ন্যানো-প্রযুক্তি কী? ন্যানো-প্রযুক্তি কীভাবে আমাদের সাথে জড়িত?

প্রকাশিত
জোসস করেছেন
Level 7
২য় বর্ষ, বগুড়া আজিজুল হক কলেজ, গাইবান্ধা

হ্যালো বন্ধুরা, আশাকরি সৃষ্টিকর্তা আপনাদের সবাইকে ভালো রেখেছেন। আর যারা অসুস্থ বা খারাপ অবস্থায় আছেন আল্লাহ তায়ালা যেন তাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা দান করেন। আজ নিয়ে এসেছি শিক্ষামূলক সুন্দর একটা টিউন। আশাকরি আপনাদের কাছে এটি ভালো লাগবে। চলুন দেখা যাক আজকের টিউনটি।

ন্যানো প্রযুক্তিঃ

ল্যাটিন শব্দ 'Nanus' অথবা গ্রিক শব্দ ' Nanos' থেকে Nano শব্দটির উৎপত্তি যার পারিভাষিক অর্থ হলো বামন বা জাদুকরী ক্ষমতা সম্পন্ন ক্ষুদ্র মানুষ।

ধাতব ও বস্তুকে সূক্ষভাবে কাজে লাগিয়ে ক্ষুদ্রাকৃতির স্কেল ব্যবহার করে বিজ্ঞান যে পদ্ধতিতে টেকসই ও স্থায়ী ডিভাইস বা উৎপাদ উৎপন্ন করে তাকে ন্যানো-প্রযুক্তি বলে।

ন্যানোমিটার দৈর্ঘ পরিমাপের একটি একক মাত্র।
এক ন্যানো-মিটার সমান এক মিটার এর ১০০ ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ ১ ন্যানোমিটার (nm) = ১০^-৯ মিটার (m)।
একটি চুল হচ্ছে এক লক্ষ ন্যানোমিটার প্রশস্ত এবং সবচেয়ে ছোট ব্যাকটেরিয়ার আকার ২০০ ন্যানোমিটার। ডিএনএ ডাবল হেলিক্স এর ব্যসার্ধ ২ ন্যনোমিটার।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগ পর্যন্ত মিলিমিটার স্কেলে সুক্ষ্মতা মাপা হত। এর পর এই প্রযুক্তির চালু করা হয়।
ন্যানোপ্রযুক্তি দুইটি পদ্ধতিতে ব্যবহৃত হয় -একটি হচ্ছে বটম-আপ এবং অন্যটি হচ্ছে টপ-ডাউন।

বটম-আপ পদ্ধতিতে ন্যানো ডিভাইস এবং উপকরণগুলি আণবিক স্বীকৃতির নীতির উপর ভিত্তি করে আণবিক উপাদানে দ্বারা তৈরি হয় এবং ইহারা রাসায়নিকভাবে একীভূত হয়। এই পদ্ধতিতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আকারের ছোট জিনিস দিয়ে জিনিস তৈরি করা হয়।

টপ-ডাউন পদ্ধতিতে একটি ন্যানো উপকরণ পরমাণু স্তরের নিয়ন্ত্রন ছাড়াই বৃহৎ সত্তা হয়ে গঠিত হয়।

আমেরিকান পদার্থবিদ রিচার্ড ফেম্যান (Rechard Feynman) কে ন্যানো প্রযুক্তির জনক বলা হয়।

ন্যানো প্রযুক্তির ব্যবহার

দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত প্রায় সকল ধরনের উপাদানেই এখন ন্যানো প্রযুক্তির ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। যেমন:

  • ১. রাসায়নিক শিল্প: সানস্ক্রিনও ব্যবহৃত টিটানিয়াম ডাই-অক্সাইড তৈরির কাজে, বিভিন্ন জিনিসের প্রলেপ তৈরির কাজে, পানি বিশুদ্ধকরণ এর কাজে। পরিশ্রাবণ পদ্ধতিতেও এ টেকনোলজি ব্যবহৃত হয়।
  • ২. খাদ্যশিল্প: খাদ্যজাত দ্রব্য প্যাকেজিং এর সিলভার তৈরির কাজে, খাদ্য স্বাদ তৈরিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের ন্যানোম্যাটেরিয়াল তৈরিতে।
  • ৩. চিকিৎসাক্ষেত্রে: ঔষধ তৈরির আনবিক গঠনে যাতে রোগাক্রান্ত সেলে সরাসরি ঔষধ প্রেরণ করা যায়।
  • ৪. ইলেকট্রনিকসশিল্পে: ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতিতে বিদ্যুৎ খরচ, ওজন এবং আকৃতি কমিয়ে কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়।
  • ৫. জ্বালানিতৈরিতে: হাইড্রোজেন আয়নের জন্য ফুয়েল সেল তৈরিতে।
  • ৬. নবায়নযোগ্য শক্তিশিল্পে: প্রচলিত সৌর কোষের চাইতে আরো অধিক সাশ্রয়ী মূল্যের ন্যানোটেক সৌর কোষ তৈরিতে এবং বিভিন্ন প্রকার ব্যাটারি তৈরিতে।
  • ৭.খেলাধুলা ও ক্রিয়া সরঞ্জাম তৈরিতে: খেলাধুলার সামগ্রী যেমন -টেনিস বলের স্থায়িত্ব বৃদ্ধির জন্য এবং বাতাসের গলফ বলের পজিশন ঠিক রাখার জন্য।
  • ৮.কম্পিউটার হার্ডওয়ার তৈরিতে: ভিডিও গেমস কনসোলে এবং পার্সোনাল কম্পিউটারে মেমোরি, গতি, দক্ষতা ইত্যাদি বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন হার্ডওয়্যার তৈরিতে।
  • ৯. রেফ্রিজারেটর: রেফ্রিজারেটরের সংরক্ষিত খাদ্যদ্রব্য দীর্ঘদিন ধরে টাটকা রাখতে এখন সাধারনত  ন্যানোটেকনোলজির ব্যবহার হচ্ছে।
  • ১০. ভারীশিল্প: বিমান, শোধনাগার ও মোটরগাড়ি প্রস্তুত করতে ন্যানো টেকনোলজি ব্যাবহৃত হয়।

ন্যানো প্রযুক্তির সুবিধা

  • ন্যানোটেকনোলজি যেমন-ন্যানো পার্টিকেল, ন্যানোটিউব ইত্যাদি দ্বারা উৎপাদিত পণ্য মজবুত টেকসই এবং স্থায়ী, আকারে তুলনামূলকভাবে ছোট এবং ওজনে কম হয়।
  • ন্যানোটেকনোলজির প্রয়োগে উৎপাদিত ঔষধ যা 'স্মার্ট ড্রাগ' নামে পরিচিত তা ব্যবহার করে দ্রুত আরোগ্য লাভ করা যায়।
  • ন্যানো ট্রানজিস্টর, ন্যানো ডায়োড, প্লাজমা ডিসপ্লে ইত্যাদি ব্যবহারের ফলে ইলেকট্রনিক শিল্পজগতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন হচ্ছে।
  • কোয়ান্টাম কম্পিউটিং বিকশিত হচ্ছে।
  • এই প্রযুক্তি প্রয়োগের ফলে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, ইলেকট্রনিক সামগ্রী বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী করা যায়।
  • ন্যানোপ্রযুক্তিতে তৈরি ফুয়েল সেল, সোলার সেল, ব্যাটারি ইত্যাদির মাধ্যমে সৌরশক্তিকে বেশি বেশি কাজে লাগানো যায়।

ন্যানো প্রযুক্তির অসুবিধা

  • ন্যানোটেকনোলজি ব্যয়বহুল। ফলে এই প্রযুক্তির প্রয়োগে উৎপাদিত পণ্য এখনো অধিক দামি।
  • ন্যানোটেকনোলজি পূর্ণ মাত্রায় বিকশিত হলে আণবিক শক্তি সহজলভ্য হয়ে যেতে পারে যা মানবজাতির জন্য বিপদজনক।
  • বিকল্প জ্বালানি উৎপাদনের ফলে তেল, গ্যাসের দাম কমে যেতে পারে।
  • প্রচলিত জ্বালানিসহ ডায়মন্ড, সোনা ইত্যাদির দাম কমে গেলে অর্থনীতির নতুন মেরুকরণ হতে পারে।
  • ন্যানোপার্টিকেল মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর।

ন্যানোটেকনোলজির কয়েকটি আবিষ্কারের বৈশিষ্ট্য

১.এ পদ্ধতি অবলম্বনে তৈরি পণ্য ভিজে না, ময়লা হয় না, শক্ত এবং মসৃণ হয়। এটা ছবির মাধ্যমে বোঝানো হলো। যেমন- কোন পোশাকে ময়লা বা পানি ছিটালে এটা ঝরে পরে যায়। যা সাধারণ পোশাক এ হয় না।

আমারা ছবিতে এটাই দেখতে পাচ্ছি যে ময়লা ছিটানোর পর একটা পোশাক ময়লা হয়েছে। এটা সাধারণ পোশাক। আরেকটা ময়লা হয়নি এটা ন্যানোটেকনোলজিতে তৈরি পোশাক।

২.এছাড়াও ন্যানোটেকনোলজি এর মাধ্যামে তৈরি হয়েছে একধরনের গ্লোভস যা ময়লা হয়না এবং হাতুর যা ভিজে না ফলে মরিচিকা ও ধরে না।

৩.ন্যানোটেকনোলজি এর মাধ্যমে মোবাইল এর প্রটেকশন গ্লাস এর বদলে ফাইবার দিয়ে তৈরি করা হয়েছে প্রটেকটর যা ভাঙ্গে না, চিড়ে যায় না।

৪.ন্যানোটেকনোলজি এর মাধ্যমে তৈরি হয়েছে এক বিশেষ ধরনের চশমা যা দ্বারা গান শোনা যায় এবং মোবাইল চার্জ করা যায়।

বন্ধুরা এই ছিলো ন্যানোটেকনোলজির কয়েকটি আবিষ্কার। আরো অনে কিছু আবিস্কার হয়েছে, হচ্ছে, হবে।

তো বন্ধুরা এই ছিলো আজকের টিউন। ভালো লাগলে জোসস 👍 দিয়েন। মন্তব্য  থাকলে টিউমেন্ট ✒️ করবেন। এ পর্যন্ত আমার সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। ইনশাআল্লাহ পরবর্তী টিউন এ দেখা হচ্ছে।

Level 7

আমি মো তানজিন প্রধান। ২য় বর্ষ, বগুড়া আজিজুল হক কলেজ, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 91 টি টিউন ও 65 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 24 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 4 টিউনারকে ফলো করি।

কখনো কখনো হারিয়ে যাই চিন্তার আসরে, কখনোবা ভালোবাসি শিখতে, কখনোবা ভালোবাসি শিখাতে, হয়তো চিন্তাগুলো একদিন হারিয়ে যাবে ব্যাস্ততার ভীরে। তারপর ব্যাস্ততার ঘোর নিয়েই একদিন চলে যাব কবরে।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস