এই যুগকেই বলা হয় প্রযুক্তির যুগ। আমরা আমাদের চোখের সামনে যা কিছু দেখি। যা ব্যবহার করি তার সবকিছুতেই প্রযুক্তির কোন না কোন অবদান আছেই। আর আমারা দৈনন্দিন জীবনে যেসব প্রযুক্তি ব্যবহার করি তার মধ্যে স্মার্টফোন অন্যতম। বলতে গেলে স্মার্টফোন ছাড়া একটা দিন আমাদের পক্ষে কল্পনা করাও কঠিন। এছাড়াও আমরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রায় সব সময় প্রযুক্তির সংস্পর্শে থাকি। এসবের মধ্যে অনেক জিনিস আছে যেগুলো আমরা সবসময় পরিধান করে থাকি। যেমন-ঘড়ি। আর এখনতো ঘড়ির মধ্যেই পুরো একটি কম্পিউটার ঢুকিয়ে দেয়া যায়। এরকম উন্নত ঘড়িকে আমরা স্মার্টওয়াচ হিসেবে জানি।
এসব স্মার্ট প্রোডাক্টগুলোতে উন্নত সব ফিচার পাওয়া যায় যেগুলো আগে কখন চিন্তা করাই কঠিন ছিল। আর আজ তা বাস্তব। স্মার্টওয়াচ গুলো এত উন্নত যে এগুলো ভয়েস রিকগনিশন করতে সক্ষম। এমন কি ভয়েস দিয়ে নানা কাজও করা যায়। এছাড়াও স্মার্ট সব প্রোডাক্ট দিয়ে দিনের সব সময় আমাদের হার্ট বিট, ব্লাড প্রেসার সহ নানা ধরনের কাজ করা যায়। আমন আমরা দিনে কত ঘণ্টা ঘুমালাম তারও হিসাব নেয়া যায়।
এসকল কারণে এসব পরিধানযোগ্য টেক প্রোডাক্টগুলো দিন দিন আগের তুলনায় বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠসে। এখন খুব কম দামের স্মার্টওয়াচ পাওয়া যায়। তবে দামি ব্রান্ডের গুলো যেমন অ্যাপেল ওয়াচ কিনতে হলে একটু বেশি টাকা খরচ করতে হবে। এছাড়াও কম দামে অনেক ভাল ভাল অপশন আছে। যেমন Xiaomi কোম্পানির মি ব্যান্ড ২ কিনতে পারেন। দাম বেশি না ১৫০০ এর মত।
তবে আপনি জানলে অবাক হবে এসব টেক প্রোডাক্টগুলোর আসল কাজ কিন্তু এগোলর হার্ডওয়্যার করে না। এসব প্রোডাক্ট যেমন স্মার্টওয়াচের আসল চমক হলো এগোলর অপারেটিং সিস্টেম। কারণ বেশিরভাগ স্মার্টওয়াচ গুলোই খুব কম ক্ষমতা সম্পন্ন প্রসেসর দিয়ে তৈরি। এবং এর স্টোরেজও খুব কম। র্যাম এর পরিমাণ খুব অল্প।ল তারপরেই স্মার্টওয়াচগুলো খুব ভালভাবে এর কাজ গুল করতে পারে।এর প্রধান কারণ কি?
