বিজ্ঞানের সবথেকে মজার ও রহস্যময়ী তত্ত্ব কোনটি সেটা যদি নির্বাচন করতে বলা হয় তাহলে নিশ্চিত ভাবেই আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার নাম প্রথমেই মনে আসবে যদি বলবিদ্যাকে উপেক্ষা করা হয়। কিন্তু আমরা খুব কম মানুষই এটা ভালো করে বুঝি। অনেকে বুঝলেও শুধু ভাসাভাসাভাবে বোঝে। তবে, আমরা এখানে আপেক্ষিকতার ইতিহাস থেকে শুরু করে একদম গাণিতিক ব্যখ্যা সহ সকল খুটিনাটি সম্পর্কে জানব। কেউ কেউ মনে করেন গাণিতিক টার্মগুলো বুঝি খুব কঠিন। আসলে তা নয়। স্কুল কলেজের সাধারণ গণিত জানলেই যেকেউ বিশেষ আপেক্ষিকতা সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা রাখতে পারবে।
আজকে আমরা কথা বলব বিজ্ঞানের সবথেকে আকর্ষনিয় তত্ত্ব নিয়ে। আচ্ছা, বিজ্ঞানী আইনস্টাইনকে চিনে না এমন লোক পাওয়া দুস্কর। না তিনি কোন সুপার হিরো নন। তিনি হলেন একজন বিজ্ঞানী। একজন বিজ্ঞানী হয়েও তিনি আসলে সুপার হিরো। তাকে চিনলেও ঠিক কি কারণে তিনি এত বিক্ষ্যাত তা খুব কম মানুষই জানে। আর জানলেও সে সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখে না। তাঁর খ্যাতির কারন হল বিখ্যাত আপেখিক তত্ত। তিনি প্রায় একাই এই তত্ত্বের পূর্নতা দিয়েছেন। যদিও তিনি এর জন্য নোবেল পান নি। পেয়েছিলেন ফটো ইলেক্ট্রিক ইফেক্টের জন্য। যাই হোক, আজকে আমরা সেই আপেক্ষিকতা নিয়ে কথা বলব।
আসলে আইনস্টাইন চেয়ছিলেন ইশ্বরের মন পড়তে। তিনি পুরো মহাবিশ্বকে একটিমাত্র তত্তে দিয়ে ব্যাখ্যা করতে চেয়ছিলেন। সবকিছুকে চেয়েছিলেন সমীকরনের মাধ্যমে দেখাতে। এমন একটি তত্ত্বের পেছনে সারাটা জীবন ব্যয় করেছেন যা দিয়ে বিশাল বিশাল গ্রহ থেকে শুরু করে অতি ক্ষুদ্র পরমানুর সবকিছুই ব্যাখ্যা করা সম্ভব। যাকে বলা হয় ইউনিফাইড ফিল্ড থিওরি। তো যাই হোক আজকে আমরা আমাদের আলোচনা আপেক্ষিকতার নাঝেই সীমাবদ্ধ রাখব।
আপেক্ষিকতা ব্যাপারটা আশাকরি। এটা সবার জন্য সমানভাবে জরুরি। আমরা এটা পরম এর সাথে তুলনা করতে পারি।
অনেকেই মনে করেন যে আইনস্টাইনের আগে কেউ আপেক্ষিকতা সম্পর্কে জানত না। আসলে এটা সম্পূর্ণ ভুল। এরিস্টটলের যুগেও আপেক্ষিকতার ধারণা ছিল। গ্যালিলিও নীউটনও আপেক্ষিক সম্পর্কে জানতেন। নিউটনের গতি সূত্রে আপেক্ষিকতার ব্যবহার রয়েছে। যদিও এরিস্টটল মনে করতেন স্থান ও সময় আপেক্ষিক নয় বরং এগুলো পরম বিষয়। নিউটন বললেন স্থান পরম নয় বরং এটাও আপেক্ষিক তবে সময় পরম। আইনস্টাইন এসে বললেন যে না। সব ভুল। স্থান আর সময় দুটোই আপেক্ষিক। বরং আলোর গতি হল পরম বিষয়।
আইনস্টাইনকে যখন জিজ্ঞেস করা হত আপেক্ষিকতা ব্যাপারটা অল্প কথায় ব্যাখ্যা করতে তিনি তখন বলতেন, ‘যদি আপনি একজন সুন্দরি মেয়ের পাশে বসে থাকেন তাহলে কয়েক ঘন্টাকেও আপনার কাছে কম মনে হবে অথচ কারও জন্য অপেক্ষা করতে হলে অল্প সময়কেও বেশি মনে হবে’। আসলে এটা খুব স্থুল উদাহরণ। যদিও মূল আপেক্ষিকতার সাথে এর সম্পর্ক নেই। একটা ছোট্ট উদাহরণ দিয়ে ব্যাপারটা বোঝানো যাক। মনে করুন আপনি বাসে বসে আসেন আর আপনার এক বন্ধু বাসের বাইরে দাড়িয়ে দারিয়ে আছে। মনে করুন বাসটা খুব উন্নত আর ঝাকিবিহীন। এখন আপনি, বাস এবং বাস স্টেশন সবই স্থির। এবার বাসটি চলতে শুরু করলে দেখবেন আপনি আর আপনার বাস গতিশীল হল। এখন যদি আপনি নিজেকে স্থির ভাবেন তাহলে দেখবেন সবকিছু জানাল দিয়ে পেছনে চলে যাচ্ছে। অর্থাৎ আপনি স্থির আর আপনার বন্ধু ও বাস স্টেশন সবকিছুই গতিশীল এবং সব পেছনে চলে যাচ্ছে। কিন্তু আপনার বন্ধু কি দেখবে? সে দেখবে আপনি আর বাস গতিশীল এবং সে স্থির। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে এক এক জনের কাছে ব্যাপারটা এক এক রকম। এটাই আসলে আপেক্ষিকতা।
এগুলো আরও ভালোও করে বুঝতে আমাদেরকে প্রসঙ কাঠামো এবং মাত্রা সম্প্ররকে জানতে হবে। আগামী পর্বে এগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
অনেকে মনে করেন আপেক্ষিকতা খুব জটিল। আসলে সেরকম না। এটা দারুন একটা বিষয়। আপনি স্কুল কলেজের গণিত জানলে বিশেষ আপেক্ষিকতা সম্পর্কে জানতে পারবেন।
আসুন আপেক্ষিকতা সম্পর্কে আরও কিছু বিষয় জেনে নেয়া যাকঃ
আজকের মত এতটুকুই। আগামীতে আমরা ধীরে ধিরে উপরের বিষয় গুলো নিয়ে আলোচনা করব এবং এসবের গাণিতিক ব্যাখা ও প্রমান জানব।
আশা করি আমাদের এই সিরিজ শেষে আমরা প্রত্যেকেই বলতে পারব ‘আমিও আপেক্ষিকতা বুঝি’ 😀
সবাই ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ।
পূর্বে প্রকাশিতঃ https://bigganbortika.org
আমি কামরুজ্জামান ইমন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 33 টি টিউন ও 124 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 2 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 2 টিউনারকে ফলো করি।
বিজ্ঞানকে ভালবাসি। চাই দেশে বিজ্ঞান চর্চা হোক। দেশের ঘরে ঘরে যেন বিজ্ঞান চর্চা হয় সেই লক্ষ্যেই কাজ করছি।
ইন্টারেস্টিং , চালিয়ে যাবেন আশা করি !