হ্যালো টিউটার বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আশাকরি আল্লাহর রহমতে সবাই ভালই আছেন। আল্লাহ তায়ালা সবাইকে যেন ভালো রাখে সবার জন্য এই দোয়া করি। সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আজকের টিউন।
আপনারা হয়তো নিশ্চয়ই জানেন যে বুধ হচ্ছে সৌরজগতের আটটি গ্রহের মধ্যে অন্যতম একটি গ্রহ। এটি সম্পর্কে আরও কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলে হয়তো আপনারা কেউ কেউ বলতে পারবেন আবার কেউ কেউ বলতে পারবেন না।
বুধ গ্রহ টি সম্পর্কে আপনাদেরকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানাতে নিয়ে এসেছি আজকের টিউন।
বুধ গ্রহের ইংরেজি নাম মার্কারি (Muecury)। সৌরজগতের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম গ্রহের কথা যদি বলা যায় তাহলে বুধ এর কথাই বলতে হয়। সৌরজগতের সবচেয়ে নিকটতম গ্রহ হচ্ছে বুধ।
এই গ্রহের ব্যাস ৪৮৫০ কিলোমিটার। এই গ্রহের ওজন পৃথিবীর ওজনকে ৫০ ভাগ করলে যে ওজন হবে তার তিনভাগের ওজনের সমষ্টির সমান। সূর্যের চারিদিকে পরিক্রমণ করতে বুধের গ্রহের সময় লাগে ৮৮ দিন। সূর্য থেকে এই গ্রহের গড় দূরত্ব ৫.৮ কোটি কিলোমিটার। যদিও অধিকাংশ গ্রহের উপগ্রহ রয়েছে কিন্তু বুধের কোন উপগ্রহ নেই।
যেহেতু এই গ্রহটি সূর্যের সবচেয়ে নিকটতম গ্রহ তাই এই গ্রহের তাপমাত্রাও সবচেয়ে বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, বুধের ভূমিতে সমতলভূমি সহ অসংখ্য গর্ত ও উঁচু-নিচু পাহাড় দেখা যায়।
-২.৬ থেকে +৫.৭ সীমা পর্যন্ত বুধ গ্রহের উজ্জ্বলতার সাধারণ মান হয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে এই গ্রহটিকে পৃথিবী থেকে দেখা যায় না। এর কারণ সূর্যের সাথে বুধের বৃহত্তম কৌণিক পার্থক্য। এই কোনের পরিমাণ হচ্ছে প্রায় ২৮.৩ ডিগ্রী। শুধুমাত্র সকাল ও সন্ধ্যার অল্প আলোয় এ গ্রহটি দৃশ্যমান হয়। বুধ গ্রহ সম্পর্কে আহরিত তথ্যের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে অনেক কম।
বুধ এ বিভিন্ন ধরনের অভিযান চালানো হয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য গুলো হলো নিম্নরুপ-
১৯৭৪-১৯৭৫ সালে বুধ অভিমুখী নভোযান মেরিনার-১০ নামক অনুসন্ধানী অভিযান চালানো হয়েছিল।
মেসেঞ্জার ২০০৪ থেকে ২০১৫ সালে প্রায় ৪০০০ বার অনুসন্ধানী অভিযান চালিয়েছিল বলে শোনা যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলে যে, ভৌত বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে বুধ অনেকটা চাঁদের মতো। কারণ চাঁদে রয়েছে প্রচুর খাদ আর বুধ গ্রহেও রয়েছে প্রচুর খাদ। গ্রহটিতে নেই কোন স্থিতিশীল বায়ুমণ্ডল এবং নেই কোন প্রাকৃতিক উপগ্রহ।
একটি বৃহত্তম লৌহ কেন্দ্র রয়েছে বুধ নামক গ্রহের। এই কেন্দ্র কর্তৃক উৎপাদিত চৌম্বক ক্ষেত্র পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের চেয়ে অধিক শক্তিশালী। বুধের তাপমাত্রা ৯০-৭০০ K এর মধ্যে থাকে। সবচেয়ে উত্তপ্ত স্থান এর নাম দেওয়া হয়েছে অর্ধসৌর বিন্দু এবং শীতলতম স্থান এর নাম হচ্ছে নিম্ন বিন্দু।