এর প্রধান কারণ হল এই টেক প্রোডাক্টগুলোর অপারেটিং সিস্টেমগুলো অনেকভাবে অপটিমাইজড করা থাকে। ফলে খুব কম ক্ষমতা দিয়েও এরা খুব ভুলভাবে কাজ করতে পারে। আর একদিক দিয়ে চিন্তা করলে এসব পরিধানযোগ্য প্রোডাক্টগুলোর আসলে বেশি প্রসেসিং পাওয়ারের দরকার নেই। কারণ এরা বেশিরভাগ সময় স্মার্টফোনের সাথে কানেক্টেড থাকে। ফলে ডাটা গুলো প্রসেস স্মার্টফোনেই হয়। স্মার্টওয়াচ শুধু মাত্র ডাটা প্রদান করে।
তবে কম দামে যেসব স্মার্টওয়াচগুলো পাওয়া যায় সেগুলোতে কোন সেন্সর থাকে না। তাই এইগুলো শুধুমাত্র বিভিন্ন কাজ যেমন গান শোনা, কল ধরা বা ফটো বা ভিডিও করার মত কাজগুলো করতে পারে। আবার এসব কমদামী স্মার্টওয়াচগুলো শরীরের জন্য অনেক ক্ষতিকর।
এখনকার সময় যেসব স্মার্টওয়াচ গুলো বাজারে আছে তাদের বেশিরভাগ Android, Android Wear, Tizan কিংবা Linux অপারেটিং সিস্টেমে চলে। এছাড়াও আর কিছু অপারেটিং সিস্টেম হয়ত বাজারে আসবে যেমন অ্যাপেল ওয়াচের জন্য আই.ও.এস। আবার কেউ কেউ বলে এল.জি নিজেদের অপারেটিং সিস্টেম বানাবে। এগোলো সুধুই খবর আসলেও এরকম হবে কিনা তা আমি ঠিক জানি না।
যেকোনো পরিধানযোগ্য টেক প্রোডাক্টের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল এর কার্নেল। অর্থাৎ যে সফটওয়্যার হার্ডওয়্যার এবং অপারেটিং সিস্টেমের মাঝে অবস্থান করে। এটাই মূলত ঠিক করে হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার কিভাবে কজা করবে। প্রত্যেক কার্নেলের সাথে হার্ডওয়্যার ম্যাচ করতে হয়। বেশিরভাগ সময় হার্ডওয়্যারের কথা মাথায় রেখেই কার্নেল বানানো হয়।
পরিধানযোগ্য প্রযুক্তির প্রোডাক্টগুলোর জন্য নানা ধরণের হার্ডওয়্যার আছে। নিচে তার কিছু দেয়া হলঃ
MIPS এর ফুল ফর্ম হল Micro-processors without interlocked pipline stages, এই ধরনের প্রসেসরগুলো সাধারণ অনেকগুলো প্রসেসরকে একসাথে করে তৈরি করা হয়। MIPS প্রসেসরগুলতে সব ধরনের অ্যাপস অর্থাৎ যেই অ্যাপস গুলো জাভা দিয়ে তৈরি সেগুলো খুব ভালভাবে চলবে। অর্থাৎ আন্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম। আধুনিক MIPS চিপগুলো Arm প্রসেসর এর সাথে খুব ভালভাবে কমপিট করতে পারে।
যেসব টেক প্রোডাক্টের ব্যাটারি পাওয়ার খুব কম। সেইসব প্রোডাক্টের জন্য এই ধরনের প্রসেসর সবচেয়ে কার্যকরী। আর আধুনিক ARM বেসড প্রসেসর গুলোর পারফরমেন্স খুব ভাল আবার এগুলো খুব কম পাওয়ার ব্যবহার করে।
ইন্টেলকে কে না চেনে? প্রসেসরের বাজারে ইন্টেলই বলতে গেলে মানুষের প্রথম পছন্দ। বিভিন্ন ছোট কিন্তু আধুনিক প্রোডাক্টের জন্য ইন্টেলের একটি আলদা সিরিজের প্রসেসর আছে। এগুলোই x86 প্রসেসর। ইন্টেলের এই প্রসেসর গুলো যদিও এখন পর্যন্ত কোন পরিধানযোগ্য প্রোডাক্টে ব্যবহার করা হয় নি। তবে আশা করা যায় ভবিষ্যতে এরকম প্রডাক্ট আমারা হাতে পাব।
বিভন্ন স্মার্ট প্রোডাক্টের জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় গুগল আন্ড্রয়েড ওয়ার অপারেটিং সিস্টেমটি। এই অপারেটিং সিস্টেমটিকে আবার নরমাল আন্ড্রয়েডের সাথে মিলিয়ে ফেলবেন না। কারণ আন্ড্রয়েড ওয়ার চালাতে হলে আপনাকে স্মার্ট ডিভাইসটিকে যেকোনো আন্ড্রয়েড স্মার্টফোনের সাথে কানেক্ট করতে হবে। তবে অবশ্যই আন্ড্রয়েড ভার্সন ৪.৩ এর উপরে হতে হবে।
