সেমিকন্ডাক্টরের ইতিহাস আধুনিক প্রযুক্তির ভিত্তি স্থাপনে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। সেমিকন্ডাক্টর এমন একধরনের পদার্থ যা বৈদ্যুতিক পরিবাহিতার ক্ষেত্রে পরিবাহী (কনডাক্টর) এবং অপরিবাহী (ইনসুলেটর)-এর মধ্যবর্তী অবস্থানে থাকে। এই বৈশিষ্ট্যের কারণেই সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তি আধুনিক ইলেকট্রনিক্স, যোগাযোগ, এবং কম্পিউটিংয়ের মেরুদণ্ডে পরিণত হয়েছে।
সেমিকন্ডাক্টরের ইতিহাস শুরু হয় ১৮৩৩ সালে, যখন মাইকেল ফ্যারাডে সিলভার সালফাইডের বিদ্যুৎ পরিবাহিতা তাপমাত্রার সাথে পরিবর্তন হয় তা আবিষ্কার করেন। এটি ছিল আধুনিক সেমিকন্ডাক্টর গবেষণার প্রথম ধাপ। ১৮৭৪ সালে জার্মান বিজ্ঞানী কার্ল ফার্দিনান্ড ব্রাউন সেমিকন্ডাক্টরের একমুখী পরিবাহিতা আবিষ্কার করেন।
সেমিকন্ডাক্টর ডিভাইসের প্রথম প্রয়োগ ছিল ১৯০৪ সালে, যখন জন আমব্রোজ ফ্লেমিং থার্মায়নিক ডায়োড উদ্ভাবন করেন। এর পরবর্তী সময়ে ১৯২০-৩০-এর দিকে সেমিকন্ডাক্টরের উপর আরও গবেষণা শুরু হয়।
১৯৪৭ সাল ছিল সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় বছর। উইলিয়াম শকলে, জন বার্ডিন এবং ওয়াল্টার ব্রাটেইন বেল ট্রানজিস্টর আবিষ্কার করেন। ট্রানজিস্টরের এই উদ্ভাবন আধুনিক ইলেকট্রনিক্সের ভিত্তি তৈরি করে এবং এটি সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তিতে এক বিপ্লব সৃষ্টি করে।
১৯৫০-এর দশকে সেমিকন্ডাক্টরের বাণিজ্যিকীকরণ শুরু হয়। টেক্সাস ইনস্ট্রুমেন্টস এবং ফেয়ারচাইল্ড সেমিকন্ডাক্টরের মতো কোম্পানিগুলো এই প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং উৎপাদনে নেতৃত্ব দেয়।
১৯৫৮ সালে জ্যাক কিলবি এবং রবার্ট নয়েস আইসি উদ্ভাবন করেন। আইসি হলো একাধিক ট্রানজিস্টরকে একটি ছোট চিপে একত্রিত করার পদ্ধতি, যা কম্পিউটার এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইসকে ছোট ও শক্তিশালী করেছে।
সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে সিলিকনের আগমন একটি যুগান্তকারী ঘটনা। সিলিকন তার সাশ্রয়ী মূল্য, সহজলভ্যতা এবং কার্যক্ষমতার জন্য সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনের প্রধান উপাদানে পরিণত হয়।
১৯৭০-এর দশকে মাইক্রোপ্রসেসরের আবির্ভাব সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তিকে আরও একটি উচ্চতায় নিয়ে যায়। ইনটেল ১৯৭১ সালে প্রথম বাণিজ্যিক মাইক্রোপ্রসেসর ৪০০৪ বাজারে আনে। এটি কম্পিউটারের মস্তিষ্ক হিসেবে কাজ করত।
বর্তমান যুগে সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তি শুধু কম্পিউটার বা মোবাইল ফোনেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), ইন্টারনেট অব থিংস (IoT), এবং স্বয়ংচালিত গাড়ি পর্যন্ত বিস্তৃত। ৫জি প্রযুক্তি, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, এবং সৌরশক্তি উৎপাদনেও সেমিকন্ডাক্টরের ভূমিকা অপরিসীম।
সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত উন্নত হচ্ছে। বর্তমানে গবেষকরা ন্যানোস্কেল প্রযুক্তি, জৈব সেমিকন্ডাক্টর, এবং ফ্লেক্সিবল ইলেকট্রনিক্সের উপর কাজ করছেন। কোয়ান্টাম ডটস, গ্রাফিন, এবং নতুন ধরনের উপাদান ব্যবহার করে সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের আরও উন্নয়ন ঘটানোর প্রচেষ্টা চলছে।
সেমিকন্ডাক্টরের ইতিহাস শুধু প্রযুক্তির অগ্রগতি নয়, এটি মানবসভ্যতার উন্নতির প্রতিচ্ছবি। এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এক অনন্য ভূমিকা পালন করছে। ভবিষ্যতে সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে আরও সহজ, স্মার্ট এবং টেকসই করে তুলবে।
প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন আপডেট পেতে ভিজিট করতে পারেন প্রযুক্তি - এন্টর্ক
আমি কাওসার মাতুব্বর। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 3 মাস 3 সপ্তাহ যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 2 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।