মানব সভ্যতার প্রগতির ইতিহাসটা মানুষের উদ্ভাবনশীল ও সৃজনশীল চিন্তাধারার সাথে জড়িয়ে আছে ওতোপ্রত ভাবে। আগুন-চাকা-বর্ম থেকে সায়েন্স ফিকশনের বেতার যন্ত্র আর ভিডিও কলিং সবই এই চিন্তাধারার ফসল। মানব অস্তিত্বের ২০, ০০০ বছরে অসংখ্য মুক্তচিন্তার উদ্ভাবক আর গবেষকের অবদান স্পষ্ট আমাদের দৈনন্দিন জীবনে। উদাহরণে বলতে হয়, মাথার উপর ফ্যান হয়তো ঘুরতে পারতো না যদি মাইকেল ফ্যারাডে চৌম্বক আবেশ আবিষ্কার করতে সামান্য দেরী করতেন। হেডি লামার আর জর্জ আ্যন্থেলির গবেষণাপত্র গুলো মার্কিন সমরাস্ত্র থেকে মুক্তি না পেলে আজ হয়তো আমরা রেস্টুরেন্টে বসে Wifi ব্যবহার করে চেক-ইন দিতে পারতাম না। এরকম শত শত আবিষ্কার রুপ দিয়েছে আমাদের বর্তমান সভ্যতার। বাস্তব প্রেক্ষাপটে অনস্বীকার্য আরেকটি তথ্য হল, সব আবিষ্কার তার জনকের আশানূরুপ উপায়ে পরিচালিত বা ব্যবহৃত হয়েছে এমন নয়। পারমাণবিক শক্তি হল তার সব চেয়ে উপযুক্ত উদাহরণ।
সব ধরনের যুগান্তকারী আবিষ্কার আলোর মুখ দেখেছে এটা যদি কেউ চিন্তা করে থাকেন তবে তাদের ভ্রান্তি দূর করা অনেক প্রয়োজন। কিছু শ্রেনীর গবেষণাবিদ আর ইতিহাসবিদ ধারণা করেন, মানব সভ্যতার উপকারে যত আবিষ্কার ব্যবহৃত হচ্ছে বা হয়েছে তার থেকে বহুগুন বেশি আবিষ্কার হারিয়ে গিয়েছে কালের অতলে। পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, আবিষ্কারকের ব্যর্থতা আর সময়ের অনুপযোগীতার মত বিষয় গুলো ভূমিকা রেখেছে। এমন হারিয়ে যাওয়া আবিষ্কার গুলো আর তাদের আবিষ্কারকের পরিচিতি তুলে ধরার জন্যই এই প্রচেষ্টা।
৮) স্টারলাইট:
পারমাণবিক বিস্ফোরণের ভয়াবহতা সহনশীল একটি পদার্থের খোঁজ মানুষের অনেক দিনের। হিরোশিমা আর নাগাসাকির মর্মান্তিক সে দিন গুলোর পর থেকে পৃথিবীজুড়ে খোঁজ শুরু হয় বিপ্লবী একটি পদার্থের যা পারমানবিক বিস্ফোরণ থেকে নিরাপত্তা দিতে পারবে। এমনই পদার্থ স্টারলাইট। ১০০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সহনশীল এই পদার্থের আবিষ্কার করেন মরিস ওয়ার্ড। কয়েকটি পরীক্ষায় পদার্থটি একটি কাঁচা ডিম কে উক্ত তাপমাত্রা থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়। NASA আর পেন্টাগনে বহুল আলোচনার জন্ম দেয় পদার্থটি। আবিষ্কারের সত্ব চুরির ভয়ে মরিস আতংকগ্রস্থ থাকতেন। ফলে ২০১১ সালে তিনি যখন মারা যান তার সাথে অন্তিম শয্যায় চলে যায় স্টারলাইটের উৎপাদন প্রণালী। বর্তমানে নাসার কাছে জমা দেয়া নমুনাগুলো থেকে বিপরিত কৌশলে প্রণালীটি উদ্ধারের ব্যাপারেও রয়েছে আইনী বাধা। তাই স্টারলাঈট সত্যিকার অর্থে কালের অতলে হারিয়ে যাওয়া সাত রাজার গুপ্ত সম্পদ।
স্টারলাইট এবং কাঁচা ডিমের পরীক্ষা
আরো পড়ুন ঃ ডুমস ডে - পৃথিবী ধংসের ঘড়ি
৭) সিলফিয়াম:
রোমান সভ্যতা মুক্ত চিন্তা আর গবেষণার জন্য প্রসিদ্ধ। তাদের উদ্ভাবনশীলতার নমুনা হিসেবেই এই প্রতিবেদনে স্থান করে নিয়েছে সিলফিয়াম। বীর্যনাষক জন্মবিরতিকরণ ঔষধের প্রথম নিদর্ষণ এই সিলফিয়াম। সেকাল থেকেই রোমানদের প্রয়োজন ছিল জন্মবিরতিকরণের। অতিরিক্ত বড় পরিবার তাদের কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত একটি বিষয় ছিল। কনডমের প্রচলন হলেও ব্যয়বহুল আর অপূনর্ব্যবহারযোগ্য ছিল বলে সিলফিয়াম বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সিলফিয়াম ছিল গুল্ম জাতীয় একটি উদ্ভিদের ঘনীভূত নির্যাস। বিপুল জনপ্রিয়তা সত্বেও, উদ্ভিদটি আফ্রিকান উপকূল ব্যতিত অন্যত্র চাষ সম্ভব ছিল না যার ফলে ধীরে ধীরে প্রচলন কমে যেতে থাকে সিলফিয়ামের। ২০০০ হাজার বছর আগেই যদি ১৯৬০ সালের বিপ্লবের মত জন্মবিরতিকরণ জনপ্রিয়তা পেত তবে পৃথিবীর জনসংখ্যা সমস্যা অনেক খানি কমে যেতে পারতো।
আমি বিজ্ঞান ভুত। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 5 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 11 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।