৫ টি বিপদজনক প্রযুক্তি ট্রেন্ড! যা আপনার প্রাইভেসিকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে

প্রকাশিত
জোসস করেছেন
Level 34
সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা

আসসালামু আলাইকুম টেকটিউনস কমিউনিটি, কেমন আছেন সবাই? আশা করছি ভাল আছেন। বরাবরেই মত আজকেও চলে এসেছি নতুন টিউন নিয়ে। আজকে আমরা আলোচনা করব সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে।

বর্তমানে টেকনোলজি যে গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে মনে হয় না খুব তাড়াতাড়ি এটা থামবে। প্রযুক্তির ব্যাপক অগ্রগতি হলেও সব প্রযুক্তি যে ভাল এটা বলার অবকাশ নেই। এমনকি ২০২২ সালে ট্রেন্ডিং কিছু প্রযুক্তি আপনাকে ব্যাপক প্রাইভেসি ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। প্রযুক্তি গুলোই এমন যে আপনি সেগুলো সরাসরি ব্যবহার না করলেও প্রভাবিত হতে পারেন।

হোম এসিস্ট্যান্ট ডিভাইস আমাদের ঘরের কাজকে হয়তো সহজ করেছে। ফেস রিকুইজিশন প্রযুক্তি হয়তো মানুষকে দ্রুত আইডেন্টিফাই করছে তবে এই প্রযুক্তি গুলোর রয়েছে মন্দ দিক। মানুষের জীবনকে সহজ করলেও এই প্রযুক্তি গুলো কখনো কখনো হতে পারে আপনার প্রাইভেসির জন্য হুমকি। যাই হোক এই সমস্ত প্রযুক্তির বিবর্তন আপনি হয়তো থামাতে পারবেন না তবে সেই ক্ষতিকর প্রযুক্তি ট্রেন্ড গুলো জেনে, নিজেকে আসন্ন বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারবেন।

১. হোম এসিস্ট্যান্ট ডিভাইস

সর্ব প্রথম ভোক্তা গ্রেডের হোম এসিস্ট্যান্ট ডিভাইস বাজারে আনে Amazon। ২০১৪ সালে তারা লঞ্চ করে Amazon Echo স্পিকার। এর পর বিভিন্ন বড় বড় টেক কোম্পানি নিজেদের হোম এসিস্ট্যান্ট ডিভাইস বাজারে এনেছে যেমন, গুগলের Google Home, Apple এর HomePod।

যদিও হোম এসিস্ট্যান্ট কে বিগ ডেটা, মেশিন লার্নি এপ্লিকেশন হিসেবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর বিপ্লব হিসেবে ধরা হয়, তবুও ইউজারদের প্রাইভেসি ইস্যুতে এটি বিশেষজ্ঞদের ভাবাচ্ছে। কোম্পানি বেধে এটি নিয়ে বেশ বিতর্কও রয়েছে।

অনেকে বিশেষজ্ঞ বলছে হোম ডিভাইস গুলো ইউজারদের কথাবার্তা রেকর্ড করে, কোম্পানির ক্লাউডে স্থানান্তরিত করে। এজন্য লক ডাউনের দিন গুলোতে গুরুত্বপূর্ণ মিটিং এ হোম এসিস্ট্যান্ট গুলো বন্ধের নির্দেশনাও দেয়া হয়েছিল।

তবে এক দিক থেকে সান্ত্বনা হচ্ছে বর্তমানে হোম এসিস্ট্যান্ট তৈরি করা বড় বড় কোম্পানি যেমন, Amazon, Google, এবং Apple অবশ্যই তাদের লয়্যাল কাস্টমারদের সিকিউরিটির দিক থেকে দুর্বল ডিভাইস দেবে না।

এটাও সত্য সব কোম্পানি গুগল, অ্যাপলের মত সিকিউর ডিভাইস দেবে না। অনুমান করা হচ্ছে ২০২২ সালে প্রায় অর্ধেক বাড়িতে একটা হোম এসিস্ট্যান্ট ডিভাইস থাকবে। কিন্তু সবার পক্ষে ১০০+ ডলার দিয়ে হোম এসিস্ট্যান্ট কেনা সম্ভব হবে না।

তাই ইউজাররা যদি এই হোম এসিস্ট্যান্ট ট্রেন্ডে সাড়া দিয়ে বাজারের কম দামী এবং নিম্ব মানের হোম এসিস্ট্যান্ট নিয়ে আসে, তাহলে তারা বড় ধরনের প্রাইভেসি রিস্কে পড়তে পারে। অন্যান্য IoT ডিভাইসের মত হোম এসিস্ট্যান্টও সিকিউরিটি লিকের কবলে পড়তে পারে যা অনুপ্রবেশকারীদের সুযোগ করে দেবে।

২. অবিশ্বস্ত ফেসিয়াল রিকগনিশন সফটওয়্যার

এক দশক আগেও ফেসিয়াল রিকগনিশন সফটওয়্যারের এত ব্যবহার ছিল না। বর্তমানে এটা মানুষের ধারণাকে বদলে দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। পাসওয়ার্ড ছাড়া ফোন আনলক করা থেকে শুরু করে নিখোঁজ ব্যক্তিদের শনাক্ত করা পর্যন্ত বিভিন্ন কাজে এই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে।

এই প্রযুক্তির মাধ্যমে আদর্শ পরিস্থিতিতে ৯৯.৯ শতাংশ নির্ভুল ফল পাওয়া যায়। ফেসিয়াল রিকগনিশন অ্যাপ পর্যাপ্ত আলো এবং মুখের পরিষ্কার কোণ পেলে ভাল ইমেজ ক্যাপচার করতে পারে। তবে এই ধরনের ইমেজ ক্যাপচার স্বাভাবিক ছবি তুলার মত না।

তবে অপর্যাপ্ত আলোর ফলে নির্ভুলতা মারাত্মকভাবে কমে যেতে পারে। তাছাড়া ফেস মাস্ক এবং ভারী মেকআপ, দাড়ি, চশমা এবং মেডিকেল মাস্ক থাকলেও ফলাফলে সমস্যা হতে পারে।

এখনো ফেসিয়াল রিকগনিশন সফটওয়্যারের আদর্শ ব্যবহার খুঁজে পাওয়া যায় নি। একই সাথে এটা উদ্বেগের কারণও হতে পারে, নিম্ন মানের সফটওয়্যার ব্যবহারে এটি ভুল মানুষকে শনাক্ত করে ফেলতে পারে। অপরাধ মূলক কাজের অনুসদ্ধানে সাধারণ মানুষ অযথা হয়রানীর শিকার হতে পারে। অপরাধীরা মুখের সামান্য পরিবর্তন করেই পাড় পেয়ে যেতে পারে।

৩. অনিরাপদ ড্রাইভারলেস এবং আধা-ড্রাইভারলেস কার

ড্রাইভারলেস কার গুলোতে সাইবার সিকিউরিটি চরম ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। হ্যাকাররা আপনাকে ট্র‍্যাক করতে পারে, আড়ি পাততে পাড়ে ব্যক্তিগত তথ্যে। ড্রাইভারলেস কারের আরেকটা অসুবিধা হল, অন্যান্য পারসোনাল ডিভাইসের মত এখানে শুধু ডেটার দিক থেকে আপনি ঝুঁকিতে থাকবেন না, শারীরিক ভাবেও আঘাত প্রাপ্ত হতে পারেন। ছোট কোন ভুলে ঘটতে পারে মারাত্মক কোন দুর্ঘটনা।

সেলস ড্রাইভিং কার মেইনস্ট্রিমে পৌছাতে এখনো অনেক দেরি তারপরেও বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন শহরে এটা ব্যবহৃত হচ্ছে।

এই ধরনের গাড়ি গুলা সব সময় ইন্টারনেট এর সাথে কানেক্ট থাকে এবং প্রতি নিয়ত চারপাশের সেন্সর গুলো পজিশন ডেটা ক্লাউড সার্ভারে সেন্ড করে, ক্লাউড থেকে ডেটা প্রসেস হয়ে গাড়িকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করে।

যদিও গাড়ি প্রস্ততকারক কোম্পানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাদের সর্বোচ্চটা দিচ্ছে তারপরেও মনে রাখতে হবে কোন অনলাইন বা অফলাইন সিস্টেম ১০০% সিকিউর নয়।

৪. মেইনস্ট্রিম পর্যায়ে ডিপফেক

মডার্ন প্রযুক্তির এক আশ্চর্যজনক উদ্ভাবন হচ্ছে Deepfeke। কোন ব্যক্তির ফেক ভিডিও তৈরি করারকে মূলত ডিপফেক বলে। ভিডিও গুলো এমন ভাবে করা হয় বুঝার উপায় থাকে না এটা যে মিথ্যে। এই ডিপফেকে প্রচুর ভিজ্যুয়াল ডেটা এবং প্রসেস করার জন্য শক্তিশালী কম্পিউটার প্রয়োজন হয়।

এর আগে সুনাম নষ্ট করার জন্য বিশিষ্ট ব্যক্তি যেমন, রাজনীতিবিদ এবং সেলেব্রিটিদের ডিপফেক তৈরি করা হত। কিন্তু ভয়ের ব্যাপার হল এটা বর্তমানে অনলাইনে এভেইলেবল হয়ে যাচ্ছে। যেকেউ চাইলে যে কারো ডিপফেইক তৈরি করে ফেলতে পারছে।

এখন একটি ভিডিও তৈরি করতে হাজার হাজার ভিডিও ফুটেজ এবং ছবির এঙ্গেল লাগছে না। সামান্য সোশ্যাল মিডিয়ার প্রোফাইল পিকচার ব্যবহার করেই এমন ভিডিও বানিয়ে ফেলা যাচ্ছে।

ডিপফেকের আরেকটা ইস্যু সম্প্রতি এক গবেষণায় প্রকাশ পেয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার, Sungkyunkwan বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, ডিপফেকের স্যাম্পল হিসেবে ফেস রিকুইজিশন সফটওয়্যারের সাহায্য নেয়া হচ্ছে।

৫. প্রাইভেসি নিয়ে অবহেলা

আমাদের দেশের মানুষদের মধ্যে প্রাইভেসি ইস্যুতে তেমন কোন মাথা ব্যথা দেখা যায় না। অধিকাংশ দেশেই পরিস্থিতিটা এমন। প্রাইভেসি হল বাকস্বাধীনতার মূল ভিত্তি, এটিকে একজন ব্যক্তির নিজেকে প্রকাশ করা, স্বায়ত্তশাসন, শান্তিতে বসবাস এবং তাদের মর্যাদা বজায় রাখার ক্ষমতা হিসেবে দেখা হয়।

তারপরেও প্রাইভেসি মানবাধিকার হিসেবে গণ্য নয়। বিশ্বজুড়ে এটি সর্বনিম্ন সুরক্ষিত অধিকারগুলোর মধ্যে একটি। বেশিরভাগ মানুষ প্রাইভেসিকে কেয়ার করে না। জরিপে দেখা গেছে ১৩ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ফ্রিতে কোন কিছু পেতে তাদের ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে দিতেও দ্বিধা-বোধ করে না।

গত কয়েক বছরে, ইউরোপে জিডিপিআর এবং ক্যালিফোর্নিয়া কনজিউমার প্রাইভেসি অ্যাক্ট, (সিসিপিএ) এর মতো রাজ্য ভিত্তিক প্রাইভেসি আইনে, প্রাইভেসি ল একাধিকবার প্রয়োগের প্রচেষ্টা করা হয়। অনেক চেষ্টা করেও বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যক্তিগত ডেটা সংগ্রহ করা নিষিদ্ধ করা হয় নি। সর্বোচ্চ যেটা করা হয়েছে, এখানে নাম মাত্র ইউজারদের পারমিশন নেয়া হয়।

কোন ওয়েবসাইটে ঢুকতে গেলেই আমরা একটা প্রাইভেসি পপআপ পাই কিন্তু বেশিরভাগ সময় না পড়েই একসেপ্ট করে ফেলি। আবার কখনো Accept করা ছাড়া অন্য কোন অপশনও থাকে না। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই সেগুলো একসেপ্ট করতে হয়।

শেষ কথা

উল্লেখিত প্রযুক্তি ট্রেন্ড গুলো এবং এর ফলাফল কখনো কখনো আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরেও চলে যেতে পারে। প্রযুক্তি বিষয়টি এমন আপনি চাইলেও এর থেকে পুরোপুরি বেরও হয়ে আসতে পারবেন না। যা হচ্ছে সেটা আপনি বন্ধ কর‍তে নাই পারেন তবে বিষয় গুলো সম্পর্কে জানা থাকলে অনন্ত নিজেকে এর থেকে দূরে রাখতে পারবেন। অনলাইনে কোথায় অর্থ ও সময় ব্যয় করছেন সেটা সম্পর্কে সচেতন থাকতে পারবেন।

আশা করছি এই টিউনে আপনি বেশ কিছু বিষয় সম্পর্কে আপনি জানতে পেরেছেন, তো আজকে এই পর্যন্তই পরবর্তী টিউন পর্যন্ত ভাল থাকুন আল্লাহ হাফেজ।

Level 34

আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 627 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 118 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস