আসসালামুয়ালাইকুম টেকটিউনবাসী। আশাকরি সকলে ভালো আছেন। আপনারা কি জানেন, Sven Jaschen কে ছিলেন? কেনই বা তাকে আটক করা হয়েছিল? আসলে ইনি ছিলেন দুটি কম্পিউটার ভাইরাসের স্রষ্টা। স্যাসার আর নেটস্কাই নামে দুটি কম্পিউটার ভাইরাসের স্রষ্টা ছিলেন তিনি। জানলে অবাক হবেন যে, তিনি মাত্র ১৭ বছর বয়সে এ দুটি ভাইরাস তৈরি করেন। ভাইরাস দুটির কার্যক্রম পুরোই আলাদা। তবে প্রশ্ন হতে পারে, কার্যক্রম আলাদা হলে পুলিশ তাকে কী করে শনাক্ত করল? দুটি আলাদা আলাদা ভাইরাসের মালিক যে একজনই, তা পুলিশ বুঝল কী করে? আসলে এখানে পুলিশের থেকে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের ভূমিকা বেশি। তারাই মূলত এই মূল হোতাকে চিহ্নিত করতে পেরেছিল।
তো কথা না বাড়িয়ে চলুন জেনে আসি এ সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু তথ্য।
প্রথমে Sven Jaschen সম্পর্কে জেনে আসি।
ইউরোপ মহাদেশের নাম তো প্রায় সকলে কমবেশি জানেন। এই ইউরোপের একটি দেশ জার্মানি। মধ্য ইউরোপের এটি একটি বড় রাষ্ট্র। এটি ইউরোপের অন্যতম প্রধান শিল্পোন্নত দেশ। মোট ১৬টি রাজ্য নিয়ে এটি সংযুক্ত ইউনিয়ন গঠন করেছে। এর পূর্ব সীমান্তে পোল্যান্ড আর চেক প্রজাতন্ত্র অবস্থিত। উত্তর প্রান্তে উত্তর সাগর আর বাল্টিক সাগর বিদ্যমান। পশ্চিমে ফ্রান্স, বেলজিয়াম আর নেদারল্যান্ড অবস্থিত এবং দক্ষিণ সীমান্তে অস্ট্রিয়া আর সুইজারল্যান্ড অবস্থিত। তো এই যে জার্মানি দেশ, এই দেশের এক কিশোর হলেন Sven Jaschen। এই ঘটনা যখনকার, তখন তার বয়স মাত্র ১৭ বছর। অর্থাৎ বর্তমানে তার বয়স ৩৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে।
স্যাসার ভাইরাসটি অন্যান্য ভাইরাসের মতো ইমেইলের মাধ্যমে ছড়াতো না। এর বিশেষত্ব ছিল অন্য কিছু। এটি অন্য প্রক্রিয়ায় ছড়িয়ে পড়ত। এটি মূলত সিস্টেমের দুর্বলতা খুঁজে বের করতে পারদর্শী ছিল। প্রথমে এটি একটি কম্পিউটারকে তার শিকার বানিয়ে ফেলত। পরে সেই কম্পিউটারের মাধ্যমে অন্যান্য সিস্টেমের দুর্বলতা খুঁজে বের করে ফেলত। এরপর ওই যে দুর্বল সিস্টেম খুঁজে পেত, তাকে বাধ্য করত স্যাসার প্রোগ্রামকে ডাউনলোড করতে। ফলে আরও একটি শিকার পেয়ে যেত স্যাসার। এভাবেই এক কম্পিউটার থেকে অনেক কম্পিউটারে মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ত এই স্যাসার। আর এটি একবার আক্রমণ করে বসলে, কম্পিউটারের পাওয়ার ক্যাবল বন্ধ করা ছাড়া একে বন্ধ করার আর কোনো উপায় ছিল না।
নেটস্কাই আবার আগের ভাইরাসগুলোর মতোই ইমেইলের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ত। তাছাড়া এটি উইন্ডোজের মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়তে সক্ষম ছিল। এটি শিকার খোঁজার কাজে ইমেইলের ঠিকানাগুলোকে ব্যবহার করত। পরে তা স্পুফ করে আবার নতুন শিকার খুঁজতে লাগতো। তবে অবাক করা বিষয় হচ্ছে যে, এটি ২২০১৬ বাইটের একটি এটাচমেন্টের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ত।
এখন অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে, এই দুটি ভাইরাসের কার্যক্রম ভিন্ন হওয়া সত্যেও পুলিশ কি করে বুঝল যে, ভাইরাস দুটির মূল হোতা একজনই? আসলে ভাইরাস দুটির কার্যক্রম ভিন্ন হলেও এদের কোডিং এ যথেষ্ট মিল বিদ্যমান। এই মিল খুঁজে পাওয়া আমাদের কাজ নয়। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা ভালোমতো খুঁজে বের করেছে যে, কোডিং এর ধরন দুটি ভাইরাসের একই হওয়ায়, যতই দুটি ভাইরাসের প্রোগ্রাম কার্যপ্রণালী ভিন্ন হোক না কেন, আসলে এদের পিছনে কলকাঠি নাড়ছেন একজনই। অনেক গবেষণা আর তদন্ত চালিয়ে পুলিশ জানতে পারে যে, Sven Jaschen নামক জার্মান কিশোর এই দুটি ভাইরাস তৈরি করেছে। ভাবা যায়, কত দক্ষ হলে এমন ধূর্ততার কাজ করা যায়!
এই দুটি ভাইরাসের ফলে কত ক্ষতি হয়েছিল তা সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায় নি।
তাহলে নিশ্চয় বুঝতে পারছেন যে, কম্পিউটার ভাইরাস তৈরির ক্ষেত্রে কিশোররা কিন্তু অনেক এক্সপার্ট! বয়স এখানে কোনো ম্যাটার করে না। তবে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরাও কম কীসের? তারা বুদ্ধি খাঁটিয়ে কিন্তু এই ভাইরাস দুটির মূল হোতাকে ধরিয়ে দিতে পেরেছেন। এ থেকে কিন্তু একটা শিক্ষা অবশ্যই পাওয়া যায়। আর তা হচ্ছে, অপরাধী যতই চালাক হোক না কেন, একদিন না একদিন সে ধরা পড়বেই!
টিউনটি কেমন লাগলো তা টিউমেন্ট করে জানিয়ে দিতে পারেন। আর এরকম নিত্য নতুন টিউন পেতে আমাকে ফলো করুন। ধন্যবাদ সকলকে।
আমি মো মিরাজ ইসলাম। ১ম বর্ষ, ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ, ঠাকুরগাঁও। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 2 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 26 টি টিউন ও 25 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 5 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 7 টিউনারকে ফলো করি।
আমি মোঃ মিরাজ ইসলাম। আমি আর্টিকেল লিখতে ও পড়তে ভালোবাসি। এছাড়া ইউটিউবে ভিডিও কন্টেন্ট তৈরিও করি। আমি টেকটিউনসে টিউন লিখে আয় করার জন্য একাউন্ট ক্রিয়েট করেছি। ধন্যবাদ।