আচ্ছা, পৃথিবীর সাথে আপনার নিজের সাইজের তুলনা করেছেন কখনো? সেটা না হয় পরেই তুলনা করি। আপনি একবার ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার অথবা বিশ্বের সবথেকে বড় পণ্যবাহী জাহাজের পাশে দাঁড়িয়ে নিজেকে বিবেচনা করবেন। তাহলে বুঝতে পারবেন আপনি কত ক্ষুদ্র। যদি কখনো গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন বা সমুদ্রে নৌকা করে ঘুরতে পারেন তাহলে সে অনুভূতিটা আরও তীব্র হবে। এবার একটু বৃহৎ ক্ষেত্রে কল্পনা করি। পৃথিবীর তুলনায় আমরা খুবই ক্ষুদ্র। সূর্যের কথা মনে আছে কি? আমাদের সৌরজগতের সূর্যটার মধ্যে পৃথিবীর সমান ১৩ লক্ষ পৃথিবীকে ভালোভাবেই বসিয়ে দেয়া যাবে। আর আমাদের সৌরজগতের আকার ৫৮৭, ৮৬২, ৫৩৭, ৩১৮ মাইল এবং সূর্যের ব্যাসার্ধ ৪৩২, ৭০০ মাইল। এবার হিসেব করে দেখুনতো পুরো সৌরজগতে কতগুলো সূর্যকে বসানো যাবে। আমিই আপনাদের হয়ে হিসেব করে দিচ্ছি, সংখ্যাটা হল ১, ৩৫৮, ৫৯২ টি। এবার ১, ৩৫৮, ৫৯২ x ১, ৩০০, ০০০ দিলে আমরা যেটা পাব সেটা হল পুরো সৌরজগতে যতগুলো পৃথিবী বসানো যাবে সেই সংখ্যা। এবার তাহলে আমাদের সৌরজগত সম্পর্কে আপনি কিছুটা ধারণা পেয়েছেন নিশ্চয়ই। এটা আমাদের কল্পনার চাইতে বড় নয় ঠিকই, কিন্তু এটা প্রচণ্ড রকম বিশাল।
এবার আসুন আমাদের চিন্তার রকেটের স্পীড আরও একটু বাড়িয়ে দেই। এরকম প্রায় ২০০ বিলিয়ন (১ বিলিয়ন= ১০০ কোটি) সূর্য নিয়ে একটি গ্যালাক্সি বা ছায়াপথ তৈরি হয়। আরেকটা ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে। সেটা হল একটা গ্যালাক্সি থেকে অন্য গ্যালাক্সির যে দূরত্ব তার মধ্যে প্রায় আরও শ খানেক গ্যালাক্সি রাখা যাবে। তাহলে এবার একটু কল্পনা করুন তো একটা গ্যালাক্সির আকার কত বড় হতে পারে? আর এর মধ্যে কত ট্রিলিয়ন পৃথিবীকে বসানো যাবে?
এরকম ৪০-৫০ টা গ্যালাক্সি মিলে তৈরি করে গ্যালাক্সি ক্লাস্টার আর বেশ কিছু গ্যালাক্সি ক্লাস্টার মিলে তৈরি করে সুপার ক্লাস্টার। বিজ্ঞানীরা মনে করেন প্রায় ১০ মিলিয়ন (১ মিলিয়ন = ১০ লক্ষ) সুপার ক্লাস্টার রয়েছে আমাদের দৃশ্যমান* মহাবিশ্বে।
এত গেলো দৃশ্যমান মহাবিশ্বের কথা। একটা কথা শুনে অবাক হবেন যে পুরো মহাবিশ্বের কেবল ৪% হলও দৃশ্যমান মহাবিশ্ব আর বাকি ২৩% হল ডার্ক ম্যাটার আর ৭৩% হলও ডার্ক এনার্জি!
মহাবিশ্বে আমাদের মানুষদের অবস্থানটা একটু অনুধাবন করুন তো। কি কল্পনায় আসছে কি? কল্পনায় আসতেই পারে যেহেতু কল্পনার কোন বাধা নেই। এবার একটু বাস্তবে ফিরে আসুন আর ভাবুন আমরা এই মহাবিশ্বে কত ক্ষুদ্র! কত অসহায়! সামান্য পৃথিবীর তুলনাতেই আমাদেরকে খুঁজে পাওয়া যায় না আর সেখানে সূর্য, গ্যালাক্সি, ক্লাস্টার, সুপার ক্লাস্টার আর দৃশ্যমান মহাবিশ্বের তুলনায় আমরাতো প্রায় অস্তিত্বহীন। আবার মাল্টিভার্সের ধারণা আনলে এরকম আরও অসংখ্য মহাবিশ্বর কথা এসে যায়!
তাহলে ভাবুন আমাদের দাপট কোথায়? পৃথিবীতে যে আমরা সামান্য জমি, ক্ষমতা আর নামের লোভে এত সমস্যা তৈরি করছি, নিজেদের খুব বড় ভাবছি, রাজ্যে-রাজ্যে, জাতিতে-জাতিতে দাঙা সৃষ্টি করছি, আমাদের আবেগ, ভালোবাসা, সুখদুঃখ এসব কিছুরই কোন যায়গা নেই এই সু-বিশাল মহাবিশ্বে। আমরা এসেছি রিক্ত হাতে আবার হয়তো যাত্রাও করতে হবে সেই অনন্ত নক্ষত্রবীথি পাণে। কিন্তু এই ক্ষুদ্র সময়ে অনেক কিছুই করবার আছে আমাদের, অনেক কিছুই জানার আছে। তাই প্রত্যেকের কর্ম প্রত্যেককে শেষ করে যেতে হবে। সামান্য অবদান রেখে গেলেও সেটা মূল্যবান হয়ে থাকবে। তাই আমাদের উচিত নিজেদের অবস্থা বিবেচনা করে কার্য সাধন করা। এই বিশাল মহাবিশ্বে নিজেরদেরকে বড় কিছু না ভাবাই শ্রেয় হবে।
পূর্বে প্রকাশিতঃ https://bigganbortika.org
আমি কামরুজ্জামান ইমন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 33 টি টিউন ও 124 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 2 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 2 টিউনারকে ফলো করি।
বিজ্ঞানকে ভালবাসি। চাই দেশে বিজ্ঞান চর্চা হোক। দেশের ঘরে ঘরে যেন বিজ্ঞান চর্চা হয় সেই লক্ষ্যেই কাজ করছি।
আপনার উচিত ছিল প্রথমেই আল্লাহ তাআলার প্রশংসা দিয়ে সুরু করা।আপ্নার পোষ্টা মাসসাল্লাহ অনেক সুন্দর হইসে।আমাদের কে এটাও ম্নে রাখা উচিত যে আমাদের সবাইকে ১মাত্র আল্লাহ তাআলার নিকট প্রত্যাবর্তন করতে হবে।এবং তিনি আমাদের যা দিয়েছেন সেটা মেনে চলতে হবে।