আসসালামু আলাইকুম টেকটিউনস কমিউনিটি, কেমন আছেন সবাই? আশা করছি ভাল আছেন। বরাবরেই মত আজকেও চলে এসেছি নতুন টিউন নিয়ে।
ব্লুটুথ হেডফোনের ক্ষেত্রে আপনি হয়তো Noise Cancellation এবং Noise Isolation এই দুটি ওয়ার্ড সম্পর্কে শুনে থাকবেন। এই দুটি বিষয়ই অপ্রয়োজনীয় সাউন্ড যেন কানে প্রবেশ না করে এজন্য ব্যবহৃত হয়। দুটি বিষয় এক কাজ করলেও টেকনিক্যাল ভাবে এদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।
Noise cancellation, অথবা Active Noise Cancellation বা সংক্ষেপে একে বলে ANC, এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে শব্দ তরঙ্গ ব্যবহার করে চারপাশের অপ্রয়োজনীয় শব্দ গুলোকে ব্লক করা হয়। এই ফিচার সমৃদ্ধ হেডফোন গুলো বিল্ড-ইন মাইক্রোফোনের সাহায্যে বাইরের সাউন্ড গুলো গ্রহণ করে তার বিপরীতে শব্দ তরঙ্গ তৈরি করে। বিপরীত শব্দ তরঙ্গ তৈরি করার ফলে দুটি সাউন্ড আমাদের কানে কোন গ্রহণযোগ্য শব্দ হিসেবে আসে না ফলের কোলাহল আমরা শুনতে পাই না। বিশ্বের বড় বড় ব্র্যান্ড যেমন, Bose, Sony, এবং Apple তাদের হেডফোন গুলোতে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করছে।
অন্য দিকে, Noise isolation, এর অন্য নাম Passive Noise cancellation যার মাধ্যমে ফিজিক্যাল কোন ম্যাটারিয়াল দিয়ে সাউন্ড ব্লক করার চেষ্টা করা হয়। যেমন হেডফোনে রাবারের বাড দেয়া, কানের সাথে টাইট করে হেডফোন ফিট করা। আপনি Airpod Pro এর দিকে তাকালেই বুঝতে পারবেন। আলাদা সিলিকন টিপ দেয়া থাকে যার মাধ্যমে গান না বাজলেও বাইরের সাউন্ড কম শুনা যায়।
এই দুটি টেকনোলজি একই সাথে দুর্দান্ত ফলাফল দিতে পারে। যেমন Passive Noise Cancellation থাকার পরেও বাইরের কিছু সাউন্ড কানের মধ্যে যেতে পারে এবং সেটা পুরোপুরি রিমুভ করতে কাজ করতে পারে Active Noise Cancellation। এর উদাহরণ AirPods Pro, অ্যাপলের এই ডিভাইসটিতে একই সাথে সিলিকনের টিপসও রয়েছে এবং ANC ও রয়েছে। বিভিন্ন অডিওবুক এবং পডকাস্ট রয়েছে যেগুলো আসলে এতটা লাউড নয়, সেক্ষেত্রে এই দুই প্রযুক্তি ভাল কাজ করতে পারে।
এটা সত্য যে Noise Isolation কখনোই ANC কে বিট করতে পারবে না। তবে Noise Isolation ক্ষেত্রে ম্যাক্সিমাম ফল পেতে আপনাকে এয়ারবাডের ক্ষেত্রে টিপ গুলো কানের সাইজের সাথে ফিট করে নিতে হবে এবং ওভার এয়ার হেডফোনের ক্ষেত্রে ফোমের শেপ সঠিক ভাবে কান বরাবর ঘুরিয়ে নিতে হবে।
In-ear monitors অথবা IEM বিশেষ ভাবে অডিও প্রফেশনালদের জন্য ডিজাইন করা যা সেরা passive noise isolation নিশ্চিত করে। অডিও প্রফেশনালরা এর টার্গেট কাস্টমার হলেও সাধারণ কাস্টমারদের মধ্যেও এটি বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
কখনো কখনো হাই ভলিউম দিয়ে মিউজিক শুনলে সেটা noise-canceling এর কাজ করে যদি সেই হেডফোনে ভাল Noise Isolation ব্যবস্থা থাকে। আপনার বাজেট যদি টাইট থাকে তাহলে ভাল মানের Noise Isolation হেডফোন ব্যবহার করে, লাউড ভলিউমে মিউজিক দিয়ে Noise Cancellation এর সুবিধা নিতে পারেন। তবে এটা কখনোই রিকোমেন্ডেড নয়।
আপনি যদি কম লাউডে ভাল মিউজিক অভিজ্ঞতা পেতে চান তাহলে ANC প্রযুক্তির বিকল্প নাই।
আমরা সব সময় নতুন প্রযুক্তি এবং ফিচারের পেছনে ছুটি, হয়তো আপনিও ANC হেডফোন কেনার কথা ভাবছেন। তবে আপনার জন্য এই ফিচার আসলেও উপযুক্ত কিনা সেটা আগে যাচাই করে নিতে হবে। ANC নেয়ার আগে কিছু বিষয় আপনাকে বিবেচনায় নেয়া উচিৎ,
প্রথমত আপনার কোন ডিজাইনের হেডফোন পছন্দ? ওপেন এয়ার নাকি এয়ার টিপস। আপনার পছন্দ যদি ওপেন এয়ার হয় তাহলে ANC আপনার জন্য না। ওপেন এয়ার হেডফোন গুলোতে ANC তো থাকবেই না বরং কখনো কখনো হেডফোনের সাউন্ড বাইরের চলে আসতে পারে।
দ্বিতীয়ত, কোন পরিবেশে আপনি হেডফোনটি ব্যবহার করবেন সেটার উপরেও নির্ভর করবে কোন হেডফোন আপনার দরকার। যদি বিজি কোলাহল পূর্ণ এরিয়াতে গান শুনেন যেমন, ক্যাম্পাস, ক্যাফে, বাজার তাহলে AN C প্রয়োজন আর যদি না শান্ত পরিবেশে শুনেন যেমন লাইব্রেরী, ঘর তাহলে নয়েজ ক্যান্সেলিং হেডফোনের প্রয়োজন নাই।
বাজারে এই মুহূর্তে অনেক ব্র্যান্ডের ANC হেডফোন রয়েছে এবং সব গুলোওই দুর্দান্ত মিউজিক অভিজ্ঞতা দেয়। তবে আমার ব্যক্তিগত ভাবে AirPods Pro টা সবচেয়ে বেশি ভাল লাগে। এখানে নয়েজ ক্যান্সেলেশনের পাশাপাশি ট্রান্সপারেসি নামে আরেকটা মুড আছে, এই মুডে বাইরের সাউন্ড আরেকটু লাউড শুনা যায়। ইউজাররা যাতে এক বিষয়ে একঘেয়ে না হয়ে যায় সেজন্যই অ্যাপল এই ফিচারটা দিয়েছে।
তো আজকে এই পর্যন্তই পরবর্তী টিউন পর্যন্ত ভাল থাকুন আল্লাহ হাফেজ।
আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 627 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 118 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।