রোমানরা তাদের দ্রুতগতি সম্পন্ন বার্তা বাহক দেবতা মারকিউরি এর নাম অনুযায়ী এই গ্রহের নামকরণ করেছিলো। প্রাচীন কাহিনীতে মার্কারি বা বুধকে বলা হয় জুপিটার বা বৃহঃস্পতি ও মেইয়ার পুত্র। সন্ধ্যা বেলা অর্থাৎ গোধুলি সময়কালে আকাশে বুধকে খুব দ্রুত গতিতে চলতে দেখতে পাওয়া যায়। হয়তো এই এক কারণ বুধ এর এই ধরনের নামকরণের পিছনে।
পৃথিবীর যেমন ভূপৃষ্ঠ রয়েছে ঠিক তেমনই বুধ গ্রহের একটি পৃষ্ঠ রয়েছে। এ ধরনের পৃষ্ঠ ওয়ালা গ্রহকে বলা হয় পার্থিব গ্রহ। এরকম পার্থিব গ্রহের সংখ্যা চারটি তার মধ্যে সবচেয়ে ছোট গ্রহ হচ্ছে বুধ। এর ব্যাসের পরিমাণ ৪৮৭৯ কিমি বিষুবীয় অঞ্চলে। বুধ এর গঠনগত উপাদান এর মধ্যে রয়েছে ৩০% সিলিকেট এবং ৭০% ধাতব পদার্থ। সর্বোচ্চ ঘনত্বের সৌর জাগতিক বস্তু সমুহের তালিকার মধ্যে বুধ এর অবস্থান ২য় এবং এর ঘনত্ব ৫.৪৩ গ্রাম/সেমি³ যা পৃথিবী থেকে সামান্য কম।
জ্যোতির্বিজ্ঞানের ইতিহাসে একটি রেয়ার ঘটনা হচ্ছে পৃথিবীর সাপেক্ষে একটি গ্রহ অন্য একটি গ্রহের সামনে এসে আছড়ে পড়ে এবং এর ফলে একটি গ্রহ দেখা যায় না। এই পুরো বিষয়টিকে অদৃশ্যকরণ বলা হয়ে থাকে। তবে কয়েক শতাব্দি পর পরই বুধ ও শুক্র গ্রহ একে অপরকে অদৃশ্য করে দেয়। ইতিহাসে হয়তো এ ধরনের ঘটনা বারবার ঘটেছে।
অন্যান্য গ্রহগুলোকে যতটা পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে বুধ গ্রহকে তার তুলনায় অনেক কম পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। ১৮০০ সালে Johann Schroter বুধের পৃষ্ঠের বৈশিষ্ট্য লক্ষ করেন এবং তিনি এর কক্ষীয় পর্যায় পরিমাপ করেন ২৪ ঘণ্টা যা মুলত ভুল ছিল। ১৮৮০ সালে আবার Giovanni Schiaparelli বুধের মানচিত্র বিশ্লেষণ করেন এবং বলেন এর কক্ষীয় পর্যায়কাল ৮৮ দিন। টাইডাল লকিং এর সময় বুধের কক্ষীয় পর্যায় ৮৮ দিনই পরিমাপ করা হয়েছিল বলে জানা যায়। এই বিষয়টিকে সঙ্কালিক ঘূর্ণন নামে নামকরণ করা হয়। এই ঘটনাটি ঘটতে পারে পৃথিবীর উপগ্রহ চাঁদ এর ক্ষেত্রেও।
তো বন্ধুরা কেমন লাগলো আজকের টিউন। ভালো লাগলে জোসস দিবেন এবং মন্তব্য থাকলে টিউমেন্ট এ আমাকে জানাবেন। এতক্ষন আমার টিউন পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
আমি মো তানজিন প্রধান। ২য় বর্ষ, বগুড়া আজিজুল হক কলেজ, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 3 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 91 টি টিউন ও 65 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 24 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 4 টিউনারকে ফলো করি।
কখনো কখনো হারিয়ে যাই চিন্তার আসরে, কখনোবা ভালোবাসি শিখতে, কখনোবা ভালোবাসি শিখাতে, হয়তো চিন্তাগুলো একদিন হারিয়ে যাবে ব্যাস্ততার ভীরে। তারপর ব্যাস্ততার ঘোর নিয়েই একদিন চলে যাব কবরে।