভিন্ন আর্টিকেল লিখে তা থেকে আয় করতে পারবেন।
অনলাইন মার্কেটপ্লেসে আপনি সাধারণত যে কাজগুলো পাবেন তার মধ্যে রয়েছে, কোন সাইটকে গুগলের এক নাম্বার Ranking এ নিয়ে আসা সহ বিভিন্ন কাজ। একটি সাইটকে গুগলের প্রথম পেজে আনতে সাধারণত ২০০ থেকে ১০০০ ডলার পর্যন্ত পাওয়া যায়। এছাড়া অন্যান্য কাজগুলো করে ঘন্টায় ন্যূনতম ২ ডলার থেকে শুরু করে ২০ ডলার পর্যন্ত আয় করতে পারেন। সাধারণত একজন দক্ষ সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজার সর্বনিম্ন মাসে ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা থেকে শুরু মাসে লক্ষাধিক টাকার উপরে আয় করে থাকে। এছাড়া আপনার আয় নির্ভর করবে আপনার পরিশ্রমের উপর।
অনুশীলনের জন্য আপনি প্রথমে একটি ফ্রি ব্লগ সাইট খুলে নিতে পারেন এবং তার ওপর এসইও এর বিভিন্ন টেকনিক প্রয়োগ করতে পারেন। এভাবে একটি সাইট কে ভালোভাবে দাঁড় করাতে পারলেই, পরবর্তীতে সেই সাইট থেকে আয়ের সম্ভাবনাও থাকে।
মার্কেটপ্লেসে কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রথমদিকে কিছুটা ঝামেলা হয়। এই ক্ষেত্রে হাল ছেড়ে দেবেন না। আপনার চেষ্টা অব্যাহত রাখুন।
এসইও শেখার আগে আপনাকে এসইও এর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে একটি ধারণা দেওয়া দরকার।
এসইও এর ভবিষ্যৎ কি সেটি আপনারা এখনি আন্দাজ করতে পারছেন। বর্তমান বিশ্বে যেমন ওয়েবসাইট তৈরির চাহিদা বাড়ছে ঠিক তেমনি বাড়ছে একটি ওয়েবসাইট কে সার্চ ইঞ্জিনের প্রথম পৃষ্ঠায় আনার। আর একটি ওয়েবসাইট কে সার্চ ইঞ্জিনের প্রথম পৃষ্ঠায় আনতে দরকার একজন সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজার এর। তাহলে আপনি বুঝতেই পারছেন যে, ভবিষ্যতে একজন সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজার এর চাহিদা কি রকম হতে পারে। তাই আপনি যদি এ বিষয়ে আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে এখনি লেগে পড়ুন সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন শেখার কাজে।
তো আজ এ পর্যন্তই। দেখা হবে পরবর্তী টিউনে আরো নতুন কিছু নিয়ে ইনশাআল্লাহ।
আমি মো আতিকুর ইসলাম। কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 421 টি টিউন ও 93 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 62 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 3 টিউনারকে ফলো করি।
“আল্লাহর ভয়ে তুমি যা কিছু ছেড়ে দিবে, আল্লাহ্ তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু অবশ্যই দান করবেন।” —হযরত মোহাম্মদ (সঃ)