কম্পিউটারের জগতে প্রতিনিয়ত নতুন প্রযুক্তির সংযোজন হচ্ছে। কিন্তু ভবিষ্যতে আমাদের যে প্রযুক্তি সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন আনতে চলেছে, তা হলো কোয়ান্টাম কম্পিউটিং। এটি সাধারণ কম্পিউটারের মতো নয়, বরং সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে কাজ করে, যেখানে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের নিয়ম প্রয়োগ করা হয়।
কোয়ান্টাম কম্পিউটার কী?
সাধারণ কম্পিউটারে তথ্য প্রক্রিয়াকরণ হয় বিট (Bit) দিয়ে, যা হয় ০ বা ১ হতে পারে। কিন্তু কোয়ান্টাম কম্পিউটারে ব্যবহার করা হয় "কোয়ান্টাম বিট" বা কিউবিট (Qubit), যা একইসঙ্গে ০ এবং ১ অবস্থায় থাকতে পারে! এটাকেই বলে "সুপারপজিশন" অবস্থা। এর ফলে কোয়ান্টাম কম্পিউটার একই সময়ে অসংখ্য গণনা করতে পারে, যা সাধারণ কম্পিউটারের জন্য অসম্ভব।
কীভাবে কাজ করে কোয়ান্টাম কম্পিউটার?
কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মূল ভিত্তি দুটি বিজ্ঞানসম্মত ধারণার ওপর ভিত্তি করে তৈরি:
1. সুপারপজিশন: সাধারণ কম্পিউটারের বিট হয় ০ বা ১ হয়, কিন্তু একটি কিউবিট একইসঙ্গে ০ এবং ১ উভয় অবস্থায় থাকতে পারে। এর ফলে কোয়ান্টাম কম্পিউটার অনেক বেশি হিসাব একসঙ্গে করতে পারে।
2. এনট্যাংলমেন্ট (Entanglement): দুই বা ততোধিক কিউবিট এমনভাবে যুক্ত থাকে যে, একটির অবস্থার পরিবর্তন অন্যগুলোর অবস্থাকেও সাথে সাথে পরিবর্তন করতে পারে, তা তারা একে অপর থেকে কত দূরে আছে, তা নির্বিশেষে! এর ফলে তথ্য বিনিময় ও প্রসেসিং অনেক দ্রুত হয়।
কোয়ান্টাম কম্পিউটারের শক্তি কতটা?
একটি সাধারণ সুপারকম্পিউটার যে কাজ করতে কয়েক হাজার বছর সময় নেবে, একটি শক্তিশালী কোয়ান্টাম কম্পিউটার তা মাত্র কয়েক মিনিটে সমাধান করতে পারে!
উদাহরণস্বরূপ, ২০১৯ সালে Google দাবি করে যে তারা একটি ৫৩ কিউবিটের কোয়ান্টাম কম্পিউটার দিয়ে এমন একটি গণনা করেছে, যা বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সুপারকম্পিউটারও ১০, ০০০ বছরে শেষ করতে পারবে না! এটাকে বলে "কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসি"।
কোয়ান্টাম কম্পিউটারের ব্যবহার
১. ক্রিপ্টোগ্রাফি: বর্তমান এনক্রিপশন পদ্ধতিগুলো কোয়ান্টাম কম্পিউটারের কাছে অকেজো হয়ে যাবে! তবে বিজ্ঞানীরা কোয়ান্টাম-সুরক্ষিত এনক্রিপশন পদ্ধতি নিয়েও কাজ করছেন।
২. ওষুধ আবিষ্কার: জটিল রাসায়নিক বিক্রিয়া ও নতুন ওষুধের মডেলিং করা যাবে দ্রুততম সময়ে।
3. মহাকাশ গবেষণা: মহাবিশ্বের জটিল গাণিতিক সমস্যাগুলোর সমাধানে কোয়ান্টাম কম্পিউটার ব্যবহার করা যাবে।
4. এআই ও মেশিন লার্নিং: কোয়ান্টাম কম্পিউটার আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে।
কোয়ান্টাম কম্পিউটারের চ্যালেঞ্জ
এখনো কোয়ান্টাম কম্পিউটার বাণিজ্যিকভাবে সহজলভ্য হয়নি। কারণ:
তাপমাত্রা সমস্যা: কোয়ান্টাম কম্পিউটারকে প্রায় শূন্য কেলভিন (-২৭৩°C) তাপমাত্রায় রাখতে হয়!
অস্থিতিশীলতা: কিউবিটের অবস্থা খুব দ্রুত পরিবর্তিত হয়, যা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।
মহাকাশীয় ব্যয়: এখন পর্যন্ত তৈরি হওয়া কোয়ান্টাম কম্পিউটারগুলোর দাম কয়েক বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত হতে পারে!
শেষ কথা
কোয়ান্টাম কম্পিউটিং প্রযুক্তি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে, কিন্তু এটি ভবিষ্যতে কম্পিউটিং জগতে বিপ্লব আনবে! সাধারণ কম্পিউটারের সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে কোয়ান্টাম কম্পিউটার একদিন বিজ্ঞান, চিকিৎসা, নিরাপত্তা ও মহাকাশ গবেষণার সবক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
আমি জামিউল হক। , Rangpur। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 3 সপ্তাহ 4 দিন যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 3 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
টেকটিউনসকে ভালবাসি।টেকটিউনস থেকে অনেক ভাল ভাল জিনিস শিখতে পারছি।ধন্যবাদ টেকটিউনসকে। আমার ব্লোগ- https://jamiulhaque1.blogspot.com/ ইউটিউব চ্যানেল- https://www.youtube.com/channel/UCmX9y8x3UU9dwMV1mnlptBw ফেসবুক- https://web.facebook.com/profile.php?id=61555185245228