বন্ধুরা, আজকে আমি আপনাদের সামনে গতির দুইটি ধরন, পর্যায়বৃত্ত ও ঘূর্ণন গতি নিয়ে আলোচনা করতে চলে এসেছি। আমাদের মধ্যে যারা বিজ্ঞানের ছাত্র, তাদের কাছে এসব গতি সম্পর্কে একটা সুস্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার। কারণ, আমাদের বিজ্ঞানের পদার্থবিজ্ঞান নামে যে শাখা তৈরি হয়েছে, তার মূলভিত্তি কিন্তু গতিকে নিয়েই। তাই আমাদের সবারই গতির বিভিন্ন বিষয়ে ধারণা থাকা দরকার।
গতি বিভিন্ন প্রকার রয়েছে। তার মধ্যে পর্যায়বৃত্ত অন্যতম। পর্যায়বৃত্ত গতি কী বা কাকে বলে?
কোনো গতিশীল বস্তুকণার গতি যদি এমন হয় যে, একটি নির্দিষ্ট বিন্দু বা অক্ষকে কেন্দ্র করে একই দিক থেকে পর্যায়ক্রমে তার চারপাশে আবর্তন করে, তবে তাকে পর্যায়বৃত্ত গতি বলে। এখানে লক্ষ্য করলে আমরা ৩টি শর্ত দেখতে পাই। শর্তগুলো হলোঃ
এটা বুঝার জন্য একটা উদাহরণ দেওয়া যাক।
ধরেন, এই পৃথিবীর গতি চিন্তা করে দেখি।
প্রথম শর্ত অনুযায়ী পৃথিবী সূর্য নামক নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। দ্বিতীয় শর্ত অনুযায়ী পৃথিবী সূর্যের চারপাশে পর্যায়ক্রমে আবর্তন করছে। তৃতীয় শর্ত অনুযায়ী পৃথিবী একটি নির্দিষ্ট সময় বিরতিতে তথা ১ বছরে ১ বার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। তাহলে নিশ্চিন্তে আমরা বলতে পারি, পৃথিবীর গতি একটি পর্যায়বৃত্ত গতি।
এবার সাইকেলের চাকার গতি চিন্তা করে দেখি। প্রথম শর্ত অনুযায়ী সাইকেলের চাকা তার মূল বিন্দুকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। দ্বিতীয় শর্ত অনুযায়ী মূল বিন্দুর চারপাশে পর্যায়ক্রমে আবর্তন করছে। তৃতীয় শর্ত অনুযায়ী চাকাটি একটি নির্দিষ্ট সময় বিরতিতে ঘুরতে থাকে। তাহলে এটাও পর্যায়বৃত্ত গতি। কিন্তু পর্যায়বৃত্ত গতির উদাহরণে এটা অনেক সময় থাকে না। কিন্তু কেন?
কারণ, এটা শুধু পর্যায়বৃত্ত গতি নয়, ঘূর্ণন গতিও। এখানকার ৩টি শর্ত বাদে চতুর্থ একটি শর্ত আছে ঘূর্ণন গতির। তা হলো সবসময় মূল বিন্দু থেকে সমান দূরত্ব বজায় রেখে মূল বিন্দুর চারপাশে আবর্তন করলে তাকে ঘূর্ণন গতি বলবে। সাইকেলের চাকা তার মূল বিন্দু থেকে সবসময় সমান দূরত্ব বজায় রেখে ঘুরে বলে একে পর্যায়বৃত্ত গতিরই এক বিশেষ ধরন ঘূর্ণন গতি বলা হয়। তাই এটি ঘূর্ণন গতির উদাহরণ, পর্যায়বৃত্ত গতির উদাহরণে অনেক সময় দেখা যায় না।
কিন্তু, পৃথিবী সূর্যের চারপাশে সবসময় সমান দূরতে আবর্তন করছে না, তাই পৃথিবীর গতি শুধু পর্যায়বৃত্ত গতি, ঘূর্ণন গতি নয়।
এবার আসি হ্যালির ধূমকেতুর বেলায় কোন গতির সৃষ্টি হয় তা নিয়ে। এই ধুমকেতু সূর্যের চারপাশে উপবৃত্তাকার পথে আবর্তন করে। তাই সবসময় দূরত্ব সমান থাকে না। ফলে এটি ঘূর্ণন গতি হতেই পারে না। তবে পর্যায়বৃত্ত গতির উদাহরণ হতে পারে। কেমন করে?