গুগল আন্ড্রয়েড ওয়ার যদিও খুব ভাল একটি অপারেটিং সিস্টেম। তবুও গুগল এই অপারেটিং সিস্টেম কে খুব লিমিটেড করে রেখেছে। অর্থাৎ আপনি আই অপারেটিং সিস্টেম কে আলাদাভাবে চালাতে পারবেন না। আপনাকে অবশ্যই একটি আন্ড্রয়েড সহ স্মার্টফোন থাকতে হবে। তা না হলে কাজ হবে না। তবে সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল গুগল এর এই অপারেটিং সিস্টেম ভয়েস রিকগনিশন সাপোর্ট করে। তাই আপনি ভয়েস দিয়ের এই স্মার্টওয়াচকে কন্ট্রোল করতে পারবেন।
বলতে গেলে এই সফটওয়্যার দিয়েই গুগল ওয়ার অপারেটিং সিস্টেম কাজ করে। কারণ আপনাকে এই অ্যাপটি ইনস্টল করেই সব কাজ করতে হবে। যদিও আই অ্যাপে অনেক ফিচার পাবেন তাও গুগল ফিটে খুব কম জিনিসই ওপেন ওপেন সোর্স। তাই যারা এই অপারেটিং সিস্টেমকে ডেভেলপ করতে চান তাদের জন্য আসলে খারাপ খবর।
স্যামসাঙের তৈরি একটি অপারেটিং সিস্টেম যেটি বিভিন্ন কম ক্ষমতা সম্পন্ন স্মার্টওয়াচে কাজ করে। তবে এই অপারেটিং সিস্টেম স্যামসাঙ ওয়াচেই ব্যাবহৃত হয়। তবে টাইযেন অপারেটিং সিস্টেমের কার্নেল আসলে লিনাক্স। তবে একটি সুখবর হল স্যামসাঙ এই অপারেটিং সিস্টেমের জন্য অনেক প্রায় ১০০০ এর মত অ্যাপ তৈরি করেছে। যেটি অনেক অনেক বড় একটি প্লাস পয়েন্ট তাদের জন্য যারা স্যামসাঙ এর স্মার্টওয়াচ কিনতে চাচ্ছেন। কেউ কেউ যদিও বলেন যে স্যামসাঙের এই অপারেটিং সিস্টেম আসলে বাজারে সেভাবে কাজ করতে পারবে না। তবে এই অপারেটিং সিস্টেম ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হচ্ছে। স্যামসাঙ এর গিয়ার ওয়াচ 2 বা গেয়ার ওয়াচ ২ নেও এই স্যামসাঙ টাইযেন অপারেটিং সিস্টেমে চলে।
স্যামসাঙ টাইযেন যদিও ভয়েস রিকগনিশন সাপোর্ট করে তবে আপনাকে নিজে থেকে তা অন করতে হবে। এছাড়াও এর মাধ্যমে আপনি ফিটনেস ট্র্যাক করতে পারবেন। সব দিক থেকে চিন্তা করলে এই অপারেটিং সিস্টেম গুগল ওয়ার থেকে অনেক ভাল। এবং টাইযেন অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করলে অনেক বেশি ব্যাটারি লাইফ পাওয়া যায়।
সরাসুরি লিনাক্স যদিও স্মার্টওয়াচ বা ওয়ারএবল টেক প্রোডাক্টগুলতে ব্যবহার করা হয় না তবে লিনাক্সের উপর ভিত্ত করে বানান অনেক অপারেটিং সিস্টেম আছে যেগুলো এসব ছোট প্রোডাক্টগুলতে রান করে। এসব লিনাক্স বেসড অপারেটিং সিস্টেম মোটামুটি সব ধরনের প্রসেসর সাপোর্ট করে। তবে বেশিরভাগ সময় ARM বেসড প্রসেসরগুলো বেশি ব্যবহার করা হয়। আন্ড্রয়েড, আন্ড্রয়েড ওয়ার কিংবা স্যামসাঙ টাইযেন সবই লিনাক্স কার্নেল দিয়ে বানানো।
অ্যাপেল ওয়াচ এই অপারেটিং সিস্টেম রান করে। তবে এই অপারেটিং সিস্টেম সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য আমাদের জানা নেই। কারণ অ্যাপেল আমাদের এসব বিষয়ে জানতে দিতে চায় না। অ্যাপেল এই অপারেটিং সিস্টেম বিশেষভাবে ডিজাইন করেছে ফলে নরমাল ARM প্রসেসর ব্যবহার করেও অ্যাপেল খুব ভাল ব্যাটারি ব্যাকআপ দিতে পারে। তাই বলতেই হয় অন্যান্য সব অপারেটিং সিস্টেম থেকে এই অ্যাপেল ওয়াচ ও.এস আসলে খুব বেশি অপটিমাইজড। অ্যাপেল ওয়াচ খুব ভালভাবে ফিটনেস ট্র্যাক করতে পারে। যারা অ্যাপেল ওয়াচ ব্যবহার করেন তারা ত জানেনই এ বিষয়ে।
