বর্তমানে ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি ব্যবহার করার জন্য আপনার মোবাইল সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ একটি ডিভাইজ। ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি'র জন্য ডেডিকেটেড ডিভাইজ "অকিউল্যাস" পর্যন্ত বর্তমানে স্মার্টফোনের কাছে হিমশিম খেয়ে গিয়েছে। ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি হেডসেট এবং আপনার স্মার্টফোন মিলে একটি অসাধারণ ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি ফিচার প্রদান করে, যেটা নিঃসন্দেহে ফিউচার প্রুফ।
সত্যি বলতে স্মার্টফোনে ভিডিও উপভোগ করা বা গেমিং এর ধারণা'কে সম্পূর্ণ পাল্টিয়ে দিয়েছে এই ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি টেকনোলজি। আপনার সামনে বড় স্ক্রীন না থেকেও বড় স্ক্রীনে ভার্চুয়ালি ভিডিও বা মুভি উপভোগ করা এবং রিয়াল এক্সপেরিয়েন্স নিয়ে গেমিং করা—ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি'র পূর্বে সেটা কল্পনীয় বিষয় ছিল।
টিউনটির আরো গভীরে প্রবেশ করার পূর্বে কী-কনসেপ্ট নিয়ে আগে একটু আলোচনা করে নেই, "ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি" কি? —এখানে টার্মটি দুইটি আলাদা শব্দে বিভক্ত "ভার্চুয়াল" এবং "রিয়্যালিটি"। ভার্চুয়াল বলতে এমন কিছুকে বোঝানো হয়, যেটার ব্যস্তব কোন অস্তিত্ব নেই, শুধু কম্পিউটারের মাধ্যমে তাকে এক্সপেরিয়েন্স করতে পাওয়া যায়। অর্থাৎ ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি বলতে, কোন অব্যাস্তব জিনিষকে কম্পিউটারের মাধ্যমে অনুভব করে ব্যস্তব মনে করা হয়।
সত্যি কথা বলতে কিন্তু অনেক টাইপের ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি রয়েছে। ধরুন, আপনি কোন পেইন্ট করা ছবির দিকে তাকিয়ে কিছু অনুভব করলেন, হয়তো ঐ ছবির রাজ্যে হারিয়ে গেলেন বা বই বা মুভি দেখার সময় সেই কাহিনীর মধ্যে মনের মধ্যে নিজের একটি ভার্চুয়াল কাহিনী তৈরি করেন, সেটাও কিন্তু এক ধরণের ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি। তবে মোবাইল বা কম্পিউটার ভিআর থেকে এটি আলাদা।
মোবাইল ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি'তে কিছু বিষয় থাকে, যেগুলো আলাদা টাইপের ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি'কে আলাদা করে। প্রথমত হচ্ছে, "বিশ্বাস" —আপনাকে অবশ্যই ফিল করতে হবে আপনাকে মনে মনে বিশ্বাস করতে হবে, আপনি ভার্চুয়াল ওয়ার্ডে রয়েছেন। হয়তো আপনি মঙ্গল গ্রহে বসে নেই, কিন্তু আপনার চোখে সেটাকে দেখতে পাচ্ছেন এবং অনুভব করতে পাড়ছেন, ফলে বিশ্বাসের তৈরি হচ্ছে।
দ্বিতীয়ত আসে ইন্টারেক্টিভ, আপনি যদি বিশ্বাস করেন আপনি ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডে রয়েছেন, তবে ভার্চুয়াল ওয়ার্ড আপনার নড়াচড়ার সাথে নড়াচড়া করতে হবে, সেই ওয়ার্ড ভার্চুয়ালি জীবন্ত হবে। এরপর আসে, কম্পিউটার-জেনারেটেড গ্রাফিক্স, যদি আপনি আসল ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডে প্রবেশ করে সেটাকে ব্যস্তবের মতো ফিল করতে চান।
সেক্ষেত্রে অবশ্যই সেই ওয়ার্ড থেকে আপনার দূরত্ব, সেই ওয়ার্ডের প্রত্যেকটি কোনা পর্যবেক্ষণ করে দেখা, এবং অবজেক্টের গভীরতা বা দূরত্ব বুঝতে হবে, যেটা কম্পিউটার ৩ডি গ্রাফিক্স দ্বারা সম্পূর্ণ করা হয়। ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড অবশ্যই এক্সপ্লোরেবল হতে হবে, অর্থাৎ এই ওয়ার্ল্ড যথেষ্ট বড় হতে হবে যাতে ব্যস্তব অনুভূতি বিশ্বাস করার জন্য একে যথেষ্ট পরিমানে এক্সপ্লোর করা সম্ভব হয়। তো বুঝতে পারলেন, আলাদা টাইপের ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি আর কম্পিউটার/মোবাইল ভিআর এর মধ্যে পার্থক্য কি?
