৭ টি মারাত্মক ভুল যা ই-কমার্স সাইট গুলো করে থাকে

টিউন বিভাগ এসইও
প্রকাশিত

বাংলাদেশে ত বটেই এমন কি বিশ্বের অনেক জায়গাতেই লক্ষ্য করা যায় ই কমার্স সাইট মালিকরা মনে করেন তারা তাদের সাইটে শত শত বা হাজার হাজার প্রডাক্ট আপলোড করে দিবে তারপর বন্যার জলের মত ভিজিটর আসতে থাকবে সার্চ ইঞ্জিন থেকে। বাস্তবতা থেকে এই চিন্তা শত কোটি আলোক বর্ষ দূরে অবস্থিত।

আসল ব্যাপার হল এস ই ও (SEO), স্যোসাল মিডিয়া মার্কেটিং, ভিডিও মার্কেটিং না করলে ভিজিটর সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। যদিও বিভিন্ন এড (যেমনঃ ফেসবুক এড বা গুগল এড, তবে আপনি ফেসবুক মার্কেটিং চালাতে পারেন সমসময়ই) বা বিশেষ প্রমোশন এর মাধ্যমে আপনি ভিজিটর আনতে পারেন। তবে সেগুলোর কার্যকারিতা আপনার এড বা প্রমোশান চলাকালীন পজন্তই।

একটা ব্লগ বা ৫ পেইজের ১ টা কোম্পনি ওয়েব সাইটের তুলনায় একটা ই-কমার্স সাইটের এস ই ও (Search Engine Optimization) করা বেশ কঠিন। প্রতিনিয়ত অনেক প্রডাক্ট পেইজের পরিবর্তন, নতুন নতুন প্রডাক্ট, প্রডাক্ট পেইজ সংযোজন ইত্যাদি এস ই ও (Search Engine Optimization) এর কাজ কে কঠিন করে তোলে।

আজকে আমরা ৭ টা এস ই ও ভুল সম্পর্কে জানবো যেগুলো ই-কমার্স সাইট গুলো করে থাকে।

১. প্রডাক্ট ডেসক্রিপ্সান না থাকা

শুধু বাংলাদেশে না বিদেশের অনেক সাইটে ও প্রডাক্ট ডেসক্রিপ্সান নাই। মজার ব্যাপার হল এমাজন, ইবেতে ও আপনি সব প্রডাক্টের ডেসক্রিপ্সান পাবেন না। এ কথা শুনে আমাদের আম জনতার তৃপ্তির ঢেকুর তোলার কোন সুযোগ নাই। ভাই কিছু কাটে ধারে কিছু কাটে ভারে। তাদের সাথে আমাদের তুলনা চলে না, তাদের ভারের সাথে সাথে ধাঁরটা ও কম না। কিছু প্রডাক্টের নাই কিন্তু বেশির ভাগ প্রডাক্টেরই আছে। বাংলাদেশের হাতে গোনা ২/১ টা ই কমার্স সাইট ছাড়া কারোই প্রডাক্টের টেক্সট ডেসক্রিপ্সান নাই। এই না থাকার কারনে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই লো কম্পিটিশান কিওয়াড় হওয়ার পরও গুগল সার্চে ১ থেকে ১০ এর মধ্যে তারা থাকে না। ফলাফল তারা অরগানিক ভিজিটর বলতে কিছুই পায় না। তাই আপনার ই-কমার্স সাইটের ক্ষেত্রে এই ভুল টি করা থাকলে এখনি শুধরে নিন। ইউনিক প্রডাক্ট ডেসক্রিপ্সান যোগ করুন।

উপরের ছবিতে কি দেখতে পাচ্ছেন। একটা সিম্পল বুট। বুট টি সম্পর্কে খুব সুন্দর একটা প্রডাক্ট ডেসক্রিপ্সান থাকতে পারতো। সেক্ষেত্রে গুগল এবং ভিজিটর উভয়ের জন্যই সেটা ভাল হত। গুগল ডেসক্রিপ্সান পেয়ে দিত র‍্যাঙ্ক আর ভিজিটররা ডেসক্রিপ্সান থেকে পণ্যটি সম্পর্কে খুব ভাল ভাবে জেনে ক্রেতায় পরিণত হতে পারত। এখন একে গুগল সার্চে পাওয়া যাবে না কেননা এর জন্য একটা লাইন ও লেখা নাই যা দিয়ে ভিজিটর রা সার্চ দিলে গুগল একে তাদের কাছে হাজির করবে।

আমরা জানি যে, একটা ছবি ১০০০ ওয়ার্ড এর চেয়ে বেশি কথা বলে। সে যুক্তিতে প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে আবার কেন প্রডাক্ট ডেসক্রিপ্সান এর জামেলা? কারন টা হল গুগল মামা ইমেজ রিড করতে পারে না, ইমেজ তার কাছে সিমপ্লি কিছু পিকজেল ছাড়া কিছুই না।

ডেসক্রিপ্সান অবশ্যই ইউনিক হতে হবে। ইউনিক কন্টেন্ট আপনার সাইটের এস ই ও (SEO) এর জন্য অতিব জরুরী। ডেসক্রিপ্সান লিখার সময় যে বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবেঃ

  1. আপনার ক্রেতাকে পণ্য কিনতে উৎসাহিত করবে এমন কোয়ালিটি ডেসক্রিপ্সান লিখতে হবে।
  2. ভুলে ও অন্যের সাইট থেকে কন্টেন্ট কপি করবেন না, করলে গুগল মামা আপনাকে পেনাল্টি উপহার দিবে।

২. উৎপাদনকারিদের প্রডাক্ট ডেসক্রিপ্সান ব্যবহার

আপনি যদি সার্চ ইঞ্জিন দারা ফিল্টারিং হয়ে ব্যান খেতে চান তাহলে উৎপাদনকারিদের ডেসক্রিপ্সান হুবুহু ব্যবহার করতে পারেন।

আসল ঘটনা হল, উৎপাদনকারিদের সে সব ডেসক্রিপ্সান আরো অনেক সাইটকে ও দেয়া হয় এবং তাদের প্রায় সবাই সে ডেসক্রিপ্সান হুবহু ব্যবহার করে। তাই গুগল শত শত কখনো কখনো হাজার পেইজ এ একই ডেসক্রিপ্সান পায় এবং কপি কন্টেন্ট হওয়ায় ফিলটার করে সেগুলোকে বাদ দিয়ে দেয়। এটা একটা মারাত্তক ভুল। তা ছাড়া উৎপাদন কারিদের ডেসক্রিপ্সান বেশির ভাগ সময়ই সেলস ফ্রেন্ডলি হয় না।

নিয়মটা হল সব সময়ই ইউনিক কন্টেন্ট তৈরি করতে হবে। তা না হলে গুগল মামা আপনার সাইট কে লাথি মেরে র‍্যাঙ্কিং এর সবার নিচে ফেলে দিবে কন্টেন্ট কপি করা আর স্ক্র্যাপ করার পুরস্কার স্বরূপ।

এখন হয়ত আপনি বলবেন, ভাই আপনার কি মাথা খারাপ আমার কয়েক হাজার পণ্য আছে আমি কিভাবে এই হাজার হাজার পণ্যের ইউনিক ডেসক্রিপ্সান লিখবো। উত্তরঃ না ভাই, মাথা ঠিক আছে। আপনাকে চেষ্টা করতে হবে ইউনিক ডেসক্রিপ্সান লিখার। যদি তা পারেন তাহলে গুগল র‍্যাঙ্কিং এ আপনার সাইট কে ভাল অবস্থান দিবে, যার ফলস্বরূপ আপনি প্রচুর অরগানিক ভিজিটর পাবেন গুগল থেকে বিনা পয়সায়। আর আপনি যদি তা পুরোপুরি না পারেন সেখত্রে আপনি যেসব পেইজের ডেসক্রিপ্সান ইউনিক লিখতে পারেন নি সেখানে নো ইন ডেস্ক মেটা ট্যাগ (No Index Meta Tag) ব্যবহার করতে পারেন।

৩. প্রডাক্ট রিভিঊ না থাকা বা ঘাটতি থাকা

Lack-of-product-reviews

৭০% ক্রেতা কোন পণ্য কেনার আগে অনলাইন স্টোর বা ফোরাম গুলোতে প্রডাক্ট রিভিউ খুঁজে থাকে। তার মানে যদি আপনার সাইটে কোন রিভিউ না থাকে তাহলে আপনি নিশ্চিত ভাবে বেশ ভাল সংখার এক দল ক্রেতাকে হারাচ্ছেন। একটা মজার তথ্য হল রিভিউ পেইজ কে গুগল সার্চ এর টপে নিয়ে যাওয়া তুলনামূলক ভাবে সহজ।

কাস্টমারদের কাছ থেকে পাওয়া প্রডাক্ট রিভিউ সম্পর্কে মজার কিছু তথ্যঃ

  1. ইউনিক কন্টেন্ট বানাতে আপনার জান খারাপ অবস্থা, কিন্তু ক্রেতারা আপনার জন্য ফ্রিতে ইউনিক কনটেন্ট লিখে দেন।
  2. এটি আপনার প্রডাক্ট পেইজ কে জিবন্ত রাখে। এর কারনে গুগল মামা কে বার বার আপনার পেইজ এ ক্রল করতে আসতে হয়। ইন্ডেস্ক করতে হয়। এসব কিছুই আপনার সাইট র‍্যাঙ্কিং এ ভাল ভুমিকা রাখে।

৪. সার্চ ডিমান্ড অনুযায়ী প্রডাক্ট পেইজ অপ্তিমাইজড করা

আপনি যখন হেডলাইন, টাইটেল, প্রডাক্ট ডেসক্রিপ্সান লিখবেন তখন মাথায় রাখতে হবে ডিমান্ড ও সার্চ কিওয়ার্ড এর কথা যেগুলো লোকেরা কোন কিছু সার্চ করতে ব্যবহার করে থাকে। এটা না করার মানে হল আপনি কষ্ট করে এমন কিছু কন্টেন্ট বানালেন যেগুলো দিয়ে কেউ সার্চ করে না। সেরকম হলে আপনার এত এত পরিশ্রম জলেই যাবে বলতে হবে।

প্রডাক্ট পেইজ অপ্তিমাইজ করার কিছু টিপস

  1. টাইটেল ও H1 ট্যাগে মডেল নাম্বার ব্যবহার করুন।
  2. টাইটেল ও H1 ট্যাগে ব্র্যান্ড নাম ও ব্যবহার করতে পাড়েন।
  3. আপনার সাইটে ব্যবহার করা ইমেজ গুলোতে alt tag ব্যবহার করতে ভুলে যাবেন না।
  4. আর কখনই iframe ব্যবহার করবেন না।
  5. নোটঃ এস ই ও (SEO) টিপস নিয়ে সামনে আরো বিস্তারিত লিখবো আশা করছি।

৫. ইউনিক নয় এমন টাইটেল ব্যবহার

এস ই ও এর (SEO) এর একদম বেসিক একটা বিষয় হল এটি। কিন্তু ই কমার্স সাইটের ক্ষেত্রে আমরা অনেক সময়ই ইউনিক ট্যাগ এর বিষয়টি খেয়াল করি না। কোন একটা সাইটের সোর্স কোড যদি আপনি দেখেন তবে টাইটেল ট্যাগ কে নিচের ছবির মত দেখতে পাবেন।

এটা অবশ্য সত্যি যে যখন আপনি একই ব্যান্ড এর একাধিক আইটেম সেল করবেন অ্থবা একাধিক ব্যান্ডের একই আইটেম সেল করবেন তখন তাদের জন্য ইউনিক টাইটেল করা কঠিন। সেক্ষেত্রে আপনি বাধ্য হয়েই বার বার একই কিওয়াড় বা শব্দ ব্যবহার করবেন। সার্চ ইঞ্জিন কিন্তু এদিকে সজাগ থাকে সব সময় ই। এ থেকে বাচতে আপনি ইউনিক কিওয়াড় ফ্যাজ বা লং টেইল কিওয়ার্ড ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে ব্যান্ড- মডেল কিওয়ার্ড ফর্মুলা দিয়ে আপনি আপনার কিওয়ার্ড ফ্যাজ বা লং টেইল কিওয়ার্ড বানাতে পারেন। উদাহরণ স্বরূপ আপনার লং টেইল কিওয়ার্ড টি হতে পারে এরুপঃ ব্যন্ড – মডেল- আইটেম টাইপ। একটা বাস্তব উদাহরণ হতে পারে এমনঃ “Honda Accord Sports Coupe” or “Burton Aftermath Snowboard 2013″

৬. কথা বলা ইউ আর এল এর অভাব

কি মজার কথা। ইউ আর এল নাকি কথা বলে? আপনি হয়ত ভাবছেন ইউ আর এল কি মানুষ যে কথা বলবে।

ঠিক কথা ইউ আর এল মানুষ না বাট ইউ আর এল কথা বলে। এই উদাহরণ টি দেখুন তারপর বলুন এটি কিসের কথা বলছে

http://archive.ittefaq.com.bd/index.php?ree=MjBfMDRfMzBfMTNfMV8yNV8xXzM3MTY2

এখন এটি দেখে বলুন এটি কি বলছে

http://www.readanybook.com/ebook/harry-potter-and-the-prisoner-of-azkaban-65.।

প্রথম টি দেখে কার বাবার সাধ্য যে বোঝে সেটা কিসের কথা বলছে। কিন্তু আমরা কিন্তু পরের তা দেখে ঠিকই বুজতে পেরেছি সেটা হ্যারি পটারের একটা ই বুকের কথা বলছে। তাহলে আমরা দেখলাম যে শুদু আপনার ঘরের বউ ছাড়াও, মানুষ না, মুখ নাই বাট এমন কিছু ও কথা বলে। শুদু কথা না, কাজের কথা। এ ধরনের ইউ এর এল কে কিওয়ার্ড ফ্রেন্ডলি ইউ এর এল বলে। আপনার সকল পণ্যের জন্য এরকম ইউ এর এল তৈরি করা এস ই ও এর জন্য খুবই গুরুত্তপূর্ণ।

যে ৩ টি কারনে আপনার উচিত কথা বলা ইউ আর এল বানাবেনঃ

  1. সিমেন্টীক্সঃ এ ধরনের ইউ আর এল আপনার ভিজিটরদের ও বলে দেয় যে, তারা আপনার পেইজ বা সাইট থেকে কি পেতে যাচ্ছে। এর ব্যাতিক্রম হলে মানে যদি আপনার ইউ আর এল এ প্রচুর নাম্বার আর সংখ্যা থাকে তখন ভিজিটররা সেটা কে স্পাম বলে ধরে নিবে এবং পেইজ ভিজিট না করেই ভেগে যেতে পারে।
  2. কিওয়ার্ড এবং এঙ্কর লিঙ্ক ভাগ্যঃ অন্যান্য সাইট আপনার এই ইউ আর এল কে পিক করে তাদের সাইটে টিউন করতে পারে। আপনার এই ইউ আর এল কে এঙ্কর টেক্সট হিসেবে ব্যবহার করলে আপনার গুরুত্ব পূর্ণ কিওয়ার্ড এঙ্কর ট্যাগে আসবে। এরকম এঙ্কর টেক্সট এ আপনার কিওয়াড় থাকলে এবং সেগুলো ভিজিটর কে আপনার সাইট এ নিয়ে আসলে, আপনার জন্য সার্চ ইঞ্জিন এ টপ এ র্যা ঙ্কিং পাওয়া খুবই সহজ হবে।
  3. ডোমেইন নেইমে রিলিভেণ্ট কিওয়াড় থাকা কে গুগল কম গুরুত্ব দেয়া শুরু করেছে। কিন্তু প্রডাক্ট পেজের ইউ আর এল এ রিলিভেন্ট কি ওয়ার্ড থাকা কে গুগল অগ্রাধিকার দেয়।

৭. ডুপ্লিকেট বা নকল কন্টেন্ট এর ছড়াছড়িঃ

নকল কন্টেন্ট আছে এমন পেইজ কে সার্চ ইঞ্জিন এ ইন্ডেক্স করতে দেয়া উচিত না বরং সেগুলো রোবট টিএক্সট এ অফ করে দিতে হবে। এটা না করলে আপনার সাইট পেনাল্টি তে পরে যেতে পারে।

আপনি যদি আপনার ই- কমার্স সাইতে উপরের মারাত্তক ভুল গুলো করে থাকেন তবে এখনই এগুলো শুধরে নেন।

কোন প্রশ্ন বা জিজ্জাসা থাকলে টিউমেন্টে জানাতে পারেন।

পরবর্তী লেখাঃ

৩ টি উপায়, প্রডাক্ট পেইজ এস ই ও (SEO) অপ্টিমাইজ করার।

-

ফেসবুকে আমি

Level 0

আমি আনোয়ার হোসেন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 6 টি টিউন ও 21 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

অসাধারণ।

ভালো লাগলো