কম্পিউটার উৎপত্তি হল কিভাবে ? ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কম্পিউটার কি হতে পারে ?জেনে নিন এর আগা গোড়া ইতিহাস !

কম্পিউটার ইতিহাস :
কালের বিবর্তনে ঘটে যাচ্ছ কত পরিবর্তন। মানুষ নামে এক প্রাণি করে যাচ্ছে কত আবিস্কার আর বদলে যাচ্ছে জীবন ধারন এ চক্র।
মানুষের হাতে তৈরি এমন এক যন্ত্রে আবিস্কার ফলে বদলে গেছে আমাদের জীবন। যেটা ছারা বর্তমান যুগে চলা এক কঠিন বিষয়। সেটি হল কম্পিউটার।
হ্যা এই সেই কম্পিউটার যেটা আমাদের জীবনের গতি পথ বদলে গেছে।
আজ সেই কম্পিউটার নিয়ে ইতিহাস লিখব এর জন্ম থেকে বর্তমান যুগ পর্যন্ত।

কম্পিউটার কী ? এর নাম উৎপত্তি!

কম্পিউট (Compute) শব্দটি থেকেই কম্পিউটার (computer) শব্দ তৈরি হয়েছে। বলা হয়, যে কম্পিউট করে সেই (মানুষ বা যন্ত্রই) কম্পিউটার। ১৩৭৫ থেকে ১৪২৫ খ্রিস্টাব্দ সময়কালে ‘কম্পিউট‘ (compute) শব্দটির উৎপাত্তি হয়। এই শব্দের প্রাচীন অর্থ হিসাব করা হয়,পরিমাপ করা,গণনা করা ও ধারনা করা ইত্যাদি। সেই হিসাবে যিনি বা যে যন্ত্র গণনা, হিসাব,ধারনা ও পরিমাপ জাতীয় কাজ করে তাকে কম্পিউটার বলা যেতে পারে। এক সময় কম্পিউটার বলতে মানুষ বোঝান হত। পরে ক্যালকুলেটর বা গণনা করার যন্ত্র কম্পিউঠার হিসেবে সমধিক পরিচিত হতে থাকে। তবে বর্তমানে কম্পিউটার আমরা একটি এমন ডিজিটাল যন্ত্রকে বুঝি যা প্রক্রিয়াকরন করতে পারে।

কম্পিউটার হলো “programmable digital electronic device” অন্যভাবে বলা হয়, A computer is a machine that manipulates data according to a list of instructions. বাংলাদেশের কপিরাইট আইনে কম্পিউটারের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে এভাবে, “কম্পিউটার অর্থে মেকানিক্যাল, ইলেকট্রোমেকানিক্যাল,ইলেকট্রনিক, ম্যাগনেটিক,ইলেকট্রম্যাগনেটিক,ডিজিটাল বা অপটিক্যাল বা অন্য কোন পদ্ধতির ইমপালস ব্যবহার করিয়া লজিক্যাল বা গানিতিক যে কোনো একটি বা সকল কাজকর্ম সম্পাদন করে এমন তথ্যপ্রক্রিয়াকরন যন্ত্র বা সিস্টেম” কে বোঝায়। সেই কারণে কম্পিউটার কেবল মাত্র গণনা, পরিমাপ বা হিসাব করার যন্ত্র নয়। কম্পিউটার কারর‌্য এখন সকলধরনের কাজ করে বা বা কাজের প্রকিয়া করে।

 

কম্পিউটারের অতি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

প্রাচীন গণনাযন্ত্র :  অ্যাবাকাস (Abacus) নামক গণনাযন্ত্রকে কম্পিউটারের ইতিহাসে প্রথম যন্ত্র হিসেবে  ধরা হয়। অর্থাৎ অ্যাবাকাস কম্পিউটারের ইতিহাস শুরু। অ্যাবাকাসছিল ছিল একটি ফ্রেমে সাজান অনেকগুলো গুটির স্থান পরিবর্তন করে গণনা করার যন্ত্র। যদিও অ্যাবাকাস কবে আবিষ্কৃত হয়  সঠিকভাবে বলা যায় না। অনেকেই একেম ব্যাবিলনীয় সভ্যতার তৈরি বলে মনে করেন।খ্রিস্ট পূর্ব ৪৫০/৫০০ অব্দে মিশর ও চীন দেশে গণনাযন্ত্র হিসেবে অ্যাবাকাস যন্ত্র তৈরি করা হয় বলে মনে করা হয়। বর্তমানের ইলেকট্রনিক প্রযুক্তির যুগান্তকারী বিকাশের যুগে চীন,জাপান,রাশিয়া ইত্যাদি দেশে, বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে, এখনও অ্যাবাকাস যন্ত্র ব্যবহার করা হয়।ঐতিহ্যের স্বাক্ষর হিসেবে এখনও তারা কয়েক হাজার বছরের পুরনো অ্যাবাকাস যন্ত্রের প্রচলন অব্যাহত রেখেছে। অ্যাবাকাস প্রাচীন সমাজে চাহিদা মেটাতে সক্ষম হলেও মধ্যযুগে এসে গণনা কাজের জন্য আরও উন্নততর যন্ত্রের প্রয়োজনীয় দেখা দেয়। জীবনের প্রয়োজন ও চাহিদার ভিত্তিতে তা এতটাই বদলে যায় যে, স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রেরে প্রয়জন দেখা যায়। গণানার কাজেকে সহজতর করারন লক্ষ্য সামনের রেখে স্কটিশ গণিতবিদ জন নেপিয়ার ১৬১৪ সালে এলগরিদম পদ্ধতির আবিস্কার করেন। এই পদ্ধতিকে নেপিয়ার হাড়ও বলা হয়ে থাকে। এই পদ্ধতির ব্যবহারে করে জার্মানির উইলিয়াম আউটরেট বৃত্তাকার স্লাইড রুল আবিস্কার করেন।এই পদ্ধতিকে নেপিয়ার হাড়ও বলা হয়ে থাকে। এই পদ্ধতির ব্যবহারে করে জার্মানির উইলিয়াম আউটরেট বৃত্তাকার স্লাইড রুল আবিস্কার করেন। সেটি ছিল ১৬২২ সাল।এর  পরের বছর উলিয়াম শিকার্ড নামক আরেক জন জার্মান একাধিক অঙ্ক বিষিস্ট সংখ্যার গুন করার জন্য চাকা বা গিয়ার চালিতে একটি যন্ত্র তৈরি করেন। ১৬৪২ সারে ব্লেইজ প্যাস্কাল (Blaise Pascal) নামের এক ফরাসী যুবক্ এই যান্ত্রিক গণনা যন্ত্রটি গণনা তৈরি করেন। এই যন্ত্রটির নাম ছিল প্যাস্কালেন। পরবর্তী তার সামনে কম্পিউটারের একটি আধুনিক প্রোগ্রামিংয়ের ভাষা (programming Language)-এর নাম দেওয়া হয়েছে প্যাস্কাল (Pascal)