প্রথম শর্ত অনুযায়ী সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরে। দ্বিতীয় শর্ত অনুযায়ী তার চারপাশে পর্যায়ক্রমে আবর্তন করে। তৃতীয় শর্ত অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট সময় বিরতিতে আবর্তন করে। সুতরাং এটি পর্যায়বৃত্ত গতির উদাহরণ।
এবার আসি ঘূর্ণন গতিতে। পর্যায়বৃত্ত গতির ৩ টা শর্ত একই থাকবে। শুধু চতুর্থ একটা শর্ত যোগ হলেই সেটা ঘূর্ণন গতি। তাহলে চলুন দেখে নিই ঘূর্ণন গতি সম্পর্কে তথ্যাদি।
ঘূর্ণন গতি কী? কোনো কিছু ঘুরলেই তাকে ঘূর্ণন গতি বলে। এটা বলা যত সহজ, এর উত্তর কিন্তু তত সহজ নয়। কারণ কী? কারণ তো আছেই। আজকে আমি তোমাদের সামনে ঘূর্ণন গতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। তো চল দেরি না করে শুরু করা যাক।
এটা বুঝার আগেই চলুন ঘূর্ণন গতির সংজ্ঞা দিয়ে দিই।
কোনো গতিশীল বস্তুকণার গতি যদি এমন হয় যে, একটি নির্দিষ্ট বিন্দু বা অক্ষকে কেন্দ্র করে সমান দূরত্ব বজায় রেখে তার চারপাশে আবর্তন করে বা ঘুরে তবে তাকে ঘূর্ণন গতি বলে। এখানে আমরা ৪টি শর্ত দেখতে পাই।
প্রথমে আসি উদাহরণে। ধরেন, আপনি একজন বালক। আপনার কায় একটি চতুর্ভুজাকার বড় মাঠ আছে। এর চারপাশে একটি ফুটপাতের মতো রাস্তা করে দেওয়া হয়েছে। সকালে হাঁটাহাঁটি করার জন্য যাতে মাঠের ভিতরে গিয়ে ঘাসগুলো নষ্ট না হয়, সেজন্য। এখন আপনি সকালে উঠে সাইকেল নিয়ে ওই ফুটপাতের রাস্তায় চলতে শুরু করলেন। ধরেন, আপনি ৫ পাক ঘুরলেন। এই ৫ পাক ঘুরার সময় নিশ্চয়ই আপনার গতির সৃষ্টি হয়েছিল। এখন আপনাকে যদি কেউ জিজ্ঞাসা করে, আপনি কোন গতিতে ঘুরেছন? বা আপনার সাইকেল চালাতে যে গতির সৃষ্টি হয়েছে, তার নাম কী? নিশ্চয়ই আপনি ঘূর্ণন গতি বলবেন না। কিন্তু কেন?
কারণ, কোনো কিছু ঘুরলেই তাকে ঘূর্ণন গতি বলে না। একটি মুল বিন্দু বা অক্ষকে কেন্দ্র করে যখন সমান দূরত্বে তাকে আবর্তন করা হয়, তখনই তাকে ঘূর্ণন গতি বলে।
আপনার উদাহরণে আপনি সাইকেল চালাচ্ছিলেন। আপনার ক্ষেত্রে প্রথম শর্ত অনুযায়ী কেন্দ্র ছিল মাঠের মাঝের একটি বিন্দু। দ্বিতীয় শর্ত অনুযায়ী আপনি সাইকেলসহ গতিশীল ছিলেন। তৃতীয় শর্ত অনুযায়ী আপনি একই দিকে ঘুরতে ছিলেন। কিন্তু চতুর্থ শর্ত অনুযায়ী সমান দূরত্বে ছিলেন না। মাঠের মাঝখান থেকে ফুটপাতের রাস্তার সবদিকে সমান দূরত্ব ছিল না। মাঠের মাঝ থেকে কোণগুলো ছিল সবচেয়ে বেশি দূরত্বের। তাই কখনো কম, কখনো বেশি দূরত্ব আপনি বজায় রেখে মাঠের চারপাশে আবর্তন করেছিলেন। তাই আপনি ঘূর্ণন গতির উদাহরণ হন নি।
কিন্তু, আপনার সাইকেলের চাকাগুলো ঘূর্ণন গতির উদাহরণ হয়েছে। কেমন করে? চলুন জেনে নিই।
আপনার সাইকেলের চাকার ক্ষেত্রে প্রথম শর্ত অনুযায়ী একটি মুল বিন্দু বা কেন্দ্র আছে। দ্বিতীয় শর্ত অনুযায়ী মুল বিন্দুর সাপেক্ষে চাকাটি গতিশীল। তৃতীয় শর্ত অনুযায়ী একই দিকে ঘুরেছে। চতুর্থ শর্ত অনুযায়ী মুল বিন্দু থেকে চাকাটির সবপাশের দূরত্ব সমান।
তাই আপনার সাইকেলের চাকাটি যে ঘুরেছিল, তাতে ঘূর্ণন গতির সৃষ্টি হয়েছিল।
এরকম ফ্যানের গতি, ঘড়ির কাটার গতি, লাটিমের গতি হচ্ছে ঘূর্ণন গতি। কিন্তু, পৃথিবীর গতি ঘূর্ণন গতি নয়। কারণ, সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব সবসময় সমান থাকে না। কখনো বেশি কখনো কম। এটা পর্যায়বৃত্ত গতির উদাহরণ।
তাই বলা যায়, সকল ঘূর্ণন গতি পর্যায়বৃত্ত গতি, কিন্তু সকল পর্যায়বৃত্ত গতি ঘূর্ণন গতি নয়।
তাহলে আজকে এই পর্যন্তই।
ধন্যবাদ সকলকে।
আমি মো মিরাজ ইসলাম। ১ম বর্ষ, ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ, ঠাকুরগাঁও। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 2 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 26 টি টিউন ও 25 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 5 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 7 টিউনারকে ফলো করি।
আমি মোঃ মিরাজ ইসলাম। আমি আর্টিকেল লিখতে ও পড়তে ভালোবাসি। এছাড়া ইউটিউবে ভিডিও কন্টেন্ট তৈরিও করি। আমি টেকটিউনসে টিউন লিখে আয় করার জন্য একাউন্ট ক্রিয়েট করেছি। ধন্যবাদ।