আসসালামুয়ালাইকুম টেকটিউনবাসী। আশাকরি সকলে ভালো আছেন। আপনারা হয়তো জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পর্কে অবহিত আছেন। আজকের এই টিউনে আমরা জানব, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। এই জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং আসলে কী? কে এই শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন? কীভাবে ডিএনএ প্রযুক্তির সূত্রপাত হয়? কোন কোম্পানি এই প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে সর্বপ্রথম অর্থনৈতিক সাফল্য পায়? এরকম নানান প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আজকের এই টিউনটি। তো চলুন দেরি না করে শুরু করা যাক।
যে কলাকৌশল কাজে লাগিয়ে বা যে পদ্ধতি অবলম্বন করে কোনো জীবের জেনেটিক বস্তুর (মূলত ডিএনএ) রাসায়নিক গঠন পরিবর্তন করে এই পরিবর্তনকৃত জিন অন্য কোনো জীবে প্রতিস্থাপন করা হয়, যার ফলে ওই জীবের বৈশিষ্ট্য বা ফিনোটাইপ পরিবর্তিত হয়ে যায়, তাকে বলা হচ্ছে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বা বাংলায় জিন প্রকৌশল। অনেকেই বলবেন, এত বড় সংজ্ঞা মনে রাখব কী করে? আসলে এটা মুখস্ত করার জিনিস নয়। বুঝতে পারলে নিজেরাই নিজেদের মতো করে বলতে পারবেন।
আমরা সকলেই জানি যে, আমাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ধারণ এবং বহন করে ডিএনএ। তো এই ডিএনএ এর মধ্যে ভালো এবং খারাপ ২টা বৈশিষ্ট্যই বিদ্যমান থাকে। ফলে আমরা যদি উন্নত মানের কোনো উদ্ভিদ বা প্রাণী উৎপাদন করতে চাই, তবে তাদের মধ্যে ওই ২টা বৈশিষ্ট্যই প্রবেশ করবে। কিন্তু ডিএনএ রিকম্বিনেন্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করলে এটা হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। কারণ, কাঙ্ক্ষিত নতুন বৈশিষ্ট্য সৃষ্টির জন্য কোনো জীবের ডিএনএ এর পরিবর্তন করার ঘটনাকেই ডিএনএ রিকম্বিনেন্ট প্রযুক্তি বলা হয়। আসলে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং আর ডিএনএ রিকম্বিনেন্ট প্রযুক্তি মূলত সমার্থক বিষয়।
এবার আসি এই শব্দটি তথা জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং শব্দটি সর্বপ্রথম কে ব্যবহার করেন, তা নিয়ে। এটা আজ থেকে প্রায় ৭১ বছর আগের কথা। সালটা ছিল ১৯৫১ সাল। বুঝতেই পারছেন বাংলাদেশ তখন বাংলাদেশ ছিল না। ভাষা আন্দোলনের আগের বছর এটা। তো তখন জ্যাক উইলিয়ামসন নামে একজন বিজ্ঞান কথাসাহিত্যিক (যাকে প্রায় সায়েন্স ফিকশনের ডিন বলা হয়) তাঁর বিখ্যাত পুস্তকে এই শব্দটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন। পুস্তকটির নাম হচ্ছে ড্রাগন্স আইল্যান্ড।
এই সুন্দর আর যুগোপযোগী প্রুযুক্তির জনক কে, তা জানতে নিশ্চয়ই ইচ্ছে হচ্ছে? আসলে বইয়ার, জ্যাকসন, সাইমন এবং বার্জ এই পদ্ধতি বা প্রযুক্তি আবিষ্কার করেন। সালটি হচ্ছে ১৯৭২ সাল। মুক্তিযুদ্ধের ঠিক পরের বছর। তবে এদের মধ্য থেকে পল বার্জকে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর জনক বলা হয়। কিন্তু কেন? কারণ, ১৯৭২ সালে তিনিই প্রথম বানরের দুটি ভাইরাসের ডিএনএ এর মধ্যে সংযোগ ঘটিয়ে রিকম্বিনেন্ট ডিএনএ অণু তৈরি করেন। ভাইরাস দুটির নাম ছিল SV40 ও Lambda Virus।
আমরা জানলাম জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে জীবের কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্য অন্য জীবে স্থানান্তর হয়। তো এভাবে জিন স্থানান্তর করে বা জিনোমের পরিবর্তন ঘটিয়ে যে জীব উৎপাদন করা হয় তাকে জেনেটিকালি মোডিফাইড অরগানিজম বা সংক্ষেপে GMO বলে। একে GEO (জেনেটিকালি ইঞ্জিনিয়ার্ড অরগানিজম) বা TO (ট্রান্সজেনিক অরগানিজম) ইত্যাদি নামেও চিহ্নিত করা হয়।
পৃথিবীর প্রথম GEO বা GMO বা TO হলো GM ব্যাকটেরিয়া। ১৯৭৩ সালে এটি সর্বপ্রথম আবিষ্কার করা হয়।
এরপরের বছর, তথা ১৯৭৪ সালে পৃথিবীর সর্বপ্রথম ট্রান্সজেনিক প্রাণী আবিষ্কৃত হয়। প্রাণীটি হলো ইঁদুর। সাধারণ ইঁদুর নয় কিন্তু। এটি GM ইঁদুর।
এবার তাহলে ওই কোম্পানির কথায় আসা যাক। ১৮৭৬ সালে কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কোম্পানিটির নাম এলি লিলি এন্ড কোম্পানি। এটি একটি আমেরিকান ফার্মাসিউটিকাল কোম্পানি। এর সদর দপ্তর ইন্ডিয়ানাপলিস, ইন্ডিয়ানাতে। এটি প্রায় ১২৫টি দেশে তাদের পণ্য বিক্রি করে। তো জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং আবিষ্কার হওয়ার ১০ বছর পরের কথা। ১৯৮২ সালে এই কোম্পানি উক্ত প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে প্রচুর পরিমাণে ইনসুলিন তৈরি করে। পরে তা বাজারজাত করে অনেক অর্থ উপার্জন করে। এভাবেই রিকম্বিনেন্ট ডিএনএ প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক সাফল্যের যাত্রা শুরু হয়।
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে চাইলে টিউমেন্ট করতে পারেন। আর অবশ্যই আপনাদের কেমন লাগলো আজকের এই টিউনটি তা টিউমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না যেন। ভালো লাগলে জোস দিন। আর এরকম নিত্য নতুন টিউন পেতে উপরের টিউনার প্রোফাইলটি ফলো করে রাখুন। ধন্যবাদ সকলকে।
আমি মো মিরাজ ইসলাম। ১ম বর্ষ, ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ, ঠাকুরগাঁও। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 2 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 26 টি টিউন ও 25 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 5 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 7 টিউনারকে ফলো করি।
আমি মোঃ মিরাজ ইসলাম। আমি আর্টিকেল লিখতে ও পড়তে ভালোবাসি। এছাড়া ইউটিউবে ভিডিও কন্টেন্ট তৈরিও করি। আমি টেকটিউনসে টিউন লিখে আয় করার জন্য একাউন্ট ক্রিয়েট করেছি। ধন্যবাদ।