কম্পিউটারের প্রাথমিক যুগ: প্যাস্কালের পরে ১৬৭১ সালে এক জার্মানি গনিতবিদ গটফ্রাইড ভন লিবনিজ (Gottafried Von  Leibniz)প্যাস্কালে যন্রের ভিত্তিক আরও উন্নত যান্ত্রিক গণনাযন্ত্র তৈরি করেন।

চার্লস ব্যাবেজ

তার এই যন্ত্রের সাহায্যে যোগ,বিয়োগ,গুন,ভাগ এবং উৎপাদক নির্ণয় করা যেত। তিনিই প্রথম পুনঃপুন যোগের মাধ্যমে গুণ করার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। স্টেপও রেকোনার নামের এই যন্ত্রটি তৈরি প্রায় একশ বছর পর ১৭৮৬ সালে জোহান হেলফ্লিক মুলার একটি গণনা যন্ত্রের ধারণা উপস্থাপন করেন। ১৮০১ সালে ফ্রান্সের জোসেফ মেরি জেকা্র্ড পাঞ্চকা্র্ড ব্যবহার শুরু করেন। বর্তমান কম্পিউটারের অভিধারণা বিশিষ্ট স্বয়ংক্রিয় গণনা যন্ত্র তৈরির চেস্টা করেন অধ্যাপক চার্লস ব্যাবেজ (Charles Babbage) ১৮০১ সালে। তিনি তার প্রস্তাবিত  যন্ত্রের নাম ঘোষণা করেন ‘অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন’ (Analytical Engine)। চার্লস ব্যাবেজ তাঁর সময়ের একজন শীর্ষস্থানীয় গণিতবিদ হিসেবে খ্যাত ছিলেন। ১৮২৮ সালে তিনি ইংল্যান্ডের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে লুকাসিয়াম অধ্যাপকের সম্মান লাভ করেছিলেন বিজ্ঞানী নিউটন। কিছুটা রগচটা মেজাজের মানুষ ব্যাবেজ তার জীবনের অধিকাংশ  সময় ব্যয় করেছেন তখনকার জন্য অবিশ্বাস্য রকম জটিল যন্ত্র তৈরি চেষ্টায়। তিনি এমন একটি যন্ত্রের কথা চিন্তা করেছিলেন, যে যন্ত্রের পাঞ্চকার্ডের সাহায্যে ইনপুট প্রদান করা হবে। ইনপুট ধারণের জন্ত্রটিতে থাকবে স্মৃতির ব্যবস্থা, প্রক্রিয়াকরনের জন্য গাণিতিক অংশ বা মিল (Mill)এবং স্বয়ংক্রিয় আউটপুট মুদ্রণের ব্যবস্থা। প্রক্রিয়াকরণের কাজ পরিচালনার জন্য থাকবে পর্যায়ক্রমিক প্রোগ্রাম নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। সমসাময়িক বিজ্ঞানীরা তার চিন্তাকে ‘ব্যাবেজের মূর্খতা’ বলে উপহাস করতেন। প্রকৃতপক্ষে চার্লস ব্যাবেজের চিন্তা ছিল শত বছরের আগাম চিন্তা। অর্থাৎ চার্লস ব্যাবেজ চিন্তার একশ বছর পর কম্পিউটার যে পর্যায়ে উপনীত হয়, সেইরুপ কম্পিউটারের চিন্তা তিনি একশ বছর আগে করেছিলেন। ১৮৩৩ সালে তার পরিকল্পিত ‘অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন’-এর ধারণাকে আধুনিক কম্পিউারের সূত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এজন্য

‘অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন’

