আমার এক ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে...
গতকাল অমিয়েন্দ্র আমাকে একটা বই সাজেস্ট করে। তো বইটা রকমারিতে অর্ডার দিয়েও অর্ডার ক্যান্সেল করি পিডিএফ কপি পাওয়াতে। যাই হোক, সেই বইয়ের ব্যাপারে ওর সাথে কথা বলবার কথা ছিল। ওর সাথে যা বলার ছিল সেটাই লিখব এই টিউনে। কারণ আমি মনে করি এ ব্যাপারটা সবার জানা দরকার।
বইয়ের নামঃ ভীনগ্রহের মানুষ
লেখকঃ রাকিব হাসান
প্রকাশনীঃ সেবা
বইটা শুরু হয়েছে দারুন নাটকীয়ভাবে। কল্পবিজ্ঞানের ভঙ্গিতে প্রথমেই বলা হয় যে পৃথিবীর মানুষ জ্বালানী খোজার জন্য ২৯৮১ সালের দিকে মহাকাশে পাড়ি জমায়। পরে তারা আন্তিনা নামক এক গ্রহ খুজে পায়। সেখানে তারা যখন যায় তখন খুব অবাক হয়। কারণ সেখানের পরিবেশ পৃথিবীর মতই আর বিবর্তনও হচ্ছে পৃথিবীর অনুরূপ। পৃথিবীর মানুষ যখন আন্তিনায় পৌছে তখন সেখানকার সবকিছুই ছিল প্রগৈতিহাসিক। মানুষ ছিল বণ্য। চারিদিকে বাইসন, ম্যামথ, দাতাল বাগ, বিশালাকার শকুন ঘুরে বেড়াত। তো, পৃথিবীর মানুষ আন্তিনার মানুষকে বিভিন্ন জিনিস শিক্ষা দিতে চেষ্টা করেছিল। এসব কারণে ও পৃথিবীর মানুষের যন্ত্রপাতি দেখে আস্তিনার মানুষ পৃথিবীবাসীকে দেবতা বলে মেনে নেয়। গল্পটা কাল্পনিক ছিল। কিন্তু লেখক দাবি করেন যে পৃথিবীর ক্ষেত্রেও এমন হতে পারে।
লেখক তার এই দাবির পেছনে যুক্তি স্বরূপ পৃথিবীর কিছু রহস্যময় স্থানের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন যে ঐ স্থানগুলো হয়তো মানুষ বানায় নি। অন্যগ্রহ থেকে কোন উন্নত প্রানী এসে তৈরি করে দিয়ে গেছে। তার উল্লেখিত রহস্যময় বিষয়গুলো হল ভিয়াআনহুকো, স্টোনহেঞ্জ, পিরামিড, স্টারদ্বীপ এসব। যায়গাগুলো আসলেই রহস্যময়। সেখানের প্রাপ্ত জিনিসপত্র এতই উন্নিত কারিগরি বিদ্যায় তৈরি যে বর্তমানেও তা রীতিমত জটিল। তাহলে অত প্রাচীন কালে হাজার দশক বছর আগে কে তৈরি করেছিল সেসব! এমন প্রশ্ন জাগাটা স্বাভাবিক। এই রহস্যগুলোকে আরও জটিল করেছেন এরিক ফন দানিকেন। দানিকেন একজন শখের প্রত্নতত্তবিদ ছিলেন। তিনি প্রথম দাবি করেন যে এসব রহস্যময় স্থান তৈরি করেছে ভীনগ্রহবাসী, মানুষ নয়। সে অনেক যুক্তিও দেখিয়েছেন। কিন্তু তার যুক্তিগুলো ছিল ভিত্তিহীন আর বৈজ্ঞানিক ব্যাক্ষাতিত। দানিকেন পরবর্তীতে অনেককেই প্রভাবিত করেছে। এইসব রহস্যময় স্থানগুলো নিয়ে তৈরি হয়েছে রঙচঙা প্রচুর গল্প-কল্পকাহিনী।