চোখ বন্ধ করেই যেমন আমরা স্বপ্নের দুনিয়াতে চলে যেতে পারি, ঠিক তেমনটি ভার্চুয়াল রিয়্যালিটির ক্ষেত্রে চোখে ব্যাস একটি বিশেষ হেডসেট পরিধান করেই ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডে প্রবেশ করতে পারি। কিন্তু এই হেডসেট'টি লাগানো থাকে হয় কোন পাওয়ারফুল ওয়ার্ড ষ্টেশনের সাথে অথবা কোন সুপার কম্পিউটারের সাথে। যদিও বর্তমানে অনেক সাধারণ কনজিউমার লেভেলের কম্পিউটার/ল্যাপটপ'এ ভিআর ফিচার দেওয়া হচ্ছে।
কিন্তু যদি কথা বলি স্মার্টফোন আর ভিআর এর কথা, সেটা শুনতে এবং বুঝতে উভয় ক্ষেত্রেই সুবিধা জনক এবং সহজ মনে হবে। আপনার স্মার্টফোনে আগে থেকেই একটি সেন্সর লাগানো থাকে, যেটা আপনার বডি নড়াচড়া'কে ডিটেক্ট করতে পারে, স্মার্টফোনে ব্যবহার করা হয় অত্যন্ত হাই রেজুলেসনের ডিসপ্লে, যেখানে ভিআর হেডসেট লাগিয়ে সহজেই ভার্চুয়াল ইমেজ তৈরি'র ইফেক্ট পাওয়া যায়। ব্যাস এখানে আর কিছুই নেই। না রয়েছে কোন এক্সট্রা মেশিন আর না রয়েছে কোন তারের ঝামেলা, ব্যাস স্মার্টফোন আর একটি পোর্টেবল ভিআর হেডসেট ব্যবহার করার মাধ্যমে অতি সহজেই ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি উপভোগ করা সম্ভব।
ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি আমাদের স্মার্টফোন স্ক্রীনের দিকে তাকানোর আইডিয়া এবং অভিজ্ঞতা'কে পরিবর্তন করে দিয়েছে। আগের ফোন গুলোতেও অনেক হাই রেজুলেসনের স্ক্রীন ব্যবহার করতে দেখা গেছে, কিন্তু শুধু স্ক্রীনের দিকে সরাসরি তাকিয়ে কখনোই সেই ভিউ পাওয়া সম্ভব নয়, যেটা ভিআর প্রদান করেছে। মুভি, ভিডিও প্লে, ভিআর গেমিং, চিন্তা করে দেখেছেন কি ধরনের এক্সপেরিয়েন্স দিচ্ছে আমাদের।
আপনার স্ক্রীন যতোটুকুই হোক না কেন, ভিআর এর সাথে আপনার মনে হবে আপনি সিনেমা হলে গিয়ে মুভি বা ভিডিও উপভোগ করছেন। সাথে ভিআর গেমিং এ মনে হয় গেমের ভেতর ঢুকে গেমিং করছি। মানুষ বর্তমানে এই প্রযুক্তি'র উপর পাগল হয়ে রয়েছে। তাই ভিআর রেডি কনটেন্টও তৈরি হচ্ছে ইদানিং অনেক।
ভিআর রেডি গেম, ভিআর রেডি মুভি, ভিআর রেডি ভিডিও কন্টেন্টের সংখ্যা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। কেনোনা মানুষ বর্তমানে স্ক্রীনে সরাসরি না দেখে ভিআর হেডসেটে স্ক্রীন দেখতে বেশি পছন্দ করে, এতে ইলুউসন রয়েছে আর রয়েছে ব্যস্তব অনুভতি, যেটা সত্যিই মূল্য রাখে।
মার্কেটে বর্তমানে বহু টাইপের ভিআর হেডসেট প্রাপ্য রয়েছে। অকিউলাসের প্রফেশনাল গ্রেডের হেডসেট থেকে শুরু করে, স্যামসাং এর গিআর ভিয়ার, গুগলের কার্ডবোর্ড ইত্যাদি ব্যাপক বিক্রি হয়েছে গোটা পৃথিবী জুড়ে। এখন কার একটু ভালো স্মার্টফোন গুলোর স্পেক দেখতে গেলেই সেখানে ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি সাপোর্ট ফিচার গুলো দেখতে পাওয়া যায়। এই পর্যন্ত গুগল ৫০০,০০০ এর ও বেশি কার্ডবোর্ড ইউনিট তৈরি এবং সেল করেছে।
সামনের দিনের স্মার্টফোন গুলো আরো পাওয়ার হতে চলেছে। সেটার প্রসেসিং পাওয়ার আরো বেড়ে যাবে এবং সাথে গ্রেট ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি এক্সপেরিয়েন্স পাওয়ার জন্য অবশ্যই সেখানে অসাধারণ ৪কে বা আরো বেটার ডিসপ্লে দেখতে পাওয়া যাবে। সামনের ফোন গুলোতে এতোবেশি প্রসেসিং পাওয়ার দেখতে পাওয়া যাবে, এটি যেকোনো কনটেন্ট'কে ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি'তে কনভার্ট করতে সক্ষম হবে, সাথে যেকোনো টাইপের ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি গেমিং করা সম্ভব হবে। কম্পিউটিং গীকদের মতে, সামনের ৪-৫ বছরের স্মার্টফোন গুলোতে এমন পার্থক্য আসতে চলেছে, যার মাধ্যমে স্মার্টফোন এক্সবক্স ৩৬০ (গেমিং কনসোল) কেউ হার মানাতে চলেছে।
ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি টেক কিন্তু খুব বেশি দিনের নয়। অনেক কোম্পানির কাছে এটা একেবারেই নতুন একটি প্রজেক্ট। আপনি হয়তো টেক গীক বা টেক লাভার, সেই ক্ষেত্রে আপনি ভিআর সম্পর্কে জানবেন এবং ভিআর হেডসেট কিনে সেটা হয়তো গেমিং কনসোল বা পিসি'তে ব্যবহার করবেন। কিন্তু সাধারণ মানুষকে ভিআরের প্রতি আগ্রহ জাগানো'টা কিন্তু মুশকিলের ব্যাপার।
কিন্তু যদি তাদের স্মার্টফোন ভিআর রেডি হয়, তারা জানতে এবং বুঝতে পারে তাদের স্মার্টফোনের সাহায্যে ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি নামের কোন কিছু উপভোগ করা সম্ভব হবে, তো টেস্টিং করার জন্য়ই অনেকে ভিআর হেডসেট কিনবে এবং ভিআর এক্সপেরিএন্স করবে।
একবার প্রকৃত ভিআরে কেউ প্রবেশ করে ফেললে ভিআরের ডিম্যান্ড তার জন্য অনেক বেড়ে যাবে। কেনোনা আপনার স্মার্টফোনে আর কিছু না করে আর কোন আলাদা ডিভাইজ না লাগিয়ে শুধু সস্তা মুল্যের একটি হেডসেট লাগিয়েই সম্পূর্ণ আলাদা ভিডিও/গেমিং এক্সপেরিইয়েন্স নিতে পারবেন।
শুধু ভিডিও/গেমিং নয়, স্মার্টফোনে ভিআর এর আরো বিস্তর ব্যবহার রয়েছে। হতে পারে আপনার বন্ধু কোন স্থানে বেড়াতে গিয়েছে এবং আপনাকে সেখানকার এক্সপেরিএন্স শেয়ার করতে চায়, তো আপনি জাস্ট ভার্চুয়াল হেডসেট'টি পরিধান করে নেবেন এবং ব্যাস আপনার বন্ধুর ফোন থেকে আপনার ফোনে ভিআর কন্টেন্ট রিসিভ হবে আর আপনার মনে হবে আপনি সেখানে ফিজিক্যালি রয়েছেন। কম্পিউটারের স্ক্রীন যতোবড়ই হোক না কেন সেখানে তারপরেও লিমিটেসন রয়েছে। কিন্তু ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি'তে কোন স্ক্রীন লিমিটেসন নেই। আপনার ৩৬০ ডিগ্রিতে সবকিছুই ভার্চুয়াল স্ক্রীন!
বন্ধু এই টিউনটি সফলভাবে প্রমানিত করে যে, ফিউচারে ভার্চুয়াল রিয়্যালিটিই মোবাইল ভিডিও/গেমিং এর ভবিষ্যৎ হতে চলেছে এবং ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি টেক'টি স্মার্টফোনের জন্যই এতোবেশি সাড়া পাবে। ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি এবং স্মার্টফোন নিয়ে আপনার কি মতামত, অবশ্যই আমাকে নিচে টিউমেন্ট করে জানাবেন!
আমি তাহমিদ বোরহান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 177 টি টিউন ও 680 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 43 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
আমি তাহমিদ বোরহান। টেক নিয়ে সারাদিন পড়ে থাকতে ভালোবাসি। টেকটিউন্স সহ নিজের কিছু টেক ব্লগ লিখি। TecHubs ব্লগ এবং TecHubs TV ইউটিউব চ্যানেল হলো আমার প্যাশন, তাই এখানে কিছু অসাধারণ করারই চেষ্টা করি!