হ্যালো টিউডার বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আশাকরি ভালোই আছেন। বরাবরের মতো আজও আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি সুন্দর একটি টিউন। সকলের সুস্থ জীবন কামনা করে শুরু করছি আজকের টিউন।
কোটি কোটি মানুষের মৃত্যুর একমাত্র কারণ করোনাভাইরাস এ বিষয়টা আপনারা নিশ্চয়ই জানেন। তাই ২০২০ সালটা সবার জন্য কতটা কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সেটাও বোঝেন।
তাই ২০২০ সাল একটা বেদনায় পরিপূর্ণ বছর। এ বছরে কেউ হারিয়েছেন তার আপজনকে কেউ বা আত্মীয়কে। এই দুঃখময় পরিস্থিতির সাথে যুদ্ধ করতে করতে আমরা পা রেখেছি নতুন বছরে।
তবে চির প্রচলিত একটি কথা আছে দুঃখ কখনো একা আসে না। সাথে নিয়ে আসে কিছু শিক্ষা কিছু জ্ঞান। ব্যাস্ত জীবনে আমরা হয়তো ভুলেই গিয়েছিলাম কিভাবে শরীরের যত্ন নিতে হয়। তবে করোনাভাইরাস কিন্তু আমাদের ঠিকই শিখিয়ে দিয়েছে কিভাবে শরীরের যত্ন নিতে হয় কিভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হয়। আর হয়তো আমি আপনাদেরকে বলে বুঝাতে পারব না কত কত মানুষের ঈমানের কারণ এই করোনা ভাইরাস।
আর এমনিভাবে ২০২০ সালে চিকিৎসা ক্ষেত্রে তৈরি হয়েছে কিছু নতুন আবিষ্কার। কতটা ব্যস্ততায় পরেছেন বিজ্ঞানীরা, গবেষকরা এবং চিকিৎসকরা করনা ভাইরাসের টিকা তৈরি করতে তা হয়তো আমি আপনাদেরকে বুঝাতে পারব না।
একের পর এক মৃত্যুর ঠেকাতে কাজ করে যাচ্ছেন বিভিন্ন হাসপাতালের নার্স সহ, অসংখ্য কর্মীরা। এছাড়াও করোনাভাইরাস নিয়ে এসেছে কারো কারো জীবনে বিরাট একটা অবকাশ।
২০২০ সালে চিকিৎসাক্ষেত্রে আবিষ্কৃত কয়েকটি যুগান্তকারী সাফল্য সম্পর্কে আপনারা কি জানেন?
অনেকেই হয়তো জানেন আবার অনেকেই জানেন না। যারা জানেন না তাদের চিন্তার কোন কারণ নেই। কারণ তাদেরকে জানানোর জন্যই আজকে আমার এই টিউন।
জিন থেরাপিসহ, অনকোলজি এবং হৃদরোগ সংশ্লিস্ট বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিষয়ে চমৎকার তথ্য পেয়েছেন চিকিৎসকরা। বিজ্ঞানীদের এসব ছোট আবিষ্কার পরবর্তীতে মানুষের সুস্থ থাকতে সহায়তা করবে।
২০২০ সালের অক্টোবরে দুই জন নারী গবেষককে রসায়ন বিভাগে নোবেল পুরষ্কার দেওয়া হয়। তারা ছিলেন এমানুয়েল শারপেন্টার এবং জেনিফার এ ডাউডনা। তারা জেনেটিক সিজার্স তৈরি করেন। নোবেল কমিটির ধারণা যে, এ আবিষ্কার চিকিৎসাশাস্ত্র কে উন্নতির একধাপ এগিয়ে নেবে।
এ আবিষ্কার ব্যবহার করে গবেষকরা গাছপালা, পশু এবং মাইক্রো অর্গানিজম এর ডিএনএ তে পরিবর্তন ঘটাতে পারছেন। জীববিজ্ঞানে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে বলে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত ভাবে হতাশাভোগী নয় বরং আশাবাদী। বিশেষজ্ঞদের ধারণা ক্যান্সারের চিকিৎসায় এ পদ্ধতি কাজে আসবে।
আমেরিকার নিউইয়র্কের ইংল্যান্ডার ইনস্টেকটিউনসউট ফর প্রিসিশন মেডিসিনের ডিরেক্টরi অলিভার এলিমেন্টো বলেন যে, ২০২০ সালকে জেনেটিক কোডের বছর বললে ভুল হবে না। Clustered Regularly Interspaced Short Palindromic Repeats- CRISPR বা জেনেটিক কোড প্রযুক্তির পাশাপাশি জিন থেরাপির আবিষ্কার চিকিৎসাক্ষেত্রে যুগান্তকারী আরেক ধরনের আবিষ্কার।
American Heart Association ২০২০ সালে তাদের নিজস্ব আবিষ্কার এর তালিকা জন সম্মুখ্যে উল্লেখ করেন। এর মাঝে Hypertrophic Cardiomyopathy (হাইপারট্রফিক কার্ডিওমায়োপ্যাথি) এর চিকিৎসায় দারুণ সাফল্য পেয়েছেন চিকিৎসকরা। এটি এমন এক ধরনের রোগ যেখানে হৃদপেশি ঘন ও শক্ত হয়ে যায়।
এটি পূর্বের চিকিৎসা পদ্ধতির তুলনায় উন্নত নতুন এক ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি যা Atrial Fibrillation-AFib এর প্রথম সারির চিকিৎসাপদ্ধতিকে পরিবর্তিত করতে পারবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন এ চিকিৎসা পদ্ধতি স্ট্রোক প্রতিরোধে কাজ করবে এবং হৃদরোগের প্রাথমিক চিকিৎসাতেই রোগীকে সুস্থ করা যাবে।
American Heart Association-AHA এর সভাপতি Mitchell S. V. Elkind বলেন যে, ২০২০ সালটি চিকিৎসা ক্ষেত্রের জন্য নিয়ে এসেছে দারুন সাফল্য। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, ডায়াবেটিস চিকিৎসায় ব্যবহৃত সোডিয়াম গ্লুকোজ ট্রান্সপোর্টার-২ ইনহিবিটর বা এসজিএলটি-২ ইনহিবিটার ওষুধটি হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় কার্যকরী প্রভাব ফেলে। রোগীর ডায়াবেটিস না থাকে ঔষধটি কাজ করে।
Elkind আরও বলেন যে, কোভিড-১৯ এর যেমন কোনো ওষুধ নেই ঠিক তেমনি আমরা রোগীদের সুস্থতা দান করতে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ প্রয়োগ করছি।
সবেচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো দেশ, জাতি নির্বিশেষে বিশ্বের সব চিকিৎসকই কোভিড মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ করছে যার ফলেই অগ্রগতিতে আমরা আশাবাদী।
নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির লাঙ্গোন হেলথ পার্লমুটার ক্যান্সার সেন্টারের পরিচালক Benjamin G. Neel বলে যে, ২০২০ সালে সবচেয়ে বেশি ক্যান্সার নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে। তার মতে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যান্সার প্রাথমিকভাবে শনাক্তকরণ করা যাবে যা আবিষ্কার হয়েছে মহামারির বছরেই।
তিনি আরো বলেন যে, এখানে শরীরের টিউমার গুলো রক্ত প্রবাহের মাধ্যমে DNA-তে ক্যান্সারের বিষয়টি প্রকাশ করে। এজন্য আমরা টিউমারগুলোকে নজরে রেখেছিলাম।
প্রযুক্তির ব্যবহার এর মাধ্যমে টিউমারের সংবেদন শীলতায়, ক্যান্সার পুনরাবৃত্তি এবং প্রোটিন ভিত্তিক পরীক্ষায় আমরা সফল হয়েছি।
পুরো বছরে অন্যান্য গবেষণার মধ্যে গবেষকরা জেনেটিক মিউটেশনের জন্য নতুন এক উপায় আবিষ্কার করেন। যার নাম দেওয়া হয়েছে ড্রাগিং। এছাড়াও প্রোস্টেট ক্যান্সারের জন্য দায়ী অ্যান্ড্রোজেন রিসেপটরের যা ক্যান্সার কোষগুলো বাড়ার কারণ তারপরিমাণ হ্রাস করতে একটি যৌগ তৈরির কাজ চলমান বলে জানান নীল।
রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে আলঝেইমার প্রকাশ পাছে। আলঝেইমার হলো এমন এক রোগ যেটি হলে মানুষের মস্তিষ্ক কোষে অস্বাভাবিক কিছু ঘটে যার ফলে মানুষের সৃতিভ্রম হয়। আলঝেইমার রোগ গবেষণায় ২০২০ সালে কিছুটা সাফল্য পাওয়া যায়। আলঝেইমা রোগের খবরটি যুগান্তকারী হলেও এখনো বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষা চলছে।
রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র অর্থাৎ CDC-The Centers For Disease Control And Preventio এর তথ্যমতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ লাখ মানুষ আলঝেইমার রোগে আক্রান্ত। তারা ধারণা করে এ সংখ্যা ২০৬০ সালের মধ্যে তিনগুণ হতে পারে।
২০২০ সালকে বেদনার সাথে বিদায় দিয়ে বেদনা মনে নিয়েই আমরা ২০২১ সালকে বরণ করেছি। নতুন বছরটি নিয়ে বিশেষজ্ঞরা আশাবাদী হোক এই প্রার্থনা আমারা সকলে করি।
আপনারা নিশ্চয় জানেন যে, ২০২০ সাল বিশ্ববাসীর জন্য দুঃখের বছর। দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের এ বছর শুধু আমাদের কাদিয়েছে। তবে এসব উদ্ভাবন আমাদের কিছুটা শান্তনাও দিয়েছে। তাই প্রকৃতির কাছে কৃতজ্ঞ থেকে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা উচিৎ।
আশাকরি টিউনটি ভালো লেগেছে। একটা জোসস দিয়ে আমাকে উৎসাহ দিবেন নতুন টিউন করার জন্য। আর কোন মন্তব্য থাকলে টিউমেন্ট এ আমাকে জানাবেন। এ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
আমি মো তানজিন প্রধান। ২য় বর্ষ, বগুড়া আজিজুল হক কলেজ, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 91 টি টিউন ও 65 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 24 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 4 টিউনারকে ফলো করি।
কখনো কখনো হারিয়ে যাই চিন্তার আসরে, কখনোবা ভালোবাসি শিখতে, কখনোবা ভালোবাসি শিখাতে, হয়তো চিন্তাগুলো একদিন হারিয়ে যাবে ব্যাস্ততার ভীরে। তারপর ব্যাস্ততার ঘোর নিয়েই একদিন চলে যাব কবরে।