আসসালামুয়ালাইকুম টেকটিউনবাসী। আশাকরি সকলে ভালো আছেন। কম্পিউটার ভাইরাসের নাম শুনেন নি এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কিন্তু কাউকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, আপনি ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ানক কিছু কম্পিউটার ভাইরাসের নাম বলেন, তবে অনেকেই তা বলতে পারবেন না। তো চিন্তার কোনো কারণ নেই। এই টিউনটি পড়লে আপনারা ভয়ানক কম্পিউটার ভাইরাস সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাবেন। তবে এই টিউনটিতে আমি আপনাদের সামনে ইতিহাসের ভয়ানক কম্পিউটার ভাইরাসগুলোর মধ্য থেকে কেবল ১৯৯৯ সালের একটি ভয়ানক ভাইরাস নিয়ে হাজির হয়েছি। অনেকেই হয়তো বুঝতে পেরেছেন, আমি কোন ভাইরাসের কথা বলতেছি। তো চলুন দেরি না করে শুরু করা যাক।
১৯৯৯ সালের ২৬শে এপ্রিলের ঘটনা কে না জানেন? এই দিনে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের প্রায় লক্ষ লক্ষ কম্পিউটার ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়েছিল। এই ভাইরাসটির নাম ছিল CIH বা চেরনোবিল। এই ভাইরাসটি এক মুহূর্তেই প্রায় লাখ লাখ কম্পিউটার অচল করে দিয়েছিল। আপনারা কি জানেন এই ভাইরাসের প্রস্তুতকারক কে? জানলে অবাক হবেন যে, এই ভাইরাসের কারিগর হলো একজন ছাত্র। তার নাম “চেন ইং হাউ”। সে তাইওয়ানের তাতুং ইউনিভার্সিটির ছাত্র। তার নামানুসারেই কিন্তু আমরা সেই ভাইরাসটিকে CIH Virus বলতেছি। কারণ, CIH এর পূর্ণরূপ হলো C=Chen, I=Ing, H=hau।
তবে এর আরেক নাম চেরনোবিল কেন বলা হচ্ছে, আপনারা কি জানেন? আসলে ১৯৮৬ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে একটি ভয়ানক পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটে। ওই দেশের চেরনোবিল নামে একটা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ছিল। আর ১৯৮৬ সালের ২৬শে এপ্রিল সেই বিদ্যুৎকেন্দ্রে একটি ভয়ানক বিস্ফোরণ ঘটে। তো ধারণা করা হয় যে, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এর ১৩ তম বার্ষিকীতে তথা ১৯৯৯ সালে ভাইরাসটিকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।
আসলে ১৯৯৮ সালে ওই যে চেন ইং হাউ নামে ছাত্রটি ছিল সে তার ইউনিভার্সিটির ডাটা সিস্টেমকে ক্ষতিসাধন করতে চেয়েছিল। তাই তার চাওয়া অনুযায়ী সে এই ভাইরাস তৈরি করেছিল। সে তাতে সফলও হয়। সে ছাত্র বলে সেই যাত্রায় সে পার পেয়ে যায়। কিন্তু ১৯৯৯ সালে এই ভাইরাসটি ভুলবশত ইন্টারনেটের মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। কিন্তু এই ঘটনাটি ভুলবশত হওয়ার কারণে পরে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।
এই ভাইরাস থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রযুক্তিবিদগণ আগেই সকলকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। তারা বলেছিলেন যে, এই ভাইরাস এমন একটি প্রোগ্রাম যা ২৬শে এপ্রিল এলে অটোমেটিক তার কাজ শুরু করে দেয়। অর্থাৎ, এদিন কোনো ব্যবহারকারী তার কম্পিউটার চালু করলে কম্পিউটারের যেকোনো প্রোগ্রাম CIH ভাইরাসের কোড চালু করে দিবে। আর আপনারা তো জানেনই যে, ভাইরাস কম্পিউটারে আক্রমণ করলে কম্পিউটার হ্যাং মারে। ফলে ওইদিন কম্পিউটারগুলো হ্যাং মেরে দিবে। আর রিস্টার্ট দিলে ব্যবহারকারীদের কম্পিউটারের সব ডাটা একমুহূর্তেই শেষ হয়ে যাবে।
তো প্রযুক্তিবিদগণ ১৯৯৮ সালে বিশ্বব্যাপী সকলকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু তবুও কেন এত কম্পিউটার CIH ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল? উত্তরটা খুবই সহজ। আসলে তখনকার দিনে কিছু দেশ প্রযুক্তিবিদগণের এই কথায় তেমন গুরুত্ব দেয় নি। সেই দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম কিছু দেশের নাম হলো: চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ইত্যাদি। ফলে এসকল দেশ অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
এখন আসি এই ভাইরাসের ফলে কী কী ক্ষতি হয়েছিল, তা নিয়ে। আপনারা জানলে অবাক হবেন যে, এই ভাইরাসের ফলে ক্ষতির পরিমাণ ১ বিলিয়ন ডলার, মানে ১০০ কোটি ডলার। একে টাকায় কনভার্ট করলে কত হবে, তা আপনারাই হিসাব করে দেখতে পারেন। ভাবা যায়, তখনকার দিনে এই টাকার পরিমাণ কত বেশি! তাছাড়া এই ভাইরাসের ফলে অনেক দেশের অনেক তথ্য মুহূর্তেই ডিলেট হয়ে গিয়েছিল। এমনকি অনেক কপিউটার তার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিল। অর্থাৎ, কম্পিউটারগুলো অচল হয়ে পড়েছিল।
আপনারা অনেকেই বলতে পারেন এসময় বাংলাদেশের কি কোনো ক্ষতি হয়েছিল? আসলে তখনকার দিনে বাংলাদেশে গুটিকয়েক কম্পিউটার ছিল। তো সেই সংখ্যক কম্পিউটারের মধ্যে প্রায় ১০ হাজার কম্পিউটার আক্রান্ত হয়েছিল! ভাবা যায়, সংখ্যাটা তখনকার দিনে কত বেশি!
তো আশাকরি সকলে এই CIH ভাইরাস সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন। টিউনটি ভালো লাগলে জোস দিন। আর এরকম নিত্য নতুন টিউন পেতে আমাকে ফলো করতে পারেন।
আপনাদের মূল্যবান মতামত টিউমেন্ট করে জানিয়ে দিন।
আমি মো মিরাজ ইসলাম। ১ম বর্ষ, ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ, ঠাকুরগাঁও। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 2 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 26 টি টিউন ও 25 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 5 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 7 টিউনারকে ফলো করি।
আমি মোঃ মিরাজ ইসলাম। আমি আর্টিকেল লিখতে ও পড়তে ভালোবাসি। এছাড়া ইউটিউবে ভিডিও কন্টেন্ট তৈরিও করি। আমি টেকটিউনসে টিউন লিখে আয় করার জন্য একাউন্ট ক্রিয়েট করেছি। ধন্যবাদ।