আন্ড্রয়েড সম্পর্কে কে না জানেন? সবাই কমবেশি আন্ড্রয়েড ব্যবহার করেন। আমি আগেই বলেছি আন্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম আসলে লিনাক্স বেসড একটি অপারেটিং সিস্টেম। আমরা যে আন্ড্রয়েড বিভন্ন স্মার্টফোনে ব্যবহার করে সেই আন্ড্রয়েড সরাসুরি বিভন্ন ওয়ারএবল টেক প্রোডাক্টে ব্যবহার করা হয়। তবে এর জন্য এসব যন্ত্রকে খুব শক্তিশালী হতে হবে।
তবে স্টক আন্ড্রয়েডে কিছু সমস্যা আছে যেমন- যদি এই অপারেটিং সিস্টেম কোন স্মার্টওয়াচে ব্যবহার করা হয় তবে ওয়াচ থেকে ডাটা স্মার্টফোন পাঠাতে আন্ড্রয়েডে কিছু সমস্যা হয়। কারণ আসলে আন্ড্রয়েড এরকম কাজ এর জন্য তৈরি হয়নি। তবে আন্ড্রয়েডের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এই অপারেটিং সিস্টেমের অ্যাপ লাইব্রেরি এক কথায় বিশাল। বিশাল বললেও আসলে যে কত বিশাল বুঝানো যাবে না।
মিডিয়াটেক ২০১৪তে সর্বপ্রথম তাদের এই অপারেটিং সিস্টেম বাজারে আনে। লিঙ্কইট অপারেটিং সিস্টেম বিভিন্ন ওয়ারএবল প্রোডাক্টের কথা মাথায় রেখে বানানো হয়। তাই আশা করা যায় এই অপারেটিং সিস্টেম ভাল কাজ করবে। লিঙ্কইট অপারেটিং সিস্টেমের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এই অপারেটিং সিস্টেম খুব পাওয়ার নিয়ে কাজ করতে পারে এবং এর স্ট্যান্ডবাই পাওয়ার খুব কম। তাই এটি কোন প্রোডাক্টে ব্যবহার করা হলে অনেক বেশি ব্যাটারি লাইফ পাওয়া যাবে।
এই অপারেটিং সিস্টেমগুলো ছাড়াও আরো নানারকম অপারেটিং সিস্টেম আছে যেগুলো ব্যবহার করে বিভিন্ন স্মার্ট প্রোডাক্ট বাজারে আসছে এবং আশা করা যায় ভবিষ্যতেও আসবে। অনেকেই এসব অপারেটিং সিস্টেম ডেভেলপের সাথে জড়িত।
এতক্ষণ যেসব অপারেটিং সিস্টেমের কথা বললাম এসব অপারেটিং সিস্টেম ভাল তবে না কারণে এসব অপারেটিং সিস্টেম আসলে আমাদের অনেক ফিচার দিতে সক্ষম নয়। তাই ধীরে ধীরে নতুন অপারেটিং সিস্টেমগুলোর প্রতি মানুষের ঝোঁক বাড়ছে। তবে আপনারা এসব টেক প্রোডাক্টগুলো ব্যবহার করে দেখতে পারেন। আশা করি আপনাদের ভালই লাগবে। আমাদের দেশের বিভিন্ন অনলাইন শপ খুঁজলেই এরকম অনেক স্মার্ট প্রোডাক্ট যেমন স্মার্ট ওয়াচ পেয়ে যাবেন। দাম দেখে কিনলেই হবে। এছাড়াও বিভিন্ন ব্রান্ড শপে অনেক ভাল ভাল প্রোডাক্ট আছে সেগুলোও ব্যবহার করে দেখতে পারেন।
আজ এ পর্যন্তই। টিউনটি অনেক বড় করে ফেলছি। আশা করি এই অপারেটিং সিস্টেম গুলো সম্পর্কে আপনাদের ভাল ধারণা হয়েছে। তারপরেও কোন কিছু বুঝতে অসুবিধা হলে টিউমেন্ট করে জানাবেন। আর টিউনটি কেমন লাগলো তাও জানাবেন। ধন্যবাদ সবাইকে টিউনটি পরার জন্য আশা করি ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
আমি আশরাফুল ফিরোজ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 77 টি টিউন ও 35 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 6 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।