চার্লস ব্যাবেজকে কম্পিউটারের জনক হিসেবেও অভিহিত করা হয়। চার্লস ব্যাবেজের পরিকল্পিত অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিনের নক্সা প্রণয়নের ব্যাপারে তাকে সর্বতোভাবে সাহায্য করেন ঐ সময়ের আর একজন খ্যাতিমান গণিতবিত, বিখ্যাত ইংরেজ কবি লর্ড বায়রনের কন্যা, লেডি এডা (Lady Augusta Ada Lovelace)। তাকেই বিশ্বের প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রাম হিসেবে উল্লেখ করা হয়।তার সম্মানের জন্য ১৯৮০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরকক্ষা মন্ত্রণালয় একটি আধুনিক কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজর নাম প্রদান করে এডা(Ada)।চার্লস ব্যাবেজের যন্ত্রতি বাস্তব রূপ পায়নি। তাতে যে সরকারি সহায়তা দেওয়া হত সময়মতো কাজ সম্পন্ন করতে না পারায় তাও এক সময়ে বন্ধ করে দেওযা হয়। কিন্তু চার্লস ব্যাবেজের পিতার ধারণা অনুযায়ী একটি অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন তৈরি করেন। ১৮৭১ সালে চার্লস ব্যাবেজের পরলোকগমনের পর থেকে ১৯৩৭ সাল প্রযন্ত প্রায় পৌনে এক শতাব্দী কম্পিউটারের উন্নয়ন প্রক্রিয়া বলতে গেলে থেমে থাকে। এ সময়ে পাঞ্চকার্ড দিয়েই উপাত্ত প্রক্রিয়াকরণের কাজ চলেছে। উল্লেখ করা যেতে পারে  যে,এই সময় কালে যেসব যন্ত্র প্রচলিত হয তার মাঝে রয়েছে ১৮৮৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ডর ফেন্ট-এর কম্পোসিটার, ১৯৮৮ সালে প্রচলিত উইলিয়াম বারোস- এর অ্যাডিং এন্ড লিস্টিং মেশিন ইত্যাদি।

 

ই্লেকট্রো মেকানিক্যাল যুগ : ১৮৮৫ সালেও আমেরিকায় উপাত্ত প্রক্রিয়াকরণের কাজ করা হত কলাম, পেন্সিল ও বুলালের সাহায্যে। কিন্তু ঐ সময় উপাত্ত প্রক্রিয়াকরণের কাজ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছিল। হাতে-কলমে উপাত্ত প্রক্রিয়াকরণের ফলাফল প্রায় ভুল ধরা পড়ত এবং কাজের সময়ও লাগত অনেক বেশি। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়,আমেরিকার ১৮৮০ সা সালের শুমারি (Census)শেষ করতে করতে প্রায় ১৮৯০ সালের শুমারির কাজ শুরু করার সময় পর্যন্ত গড়িয়েছিল। তবে সৌভাগ্যের বিষয়, একই সময় উপাত্ত প্রাক্রিয়াকরণের জন্য উন্নতমানের ও দক্ষ ইলেকট্রো মেকানিক্যাল পাঞ্চকার্ড যন্ত্র তৈরি হয়।আমেরিকার শুমারি সমস্যা সমাধানের জন্য সেন্সর ব্যুরো (Bureau of Census)-এর পরিসংখ্যানবিদ ড. হারম্যন হলেরিথ (Dr. Herman Hollerith) ১৮৮৭ সালের মেশিনের সাহায্যে পাঠযোগ্য অভিধারণা (concept)-এর ভিত্তিতে ‘সেন্সাস মেশিন’ নামে একটি যন্ত্রের নক্সা প্রণয়ন করেন। পরীক্ষামূলক চালনায় দেখা যায় ড.হলেরিথের সেন্সাস মেশিনের সাহায্যে উপাত্ত প্রক্রিয়াকরণের জন্য সময় লাগে পূর্বের তুলনার মাত্র আট ভাগের এক ভাগ। ফলে হলেরিথের সেন্সার মেশিনের সাহায্যেই আমেরিকার ১৮৯০ সালের শুমারির কাজ সম্পন্ন করা হয়। ১৮৮০ থেকে ১৮৯০ সাল। এই দশকে আমেরিকার ৫ কোটি থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৬ কোটি ৩০ লাখে দাঁড়িয়েছিল।হলেরিথের যন্ত্রের সাহায্যে ৩ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে ১৮৯০ সালের শুমারির কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছিল। ড. হলেরিথ ১৮৯৬ সালের তার উদ্ভাবিত যন্ত্র বানিজ্যিকভাবে তৈরি ও বিক্রায়ের জন্য কোম্পনি গঠন করেন। পরবর্তীতে তার কোম্পনির সঙ্গে একীভুত হয়ে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস মেশিন বা আইবিএম (IBM=International Business maching) নামে কম্পানি গঠিত হয়।পাঞ্চকার্ডে বর্গাকার ছিদ্রের সাহায্যে তৈরি সংকেতায়নের মাধ্যমে উপিাত্ত সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। এরপর কার্ডগুলো ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল যন্ত্রের প্রবেশ করিয়া দেওয়া হয়। এ পাঞ্চকার্ডের উপাত্ত প্রক্রিয়াকরণের কাজ সম্পন্ন করে। কিন্তু পাঞ্চকার্ডের ট্রে বদল করা, মেশিন প্রবেশ করানো,মেশিন থেকে বের করা, কোনো মেশিন চালু করা, কোনটি থামানো ইত্যাদি কাজগুলো সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরই হাতে ধরে করতে হত। কম্পিউটার যন্ত্র উদ্ভাবিত হওয়ার পরই এ সব কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পদিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয় ।

 

