এক ছিল হাঁস। সেই হাঁস একদিন হয়ে গেল 'হাঁসজারু'। বক আর কচ্ছপ মিলে হয়ে গেল 'বকচ্ছপ'। তিমি আর হাতি মিলে হয়ে গেল হাতিমি। হাতিমির হয়েছে দারুণ জ্বালা। কোথায় যাবে ঠিক করতে পারছে না জঙ্গলে নাকি জলে? আজব এই প্রাণীগুলোকে চেনা চেনা লাগছে? লাগবেই তো। এগুলো তো সুকুমার রায়ের বানানো। ছড়াটা মনে আছে?
হাঁস ছিল, সজারু (ব্যাকরণ মানি না),
হয়ে গেল 'হাঁসজারু' কেমনে তা জানি না।
বক কহে কচ্ছপে-'বাহবা কী ফুর্তি!
অতি খাসা আমাদের বকচ্ছপ মূর্তি।'
টিয়ামুখো গিরগিটি মনে ভারি শঙ্কা-
পোকা ছেড়ে শেষে কিগো খাবে কাঁচা লঙ্কা?
ছাগলের পেটে ছিল না জানি কি ফন্দি,
চাপিল বিছার ঘাড়ে, ধড়ে মুড়ো সন্ধি!
জিরাফের সাধ নাই মাঠে ঘাটে ঘুরিতে,
ফড়িঙের ঢং ধরি' সেও চায় উড়িতে।
গরু বলে 'আমারেও ধরিল কি ও রোগে?
মোর পিছে লাগে কেন হতভাগা মোরগে?'
হাতিমির দশা দেখ,_তিমি ভাবে জলে যাই,
হাতি বলে, 'এই বেলা জঙ্গলে চল ভাই।'
সিংহের শিং নেই, এই তার কষ্ট-
হরিণের সাথে মিলে শিং হল পষ্ট।
ছড়ার নাম 'খিচুড়ি'। আর ছড়াটা আছে বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ ননসেন্স ছড়ার বই 'আবোলতাবোল'-এ। সত্যিই তো, ভাবনাগুলো কেমন আবোলতাবোল। আর যে সময় তিনি এ ছড়াগুলো লিখেছেন তখন এমন আবোলতাবোল ভাবনা আর কেউ ভাবতে পারেননি। শুনলে অবাক হবেন, ১৮৮৭ সালের ৩০ অক্টোবর জন্ম নেওয়া সুকুমার রায়ের মতো আবোলতাবোল ভাবনা এ যুগের কিছু বিজ্ঞানী কিন্তু ঠিকই ভেবেছেন। ওই আবোলতাবোল ভাবনা থেকে জন্ম নিয়েছে হাঁসজারু আর হাতিমির মতো কিছু আজব প্রাণী।
লাইগারের কথাই ধরুন। লাইগারের বাবা সিংহ আর মা বাঘ। লায়ন আর টাইগার মিলে লাইগার। অনেক দেশেই লাইগার আছে। লাইগারের ঠিক বিপরীত আরেক ধরনের প্রাণীরও জন্ম দিতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা। সেটা হচ্ছে টাইগন। টাইগনের বাবা বাঘ আর মা সিংহ।
টাইগনের চেয়ে আকারে লাইগার বড়। দানব সিংহের মতো। লম্বায় একেকটা লাইগার নাক থেকে লেজ পর্যন্ত ১০ ফুট, আর ওজন সাড়ে চার শ কেজিরও বেশি হয়। মায়ামি আর দক্ষিণ কোরিয়ার কৃত্রিম প্রজননকেন্দ্রে লাইগারের দেখা পাওয়া যাবে।
এটি হারকিউলিস- সবচেয়ে বড় লাইগার- আছে মায়ামিতে। তবে আকার আর ওজন খুব বেশি বলে বন-জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে পারবে না বেচারা লাইগাররা।
উট তো আপনারা দেখেছেন। লামা দেখেছেন? দক্ষিণ আমেরিকার এক ধরনের প্রাণী। বাবা উট (ক্যামেল) আর মা লামার ছানা হচ্ছে কামা।
১৯৯৮ সালের ১৪ জানুয়ারি দুবাইয়ে জন্ম হয় প্রথম কামার। আজব এই প্রাণীর উটের মতো শক্তপোক্ত লম্বা পা। পা দেখে মনে হবে উট। কিন্তু উটের মতো কুঁজ নেই। আবার গাজুড়ে লামার মতো পশম। এরা ঘাস ও লতা-গুল্ম খায়। আবার পানি ছাড়া টিকে থাকতে পারে অনেক দিন। ঠিক বাপের মতো।
গ্রিজলি ভালুক আর মেরু ভালুকের ছানার নাম গ্রোলার ভালুক।
তবে এই জাতের ভালুকের জন্ম কোনো গবেষণাগারে হয়নি। ২০০৬ সালে ডিএনএ পরীক্ষা করে কানাডার কাছাকাছি উত্তর মেরুর ব্যাংকস আইল্যান্ডে গ্রোলার ভালুকের অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত বিজ্ঞানীরা।
ছাগলের গায়ে যদি ভেড়ার মতো পশম থাকে, তাহলে কেমন দেখাবে? খুব আজব লাগবে। এমন আজব প্রাণীও কিন্তু আছে। ওদের নাম- গোট মানে ছাগল আর শিপ মানে ভেড়া- দুয়ে মিলে গিপ।
সুকুমার রায়ের ছড়ায় হাতি আর তিমি মিলে হয়েছিল 'হাতিমি'। এ যুগে তিমি (হোয়েল) আর ডলফিন মিলে হয়েছে 'হোলফিন'।
হোলফিনের বাবা আটলান্টিকের খুনে তিমি বা কিলার হোয়েল আর মা বটল নোজ ডলফিন বা বোতলনাকের ডলফিন। তিমি আর ডলফিনের মিলিত বৈশিষ্ট্য দেখা যায় হোলফিনে। যেমন খুনে তিমির দাঁত ৪৪টা, আর ডলফিনের ৮৮টা। হোলফিনের ৬৬টা। হাওয়াই দ্বীপের সি লাইফ পার্কে আছে কাওয়াইলি কাই নামের একটা হোলফিন। ডলফিনের মতো খেলা দেখায় সে।
ঘোড়া পোষ মানে, কিন্তু জেব্রা? দু-একটা ব্যতিক্রম ছাড়া জেব্রাদের পোষ মানানো যায় না। একেবারেই বুনো প্রাণী। জেব্রা আর ঘোড়া মিলে হয়েছে জেব্রয়ডস। জেব্রয়ডসের মতোই আরেক আজব প্রাণী জাঙ্কি।
জাঙ্কির বাবা জেব্রা আর মা গাধা। জেব্রয়ডস আর জাঙ্কিরা কোনো কাজের না হলেও দেখতে কিন্তু খারাপ না।
আফ্রিকার বড় কানওয়ালা বুনো বিড়াল আর পোষা বিড়াল মিলে জন্ম হয়েছে সাভানা বিড়ালের।
আন্তর্জাতিক বিড়াল সমিতিও এদের বিড়াল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আজব এই বিড়াল সাধারণ বিড়ালের চেয়েও বেশি প্রভুভক্ত। অনেকটা কুকুরের মতো। সার্কাসেও এসব বিড়াল নানা খেলা দেখায়। আর এ জন্যই প্রাণী ব্যবসায়ীদের কাছে এসব বিড়ালের কদর অনেক।
ইউরোপ আর আমেরিকায় বাইসন নামের এক ধরনের বুনো ষাঁড় আছে। এই বুনো ষাঁড় আর গরু মিলে জন্ম নিয়েছে নতুন প্রাণী বিফালো। মানে বিফ আর বাফেলো মিলে বিফালো।
লিওপন নামে প্রাণীর নাম শুনেছেন? এরাও আজব। লিওপনের বাবা চিতা আর মা সিংহ। লিওপনের মাথা সিংহের মতো, আর শরীরের বাকি অংশ চিতার মতো দেখতে।
দলিল-দস্তাবেজ ঘেঁটে প্রথম লিওপনের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল ১৯১০ সালে ভারতের কলাপুরে। আঠারো শতকের মাঝামাঝি থেকেই এসব প্রাণী নিয়ে গবেষণা শুরু হয়।
বিফালো, টাইগন, কয়ডগ (কয়োট ও কুকুর), পুমাপার্ড (পুমা ও লেপার্ড), ইয়াকোসহ (ইয়াক ও কাউ) আরো কত রকমের আজব প্রাণী যে আছে দুনিয়ায়! আজব প্রাণী নিয়ে বিজ্ঞানীদের গবেষণা কখনো থেমে থাকবে না। চলতেই থাকবে।
'হাঁসজারু', 'বকচ্ছপ' আর 'হাতিমি'দের দেখাও মিলতে পারে সত্যি সত্যি। সুকুমার রায়ের এসব খিচুড়ি প্রাণী তখন আর 'আবোলতাবোল' পাতায় নয়, সত্যিকারের প্রাণী হয়েই ঘোরাফেরা করবে আমাদের আশপাশে।
মূল লেখা- কালের কন্ঠ
ছবি- ইন্টারনেট
আমি তাহমিদুল ইসলাম তন্ময়। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 24 টি টিউন ও 492 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
ভাই ব্যাপক……হেভী লাগল।