হ্যালো টেকটিউনস কমিউনিটির সদস্যরা, কেমন আছেন সবাই? আশাকরি ভালোই আছেন। বরাবরের মতো আজো নিয়ে এসেছি সুন্দর একটা টিউন। আশাকরি ভালো লাগবে। কথা না বাড়িয়ে চলুুন শুরু করা যাক।
আমাদের বাল্যকাল আর এখনকার সময়ের মধ্যে প্রচুর পার্থক্য রয়েছে। বিপুল পরিমাণ পরিবর্তন সাধিত হয়েছে এই অল্প সময়ের মধ্যে। প্রাচীন যুগের সভ্যতা ও প্রযুক্তি হতে শুরু করে আজকের এই বর্তমান যুগের সভ্যতা ও প্রযুক্তির দিকে তাকালে আমরা এক অভূতপূর্ব পরিবর্তন লক্ষ্য করতে পারি।
এ উন্নয়নশীল পরিবর্তনের পিছনে একমাত্র অবদান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির। পৃথিবীব্যাপী আজ শুধু বিজ্ঞানের ছোঁয়া। এমন কোন ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া যাবে না যার জীবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ছোঁয়া নেই।
সমাজের কিছু কিছু স্তরে এখনো বিজ্ঞানের ছোঁয়া লাগেনি তাইতো সেখানে এখন পর্যন্ত উন্নতি প্রবেশ করতে পারে নি। তাই বলা যায় যে, মানব সভ্যতার বিকশিত রুপের মূলে রয়েছে বিজ্ঞান। বিজ্ঞান আমাদেরকে এমন কি দেয়নি ভেবে দেখুন তো। ভেবে হয়তো বের করতে পারবেন না।
সকাল বেলা দাঁত ব্রাশ থেকে শুরু করে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত শুধুই বিজ্ঞানের ছোয়া। তাই এই বিজ্ঞানের ক্রমবিকাশ কিভাবে ঘটলো তা আমাদের জানা উচিত। বিজ্ঞানের ইতিহাসটা আসলে কি তা সংক্ষিপ্ত আকারে জানবো ইনশাআল্লাহ। একদিনে আমাদের এই বিলাসবহুল জীবন আসেনি। শত শত বিজ্ঞানীর হাজারো রাতের বলিদানের ফলাফল আজকের এই বিজ্ঞান। চলুন জেনে নিই বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানের ইতিহাস সম্পর্কে।
ইংরেজিতে বিজ্ঞান কে Science শব্দে পরিচিতি দেওয়া হয়েছে। Scio শব্দটি থেকে নাকি Science শব্দটির উদ্ভব যার অর্থ জানা বা শিক্ষা লাভ করা। বিজ্ঞান শব্দের শব্দ গত একটা অর্থ রয়েছে আর তা হলাে বিশেষ জ্ঞান। আমাদের আশেপাশের যে দুটি জগৎ অর্থাৎ জীব ও বস্তুজগৎ সম্পর্কে পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং বিজ্ঞান সম্মত অনুসন্ধান করে প্রাপ্ত জ্ঞান যা মানুষের জ্ঞানকে বিকশিত করে এবং সমাজের সভ্যতা ও প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটায় তাকে আমরা বিজ্ঞান বলে আখ্যায়িত করতে পারি। সত্যি কথা বলতে এই বিরাট মহাবিশ্বের প্রতিটি রহস্যের সম্পর্কে সুসংবদ্ধ জ্ঞানই বিজ্ঞান। বিজ্ঞানের এত এত শাখা রয়েছে যে তা পুস্তকে লিপিবদ্ধ করে শেষ করা যাবে না।
ইংরেজি শব্দ Technology শব্দটির অর্থ প্রযুক্তি যা গ্রিক শব্দ Techne এবং Logia থেকে এসেছে। বিজ্ঞানের জ্ঞানকে সাজিয়ে গুছিয়ে ব্যবহার করে সমস্যা সমাধানে অথবা পূর্ববর্তী সমস্যার উন্নতিসাধনে বা প্রয়োজন এমন কিছু সৃষ্টির জন্যে সুনির্দিষ্ট কাজ করে উপযুক্ত সমাধান তৈরি করাই হলাে প্রযুক্তি। স্পষ্ট ভাবে বলতে চাইলে বিজ্ঞানের জ্ঞান অর্থাৎ তত্ত্ব ও সুত্রের প্রয়োগিক দিকই হলো প্রযুক্তি। প্রযুক্তির ছোয়া আজ পৃথিবীর ঘরে ঘরে। প্রতিনিয়ত আবিস্কার হচ্ছে কতো কার্যকরী যন্ত্র। যার ব্যবহারে মানুষের কাজ হচ্ছে আরো সহজ থেকে সহজ তর।
বিজ্ঞানের ইতিহাস শুধুমাত্র বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার গুলোর নীরস বর্ণনা নয়। বিজ্ঞানেত ইতিহাস হলো বিজ্ঞান ও মানুষের মধ্যকার একটি গল্প। এর সুচনা হয়েছিলো সভ্যাতার শুরুতে। তারপর যুগে যুগে বিভিন্ন পরিবর্তন ও উন্নয়নের মাধ্যমে আজকের যুগের এই অবস্থা।
বিশেষ সামাজিক পরিস্থিতি, বিভিন্ন ধরনের সমস্যা, কোন ব্যক্তির নিরলস চেষ্টা বা অর্থনৈতিক ও সামজিক চাপের মাধ্যমেই কোন আবিষ্কার বা উদ্ভাবনের সৃষ্টি হয়। সমাজের এই সকল উদ্ভাবন ব্যবহার করছে সমাজের প্রভাবশালী গোষ্ঠী। ফলে তারা হচ্ছে আরো প্রভাবশালী।
এক সময় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ধারণার আবির্ভাব হয়। আজকের এই বিজ্ঞান শুধুই কিছু প্রতিভাবান মানুষের অনুসন্ধান নয়। ইট সাজিয়ে যেমন সুন্দর ভবন তৈরি করা হয় এমন একটা ভবন ও নয় এই বিজ্ঞান। বিজ্ঞানের ইতিহাস সমগ্র মানুষের ইতিহাস, বিজ্ঞানের ইতিহাস সমাজের সকল মানুষের সফলতা, চেষ্টা ও ব্যার্থতার ইতিহাস।
বিজ্ঞানের উদ্দেশ্য শুধু মুনাফা অর্জন নয়। কারণ তাই যদি হতো তাহলে শুধু লাভজনক যুদ্ধাস্ত্র আবিষ্কার হতো। মানুষের জন্য ওষুধ আবিষ্কার হতো না। তবে সমাজের খারাপ মানুষের কারনে ঔষধ নিয়েও ব্যাবসা হচ্ছে। তবে সেটা আলোচনার আসল বিষয় নয়।
একসময় জীবন বাচাতে মানুষকে হিংস্র পশুর মতো শিকার করতে হতো। তাছাড়া হিংস্র পশুর হাত থেকে ও নিজেকে ও নিজের পরিবারকে বাচাতে হতো। কিন্তু এ কাজ অতোটা সহজ ছিলো না। তাই মানুষ দলবদ্ধ থাকার সুবিধাটা বুঝেছিলো। যেখানে মানুষ বসবাস করতো তার আশেপাশের গাছের খাবার খেত। খাবারের খোঁজে মাটি ও খুরেছে মানুষ। তারা অনেক কিছু করে এবং কিছু প্রানীকে অনুকরণ করে শিখেছে কি খাওয়ার উপযোগী আর কি নয়। বিপজ্জনক প্রানী সম্পর্কে ধারণা হয়েছে তাই শিখেছে আত্মরক্ষা করতে।
তারপর তারা শিখল হাতে লাঠি বা পাথরের কিছু থাকলে পশু ভয় পায় বা নিজের আত্মরক্ষায় সুবিধা হয়। ফলমুল পেরে খেতে সুবিধা হয়। এছাড়াও মাটি খুড়তে পারে খুব সহজেই। এই ধারণাটা হয় তাদের পশুর বা জানোয়ারের ধারালো নখ থেকে এসেছে। তারপর তারা এক সময় পাথর বা লাঠিকে পরিবর্তন করে ধারালো বা সরু করতে শুরু করলো। তারা এ দুটিকে একত্র করে হাতিয়ার বানাতে থাকলো যা বংশ পরিক্রমায় উন্নত থেকে উন্নত হতে থাকল।
তারা শিকারে গিয়ে যে খাবার আহরণ করছিলো তা সব খেতে না পারলে বাকিটা নষ্ট হতো। পরে তারা তা নিজের দলের মধ্যে বিতরন করতে থাকলো। একসময় এটা সামাজিক দায়বদ্ধতায় পর্যবসিত হলো। তারা যত বেশি লোক ছিলো তত খাদ্য আহরণ হতো, তত আত্মরক্ষা সহজ হতো। এক সময় তারা তাদের প্রিয় খাবারের প্রতীকে দল গঠন করতে শুরু করল। আর এ প্রতীকেই বলে টোটেম।
যখন এক গোষ্ঠীর সাথে আরেক গোষ্ঠীর দেখা হতো তখন তারা নিজেদের মধ্যে ভিন্ন স্বাদের খাদ্য আদান প্রদান করতো। দুটি দলোই ভিন্ন স্বাদের খাদ্য পাওয়ার কারণে খুশি হতো। পরে তারা এটাকে একটা উৎসবে রুপ দেয়। আর এসব উৎসবে তারা শিখতে থাকলো কৌশল, নৃত্য, সঙ্গীত। আর এসব তারা ইশারায় করতো। তখনো ভাষার জন্ম হয় নি। মৌখিক ইশারায় তারা নানা শব্দে একে অপরকে বোঝাতে থাকলো। আর এভাবে এক সময় গড়ে উঠলো ভাষা। সে ভাষার ছিলো না কোন বোধগোম্য তা। শুধু একে অপরের সাথে যুক্ত ব্যক্তিরাই জানত।
একসময় তারা পাথরের অনেকটাই কার্যকরী হাতিয়ার গুলো তৈরি করলো। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাচতে গুহায় আশ্রয় নিতে শুরু করলো। আর এ যুগের হাতিয়ার গুলো পাথরের তৈরী হওয়ার কারণেই একে প্রস্তরযুগ বলে। এসব কথা বলার কারণ যারা আজো সভ্যতার আওতাভুক্ত হয় নাই তাদের কাছে এইরকম হাতিয়ার দেখতে পাওয়া এখনও যায়।
একসময় তারা বুঝতে শিখলো কোন বস্তু শক্ত কোনটা, নরম, কোনটা দিয়ে অস্ত্র বানানো যাবে। তারা অস্ত্র বানানোর জন্য হাতিয়ার বানানো শুরু করলো। তারা গাছের বাকল পরে থাকত। তারপর সুক্ষ হাতিয়ার আবিষ্কারের কারণে পশুর চামড়া সেলাই করে বস্ত্র বানাতে শিখলো। তবে একথা সত্য যে আদিম মানুষের হাতিয়ার বানানোর ধারণার উপর ভিত্তি করেই আজকের কামারের জন্ম।
তবে ভারতে কিছু কিছু অঞ্চলে পাথরের তৈরি হাতিয়ার বা মাইক্রথলি পাওয়া গেছে। এরপরে আসি কিভাবে আগুন তৈরি হলো সে কথায়। কোথায় কিভাবে আগুনের ব্যবহার শুরু হয় তা অস্পষ্ট। তবে বনে যখন ঘর্ষনের কারনে বা অন্য কোন কারনে আগুন লাগতো তখন তারা ভয় করতো। তারা দেখতো সমস্ত প্রাণী আগুনকে ভয় করে। তারা আগুনে ঝলসানো প্রানীর মাংস খেয়ে দেখলো এটা নরম ও সুস্বাদু। তারা দেখলো রাতে আগুন থাকলে তারা স্পষ্ট সব দেখতে পায়। আর এসব প্রয়োজনেই তারা আগুন জালাতে শিখলো।
তারা শিখলো খাবার পুরিয়ে খাওয়া। তারা শিখলো রাতে আগুন জালানো। তারা শীতে ঠান্ডা নিবারন করতে আগুন জালাতে শিখলো। তারা শিখলো ধাতুকে গলিয়ে হাতিয়ার বানানো। তারা দেখলো যে পাত্র আগুনে ভালো করে পোড়ালে তা ফেটে যায় না। পোড়ামাটির পাত্র এ যুগের এক গুরুত্বপূর্ণ আবিস্কার।
পাত্র যখন আবিষ্কার হলো তখন খাবার সংরক্ষণ সহজতর হলো। ফল মুল সংরক্ষনে রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে মদের সৃষ্টি হলো। এই প্রস্তর যুগে রঙের ব্যবহার শুরু হয়। তারা নিজের বস্ত্র বা শরীরের উপর অথবা হাতিয়ারের উপর রঙ করে ব্যবহার করতো।
তারপর এক সময় যখন প্রতিটি গোষ্ঠীর জনসংখ্যা বাড়তে থাকে তখন শুরু হয় প্রধান সমস্যা। প্রতিটি গোষ্ঠীর জন্য খাবার সংগ্রহ করা কঠিন ছিলো বা যেখানে থাকত সেখানে খাবারের সংকট দেখা দিতে থাকে। ফলে তাদের স্থান পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়ে। এই বিরাট জনগোষ্ঠী নিয়ে স্থান পরিবর্তন অতটা সহজ ছিলো না। যুগের শেষের দিকে খুব বেশি শীত পড়ার কারণে এবং খাদ্য অভাবে অধিকাংশ গোষ্ঠী জনশূন্য হয়ে পড়ে।
তারপর মানুষ খাদ্যের অভাবে যেখানে বুনো শস্যের পরিমাণ বেশি ছিল সেখানে বসতি স্থাপন করতে শুরু করলো। বুনো শস্যের গাছের আশেপাশে প্রচুর পরিমাণে শস্য থাকত তাই সেখানে সহজে শস্যের অভাব হতো না।
তারা দেখল যে এখানে কিছুদিন পর পরেই এই শস্যটা জন্মায়। তাই তারা শস্যের কিছু বীজ সংরক্ষণ করে রাখল এবং যে মৌসুমে শস্য জন্মায় সেই মৌসুমে তা ছিটিয়ে দিতো। শস্যের একটি নির্দিষ্ট মৌসুমে জন্মানোর পদ্ধতিই কৃষিক্ষেত্রের জন্ম দেয়। ফলে মানুষের প্রকৃতির উপর নির্ভরতা কমে গেল এবং মানুষ শস্য চাষ করে খাদ্য অভাব দূর করতে লাগলো। সাধারণভাবে যেসব জনগোষ্ঠী উর্বর জমির দিকে ধাবিত হলো তারা উন্নতি করল। ফলে সৃষ্টি হলো মিশর, মেসোপটেমিয়া, ভারত ও চীনের মতো সম্রাজ্য।
এই চারটি সাম্রাজ্যের সভ্যতা গড়ে উঠেছিল কয়েকটি নদীকে কেন্দ্র করে। সভ্যতা গুলো গড়ে উঠেছিলো যথাক্রমে নীলনদ, টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস, সিন্ধু ও হোয়াং হো নদীর অববাহিকায়।
২৭০০-১৭৫০ খ্রিস্টপূর্ব সময়কালের সিন্ধু সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল। আর আমরা সিন্ধু সভ্যতার উত্তসরী হিসেবে পরিচিত।
তারপর শুরু হয় ব্রোঞ্জ যুগ। আর এ যুগে আবিষ্কৃত হয় তামা এবং টিন এর সংকর ব্রোঞ্জ। এ সময় কালে যোগাযোগ ব্যবস্থা কিছুটা উন্নত হওয়ার কারণে বাণিজ্যের প্রসার ঘটে। তাছাড়া এ সময় কালটা ৩৫০০ খ্রীস্টপূর্ব সময়কাল ছিলো। এ সময়ে মানুষ পৃথিবীতে মুক্ত অবস্থায় থাকা ধাতু গুলো ব্যবহার শুরু করলো।
প্রকৃতিতে মুক্ত অবস্থায় পাওয়া ধাতু সোনা এবং তামা মানুষকে আকৃষ্ট করে। প্রথমদিকে এটার গুরুত্ব না থাকলেও পরে মানুষেরা এর গুরুত্ব বুঝতে পারে। প্রস্তর যুগের শেষের দিকে এগুলো অলংকার হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
তামা অত্যন্ত নরম ধাতু হওয়ায় তারা এটি দ্বারা তৈরি হাতিয়ার সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারছিল না। পরে তারা তামা ও টীনকে গলিয়ে মিশ্রিত করে হাতিয়ার তৈরি করে দেখলো যে এটি অনেক শক্তিশালী। তারা দেখল যে এটি পাথরের তৈরি হাতিয়ারের চেয়ে বেশি কার্যকরী।
তারা ছাঁচের মধ্যে গলিত ধাতু ঢেলে হাতিয়ার তৈরি করার ধারণা প্রস্তর যুগের শেষের দিকে পেয়েছিল। তারা তামা ও টিন ধাতুকে গলিয়ে এই দুটি তরল গুলোকে একত্রে মিশিয়ে ঠান্ডা করে সংকর ধাতুতে পরিনত করে। এ সংকর ধাতুর নাম হলো ব্রোঞ্জ। এ ব্রোঞ্জ দিয়ে তারা ভালো মানের অস্ত্র তৈরি করতে শিখলো।
সংকর ধাতুর মিশ্রণে তৈরি নানা ধরনের আসবাবপত্র ও হাতিয়ার তৈরি হচ্ছিল যা দেশে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছিলো। এই জন্য এই যুগকে ব্রোঞ্জ যুগ বলা হয়। এই যুগ এই নদী পথে ভ্রমণের জন্য গাছের গুড়ি কেটে নৌকা এবং বাশ ব্যবহার করে ভেলার ব্যবহার দেখতে পাওয়া যায়।
বিনিময়ের জন্য বা ছুটির হিসাব নিকাশের জন্য এই যুগ এই তুলা যন্ত্র আবিষ্কৃত হয় এবং সেইসাথে সাধারণ যোগ-বিয়োগ এবং গণনা শুরু হয়। এক সময় ব্রোঞ্জ মানবজাতির জন্য একটি অতি প্রয়োজনীয় পদার্থে পরিণত হতে থাকে। তবে সত্যি কথা বলতে ব্রোঞ্জের আবিষ্কার মানব সভ্যতাকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। ব্রোঞ্জ যুগেই ঠেলাগাড়িতে কাঠের চাকার ব্যবহার শুরু হয়।
প্রায় ১৪০০ খ্রীস্টপূর্ব সময়কালে লোহার মাধ্যমে মানুষের সামাজিক ও ব্যক্তিগত কাজের জন্য সরঞ্জাম তৈরী হয়। আর এ সময়কালের যুগটাকে লৌহযুগ বলে। এই যুগ ইতিহাসে মানব উন্নয়নের একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ যুগ। প্রাগৈতিহাসিক যুগের যে সময়কালে কোন এলাকার সব অস্ত্র ও যন্ত্রপাতি লোহা দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছিলো সেই সময়কালকে প্রত্নতত্ববিদ্যার লৌহযুগ বলে পরিচিতি দেওয়া হয়। লোহার ব্যবহারের জন্য সামাজিক জীবনে, কৃষি জীবনে এবং শিল্পক্ষেত্রে বিপুল পরিবর্তন সাধিত হয়।
প্রস্তর যুগ ও ব্রোঞ্জ যুগের পরে লৌহ যুগের সুচণা ঘটে। এটা এমন একটা সময় কাল ছিল যে, সে সময়ে তারা বুনো ঘোড়াকেও পোষ মানাতে পারতো। এই সময়ে তারা ছিল সচ্ছল এবং তারা নিজেরা নিজেদের বোঝা বহন করতে পারত। এই সময়কালে জনগনেরা কৃষিকে প্রধান পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছিল এবং সেইসাথে পশুপালনে তারা ছিল খুব পারদর্শী। লৌহযুগের সময়কাল ও বৈশিষ্ট্য অঞ্চলভেদে কিছুটা ভিন্ন ভিন্ন ছিলো। লৌহ যুগের শেষে ঐতিহাসিক যুগের আবির্ভাব হয়।
প্রথম আগুনের আবিষ্কার হওয়ার সাথে সাথেই মানব সভ্যতার বড় ধরনের বিকাশ ঘটে। তারপর বিজ্ঞানের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে অনেক আবিষ্কারই মানব সভ্যতাকে বিকশিত করেছে। আজকের এ দুনিয়ার উন্নতি সম্ভব হয়েছে বিজ্ঞানের বিভিন্ন আবিষ্কারের ফলে। মানুষের কৌতুহলী মন যেখানেই কৌতুহল হয়েছে যেন সেখানেই বিজ্ঞানের রত্ন ফলেছে। প্রাকৃতিক নানা বিষয় সম্পর্কে আগ্রহ বিভিন্ন বিজ্ঞানভিত্তিক আবিষ্কার এবং প্রযুক্তির আবির্ভাব ঘটিয়েছে। শত শত বছর ধরে এসব বিজ্ঞানভিত্তিক আবিষ্কার ও প্রযুক্তি মানুষ তার প্রয়ােজনে ব্যবহার করে আসছে।
আমাদের জীবনে প্রতিদিন নানা রকমের বিচিত্র ঘটনা ঘটে। আমরা এসব ঘটনা শুধু পর্যবেক্ষণ করে থাকি। আর কোন কিছু করার চেষ্টা করি না। কিন্তু সমাজে কিছু কিছু মানুষ খুঁজে পাওয়া যায় যারা শুধু পর্যবেক্ষণ করেই থেমে থাকেন না। তারা এটা পর্যবেক্ষণ করে এবং সেই সাথে ভাবে এটা কেন হলো। প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের জন্য বিভিন্ন উপায়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এবং গবেষণা করে। তারপর ঘটনাগুলাে কেন এবং কীভাবে ঘটলো তার উত্তর খুঁজে বের করে।
মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত নিবেদিতপ্রাণ এই সকল মানুষেরা নানা সমস্যা পর্যবেক্ষণ করে এর সমাধানের চেষ্টা করে। এসব কৌতুহলী ও সৃজনশীল ব্যক্তিবর্গ যারা সমস্যা পর্যবেক্ষণ করে সমাধানের চেষ্টা করে তাদের আমরা বিজ্ঞানী বলি।
বিজ্ঞানের বা বিজ্ঞানীর যত আবিষ্কার তার মুল লক্ষ্যই হলাে মানব কল্যাণ। তাই বিজ্ঞানীরা নানা আবিষ্কার ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন সাধন করে পৃথিবীকে সমৃদ্ধ করেছে।
কৃষিক্ষেত্র বিজ্ঞানের অবদান এতটাই যে তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। প্রাচীন কাল থেকে মানুষ কৃষির সাথে ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িত। কিন্তু সেই প্রাচীনকালের কৃষি পদ্ধতির দিকে তাকালে আর বর্তমান কৃষি পদ্ধতির দিকে তাকালে বোঝা যায় এর মাঝে কতটা অমিল রয়েছে।
বর্তমানে কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাবহৃত হচ্ছে আধুনিক সকল যন্ত্রপাতি, কীটনাশক, রাসায়নিক সার, উন্নত মানের ফলনশীল বীজ এবং সেই সাথে চাষাবাদের উন্নত পদ্ধতি যা স্বল্প জমিতে প্রচুর পরিমাণ উৎপাদন দিচ্ছে। আর এই বিষয়টা মানব জাতির জন্য একান্ত প্রয়োজন। কারণ জনসংখ্যার কারণে দিন যত যাচ্ছে তত জমি সংকট হচ্ছে। তাই স্বল্প জমিতে প্রচুর পরিমাণ উৎপাদন না হলে মানুষ দুর্ভিক্ষের শিকার হবে।
বিজ্ঞানের জ্ঞান এতটাই কার্যকরী যে মরুভূমির মতো বালুকাময় পরিবেশেও চাষাবাদ করা সম্ভব হচ্ছে। সম্ভব হচ্ছে অনুর্বর জমিকে উর্বর করে তোলা। সম্ভব হচ্ছে লোনা মাটিতে লোনা মাটির উপযোগী ফসল উৎপাদন করা। সম্ভব হচ্ছে একই সাথে ফসল ও মাছের চাষ করা। পানিযুক্ত পরিবেশে ফসল চাষের সাথে সাথে সেই পানির ভিতরে আবার মাছের চাষ ও হচ্ছে। বন্যা ও খরা প্রতিরোধের জন্য ধান আবিষ্কার, পোকা প্রতিরোধী বেগুন আবিষ্কার এসব কিছু সম্ভব হচ্ছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ফলে।
একবার ভাবুন তো পুর্বে কিভাবে ফসলের জমিতে সেচ দেওয়া হতো। হয় বড় পাত্রতে করে পানি নিয়ে গিয়ে জমিতে ঢালতে হতো আর তা না হয় সৃষ্টিকর্তার কাছে বৃষ্টির জন্য দোয়া করতে হতো। তারপর আসলো ওয়াটার পাম্প যার মাধ্যমে তেল খরচ করে খুব সহজেই জমিতে সেচ দেওয়া যেত।
আর বর্তমানে তো রয়েছে অত্যাধুনিক মটর যার মাধ্যমে বিঘা বিঘা জমিতে সেচ নিমিষেই দেওয়া যায়।
ফসল কাটতে কতটা কষ্ট হয় তা আপনারা অনেকেই আন্দাজ করতে পারবেন। কিন্তু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পরশে একাক ফসলের জন্য নেমেছে ফসল কাটার যন্ত্র। যার নাম দেওয়া হয়েছে হার্ভেস্টর।
এছাড়াও ফসল শৃঙখল ভাবে রোপন করার যন্ত্র ও আবিস্কার করা হয়েছে। আবিষ্কার করা হয়ে ফসল সংগ্রহের যন্ত্র, ফসলের খোসা ছাড়ানোর যন্ত্র। এত ছিলো সামান্য কয়েকটা উদাহরণ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কৃষিক্ষেত্রে আরো কত উন্নয়ন ঘটিয়েছে তা হয়তো টিউনে লিখে প্রকাশ করা যাবে না।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ছোঁয়ায় শিল্পক্ষেত্রে বিপুল পরিমাণ শিল্পবিপ্লব হয়েছে। বিজ্ঞানের হাত ধরেই আঠারো শতকের মধ্যে খানে শিল্প বিপ্লব হয়েছিলো। বাষ্পীয় ইঞ্জিনের আবিষ্কার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এক অমূল্য রত্ন। প্রাচীনকালে শিল্পকারখানাগুলোতে মানুষ নিজ হাতে কাজ করলেও এখনকার শিল্পকারখানাগুলোতে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র কাজ করছে। ফলে কম শ্রমিক কম শ্রমে বেশি উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। শিল্প কারখানার সব যন্ত্র বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অবদান। এসব যন্ত্রের জন্য শিল্পবস্তু হচ্ছে নিখুঁত।
বস্ত্র শিল্পে কাপড় তৈরি করতে ব্যাবহৃত হচ্ছে নানা ধরনে অত্যাধুনিক সেলাই মেশিন। কাপড় ইস্ত্রি করতে ব্যাবহৃত হচ্ছে আয়রন মেশিন। এছাড়াও আরো কত অত্যাধুনিক মেশিনে কাপড় তৈরি করছে মানুষ। প্রতিটি শিল্পের পিছনে দেশে-বিদেশের আনাচে কানাচে গড়ে উঠেছে কত ছোট বড় শিল্প কারখানা তা হয়তো বলে বোঝাতে পারব না।
মানব জাতির উন্নয়নে শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। শিক্ষা ছাড়া একটি সমাজ যেমন দুর্বল ঠিক তেমনি নির্বোধ ও বোকা। শিক্ষার জন্য চাই উপযুক্ত বই, খাতা, কলম এবং সেই সাথে প্রয়োজনীয় আরো অনেক কিছু যার অধিকাংশই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির আবিষ্কার। আর এসব শিক্ষা অবদান ছাড়া শিক্ষা বিকশিত হবে না। এছাড়া বর্তমানে শিক্ষা ক্ষেত্রে অধিকাংশ ব্যবহৃত যন্ত্র হচ্ছে কম্পিউটার বা ল্যাপটপ। আর সেইসাথে লাগছে কার্যকরী ইন্টারনেট সংযোগ। আর এই কম্পিউটার ও ইন্টারনেট বিজ্ঞানের বৃহৎ সাফল্য বললে ভুল হবে না।
পড়াশোনা কে আরও সহজ আর সমৃদ্ধ করতেই কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সংযোগ গুরুত্বপূর্ন।
দেশি-বিদেশি বিভিন্ন বই আর এই সকল বইয়ের অনুবাদ এছাড়া সঠিক পরামর্শ আরো সহজলভ্য করেছে এই ইন্টারনেট। তাই বলা যায় যে শিক্ষা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মূল্য অপরিসীম। আর বিজ্ঞানের এত এত প্রধান প্রধান শাখা রয়েছে যা শিক্ষার প্রধান প্রধান বিষয়। আর অনেক জ্ঞানের বিষয় রয়েছে যা নেটে খুব সহজে পাওয়া যায়। কোন কিছু অনুবাদ করতে হলে সহজেই নেটের মাধ্যমে করা যায়।
প্রতিদিন ব্যবহৃত বিদ্যুৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এক গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। আরামদায়ক ও দ্রুতগতিসম্পন্ন কাজ এনে দিয়েছে বিজ্ঞান। সেইসাথে মানুষকে দিয়েছে বিলাসবহুল সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে ভরা জীবন। বিদ্যুৎ কে কেন্দ্র করে এত এত যন্ত্র আবিষ্কার হয়েছে যে এগুলো তালিকাবদ্ধ করা সম্ভব নয়। প্রতিনিয়ত ব্যবহৃত দ্রব্যসামগ্রী যেমন- লাইট, ফ্যান, মোবাইল, সার্কিট ব্রেকার ইত্যাদি ছাড়াও আরো কত কিছু যেগুলো ছাড়া আমরা এক মুহুর্ত চলতে পারি। আর এতো সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিজ্ঞানের কারনেই সম্ভব হলো।
পৃথিবী সৃষ্টির সূচনা লগ্ন থেকে বহু বছর পর পর্যন্ত মানুষের যোগাযোগের জন্য বা স্থানান্তরের জন্য পায়ে হাঁটা ছাড়া দ্বিতীয় কোন উপায় জানা ছিল না। তারপর এক সময় মানুষ যখন পশু পাখিকে পোষ মানাতে শুরু করল তখন এগুলোকে কয়েক বছর ব্যবহার করল।
তারপর যখন চাকাওয়ালা গাড়ি আবিষ্কার হল তখন কয়েক বছর এই চাকাওয়ালা গাড়ি আর সেই সাথে কোনো শক্তিশালী প্রানী ব্যবহার করল। আর বর্তমান যুগে স্থানান্তরের জন্য রয়েছে উড়োজাহাজ, মোটর চালিত গাড়ি, আর জলপথে চলাচলের জন্য নৌকা, জাহাজ আরো কতো কিছু।
আর এসব দ্রুতগামী যান এর কারণেই যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। সেই সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে মানুষের ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে দেশের মানুষ পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে গিয়ে কাজ করছে।
সর্বাধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির সেবার মাধ্যমে আজকাল অনেক জটিল ও দূরারােগ্য রোগ থেকে মানুষ পরিত্রাণ পাচ্ছে। যক্ষ্মা, কলেরাকে একসময় মরণব্যাধি হিসেবে আখ্যায়িত করা হতাে আর এখন তা মানুষের হাতের নাগালে। আগে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ যেমন- চোখ, কিডনি ইত্যাদির প্রতিস্থাপন সম্ভব না হলেও এখন সম্ভব হচ্ছে।
মূত্রথলি, পিত্তথলী প্রভৃতি হতে পাথর অপসারণ আগে সম্ভব না হলেও এখন হচ্ছে। ক্যান্সার নামক ভয়ানক মরণব্যাধির বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা সম্ভবপর হয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার এর মাধ্যমে। এছাড়া ফার্মাসিতে এত এত ওষুধ রয়েছে যার অধিকাংশই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিরই উপহার। আধুনিক সব চিকিৎসা যন্ত্র বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কারণেই পাওয়া গেছে।
প্রাকৃতিক পরিবেশের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো আবহাওয়া। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পরশে বিজ্ঞানীগণ মহাকাশে কৃত্রিম উপগ্রহ স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন। ফলে আমরা যেমন বিভিন্ন স্যাটেলাইট চ্যানেল দেখতে পাচ্ছি ঠিক তেমনি আবহাওয়ার পূর্বাভাস ও দেখতে পাচ্ছি। আনুমানিক ৭-৮ দিন পূর্বেই আবহাওয়ার পূর্বাভাস পাওয়া যায় বলে দাবী করেন বিজ্ঞানীরা। ফলে আমরা যেকোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে আগেই সচেতন হতে পারছি।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আবহাওয়ার উপাত্ত সংগ্রহ করে অর্থাৎ রাডারের মাধ্যমে পাওয়া তথ্য নিয়ে আলোচনা করে আগাম সতর্কীকরণের বা পুর্বাভাস দেওয়ার দায়িত্বে নিয়ােজিত আছেন। আজ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সুবিধায় আমরা কম্পিউটার বা মোবাইল ফোন ব্যবহার করে ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে যেকোন জায়গার আবহাওয়ার সকল তথ্য পাচ্ছি।
নগর সভ্যতার বিকাশে বিজ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। নগর সভ্যতার অধিকাংশ বিষয়েই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ছোয়া স্পষ্ট। নগর সভ্যতা মানুষের জীবনে নিয়ে এসেছে সুখ, স্বাচ্ছন্দ ও জীবনকে করে দিয়েছে সহজ থেকে আরো সহজতর।
আজকের এই বিরাট বিরাট পাঁকা রাস্তা, উন্নত উন্নত ব্রিজ, উন্নত বাড়িঘর এবং সেই সাথে বড় বড় মহল অর্থাৎ প্রকৌশলগত উন্নয়নসহ সব ধরনের নাগরিক সুবিধা ইত্যাদি দিয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি। এছাড়া আরো অনেক কিছুই সম্ভব হয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণে।
প্রকৃতির বিভিন্ন রহস্য উদঘাটন করছে বিজ্ঞানের বিজ্ঞানীরা। মানুষের কৌতূহলী মন পৃথিবীকে নিয়ে গবেষণা করতে করতেই মহাশূন্যে পা দিয়েছে। যে চাঁদ ছিলো শুধু কল্পনা তা এখন বাস্তবতা। চাঁদে এখন পৃথিবীর মানুষের পতাকা উরছে। বিজ্ঞানের কারণেই আমরা এখন মঙ্গলগ্রহে মানব জাতির বসবাস উপযোগী পরিবেশ খুঁজতে গবেষণা করছি। তাছাড়া মানুষ মহাশূন্যে অনেক কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠিয়েছে এবং সেই সাথে রােবট ও অন্যান্য আধুনিক ইলেকট্রিক সরঞ্জাম পাঠিয়েছে যার মাধ্যমে মহাশূন্য সম্পর্কে সব সত্য কথা জানা যায়। তারা ভাবছে কিভাবে অ্যাস্ট্রোনমি শাস্ত্রকে সমৃদ্ধ করা যায়। নিচের চিত্রের মাধ্যমে দেখুন মানুষ কিভাবে মহাশুন্য পরিভ্রমণ করছে।
যদিও বিজ্ঞানের অন্যতম লক্ষ্য হলাে মানুষের কল্যাণে কাজ করা তবুও এর কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে। মানুষের মন মানসিকতা ও ব্যবহারের উপর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উপকারিতা ও অপকারিতা বোঝা যায়। বিজ্ঞানের উন্নতির সৃষ্টি হয় কলকারখানা ফলে অনেক বেকার পেয়ে যায় কাজ। কিন্তু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অবদানে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের আবিষ্কারের ফলেই বেকারত্বের হার বেড়ে যাচ্ছে। আর এসব কলকারখানার দুষিত বর্জ্য পরিবেশকে করে দুষিত। ফলে পৃথিবীতে সকল জীব হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে কারণ পৃথিবীতে এক সময় জীবের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে।
পরিবর্তিত হচ্ছে জলবায়ু ফলে অকালে বন্যা, ঝড়, ঘুর্ণিঝড় বৃদ্ধি পাচ্ছে। গ্রীন হাউজ গ্যাস বৃদ্ধির কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে হিমালয়ের বরফ গলে সমুদ্রে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে অকালে তলিয়ে যাচ্ছে স্থল ভাগের নিম্না অঞ্চলগুলো।
আর এসব হচ্ছে বিভিন্ন দেশের কলকারখানা, যানবাহন ইতাদির কারণে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলন করেও এসব দেশকে পরিবেশ দুষনের হার বাড়ানো থেকে আটকানো যাচ্ছে না। ফলে গলে যাচ্ছে দুই মেরু অঞ্চলের বরফ।
বিজ্ঞানের স্পষ্ট অপব্যবহার দেখতে চাইলে আপনি তাকাতে পারেন ২য় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ রুপের দিকে। প্রতিটি বিস্ফোরণ কত মানুষের প্রাণ নিয়েছে। বিজ্ঞানের এই অপব্যবহারকে রােধ করতে পারলে আমরা বিজ্ঞানের সমস্ত কল্যাণ ভোগ করতে পারব।
বর্তমানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কারণে মানব সভ্যতা শ্রেষ্ঠ সময় পার করেছে। প্রাচীনকালে যেসব প্রযুক্তির কথা মানুষ ভাবতে পারতো না আজ সেসব প্রযুক্তি মানুষের জীবনের সকল সমস্যা দূর করেছে। ভবিষ্যতে ঠিক একই রকমভাবে এমন কিছু প্রযুক্তি আসবে যা হয়তো বদলে দিবে আমাদের জীবন। তবে কেমন হবে আমাদের এই ভবিষ্যতের পৃথিবীটা?
প্রযুক্তির বিভিন্ন বিষ্ময়কর আবিস্কার দেখে সবাই ভাবছে ভবিষ্যতের পৃথিবী না জানি কত সুন্দর হবে। হ্যা সুন্দর তো হবেই কিন্তু কেউ ঠিক মতো শ্বাস নিতে পারবে না। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারনে, জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে আর দিনে দিনে কমে যাওয়া প্রাকৃতিক সম্পদের কারণে বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যতের পৃথিবীটা নিয়ে খুবই সন্দিহান। আরেকটা বিষয় হচ্ছে ভবিষ্যতে ভয়ানক সব যুদ্ধ অস্ত্র কি হাল করবে এই পৃথিবীর তা আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানেন। সত্যি কথা বলতে এসব যত সমস্যাই থাক না কেন প্রযুক্তির বিকাশ বহাল থাকবে।
ধারনা অনুযায়ী ২০৫০ সালের দিকে বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তির মিলিত উন্নয়নে মানুষের জীবনযাত্রা হবে অনেক বেশি বিলাস বহুল। কাউকে চালাতে হবে না, প্রেমিকা না জুটলেও অসুবিধা নেই থাকবে কৃত্রিম প্রেমিকা। সকল কাজ হবে সহজ থেকে সহজতর। তবে সেটা দক্ষ লোকদের জন্য।
পৃথিবীর পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেন একটা প্রশ্ন মানুষের মাথায় ঘোরপাক খাচ্ছিলো আর তা হচ্ছে এই পৃথিবী আর কতো বছর টিকবে? বিজ্ঞানীরা অনেক নিকট ভবিষ্যতে পৃথিবী ধ্বংসে লক্ষন দেখতে পারছেন।
যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীদের বক্তব্য অনুযায়ী, পৃথিবী কমপক্ষে ১৮৫ বছরের মতো বাচবে। কিন্তু বেশি দিন টিকতে পারলে তা হবে সাড়ে ৩ শত কোটি বছরের মতো।
বিজ্ঞানীদের গবেষণা অনুযায়ী একসময় সূর্যের তাপ এতো বেশি হবে যে পৃথিবীতে কোনো কিছুই বেচে থকবে না। বিশ্ব সৃষ্টির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সূর্য থেকে স্বাভাবিক দূরত্বে আছে পৃথিবী। গোল্ডিলক জোনে অবস্থানের কারণে পৃথিবীর সমুদ্রের পানি উত্তপ্ত হয়ে ফোটে না, আবার স্থায়ীভাবে বরফ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থাও হয় না। কিন্ত সুর্যের উত্তপ দিনে দিনে বাড়ছে।
সূর্যের কাছের গ্রহগুলোতে পানি ছাড়া কোনো কিছুর অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। সূর্য আর পৃথিবীর মধ্যকার দূরত্ব পরিবর্তন হবে না। কিন্তু এক সময় পৃথিবী হয়ে যাবে বসবাসের অযোগ্য। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ইস্ট অ্যাংলিয়ার বিজ্ঞানীরা এ কথা বলেছেন। তাদের মতামত সৃষ্টির সুচনালগ্ন থেকে পৃথিবী টিক থাকতে পারে ৬৩০-৭৮০ কোটি বছর। প্রায় ৪৫৫ কোটি বছর কেটে গেছে। এর অর্থ হচ্ছে পৃথিবী টিকবে ১৭৫-৩০০ কোটি বছরের মতো প্রায়।
তবে ইউনিভার্সিটি অব ইস্ট অ্যাংলিয়ার বিজ্ঞানী অ্যান্ড্রু রুশবে বলেছেন যে, ঐ সময়কালে সূর্যের উত্তপ্ত অঞ্চলের মাঝে থাকবে পৃথিবী। ফলে তাপমাত্রা এতোটাই বাড়বে যে সমুদ্রের পানি টকবক করতে করতে বাষ্পীভূত হতে থাকবে। অধিকাংশ জীব বিলুপ্ত হবে এমনকি হতে পারে সেটা মানুষও।
সময়ের পরিবর্তনে মানুষের জীবন এবং
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি একে অপরের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে
জড়িয়ে গেছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মানবজীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ যা সর্বদায় মানব কল্যাণে নিয়োজিত। দৈনন্দিন জীবনের প্রত্যেকটি কাজেই বিজ্ঞানের অবদান আছে। মানুষের জীবনে বিজ্ঞানের ও প্রযুক্তির এত ব্যবহারকে ইতিবাচক দিকেই রাখতে হবে। বিজ্ঞানের আলোয় পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ আলোকিত তাই বাদবাকিদের ও আলোকিত করতে হবে। বিজ্ঞানের ক্ষতিকর দিক থেকে মানুষকে মুক্ত রাখার জন্য সকল ধরনের বিজ্ঞানের অপব্যবহার থেকে বিজ্ঞানকে সরিয়ে রাখতে হবে। আর এভাবেই মানব কল্যাণ সম্ভব।
তো বন্ধুরা এই ছিলো আজকের এই টিউন। আশাকরি ভালো লেগেছে। ভালো লাগলে একটি জোসস দিয়ে আমাকে ধন্য করবেন। মন্তব্য থাকলে টিউমেন্ট করে আমাকে জানবেন। এতক্ষন ধরে এই টিউন পাঠ করার জন্য ধন্যবাদ। আজকের মতো এখানেই বিদায় নিচ্ছি আল্লাহ হাফেজ।
আমি মো তানজিন প্রধান। ২য় বর্ষ, বগুড়া আজিজুল হক কলেজ, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 3 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 91 টি টিউন ও 65 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 24 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 4 টিউনারকে ফলো করি।
কখনো কখনো হারিয়ে যাই চিন্তার আসরে, কখনোবা ভালোবাসি শিখতে, কখনোবা ভালোবাসি শিখাতে, হয়তো চিন্তাগুলো একদিন হারিয়ে যাবে ব্যাস্ততার ভীরে। তারপর ব্যাস্ততার ঘোর নিয়েই একদিন চলে যাব কবরে।