এ বি সি কম্পিউটার

ইলেকট্রনিক যুগ: ইলেকট্রনিক কম্পিউটারের চিন্তা প্রথম শুরু করেন পদার্থবিদ্যা ও গনিতের অধ্যাপক ড. জন ভিনসেন্ট আটনাসফ (Dr. Jonh Vincent Atanasoff)। তার গণনা কাজের জন্য উপযুক্ত যন্ত্র তখন  যেত না। তাই তিনি নিজেই উন্নত ধরনের গণনা যন্ত্র তৈরির পরিকল্পনা করেন এবং ১৯৩৭-৩৮ সালের মধ্যে ইলেকট্রনিক কম্পিউটার তৈরি করেন। তার ও তার সহযোগীদের নাম অনুসারে যন্ত্রটির নাম  রাখা হয় আটনাসফ-বেরি কম্পিউটার (Atanasoff-Berry Computer), সংক্ষেপে এবিসি কম্পিউটারেই প্রথম মজুদ (Storage)এবং গাণিতিক/যুক্তিমূলক কাজের জন্য ভ্যাকুয়াম টিউব (Vacuum Tube) ব্যবহার করা হয়। লন্ডন শহর থেকে ৪০ মাইল দূরে সামরিক বাহিনীর কোড গাইডার স্কুলে এই প্রকাল্পের কাজ করা হয়েছিল।এবিসি কম্পিউটার তৈরি করা হয়েছিল শুধুমাত্র গাণিতিক সমীকরণ জাতীয় কাজের বা সমস্যা সমধানের জন্য। ড. আটানাসফ এবং বেরি ১৯৪০-১৯৪১ সালের মধ্যে জন মউসলি  (John W. Mauchly)-এর  সংঙ্গে দেখা করে তাদের তৈরি  যন্ত্র দেখান। জন মউসলি তখন পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মুর স্কুল অব ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে কর্মরত ছিলেন। জন মউসলি তখন বহুমুখী কম্পিউটার তৈরির চিন্তা শুরু করেন এবং চল্লিশের দশকের গোড়ার দিকে তারই ছাত্র জে. প্রেসপার একার্ট (J. presper Eckert)-এর সহযোগিতায় কাজ শুরু করেন। ১৯৩৭  সালে হার্ভার্ড  বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিতের অধ্যাপক হওয়ার্ড আইকেন (Howard G. Aicken) স্বয়ংক্রিয় গণনাযন্ত্র তৈরির উদ্যেগ গ্রহন করেন। হলেরিথের পাঞ্চকার্ড প্রযুক্তির স সঙ্গে বৈদ্যুতিক ও যান্ত্রিক পদ্ধতির সমন্বয় ঘতিয়ে তিনি তার স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের তৈরির পরিকল্পনা গ্রহন করেন। আইবিএম কোম্পানির  প্রকৌশলীদের সঙ্গে নয়ে তিনি ১৯৪৪ সালের মধ্যে তার যন্ত্রটি তৈরি করতে সক্ষম হন। যন্ত্রটি মার্ক-১ (Mark-1) ডিজিটাল কম্পিউটার নামে প্রচলিত হয়। গণনা্ যন্ত্রটির অভ্যন্তরীণ কাজ বিদ্যুৎচুম্বকীয় রিলে (Electromagnetic Relay)-এর সাহায্যে নিয়ন্ত্রিত হত। গাণিতিক কাজ সম্পাদনের অংশ ছিল যান্ত্রিক (Machanical)। গঠন প্কৃতি দিক থেকে মার্ক-১ ছিল ইলেকট্রো মেকানিক্যাল কম্পিউটার। বৈশিষ্ট্যহত ভাবে এর অনেক কিছুই চার্লস ব্যাবেজের পরিকল্পিত যন্ত্রের সঙ্গে মিল ছিল

কম্পিউটারের প্রজন্ম বিভাগ :

কম্পিউটারের যাত্রা শুরু গননাযন্ত্র দিয়ে। সময়ের প্রয়জনে ধাবে ধাবে বিকাশ লাভ করে কম্পিউটার বর্তমান পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। বিকাশের একেকটি ধাপকে একেকটি প্রজন্ম হিসেবে চিহ্নত করা হয়।প্রজন্ম বিভাগকে সঠিক দিন তারিখ ধরে সীমারেখা টানা যায় না।এক অবস্থা থেকে পরবর্তী অবস্থায় উত্তরণের মাঝখানের সময়কে ক্রান্তিকাল (Transition Period) হিসেবে অভিহিত করা হয়। বর্তমানে যে  সব মাইক্রোকম্পিউটার ব্যবহার করা হয় এ সব কম্পিউটার হচ্ছে চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটার। এর আগে আরও তিন প্রজন্মের কম্পিউটার পেছনে ফেলে কম্পিউটার বর্তমান প্রজন্মে উপনীত হয়েছে।

প্রথম প্রজন্ম (১৯৪৬-৫৯):

