গুগল গত ২৬ সেপ্টেম্বর তাদের সার্চ ইঞ্জিনের এলগরিদম আপগ্রেড করেছে যার কোডনেম “হামিংবার্ড”। ওয়েব এ নিয়ে ইতিমধ্যে প্রচুর আলোচনা সমালোচনা চলছে। সাধারণ ব্যবহারকারী থেকে শুরু করে ওয়েবমাস্টার, এমনকি সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজারদের মধ্যেও এ নিয়ে অনেক ধরণের তথ্য ছড়াচ্ছে। তবে সার্চ ইঞ্জিন ল্যান্ড এ সংক্রান্ত একটি বিস্তারিত প্রশ্নোত্তর প্রকাশ করেছে। নিম্নে সেটির অনুবাদ প্রকাশ করা হল:
“সার্চ এলগরিদম” কি?
সার্চ এলগরিদম একটি টেকনিক্যাল টার্ম। কোন একটি সমস্যা সমাধানের ধারাবাহিক প্রক্রিয়া বা ধাপকে এলগরিদম বলা হয়। ওয়েবে যে কোটি কোটি সাইট এবং তথ্য আছে, সেগুলোকে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা এবং ইউজার যখন সেগুলো সার্চ দেন তখন বাছাই করে সবচেয়ে কাছাকাছি উত্তর কিংবা সাইটটি দেখানোর জন্যে গুগল যে পদ্ধতিটি ব্যবহার করে সেটিই হল সার্চ এলগরিদম।
হামিংবার্ড কি?
গুগল যে নতুন সার্চ এলগরিদম ব্যবহার করছে সেটার কোডনেম হল “হামিংবার্ড”।
কেন হামিংবার্ড?
এ উত্তরে গুগল বলছে “নিখুত এবং দ্রুততা” বুঝাতেই এই কোডনেম।
তাহলে কি “পেইজরেংক” এলগরিদম ডেড?
না, হামিংবার্ড এলগরিদমে যে দু’শত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কাজ করছে তার মধ্যে অন্যতম একটি মেজর বিষয় হল পেইজরেংক। হামিংবার্ড প্রথমে পেইজরেংকের দিকে খেয়াল করে দেখে সেটি কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ। কারন পেইজের গুণগত মান এবং এতে ব্যবহৃত ওয়ার্ডের পাশাপাশি অন্যান্য অনেক বিষয়ই সার্চ পরবর্তি রেজাল্ট দেখানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
হামিংবার্ড কখন চালু হয়েছে? আজ?
গুগল জানিয়েছে তারা আজ হতে আরো এক মাস আগে থেকেই পরীক্ষামূলকভাবে হামিংবার্ড ব্যবহার করা শুরু করেছে। তবে গুগল গত ২৬ সেপ্টেম্বর আনুষ্টানিকভাবে সেটি ঘোষণা দিয়েছে।
“হামিংবার্ড চালু হয়েছে” এর মানে কি?
একটি গাড়ির কথা চিন্তা করুন যেটি ১৯৫০ এর দিকে তৈরী, হয়তো এর ইঞ্জিনটিও অসাধারণ। কিন্তু এর কিছু সমস্যা আছে যেমন ধরুন ফুয়েল ইঞ্জেকশন নেই কিংবা এটি আনলেডেড ফুয়েল ব্যবহার করতে পারে না।
গুগলকেও এমন একটি গাড়ির সাথে তুলনা করুন যেটির ইঞ্জিনে কিছু সমস্যা ছিল। গুগল যখন হামিংবার্ডে সুইচ করলো, তখন তাদের পুরোনো ইঞ্জিনটাকে বদলে সেখানে একটি নতুন ইঞ্জিন যোগ করে দিল এবং কাজটি এত দ্রুততার সাথেই হয়েছে যে, আসলে সেটা কেউ খেয়ালই করেনি।
শেষ কবে গুগল তাদের এলগরিদম বদলেছে?
গুগল ২০১০ সালে “ক্যাফেইন আপডেট” দেয়ার মাধ্যমে তাদের এলগরিদমে এমন বিশাল পরিবর্তন এনেছিল। ক্যাফেইন আপডেট দেয়ার মূল উদ্দেশ্য ছিল তথ্যকে শুধুমাত্র সর্টিং(sorting) না করে indexing এর মাধ্যমে সহজে খুঁজে পেতে ব্যবহারকারীকে সহায়তা করা। তার আগে সর্বশেষ ২০০১ সালে গুগলের এলগরিদমে নাটকীয় পরিবর্তন আনা হয়েছিল।
তাহলে পেঙ্গুঈন, পান্ডা এবং অন্যান্য আপডেট গুলো দেয়ার উদ্দেশ্য কি?
পান্ডা, পেঙ্গুঈন এবং অন্যান্য যে সকল আপডেট দেয়া হয়েছিল সেগুলো পুরোনো এলগরিদমের আপডেট মাত্র। তারমানে পুরু ইঞ্জিন পরিবর্তন না করে শুধুমাত্র অংশবিশেষ এর পরিবর্তন আনা হয়েছিল। হামিংবার্ড এর ক্ষেত্রে যে আপডেট হয়েছে সেটা বলা যায় পুরু ইঞ্জিনই বদলানো হয়েছে কিন্তু পুরাতন ইঞ্জিনের দরকারি ফাংশনালিটিগুলো যেমন পেঙ্গুঈন, পান্ডা এখানে অক্ষত রাখা হয়েছে।
তারমানে নতুন ইঞ্জিনে পুরাতন পার্টস ব্যবহার করা হচ্ছে?
উত্তরঃ হ্যা এবং না।
কারণ কিছু পার্ট ছিল যেগুলোতে কোন ত্রুটি ছিল না, তাই সেগুলোকে ফেলে দেয়ার কোন প্রশ্নই আসে না। অন্য পার্টগুলো প্রতিনিয়ত বদলানো হচ্ছে। গুগল বলছে, সাধারন চিন্তায় হিসেব করতে গেলে হামিংবার্ড একটি নতুন ইঞ্জিন যাতে সাজানো গোছানোভাবে পুরাতন এবং নতুন প্রযুক্তি দুটোই ব্যবহার করা হয়েছে।
হামিংবার্ডের মাধ্যমে সার্চ করার ক্ষেত্রে নতুন কি যোগ হচ্ছে?
“কণ্ঠস্বরের মাধ্যমে সার্চ করা” গুগলের দেয়া উদাহরণের মধ্যে অন্যতম একটি উদাহরণ।
আবার ট্র্যাডিশনাল সার্চ ইঞ্জিনগুলোতে “closest place to buy the iPhone 5s to my home?” লিখে সার্চ দিলে ফোকাস করবে কোন পেজে “buy” এবং “iPhone 5s,” এই শব্দগুলো আছে(উদাহরণস্বরূপ)।
কিন্তু হামিংবার্ড শুধুমাত্র ওয়ার্ডগুলোই খুজবেনা বরং ওয়ার্ডের অর্থ বুঝে সেটার উপর ফোকাস করে সার্চ করবে। আপনি যদি আপনার বাসার লোকেশন গুগলে শেয়ার করেন তবে গুগল place বলতে ধরে নিবে আপনার কাছাকাছি কোন ষ্টোর কিংবা দোকান আবার “iPhone 5s” কে একটি নির্দিষ্ট ডিভাইস হিসেবে গন্য করবে যেটি কিনা কোন নির্দিষ্ট ষ্টোরে বিক্রয় হচ্ছে। তার মানে গুগল কোন শব্দের উপরই গুরুত্ব দিচ্ছেনা বরং শব্দের অর্থ বুঝে সার্চ করবে। এতে সার্চের রেজাল্ট আগের চেয়ে অনেক নিখুত হবে আশা করা যাচ্ছে।
ভাবছিলাম গুগল “কণ্ঠস্বরের মাধ্যমে সার্চ করা” ফিচারটি ইতিমধ্যে করে ফেলেছে!!!
হ্যা, ফিচারটি ইতোমধ্যে গুগলে যোগ হয়ে গেছে। ফিচারটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই লিঙ্কে দেখতে পারেন।
তবে এটি শুধু ব্যবহারিক জ্ঞানভিত্তিক প্রশ্নগুলোর উত্তর তার নলেজ গ্রাফ থেকে ভালভাবে দিতে পারবে। পুরো ওয়েবে যে বিলিয়ন বিলিয়ন ওয়েবসাইট আছে সেগুলোতে ব্যবহৃত তথ্যগুলোর অর্থ খুজে বের করে নিখুত সার্চ রেজাল্ট প্রদর্শনের জন্যেই হামিংবার্ড ডিজাইন করা হয়েছে।
ফিচারটি আগের চেয়ে ভাল কাজ করে কি?
আমরা এখনো খুব একটা ভাল বলতে পারছিনা, কারণ ফিচারটি মাত্র চালু করা হল। ব্যবহারকারি এবং বিশেষজ্ঞরা সেটা ব্যবহার করার পরই ভালভাবে জানা যাবে। গুগল যা বলেছে আমরা এখন শুধু ততটুকুই জানি। তবে গুগল কিছু উদাহরণ দিয়েছে যাতে হামিংবার্ডের ইমপ্রুভমেন্ট হয়েছে সেটা বুঝা যায়।
গুগল বলছেঃ ধরুন আপনি “pizza hut calories per slice” লিখে সার্চ দিলে উত্তর পেতেন এমন কিন্তু সেটা পিজ্জা হাটের সাইটের কোন রেজাল্ট নয়। এখন সার্চ দিলে রেজাল্টটি আসবে এমন যেটি পিজ্জা হাটের নিজস্ব সাইট রেফারেন্স।
গুগলের সার্চ ইঞ্জিনের এমন পরিবর্তন কি গুগলকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে পারে?
মোটামুটি নিশ্চিত করে বলা যায় এমনটি হবে না। কারণ হামিংবার্ড গত একমাস ব্যবহৃত হবার পরই সেটা অফিসিয়ালি ঘোষণা দেয়া হয়েছে। গত একমাসে কাষ্টমারদের কাছ থেকে এমন কোন অভিযোগ শোনা যায়নি যে গুগলের সার্চ রেজাল্ট হটাৎ খারাপ হয়ে গেছে। বরং এটার উন্নতি সাধন করা হয়েছে সেটাই অনেকে খেয়াল করেননি।
তারমানে এসইও’র দিন শেষ?
না, এসইও’র কাজ এখনো শেষ হয়ে যায়নি। বরং গুগল বলছে, এসইও’র ক্ষেত্রে আগে থেকে তেমন কোন পরিবর্তন আসেনি। গাইডেন্সও রয়েছে আগের মতই, তবে শর্ত একটাই; কনটেন্ট হতে হবে হাই কোয়ালিটির।
এর মানে কি আমি গুগল থেকে ট্রাফিক হারাব?
আপনার সাইটে যদি গত মাসে লক্ষনীয়ভাবে ট্রাফিক না হারায় তবে বলা যায় আপনার চিন্তা করার তেমন কোন কারণ নেই। সব কিছুর পরেও হামিংবার্ড গত একমাস যাবত চালু আছে, তার মানে গুগলের এ আপডেটের কারণে আপনি যদি কোনরকম ক্ষতিগ্রস্ত হতেন তবে সেটি এতদিনে অবশ্যই বুঝে যেতেন।
কিন্তু আমি ট্রাফিক হারিয়েছি!!!
হতে পারে এর পেছনে হামিংবার্ডই দায়ী। কিন্তু গুগলের মতে এটি এলগরিদমের অন্যান্য অংশ পরিবর্তনের কারণেও হতে পারে যাতে কিনা প্রতিনিয়তই কোন না কোন ভাবে পরিবর্তন, পরিবর্ধন কিংবা উন্নতিসাধন হচ্ছে এবং এটি জানার কোন উপায় নেই।
কিভাবে আমি এই সকল বিষয়গুলো বিস্তারিত জানতে পারবো?
গুগল কিছু প্রেস ইভেন্ট আয়োজন করেছে, ইভেন্টগুলো থেকে হয়তো বিস্তারিত জানা যাবে। গুগলের দুজন শীর্ষ নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত সিংহাল এবং বেন গোমেজের কাছে এই বিষয়ে জানতে চাওয়ার পরই তারা একথা বলেছেন। কবে কোথায় কখন ইভেন্টগুলো অনুষ্ঠিত হবে সেটা জানতে এই এজেন্ডা পেজটি দেখুন।
হামিংবার্ড সম্পর্কে এখন পর্যন্ত যতটুকু জানতে পেরেছি পুরুটাই শেয়ার করলাম, কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেন না কিন্তু।
আর আপনার জানা কোন তথ্য যা এখানে নেই সেটিও শেয়ার করতে পারেন।
সৌজন্যেঃ ডেভসটিম ইন্সটিটিউট
আমি DevsTeam Institute। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 41 টি টিউন ও 63 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 2 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
ধন্যবাদ ডেভসটিম ইন্সটিটিউটকে।