এবার আসি মূল কথায়। ঐসব রহস্যময় স্থানগুলো যে কোন ভীনগ্রহ বাসির তৈরিকৃত নয় বরং মানুষের হাতেই নির্মিত তার পেছনে আজ আমরা যুক্তি প্রমান খুজে পাচ্ছি। পিরামিড রহস্য অনেকটাই আমরা উদ্ধার করতে পেরেছি। স্টারদ্বীপ, ভিয়াআনহুকো, স্টোনহেঞ্জ সম্পর্কেও অনেক যুক্তি পেয়েছি। কাদার পরতের কার্বণ ডেটিং করে আমরা প্রাচীন সময়ের ভিজুয়ালাইজেশন নির্মান করেছি। তখনকার অবস্থা সম্পর্কেও অনেক অবগত হয়েছি। পৃথিবীর ইতহাস আজ প্রায় আমাদের হাতের মুঠোয়।
প্রতিথিবীর ভূ-ভাগ গবেষনা করে আমরা দেখেছি যে আমাদের পৃথিবীতে বারবার আঘাত এসেছে। এতে জীবন প্রায় নিশ্চিন্ন হয়ে গিয়েছে। পরবর্তীতে পুনরায় বিবর্তনের চাকা ঘুরেছে। এভাবে মানুষও এইসব আঘাতের সমুখীন হয়েছে। ফলে পিছিয়ে পরেছে হাজার হাজার বছর। আমাদের পৃথিবীর এই আঘাতে গণবিলুপ্তি ঘটেছে। এ পর্যন্ত জানা গিয়েছে যে পৃথিবীতে প্রাণের উদ্ভবের অর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৫ বার বড় ধরনের গনবিলুপ্তি ঘটেছে। এমনই এক বিলুপ্তিতে হাড়িয়ে গিয়েছিল ডাইনোসর প্রজাতি। ঠিক এভাবেই বার বার মানুষের উন্নতিতেও বাধা এসেছে। সবকিছুই হারিয়ে শুরু করতে হয়েছে নতুনভাবে। এই গনবিলুপ্তির কারণগুলো ছিল উল্কাপাত, ভূমিকম্প, সুনামি, অগ্নুতপাত সহ মানুষ্যসৃষ্ট কিছু সমস্যা। স্টারদ্বীপ যার উজ্জ্বল উদাহরন। এই গতশতকের বিশ্বযুদ্ধগুলোর দিকে তাকালেই আমরা কিছুটা আন্দাজ করতে পারব। এই সামান্য যুদ্ধের কারণেই মানুষ প্রায় ১০০ বছর পিছিয়ে পরেছে। আরও কিছু আগে গেলে আলেকজান্দ্রিয় লাইব্রেরীর কথা বলা যায়। লাইব্রেরী পুড়িয়ে দেয়াতে মানুষ জাতি ২ হাজার বছরের অর্জিত জ্ঞান হাড়িয়ে ফেলে। আবার গোড়া থেকে শুরু করতে হয় সবকিছু। এমনটাই হয়েছিল প্রাচীন পৃথিবীর মানুষের ক্ষেত্রে। জ্ঞানে-বিজ্ঞানে অনেক এগিয়ে গিয়েও প্রাকৃতিক বা নিজেদের সৃষ্ট সমস্যার কারণে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। শুরু করতে হয়েছিল আবার শুরু থেকে।
এভাবেই কোন ভীনগ্রহবাসী এলিয়েন ছাড়াই পৃথিবীর ঐসব রহস্যময় যায়গার ব্যাক্ষা প্রদান করা সম্ভব। তাই আমাদের উচিত অতিকাল্পনীক চিন্তা না করে বিজ্ঞানের মধ্যে থেকেই কোন কিছু বিশ্লেষন করা। এছাড়া আমাদের জন্য শিক্ষনীয় হল যে, আমাদের পূর্ববর্তীরা বিভিন্ন কারণে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। আমরা যেন সেই ভুল পথে পা না বাড়াই আর প্রাকৃতিক দূর্যোগের মোকাবেলা করতে শিখি।
আমি কামরুজ্জামান ইমন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 33 টি টিউন ও 124 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 2 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 2 টিউনারকে ফলো করি।
বিজ্ঞানকে ভালবাসি। চাই দেশে বিজ্ঞান চর্চা হোক। দেশের ঘরে ঘরে যেন বিজ্ঞান চর্চা হয় সেই লক্ষ্যেই কাজ করছি।
PDF কপি টা কি শেয়ার করা যাবে !!