এনিয়াক-১ কম্পিউটার

কম্পিউটারের প্রথম প্রজন্ম হচ্ছে ভ্যাকুয়াম টিউব ব্যবহার করে তৈরি করা যন্ত্রসমূহের যুগ। এ প্রজন্মের কম্পিউটারে নানা প্রকার দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতা ছিল। তবুও এই যন্ত্রগুলোই পরবর্তী প্রজন্মের নতুন দিগন্তের ভিত্তি তৈরি করেছে। সামরিক বাহিনী সময় কৌশলের প্রয়োজনীয়তা প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটার প্রযুক্তি বিকাশের ব্যাপক সহায়তা করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মান সংকেতলিপির পাঠোদ্ধরের জন্য ব্রিটিশ সামরিক বাহিনী ULTRA নামের একটি প্রকল্প গ্রহন করে। ব্রিটিশদের দ্বারা ১৯৭৪ সালে স্বীকৃত এই প্রকল্পের আওতায় ১৯৪৩ সালে প্রথম কলোসাস নামের একটি কম্পিউটার তৈরি করা হয়।১৯৪৬ সালে সমাপ্ত এনিয়াক ছিল বহুমুখী কাজের জন্য তৈরি কম্পিউটার। এদিক থেকে এনিয়াক কম্পিউটার  হচ্ছে প্রথম  পূর্ণাঙ্গ বা সফল ইলেকট্রনিক  কম্পিউটার। এনিয়াক-এর পুর্ণরূপ  হচ্চে Electronic Numerical Integrator And Calculator (ENIAC). এনিয়াক কম্পিউটারে ১৮০০০ ভ্যাকুয়াম টিউব ব্যবহার করা হয়েছিল।এটি 20x40 ফুট মাপের জায়গা জুড়ে স্থাপন করা হয়েছিল। এ যন্ত্রটির ওজন ছিল ৩০ টন। এই এনিয়াক কম্পিউটার সেকেন্ডে  ৫০০০ যোগ এবং ৩০০ গুনের কাজ করতে পারত। ঐ সময়ের মার্ক-১ এবং অন্যান্য গণনা যন্ত্রের চেয়ে এনিয়াক ৩০০ গুন বেশি গতিতে কাজ করতে পারত। তবে এনিয়াক কম্পিউটারের অভ্যন্তরে নির্বাহ সংকেতে  বা পরিচালনা  নির্দেশ ধারন করার কোনো ব্যবস্থা  ছির না  বাইরে স্থাপিত প্লাগ বোর্ড ও সুইচের সাহায্যে পরিচালনা নির্দেশ বা নির্বাহ সংকেত প্রদান ও নিয়ন্ত্রন করতে হত। ১৯৫৫ সাল পযন্ত সেনাবাহিনীর কাজে এনিয়াক কম্পিউটরি ব্যবহার হয়। ১৯৪০ সালের মাঝামাঝি সময়ে খ্যাতনামা গণিতবিদ জন ভন নিউম্যান (John Von Neumanm) এক নিবন্ধে উল্লেখ করেন যে কম্পিউটার য৩ন্ত্রে জন্য বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি ব্যবহার করা যেত পারে এবং যন্ত্রের অভ্যন্তরেই উপাত্ত ও নির্বাহ সংকেত মজুদের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এ ধারণা অবশ্য আটানাসফের এবিসি কম্পিউটারেই প্রথম কাজে লাগানো হয়েছিল। তিনি এধারণাটি লিখিত আকারে প্রকাশ করেন। তার এ অবিধারণা সংরক্ষিত প্রোগ্রামের ধারণার বিত্তিতেই এডভ্যাক (EDVAC=Electronic Discrete Variable Automatic Computer) কম্পিউটার তৈরি করা হয়। সংরক্ষিত প্রোগ্রামের সুবিধা হল,এতে আগের মতো প্রত্যেক বার নতুন  প্রোগ্রামের শুরুতে অসংখ্য তার (Wire) ও সুইচ বিন্যস্ত করে এবং ব্যবহার করে নির্বাহ সংকেত প্রদানের ও নিয়ন্ত্রণরে ব্যবস্থা করতে হত না। উপাত্তের মতোই কম্পিউটার স্মৃতিতে বা মজুদ অংশে (Storage Area) নির্বাহ নির্দেশমালা প্রোগ্রাম আকারে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া যেত। ১৯৪৬-৫২ সালের মধ্যে মু্র স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিজ্ঞনীরা এডভ্যাক কম্পিউটার তৈরি করেন। আমেরিকা এডভ্যাক কম্পিউটার তৈরি সময়েই ব্রিটেনেও সংরক্ষিত প্রোগ্রামের অভিধারণার ভিত্তিতে আর একটি কম্পিউটার তৈরি হিচ্ছিল। ১৯৪৯ সালের মে মাসে প্রথম প্রোগ্রামে নির্বাহের মধ্যে দিয়ে এ কম্পিউটারটির ব্যবহার শুরু হয়। এডস্যাক (EDSAC=Electronic Delay Storage Automatic Calculator) নামে পরিচিতি এ কম্পিউটার ১৫০০ মাইক্রোসেকেন্ডে গুণের কাজ করতে পারত। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গাণিতিক গবেষণাগারে অধ্যাপক মরিস উইলকিস (Prof. Mauric Wilkes)-এর নেতৃত্বাধীন একদল বিজ্ঞানী এডস্যাক কম্পিউটার তৈরি করেন। প্রকৃতপক্ষে এডস্যাক কম্পিউটারকেই প্রথম সংরক্ষিত প্রোগ্রাম বিশিষ্ট ইলেকট্রনিক কম্পিউটার হিসেবে ধরা হয়। এডভ্যাক কম্পিউটার তৈরির কাজ বিলম্বিত হওয়ার কারন ছিল প্রেসপার একার্ট এবং জন মউসলি ১৯৪৬ সালে তাদের নিজস্ব একটি কোম্পানি গঠন করেন এবং ইউনিভ্যাক (UNIVAC=Universal Automatic Computer) নামে কম্পিউটার তৈরির কাজ আরম্ভ করেন। ১৯৫১ সালে প্রথম ইউনিভ্যাক-১ (UNIVAC-1)কম্পিউটারটি তৈরি করা হয় এবং সেন্সাস ব্যুরোতে স্থাপন করা হয়। সেন্সাস ব্যুরো এ কম্পিউটারটি প্রায় ১২ বছর ব্যবহার করে। ইউনিভ্যাকই ছিল প্রথম ডিজিটাল কম্পিউটার। ইউনিভ্যাক-১ স্থাপন করার পর সেন্সাস ব্যুরো আইবিএম-এর পাঞ্চকার্ড যন্ত্রপাতি পরিহার করে। এ পর্যায়ে আইবিএম কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতার পুত্র টমাস ওয়াটসন কম্পিউটার ব্যবসায়ের জগতে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহন করেন। তিনি ১৯৫২ সালে আইবিএম ৭০১ এবং ১৯৫৩ সালে আইবিএম ৬৫০ কম্পিউটার বাণিজ্যিক ভিত্তিতে তৈরি করেন।

