লেখাটি একটি ডকুমেন্টেরি থেকে ২৭/০৩/২০১০ সালে ডায়েরীতে লিখে রেখেছিলাম। এখন হারানোর ভয়ে টেকটিউনসে লিখে রাখলাম।
বিরাট আকৃতির নীল তিমি আর হাতি, বিপরীতে অতি ক্ষুদ্র ব্যাকটেরিয়া আর ভাইরাস। অজস্র প্রজাতি, কেউ বলে পৃথিবীতে প্রজাতির সংখ্যা ৬০ লক্ষ, কেউ বলে ১০ কোটি যে দিকে চোখ যায় প্রানের সমারহ হতবুদ্ধি হয়ে যেতে হয়। একই রকম Pattern এর অজস্র প্রকরন, যেমন বানররেই আছে কমপক্ষে ২০০ প্রজাতি, আছে ৩১৫ ধরনের হামিং বারড আর এক হাজার প্রজাতির বাদুর আর গুবড়ো পোকা কমপক্ষে সাড়ে তিন লক্ষ প্রজাতি, বিশ্বাস হয়? কেন এত বিচিত্র প্রজাতি! কেন এত বৈচিত্র্য! কিভাবে এলো এরা এটাই মহাজগতের সবচেয়ে বড় রহস্য।
এখন থেকে ১৫০ বছর আগে এ রহস্য ভেদ হয়ে গেছে। আজ থেকে প্রায় ১৬০ বছর আগে ১৮৫৯ সালের ২৪ শে নভেম্বর প্রকাশিত হয় একটি বই, যার নাম Origin of species লেখক চালর্স রবাট ডারউইন। চারশ পৃষ্ঠার এই বইতে ডারউইন ব্যাখা করেছেন জীব জগতের হত বুদ্ধিকর রহস্য। আর তা করতে গিয়ে তিনি অমূল বদলে দিয়েছেন জগত সম্পরকে আমাদের পুরোনা দৃষ্টিভঙ্গি। খুব কম বইই চিন্তার জগতে এত বিপ্লব দেখাতে পেরেছে।
এই রহস্য উদঘাটনের সময় শুরু হয় এরও ২৮ বছর আগে ১৮৩১ সালে। শুরুটা ছিল খুব সাদামাটা, সামান্য বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করেছিলো একটি বৃটিশ জাহাজ M.H.S Rigan। সে জাহাজের সঙ্গি হয়েছিল ২২ বছরের তরুন প্রকৃতি বিজ্ঞানী চালস ডারউইন। পশ্চিম মুখে যাত্রা করে জাহাজটি, আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে পৌছায় সাইবেরিয়ায়। সেখানে আমাজানের প্রান প্রাচুরযে বিহব্বল করে দেয় ডারউইনকে। ছোটবেলা থেকে পোকা মাকড় সংগ্রহ করা বাতিক ছিলো তার, সেখানে সে যে হাতে স্বগ পেলেন। শুধু একটা জায়গাতে তিনি খুঁজে পেলেন ৬৯ প্রজাতির গুবরো পোকা। সেখান থেকে Rigan নোঙ্গর তুলে আবার চললো দক্ষিন দিকে, ১৮৩৫ সালে ভ্রমনের চার বছর পর জাহাজ ভিড়লো গ্যালাপাকোজ নামে এক অপরিচিত দ্বীপপুঞ্জে। গ্যালাপাকোজ সেই দিনের পর বিখ্যাত হয়ে গেছে। বির্বতনবাদের সাথে একচ্ছদ মিশে গেছে এর নাম। এখানে এসে ডারউইন পেলেন এমন সব প্রজাতির সন্ধান, বিশ্বে আর কোথাও তাদের দেখা মিলে না। এখানে তিনি পেলেন এমন প্রজাতির বালিহাস, যারা উড়ার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন। এমন গিরগিটি, যা সমুদ্রে নেমে শিকার ধরে আর ফিরে আসে ডাঙ্গায়। গ্যালাপাকোজ যেন প্রান বৈচিত্রের পূর্নখনি, অজস্র নমুনা সংগ্রহ করতে লাগলেন ডারউইন। পুরো গ্যালাপাকোজ জুড়ে যেন ছড়িয়ে আছে অজস্র ঈশারা, এ যেন প্রকৃতির অসীম রহস্য সমাধানের ঈশারা। যাত্রা শুরুর ৫৭ মাস পর ১৮৩৬ সালে ২ই অক্টোবর বৃটেনে ফিরে আসে জাহাজটি তার সাথে ডারউইন নিয়ে আসে ৩৬৮ পাতার প্রানীর বিবরন, ১৩৮৩ পাতার ভূতাত্বিক বিবরনী, ৭৭০ পাতার দিনপঞ্জী, ১৫২৯টি বোতলবন্দি এলকোহলে চুবানো নমুনা, ৩৯০৭টি শুকনো নমুনা। আর ফিরতে ফিরতে তার মাথায় উকি দিতে থাকে একটা চিন্তা, প্রজাতিগুলো হয়ত অপরিবরতীয় নয়!
ডারউইনের যাত্রা শেষ করে তিনি অজস্র নমুনা বাছাই করতে শুরু করলেন আর নমুনাগুলো পাঠাতে শুরু করলেন বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের কাছে। বেশিরভাগ প্রানীর ফসিল ও হাড় গেলো রিচার্ড ওয়েনের কাছে। সেই ওয়েনই পরবর্তীতে ন্যাচারাল মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠিত করেন। এদিকে ডারউইন ভ্রমনের বিবরনী লিখলেন ও প্রবাল দ্বীপ নিয়ে বিশদ বৈজ্ঞানিক বিবরনী। কিন্তু তার মাথায় কেবলই ঘুরপাক খাচ্ছে গ্যালাপাকোজ দ্বীপের ঈশারা হয়তো প্রজাতিগুলো যেভাবে আছে সে ভাবেছিলো না, হয়ত এরা ক্রমাগত বদলেছে বা বদলাচ্ছে। কিভাবে এক প্রজাতি আরেক প্রজাতির রুপ নেয়, কিসের জন্য! ডারউইন লক্ষ্য করলেন বেশিরভাগ জীব অজস্র সন্তান-সন্তানাদি জম্ম দেয়। কিন্তু সব যদি বেচে থাকত তাহলে সমস্যা হত কিন্তু বেচে থাকে খুব কম। যে প্রানীগুলো টিকে যায় আসলে তারা প্রকৃতির সাথে বেশি খাপ খাওয়াতে পারে। উনি আবিস্কার করলেন যৌগ্যরাই টিকে থাকে আর এটাই হলো বিবর্তনের চাবিকাঠি। যার নাম ডারউইন দিলেন ন্যাচারাল সিলেকশন (প্রাকৃতিক নির্বাচন), আর এটিই বিবর্তনের চালিকা শক্তি। বিবর্তনবাদের ধারনা মাথায় আসার পরও তিনি তাতক্ষিনিক ঘোষনা করেননি, ২৩ বছর অপেক্ষা করেছেন। স্তুপের পর স্তুপ গবেষণা করেছেন, প্রমান করেও বই লেখেনি। হয়ত অনিদিষ্টকালের জন্য এভাবে চলে যেত। কিন্তু একটা বিশেষ ঘটনায় তিনি তাড়াহুড়ো করতে বাধ্য হলেন। তার বন্ধু ফরেন ইন্দোনিশিয়া থেকে একটি প্যাকিং পাঠিয়েছেন, সেখানে বিবর্তনবাদের কথা হুবুহু লেখা আছে। ফরেন লিখেছেন ইন্দোনিশায় এক কুড়ে ঘরে জ্বর পড়েছিলেন তিনি, আর ওই মুহূরতে তার মাথায় বিবর্তনের চিন্তা এসেছে। কিন্তু সেটা প্রমান করার মত প্রমানদি নেই। তারপর ডারউইন বিবর্তনবাদ নিয়ে পরের এক বছর লিখলেন, বইটি প্রকাশিত হলো ১৮৫৯ সালে ২৪ শে নভেম্বর। প্রকাশের সাথে সাথে শেষ হয়ে গেলো ১২৫০ কপি। প্রথমে খৃস্টান পাদ্রিরা মানুষকে অবমানোনার অভিযোগ করলেন কিন্তু তখনকার বৃটেন অনেক শক্তিশালী জ্ঞান গরিমায়।
দ্বিতীয় পর্ব
প্রথম শুরুটা হয়েছিলো সমুদ্রে, অরথাত সমুদ্রের পানিতে কতগুলো জটিল রাসায়নিক অনু জোট বেধেছিলো। এগুলো গঠন করেছিল কোষ বা জীব, এ আদি কোষগুলো নিজেরা ভেঙ্গে সংখ্যা বৃদ্ধি করতে শুরু করে। ব্যাকটেরিয়া আজও সেভাবে বংশ বিস্তার করে। তারপর সময় গড়িয়েছে কোষগুলো গড়ে তুলেছে বিভিন্ন ধরনের কোষ এবং কোন কোনটি একে অপরের সাথে যুক্ত হয়ে সৃষ্টি করেছে লম্বা লম্বা অসংখ্য পীল, আমরা তাদের শৈবাল নামে চিনি। বাকিরা গুন্ডলী তৈরি করেছে, যার মাঝখানে ফাপা। এরাই প্রথম বহুকোষী প্রানী। এভাবে ক্রমাগত নতুন নতুন প্রকরন সৃষ্টি করেছে। এভাবেই ধীরে ধীরে এগোতে ট্রি অফ লাইফ বা জীবচক্র। এখন সমুদ্র পরিপূর্ন, অজস্র বৈচিত্র্য সৃষ্টি হয় এভাবে ৪৫ কোটি বছর আগে প্রানীর কোন কোনটা পানি ছেড়ে উঠে এসেছে ডাঙ্গায়। এই সময় থেকেই আরো বেশি গতিতে জীবচক্রের শাখা প্রশাখা ছড়াতে থাকে, তৈরি হতে থাকে অজস্র প্রজাতি।
ইতিহাসের ক্রমবর্ধ্মান বিবর্তনে আমাদের কোন পূর্ব পুরুষ শিড়দাড়া সোজা করে দাঁড়িয়ে ছিলো। আর সেই থেকে মানুষের ইতিহাস সৃষ্টি হয় নয়া দিগন্ত। আসলে ডারউইন ওরিজিন অফ স্পেসিস বইতে মানুষ নিয়ে তেমন কিছু বলেনি, এখানে শুধু গোত্র, বর্গ, শ্রেনী ও ক্রমবিকাশ নিয়ে আলোচনা করেছে। কিন্তু তার ১২ বছর পর তিনি লিখলেন Decent Of Man, এখানে উনি মূলত বিশদ আলোচনা করেছেন মানুষ নিয়ে। মানুষ জীবজগতের কেন্দ্র নয়, অসংখ্য খেলোয়াড়ের মাঝে এক খেলোয়াড় মাত্র। এ সত্য প্রকাশ করে ডারউইন আমাদের খাটো করেনি শুধু আমরা কারো থেকে বিছিন্ন নই এটাই বলতে চেয়েছেন। আমাদের গ্রহেই আপাতত প্রান আছে, যদি ভবিষতে অন্য গ্রহে প্রানের কোন বিকাশ ঘটে বা ঘটছে তবে ডারউইনের এই তত্ত্ব মেনেই বিবর্তন ঘটবে, এটাই ডারউইন তত্ত্বের আশ্চর্য দিক।
আমি মোঃ আল আমীন। COO, Utpadok.com, Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 2 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 8 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
আমি লেখালিখি করতে ভালবাসি। এছাড়াও আমি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ড করে থাকি। আমি পত্রিকা, সামাজিক মাধ্যমে ও ব্লগে লেখালিখি করি। আমি বই পড়তে খুব ভালবাসি। এছাড়াও আমার নিজস্ব ব্যবসা রয়েছে। আমি সেই ব্যবসার সাথে দীর্ঘ দিন যুক্ত আছি।
you are spreading the false information Against all religion. all are bullshits. you dont have the right to live this society and earth.if I get you I will break your head.