আইবিএম ৬৫০ সহস্রাধিক পরিমাণে বিক্রয় হয়। বাণিজ্যিকভাবে ডিজিটাল কম্পিউটার তৈরি ও বিক্রয় এ সময় থেকেই উল্লেখযোগ্যভাবে শুরু হয়। ১৯৫৪ থেকে ১৯৫৯ সালের মধ্যে বহু ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান উপাত্ত প্রক্রিয়াকরণের জন্য কম্পিউটার ক্রয় করে্।যদিও এসব কম্পিউটার বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়েছিল।বিজ্ঞানের বাইরের জগতের ব্যবহারকারীরা কম্পিউটারকে ব্যবসায়িক হিসেব-নিকেশের যন্ত্র হিসেবে মনে করত। তাদের চাহিদার কথা ভেবেই বেতন বিল তৈরি করার মতো কিছু কাজের জন্য প্রথম বাণিজ্যিক প্রোগ্রাম প্রণয়ন করা হয়। এনিয়াক থেকে শুরু করে এ যাবৎ আলোচিত প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারগুলোতে ভ্যাকুয়াম টিউব ব্যবহারের জন্য প্রচুর বিদ্যুৎ খরছ হত। আর মেশিনের ভাষার প্রোগ্রাম রচনা করার কাজও ছিল কষ্টসাধ্য। বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি ছারা মেশিনের ভাষায় প্রোগ্রাম রচনা করা সম্ভব ছিল না। এ ছারা ভ্যাকুয়াম টিউবগুলোর আয়ু ছিল ক্ষণস্থায়ী। অনবরত টিউব নষ্ট হত এবং সেগুলো বদল করতে হত। প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো হচ্ছে-

. ভ্যাকুয়াম টিউবের ব্যবহার

. পাঞ্চকার্ডের সাহায্যে ইনপুট-আউটপুট প্রদান

. চলার সময় উচ্চ শব্দ হত

. প্রচন্ত উত্তাপ সৃষ্টি হত

. প্রোগ্রাম রচনায় সংকেতের ব্যবহার করা

অসংখ্য ডায়োড ও ট্রায়োড,ভালভ,রেজিস্টার,ক্যপাসিটর ইত্যাদি যন্ত্রাংশ ব্যবহার করার ফলে প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারগুলো বিশাল আকৃতির হত এবং অতিরিক্ত বিদ্যুৎ শক্তি ব্যবহারের কারণে কম্পিউটার যন্ত্র খুব তাড়াতাড়ি উত্তপ্ত হয়ে যেত। কোন কোন ক্ষেত্রে পানি ঢেলে উত্তপ্ত যন্ত্র ঠান্ডা রাখার ব্যবস্থা করা হত। এ সব সমস্যা কাটিয়ে ওঠার জন্য ১৯৫৯ সাল থেকে দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটার তৈরির যাত্রা শুরু হয়।

দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটার (১৯৫৯-৬৫)

ভ্যাকুয়াম টিউব

দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারগুলো প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারের তুলনায় ছিল অনেক বেশি গতি সম্পন্ন, অনেক বেশি কাজের ক্ষমতা বিশিষ্ট এবং আকারের ছোট। দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের প্রথান পরিবর্তন ও অগ্রগতি হচ্ছে ভ্যাকুয়াম টিউবের পরিবর্তে ট্রানসিস্টারের ব্যবহার। ট্রানসিস্টার ব্যবহারের ফলে দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের আকার ছোট হয়ে আসে। আমেরিকার বেল ল্যাবরেটরি তে ১৯৪৭ সালে জন বারডিন (John Bardeen), উইলিয়াম শকলে (William Shockley) এবং ওয়াল্টার ব্রাট্রেইন (Walter Brattain)  ট্রানজিস্টার উদ্ভবন করেন। ভ্যাকুয়াম  টিউবের ব্যবহারে বিদ্যুৎ খরছ পড়ে অনেক কম, যন্ত্রাংশ গরম হয়না, কর্ম-সময় বেড়ে যায়। দ্বিতী প্রজন্মের কস্পিউটারে মডিউলার ডিজাইন ব্যবহার করা হয় এবং সার্কিটের প্রধান অংশ ভিন্ন ভিন্ন বোর্ডে স্থাপন করা হয়। দ্বিতীয় প্রজন্মের কস্পিউটার থেকেই উচ্চ স্তরের ভাষায় প্রোগ্রাম রচনা ও ব্যবহার শুরু হয়। এ ছারা চৌম্বক কোরের ব্যবহারও এ প্রজন্মের কম্পিউটার থেকেই শুরু হয়।এ সময়ের জনপ্রিয় কম্পিউটার হিসেবে বযবহৃত হয়েছে হানিওয়েল-২০০, আইবিএম-১৪০০,১৬০০ আইবিএম ১৪০১,১৬২০, সিডিপি ১৬০৪ আরসিএ ৩০১ ও ৫০১, এনসিআর-৩০০ ইত্যাদি।

দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারগুলোর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো হচ্ছে-

. ট্রানস্টিারের ব্যবহার

. ম্যাগনেটিক কোর মেমোরির ব্যবহার

. ফোরট্রোন/কোবর ইত্যাদি প্রোগ্রামিং ভাষার উদ্ভব, বিকাশ ও ব্যাপক ব্যবহার

. যন্ত্রপাতি ছোট হয়ে আসা।

. কম উত্তপ্ত হওয়া

. কাজের গতি বৃদ্ধি

. আস্থা ও নির্ভরশীলতা অর্জন।

তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটার (১৯৬৫-৭১)

দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিাউটার চালু থাকা অবস্থায় নতুন ধরনের সার্কি

 

ট উদ্ভাবনের চেষ্টা শুরু হয়। অনেকগুলো ট্রানসিস্টর এবং অন্যান্য উপকরণ মিলিয়ে একীভূত সার্কিট (Integrated Circuit) তৈরি করে ক্ষুদ্র সিলিকন পাতের উপর স্থাপন করার মাধ্যমে এরূপ সার্কিট তৈরির কাজ শুরু হয় ১৯৫৫ সালে। উইলিয়াম শকলে (William Sockley) স্থাপিত শকলে সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানিতে এ সার্কিট তৈরির কাজ শুরু হয়। এ সময় রবার্ট নইসি (Robert Noyce) এবং আরও কয়েকজন শকলের প্রতিষ্ঠান ছেরে নিজেরা ফেয়ারচাইল্ড সেমিকন্ডাক্টর নামে নতুন কোম্পনি গঠন করেন। রবার্ট নইসি ও তার অন্য এক সহযোগী জ্যাককিলবি (Jack Kilby) প্রথম সমন্বিত সার্কিট (Integrated Circuit) তৈরি করার কৃতিত্ব অর্জন করেন। ফেয়ারচাইল্ড-এর ব্যক্তিদের অনেকেই পরে আরও অনেক কোম্পানি গঠন করেন। সমম্বিত সার্কিট ব্যবহারে করে তৈরি করা হয় তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটার। ফলে কম্পিউটারের আকার আরও ছোট হয়ে আসে,দাম কমে যায় এবং কাজ করার ক্ষমতা বহুগুণে বেড়ে যায়। তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের সঙ্গে আরও কিছু বাড়তি সুযোগ যুক্ত হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য  হচ্ছে মুদ্রিত আকারে আউটপুট পাওয়ার জন্য লাইন প্রিন্টারের ব্যবহার। ১৯৪৬ সালে আইবিএম তার মেইনফ্রেম কম্পিউটার সিস্টেম/৩৬০ ঘোষণার মধ্যে দিয়ে তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের সূচনা করে। তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের প্রসেসরে নির্দেশমালা (Instruction Set) বিল্ট-ইন থাকত। এ সব নির্দেশমালার অনেকগুলোই বৈজ্ঞানিক কাজ প্রক্রিয়াকরণে জন্য বিশেষভাবে উপযোগী ছিল। কাজেই তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটার উভয় প্রকার কাজের জন্যই সমানভাবে উপযোগী ছিল। এ প্রজন্মের উল্লেখযোগ্য অন্যান্য কম্পিউটারগুলো ছিল আইবিএম ৩৬০ ও ৩৭০ ও পিডিপি-৮ ও ১১ এবং জিই-৬০০ ইত্যাদি। ১৯৬৪ থেকে ১০৭০ সালের মধ্যে তৈরি ও ব্যবহৃত কম্পিউটারগুলোকে তৃতীয় প্রজন্মের অন্তর্ভুক্ত বলে ধরা হয়।

 

তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারগুলোর বৈশিষ্ট্যগুলো হচ্ছে-

. আইসি বা ইন্টিগ্রেটেড সার্কিটের ব্যবহার

. সেমি কন্ডাক্টর মেমোরির ব্যবহার

. হাই লেভেল ল্যাংগুয়েজের ব্যবহারৎ

. আউটপুটের জন্য ভিডিও ডিসপ্লে ইউনিট (VDU) এবং লাইন প্রিন্টারের ব্যবহার

চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটার (১৯৭১-বর্তমান)

ক্ষুদ্রাকারের সিলিকন পাতের উপর ইলেক্ট্রনিক উপকরণ স্থাপন করে সমন্বিত সার্কিট তৈরির প্রক্রিয়া ১৯৬৫ সাল থেকে প্রতি বছর গড়ে দ্বিগুন হারে বৃদ্ধি পেতে থাকে। এই অগ্রসরতার এক পর্যায়ে তৈরি হয় মাইক্রোপ্রসেসর চিপে কম্পিউটার পরিচালনার জন্য গাণিতিক/যুক্তিমূলক প্রক্রিয়াকরণের কাজ এবং নির্দেশ নির্বাহের জন্য নিয়ন্ত্রণমূলক কর্ম পরিচালনার জন্য  প্রয়োজনীয় সব সার্কিট স্থাপন করা থাকে। কম্পিউটারে ব্যবহৃত মাইক্রোপ্রসেসর তৈরির সূচনা হয় ক্যালকুলেটরের জন্য সেমিকন্ডাক্টর মেমোরি চিপ উদ্ভাবনের মধ্যে দিয়ে। এই চিপের প্রধান ডিজাইনার ছিলেন ইনটেলের ফেডেরিকো ফ্যাগিন ও টড হফ এবং বুশিকমের মাসাটুশি সিমা। সেই সময়ের ইনটেলের এই উদ্ভাবন টিমের ব্যবস্থাপক ছিলেন লেসলি এল ভাডার্জ। ইনটেলের প্রথম চিপটি ৪০০০ নামে পরিচিত ছিল। তবে ৪০০৪ প্রসেসরটি প্রথম বাজারে আসে। এটির প্রোগ্রামে এড্রেস ছিল ১২ বিট। এটি ২৩০০ ট্রানজিস্টার দিয়ে প্রস্তুত ছিল। এক বছরের মাঝে এতে ৩৩০০ ট্রানজিস্টর ব্যবহৃত হয়। ৪০০৪ চিপটি ১৯৭১ সালের ১৫ নভেম্বর বাজারজাত করা হয়। এই চিপের চতুর্থ সংস্করণ ৮০৮০ দিয়েই কার্যতমাইক্রো কম্পিউটারের বিপ্লবের সূচনা হয়। বলা হয়ে থাকে যে, ইনটেলের ৪০০৪ চিপটির ক্ষমতা ছিল ১৯৪৬ সালের এনিয়াক কম্পিউটারের সমান। এনিয়াকের ওজন ছিল ২৭ টন এবং এর জন্য ৬৮০ বর্গফুট জায়গা দরকার হত। অথচ ৪০৪০ তালুতে রাখা যেত। মূলত মাইক্রোপ্রসেসর থেকেই চতুর্থ  প্রজন্মের কম্পিউটার তৈরির সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। ইনটেল ১৯৭৪ সালে ৮০৮০ মাইক্রোপ্রসেসর তৈরি করে। ১৯৭৫ সালে আলতেয়ার নামে প্রথম কম্পিউটার দিয়ে পিসির যাত্রা শুরু হয়। ১৯৭৬ সালের মধ্যে অ্যাপলসহ অনেকগুলো কম্পিউটার কোম্পানির সফল মাইক্রো কম্পিউটারের তৈরির মধ্য দিয়ে চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটারের দ্রুত প্রসার ঘটে।

চতুর্থ প্রজন্মের মাইক্রো কম্পিউটার একেবারে টেবিলের উপর বসিয়ে কাজ করার মতো আকারে ছোট হয়ে আসে। দামও কমে আসে অভাবনীয়রূপে। তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের তুলনায় চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটারের আকার ও দাম কমে  আসার পাশাপাশি কাজের ক্ষমতা ও গতিও বৃদ্ধি পায় বহুগুণে। চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটারের সাহায্যে বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রাম ব্যবহার করে আমাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনের প্রায় সব ধরনের কাজ করা যায়। চতুর্থ প্রজন্মের মাইক্রো কম্পিউটারই সাধারণ স্তরের মানুষের জন্য কম্পিউটার ব্যবহার সুযোগ করে দিয়েছে এবং কম্পিউটার ব্যবহারের জ্ঞান ও দক্ষতাকে পেশা হেসেবে গ্রহণের সুযোগ সৃস্টি করেছে। চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্যগুলো হচ্ছে-

ক. ভেরি লার্জস্কেল ইন্টিগ্রেসন বা VLSI ‍চিপের ব্যাপক ব্যবহার ও অভাবনীয় উন্নয়ন ও বিকাশ

খ. মাইক্রোপ্রোসেসর ও মাইক্রোকম্পিউটারের আবির্ভাব, বিকাশ ও বিশ্বময় প্রসার

গ. অতি ক্ষুদ্রাকৃতির বহনযোগ্য যন্ত্র নির্মাণের ব্যবস্থা

ঘ. নির্ভরযোগ্য,সম্প্রসারণযোগ্য, মাল্টিমিডিয়া, মাল্টিপ্রসেসিং সমন্বিত সেবা প্রদানকারী মাল্টিমিডিয়া সক্ষম অপারেটিং সিস্টেমের বিকাশ

ঙ. অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং প্যাকেজ ও কাস্টমাইজ সফটওয়্যারের আনয়ন

চ. ডাটা স্টোরেজ ও সহযোগী যন্ত্রের পরিধির ব্যাপক সম্প্রসারণ

ছ. বহুমুখী ইনপুট/আউটপুট যন্ত্রের ব্যবহার

জ. মাল্টিপ্রসেসর সিস্টেমের আবির্ভাব

পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটার (ভবিষ্যৎ)

পঞ্চম কম্পিউটার হবে কৃত্রিম বুদ্ধি খাটিয়ে কাজ করার ক্ষমতা সম্পন্ন। এ জন্য  কম্পিউটারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence) সংযোজনের উপর গবেষণা চলছে। এ প্রর্যন্ত এ বিষয়ে খুব সীমিত আকারে সাফল্য অর্জিত হয়েছে। পূর্ণ সাফল্য অর্জিত হওয়ার  পর পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটারে কৃত্রিম বিচার বুদ্ধি প্রয়োগ করা সম্ভব হবে বলে কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা আশাবাদী। এ ছারা মানুষের কন্ঠস্বর শনাক্ত করার ক্ষমতাও হবে পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। মানুষের কন্ঠের দেওয়া নির্দেশ অনুধাবন করে পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটার কাজ করতে পারবে। আর  পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটারের কাজের গতি,স্মৃতির ধারণ ক্ষমতা যে  বিস্ময়কররূপে বৃদ্ধি পাবে সে কথা বলার অপেক্ষাই রাখে না। আসলে সঠিকভাবে অনুমান করা কঠিন যে, পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটার কেমন হবে। তবে একুম শতকের শুরুতে সম্ভাব্য যে সব বৈশিষ্ট্য এ ধরনের কম্পিউটারে থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে, তা হল-

ক. উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন দ্রুতগতির হাজার হাজার মাইক্রোপ্রসেসরের ব্যবহার

খ. নতুন প্রজন্মের নতুর আকৃতির উচ্চ প্রসেসিং ক্ষমতার একাধিক কোরের  মাইক্রোপ্রসেসরের ব্যবহার

গ. ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রোগ্রামিং

ঘ. কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবোটিক প্রযুক্তির চরম বিকাশ

ঙ. ইনপুট ও আউটপুট যন্ত্রের সীমাবদ্ধতা বিলোপ

চ. কন্ঠস্বর শনাক্তকরণ ও বিশ্বের সকল ভাষায় কম্পিউটিং

ছ. ডায়নামিক/ইন্টারএকটিব মাল্টিমিডিয়াসহ সকল ধরনের তথ্য পারাপার, প্রক্রিয়াকর‌ণ ও ধারণ করার বিপুল ক্ষমতা অর্জন

জ. ডাটা স্টোরেজ ও সহযোগী যন্ত্রের পরিধির ব্যাপক সম্প্রসারণ

ঝ. বহুমুখী কাজে বহুমুখী ইনপুট/আউটপুট যন্ত্রের ব্যবহার

ঞ. একসাথে অনেক কাজ করা বা মাল্টিপ্রসেসিং ও মাল্টিটাস্কিং সিস্টেমের ব্যাপক ব্যবহার

 

 

 

 

ইেমজ ক্রেডিট : wikipedia

Level 2

আমি রক স্টার। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 9 বছর 4 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 21 টি টিউন ও 32 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 3 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস